বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় -৬ষ্ঠ পর্ব ( বৈশ্বিক নিরাপত্তা বাহিনী)
লিখেছেন লিখেছেন তট রেখা ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:২১:৪১ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
إِنَّهُمْ يَكِيدُونَ كَيْدًا
তারা ভীষণ চক্রান্ত করে,
وَأَكِيدُ كَيْدًا
আর আমিও কৌশল করি।
فَمَهِّلِ الْكَافِرِينَ أَمْهِلْهُمْ رُوَيْدًا
অতএব, কাফেরদেরকে অবকাশ দিন, তাদেরকে অবকাশ দিন, কিছু দিনের জন্যে। ( সুরা তারিকঃ আয়াত ১৫-১৭)
৫ম পর্ব
৫ম পর্বের পর----
বিশ্ব সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য মেসন্সরা আর যে কৌশল টি অবলম্বন করে তা হলো, তাদের নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী একটি নিরাপত্তা বাহিনী থাকা দরকার। সে জন্য পরিকল্পিত ভাবে বিশ্বব্যাপী তারা অপরাধের হার বৃদ্ধি করে, যাতে করে মানুষ ভীত ও আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের একটি বহুল চর্বিত স্লোগান, যা মুসলিম-অমুসলিম সবার কাছেই ছড়িয়ে পরেছে। এর উৎপত্তির সাথে জড়িয়ে আছে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে (তথাকথিত) সন্ত্রাসী হামলা। এরই সূত্র ধরে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা শক্তি প্রচার করে যে, ওসামা বিন লাদেন এবং তার সঙ্গঠন আল-কায়েদা এ হামলার সাথে জড়িত। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ এ হামলার প্রতিশোধ কে ক্রসেডের সাথে তুলনা করেন, অবশ্য পরবর্তিতে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন। বক্তব্য প্রত্যাহার করলেও তার আচরণ সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে যুদ্ধকে ইসলামের বিরূদ্ধে যুদ্ধ হিসাবেই প্রতিভাত হয়। এরই ফলস্রুতিতে আফগানিস্তান আক্রান্ত হয়, ইতিহাসের ক্রম ধারায় ইরাক পদানত হয়, মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই তারা সন্ত্রাসী সংগঠনের (?) অস্তিত্ত্ব খুঁজে পায়। আজ আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, চেচনিয়া, পাকিস্তান সর্বত্রই মুসলমানেরা যুদ্ধে লিপ্ত। বহুজাতিক বাহিনীর আদলে সম্মিলীত নিরাপত্তা বাহিনীই আজ মার্কিন নেতৃত্ত্বে চোখে পড়ছে। এ ছাড়া শান্তিরক্ষী বাহিনীর আদলে জাতি সংঘের তত্ত্বাবধানে একটি বিশ্বব্যাপী একটি একক নিরাপত্তা বাহিনী আজ উপস্থিত। আমাদের দেশ, বাংলাদেশ ও এর সক্রিয় সদস্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ আমেরিকার সাথে টিকফা চুক্তি সাইন করেছে, এর বদৌলতে আমেরিকা ইচ্ছে করলে বাংলাদেশে আমেরিকান ঘাঁটি তৈরী করতে পারবে।
আসলে কি ঘটেছিল ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর। সরকারী ভাষ্যমতে আল কায়েদার কিছু সদস্য বিমান ছিনতাই করে টুইন টাওয়ারে হামলা করে, যা টাওয়ারদ্বয় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের কারন। পরবর্তিতে যে ভিডিও ফুটেজটি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তাতে দেখা যায় যাত্রিবাহী বিমান বিল্ডিং দুটিতে আঘাত হানে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেক মার্কিন নাগরিক এবং সঙ্গঠন এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসাবে স্বিকার করেননা। প্রত্যক্ষদর্শী একজনের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, উনি সেদিন কোনো বিমান দেখেননি। ছবিতে যে বিমানটি দেখানো হয়, ক্লোজআপ ভিউতে বিমানে কোনো জানালার অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায়না, যে আগুনে বিল্ডিং এর ইস্পাত গলে ভবনটি ধ্বসে পড়ল, সেই আগুনের পাশে একজন মহিলা কে হাঁটতে দেখা গেছে। বহু বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন এই আগুনে ভবন ধ্বংস হওয়া সম্ভব নয়। তৃতীয় যে ভবনটি ধ্বসে যায়, সেখানে কোনো বিমান আঘাত হানেনি। পেন্টাগনে বিমান আঘাত হেনেছে বলে দাবী করা হয়, কিন্তু সেখানে বিমানের কোনো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। এরূপ আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা উল্লেখ করতে গেলে একটি পূর্নাংগ বই লিখা সম্ভব।
৯১১ আমেরিকার অপরিচিত কোনো সংখ্যা নয়, অনেক আগে থেকেই জরুরী ফোন নম্বর হিসাবে ৯১১ ব্যাবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৯০ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট বুশ (সিনিয়র) নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের ঘোষনা দেন, তার ঠিক ১১ বছর পর ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা হয়। এটা কি শুধুই কাকতালীয় ব্যাপার? না অন্য কিছু? অনেকে বলেন ৯১১ ফ্রিমেসন্সদের পবিত্র সংখ্যা আর ২০০১ সালে ১১অই সেপ্টেম্বর এক মহাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে হাজারো প্রান বলি দেওয়া হয়েছিল শয়তানের পদতলে।
মাদক একটি ভয়াবহ সমস্যা। একটি সরকারী তথ্যমতে বিশ্বজুড়ে যে মাদকের বাণিজ্য হয় তাতে যে অর্থ লগ্নি হয় তা একটি বৃহত্তম শিল্পের সমান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে এই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজছে। উদাহরণ স্বরূপ যুক্তরাস্ট্রে মাদক একটি বিশাল এবং ক্রমবর্ধমাণ সমস্যা , এটার সাথে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে এবং তা আশংকাজনক হারে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জন সাধারণের পক্ষ থেকে এর বিরূদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার শক্ত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সমূহ মাদক পাচারকারীদের বিরূদ্ধে ভারী যুদ্ধকেও ন্যায় মনে করছে, এবং জনমতকেও শান্ত রাখছে। যাই হোক কিছু বিরক্তিদায়ক ঘটনা আমেরিকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিশ্বাসযোগ্যতাকে সন্দেহে নিপতিত করে। এটা সাধারণত বিশ্বাস করা হয়, ১৯৬০ সালে জে এডগার হুভার, তদানিন্তন এফ বি আই চেয়ারম্যান আফ্রিকান আমেরিকান জনগোষ্ঠির মধ্যে মাদক বাণিজ্য ছড়িয়ে দেয়ার অনুমতি দেন। উদ্দেশ্য মার্কিন সমাজে এই জনগোষ্ঠির উন্নয়ন ও উত্থান ঠেকিয়ে দেয়া।
আশির দশকে কম্যুনিজমের হুমকি মোকাবেলায় মধ্য আমেরিকার অর্থ করায়ত্ব করা আমেরিকার জন্য জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছিল, আর এজন্য সি আই এ আমেরিকাতে মাদক বাণিজ্যের অনুমোদন দিয়েছিল। জ্যাক ব্লুম নামে একজন আমেরিকান সিনেটর এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন, যিনি এই ঘটনা তদন্তের জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছিল তার সদস্য ছিলেন।
ঐতিহাসিক ভাবে ফ্রিমেসন্সরা সমাজের সমস্যাকে ব্যাবহার করে অথবা সমস্যা তৈরী করে ঘটনা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে , যাতে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন করা যায়। আমেরিকান সমাজে ক্রমবর্ধমান মাদকের সমস্যা শক্তভাবে মোকাবেলা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ন্যায্যতা প্রদান করে। ইতিমধ্যে আটলান্টিক জুড়ে এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে মাদকের মহামারী ঠেকাতে যুদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এটা হয়ত খুব বেশি দূরে নয়, যখন বিশ্বব্যাপি সমন্বিত আক্রমণেরে প্রয়োজন হয়ে পড়বে। সত্যের বিকৃতি, মিথ্যা পরিসংখ্যান ইত্যাদী ফ্রিমেসনিক সরকার গুলোর অস্ত্র, এর সাহায্যেই তারা একোটি সমন্বিত বৈশ্বিক নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা তৈরী করছে যা আপাতদৃষ্টিতে নাগরিক দের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ, ক্রমবর্ধমান অপরাধ নির্মূলীকরণ এবং মাদকের অপব্যাবহার রোধ, ক্রম বর্ধমান সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রয়োজন। উন্নত প্রযুক্তি সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি হাতিয়ার (যেমন ড্রোন আক্রমণ, ইন্টারনেটে নজরদারী), এর মাধ্যমে সমাজের সবাইকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। তথ্যই তাদের চাবি। যতবেশী পরিমান তথ্য তারা একজন ব্যাক্তি সম্পর্কে সংগ্রহ করতে পারবে, ততই তার পদক্ষেপ নিয়ে তারা আগাম ধারণা করতে পারবে, আর এ ভাবে তারা তাদের পরিকল্পণা মত তাকে চলতে বাধ্য করতে পারবে। ফ্রিমেসন্সরা একটি সমাজ নির্মাণ করতে চায়, তাহলে একটি মুক্ত চিন্তার সমাজ যেখানে মুক্ত চিন্তাগুলো তাদের অদৃশ্য শিকল দিয়ে বাঁধা থাকবে, তাদের পছন্দ গুলো অলীক প্রযুক্তির বেড়াজালে সীমাবদ্ধ থাকবে, যা আপনার মনন ওমানস কে একটি নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত করবে। জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ মানে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রইণ করা, আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রন করা।
আর সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে যুদ্ধের সর্বশেষ বলি হলো ইরাক ও সিরিয়ার জনগন। আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এই বৈশ্বিক নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যপারে উম্মতকে সতর্ক করে দিয়ে গেছেন, আর তা হলো এক সময় মুসলমানেরা আশিটি পতাকা বাহী বাহিনীর বিরূদ্ধে যুদ্ধ করবে।
৭ম পর্ব
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় - ১ম পর্ব ( ছায়ার ভেতরে বসে)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়-২য় পর্ব ( রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্জন)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় -৩য় পর্ব ( মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৪র্থ পর্ব ( সাহিত্য ও চলচ্চিত্র)
বিঃদ্রঃ লেখাটি আগে ভিন্ন নামে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু সিরিজটি সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। নতুন অনেক পাঠকের জন্য তাই পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
RELATED READINGS:
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন- ইহুদী? ফ্রী-মেসন? - শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-৩)
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন