জাতির মনস্তত্ত্ব ও পরিণতি (রি-পোস্ট)

লিখেছেন লিখেছেন তট রেখা ০৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৩:৫৬:১৮ দুপুর

জাতির মনস্তত্ত্ব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মুহাম্মদ আসাদ ( Leopold Weiss) তার Road to Mecca গ্রন্থে জাতিকে ব্যাক্তির সাথে তুলনা করেছিলেন। ব্যাক্তির যেমন শৈশব, কৈশোর, যৌবন থাকে, একটি জাতিরও তেমনি শৈশব, কৈশোর, যৌবন থাকে। ব্যক্তি যেমন আনন্দে আপ্লুত হয়, দুঃখে ব্যথিত হয়, ঠিক একটি জাতিও আবেগ প্রবণ হতে পারে। কোনো ব্যক্তির শৈশবের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, ভালোবাসা, দুঃখ কষ্ট তার পরিণত বয়সে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় ভুমিকা পালন করে। শৈশবে প্রাপ্ত কোনো সু-কঠিন আঘাত(trauma) অবচেতন মনে তার পরিণত ব্যাক্তিত্বের উপর গভীর ছায়াপাত করে।

মুহাম্মাদ আসাদ তার আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থে তার এই তত্ত্বের আলোকে শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব কিংবা পাশ্চাত্যের সাথে ইসলামের দ্বন্দ্ব কে পর্যালোচনা বা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। তার ব্যাখ্যা কিংবা বিশ্লেষন যথার্থ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

ব্যক্তি-জীবনে একজন মানুষ যেমন মানবীয় গুণাবলী, আল্লাহ-ভীরুতা, সততা, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এর মাধ্যমে জাগতিক এবং পারলৌকিক সাফল্য লাভ করতে পারে। তেমনি অনাচার, সীমা-লঙ্ঘন, অপরাধ প্রবণতা, পাপের পংকিলতায় নিমজ্জিত হওয়ার কারণে তার ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, তার উপর চেপে বসতে পারে অপমানের গ্লানি। তার জীবন শেষ হতে পারে ফাঁসির রজ্জুতে, অথবা লৌহ গরাদের অন্ধকার কুঠুরীতে। অথবা পার্থিব জীবনে কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন না হলেও শেষ বিচারের দিন আল্লাহর বিচার থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় থাকবেনা।

প্রকৃত পক্ষে একটি জাতিও তার কার্যকলাপের মাধ্যমে তার সমৃদ্ধির সোপান তৈরী করে, ঠিক তেমনি পতনের অতল গহবরে তলিয়ে যাওয়ার রাস্তাটিও উন্মুক্ত করে।

পৃথিবীতে অনেক জাতি আছে যারা সদম্ভে পদচারণা করত, তাদের কৃত-কর্মের কারণে তারা ধ্বংস হয়ে ধুলোয় মিশে গেছে, তাদের শিকড় পরিপূর্ণ ভাবে ছিন্ন হয়েছে। কখনো কখনো ইতিহাসের পাতায় তাদের খোঁজ পাওয়া যায়, কখনো বা সেখানেও তাদের ঠাঁই হয়না। হঠাৎ কখনো কোনো প্রত্নত্ত্বিকের কোদালের কোপে তাদের কিছু পরিচয় উন্মুক্ত হয়।

ব্যাক্তির সাথে জাতির যেমন সাদৃশ্য আছে, তেমনি আছে বৈ-সাদৃশ্যও। ব্যক্তি তার কৃত-পাপকর্মের কারণে পৃথিবীতে শাস্তি পায়, অথবা আখেরাতে শাস্তি পাবে অথবা দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জীবনেই শাস্তি পায়/ পাবে।

আল্লাহর গজবে যখন কোনো জাতি ধ্বংস হয়ে যায়, তখন তা হয় জাতিগত পাপের কারণে, কিন্তু আখেরাতে সে জাতির প্রত্যেক ব্যাক্তিকে নিজ নিজ কাজের জবাবদিহীতা করে শাস্তি অথবা পুরস্কার গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং আপাত দৃষ্টিতে একটি জাতি তার পরিণতি পৃথিবীতেই ভোগ করে। ধ্বংস প্রাপ্ত জাতির মধ্যে অনেক সময় পূণ্যবান ব্যাক্তি থাকতে পারে, এবং পূন্যের কারণে তার পারলৌকিক পরিণতি ভিন্ন হতে পারে। নিম্নোক্ত হাদীসে এর দলীল সংগ্রহ করা যেতে পারেঃ

“ ইবনে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন , আল্লাহ যখন কোনো জাতির উপর আযাব নাযিল করেন, তখন সে জাতির মধ্যে যত লোক বর্তমান থাকে, তাহাদের প্রত্যেকের উপর সেই আযাব আপতিত হয়, অতঃপর তাহাদের আমল অনুযায়ী পুনরুথথান করা হইবে। (সহীহ বুখারী)

আল্লাহ সুবহানুতাআ’লা কুরানুল কারীমে এ রকম বহু জাতির ধ্বংসের কাহিনী বর্ণনা করেছেন, আল্লাহদ্রোহিতা ও আল্লাহর রসুলদের অস্বীকার করার কারণে আদ, সামুদ ও নূহ আলায়হিয়াসসাল্লামের জাতি নির্মূল হয়েছে , একই কারণে এবং সমকামীতার মত ঘৃন্য পাপে নিমজ্জিত থাকার কারণে লুত আলায়হিয়াসসাল্লাম এর জাতি ধ্বংস হয়েছে। মাদইয়ান বাসী ধ্বংস হয়েছে ওজনে কম দেওয়ার কারণে, তাদের কাছে আল্লাহ সুবহানুতাআ’লা শোয়েব আলায়হিইয়াসসাল্লাম কে প্রেরণ করে ছিলেন। আমাদের অতি কাছের সময়ে পম্পেই নগরী ভিসুভিসুয়াসের লাভার নীচে চাপা পড়ে গেছে। তারা বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অপরদিকে কিছু জাতিকে আল্লাহ সুবহানুতাআ’লা সমূলে ধ্বংস না করে তাদের উপর অপমানকর আযাব চাপিয়ে দিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে বনি ইসরাইল গোত্র, বার বার আল্লাহর প্রেরিত নবী-রসুলদের সাথে অবাধ্যতার কারনে নেবুচাদনেজারের দাস হয়ে তারা ব্যাবিলনে নীত হয়েছিল। পরবর্তীতে পারস্য সম্রাট সাইরাস দ্যা গ্রেট তাদের মুক্ত করে প্যালেস্টাইনে ফিরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু এতেও তাদের অবাধ্যতা কমেনি, এক পর্যায়ে আল্লাহ আবার তাদের পিতৃভুমি থেকে সমূলে উৎখাত করলেন, তারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে উদ্ভ্রান্তের মত ছড়িয়ে পড়ল। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিয়ামতের পূর্বে তাদের আবার একত্রিত করবেন (ধ্বংস করার নিমিত্তে) , তারই ফলশ্রুতিতে আজকের ইসরাইল দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ এদের কুরানুল কারীমে আল্লাহর গজবে নিপতিত জাতি হিসাবেই উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ আমাদের এদের মত না হওয়ার জন্য দোয়া করার শিক্ষা দিয়েছেনঃ

هدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,

(সুরা ফাতেহাঃ আয়াত-৬)

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ

সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

(সুরা ফাতেহাঃ আয়াত-৭)

আমাদের নবী রহমাতাল্লিল আ’লামীন আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, আমরা যেন ধ্বংস না হয়ে যায়, তিনি এও দোয়া করেছিলেন যে আমরা যেন দলে দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরূদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হই। আগের দোয়া কবুল হলেও পরেরটি হয়নি। নিম্নোক্ত হাদীসে তার বর্ণনা পাওয়া যায়ঃ

“আবূ বকর ইবনে আবূ শায়বা (অন্য সনদে) ইবন নুমায়র (র)----- সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম একদা আলিয়া হতে এসে বনূ মুয়াবিয়ায় অবস্থিত মসজিদের নিকট গেলেন। অতঃপর উনি উক্ত মসজিদে প্রবেশ করে দু রাকাত সালাত আদায় করলেন। আমরাও তার সাথে সালাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তার প্রতিপালকের নিকট দীর্ঘ দু’আ করলেন । এবং দু’আ শেষে আমাদের নিকট ফিরে এলেন । এরপর তিনি বললেনঃ আমি আমার প্রতি পালকের নিকট তিনটি জিনিস কামনা করেছি। তন্মধ্যে তিনি আমাকে দুটি প্রদান করেছেন এবং একটি প্রদান করেননি। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট কামনা করেছিলাম , যেন তিনি আমার উম্মাতকে দুর্ভীক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দু’আ কবুল করেছেন । তাঁর নিকট এ-ও প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি আমার উম্মতকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দু’আও কবুল করেছেন। আমি তাঁর নিকট এ মর্মেও দু’আ করেছিলাম যে, যেন মুসলমান পরস্পর একে অন্যের বিরূদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়। তিনি আমার এ দু’আ কবুল করেননি।”

ইসলামী বিশ্বাসে বিশ্বাসী আমরা সবাই জাতি হিসাবে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত, এটাই আমাদের বড় পরিচয়। এ ছাড়াও ভূখন্ড বিচারে আমাদের আর একটি পরিচয় আছে। আমরা বাঙালী অথবা বাংলাদেশী।

ইসলামী মূল্যবোধের ভাবধারায় এতদঞ্চলের মানুষের মনস্তত্ত্ব স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ওঠেনি। তুর্কীরা ভারতীয় উপমহাদেশে আগমণ করেছিল ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে নয়, রাজ্য বিস্তারের নেশায়। জাতিতে মুসলমান হওয়ায় তাদের শাসন ব্যাবস্থায় কিঞ্চিৎ ইসলামী ভাবধারার সমাবেশ গড়ে উঠেছিল, পূর্ণাংগ নয়। এই উপমহাদেশ তথা বাংলায় ইসলাম প্রচার হয়েছে মূলতঃ অলি-আউলিয়া, সুফী-দরবেশ দের মাধ্যমে, তারা প্রধাণত এসেছিলেন আরব-জাহান থেকে। তাদের ইসলাম প্রচার-প্রসারে রাস্ট্রীয় আনুকুল্য থাকলেও ছিলনা সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা। অন্য কথায় একজন মুসলিম শাসক ইসলামী দাওয়াতের কার্যাবলী রাস্ট্রের জিম্মায় নিয়ে নেবে এবং পরিপূর্ণ ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক রাজ্য শাসন করবে, এটাই ইসলাম নির্দেশ করে। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা পাওয়া গেলেও সামগ্রীক ভাবে তার কোনো অস্তিত্ব মেলেনা। ( আওরংগজেব কিছুটা ব্যাতিক্রম)

অপর পক্ষে অলি-আউলিয়া, সুফী-দরবেশের অনেকের মধ্যে সংসার-বৈরাগ্য, গ্রীক ও হিন্দু সংস্কৃতি থেকে আহরিত তথাকথিত আধ্যাতিকতা বিশুদ্ধ ইসলাম চর্চায় কখনো সহায়ক হয়নি। একজন মানূষকে যেমন শৈশব কালে স্বঠিক ভাবে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত না করলে, পরবর্তীকালে বিপথগামী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে, তেমনি জাতিগত ভাবে একটি জাতিও একই পরিণতি বরণ করতে পারে। বিশেষ করে যেখানে ব্রিটিশ শাসনের মত বড় একটি আঘাত (trauma) জাতির মানসপট কে ছিন্ন- ভিন্ন করে দেয়। আর তাই দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম শাসকগণ গান-বাজনা তথা বাইজী সংস্কৃতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আবির্ভূত হন। এবং তৎকালীন ঊলামাদের অনেক কেই উলামা ছু হিসাবে রাজ-দরবারে আনাগোনা করতে দেখা যায়।

বাংলায় আর একটি জিনিস লক্ষণীয় হলো এখানকার অধিবাসীরা নিম্ন-বর্ণের হিন্দু ছিল। জাতি-প্রথার যাঁতা কলে পিষ্ঠ হয়ে ইসলামকে তাদের মুক্তি দানকারী হিসাবে পেয়েছিল। কিন্তু শাসক এবং দায়ীদের ব্যার্থতা তাদের ইসলামের রস আকন্ঠ আস্বাদন করার পথে অন্তরায় হয়েছিল। আর তাই তাদের মধ্যে ইসলাম-পূর্ব হীন-মন্যতা, শিরক-কুসুংস্কার সাথে করে নিয়ে এসে তাদের নতুন ধর্মের অনুসঙ্গ বানিয়ে ছিল।

এরই মাঝে ইউরোপে শিল্প-বিপ্লব, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ২ টি বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়ায় বলশেভিক আন্দোলনের সফলতা, তুর্কী খিলাফতে পতন এ দেশীয় তরুন সমাজকে আন্দোলিত করে। আর তাই দেশ-বিভাগের পর পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত এ জাতির মেধাবী ছাত্রদের অধিকাংশকে বাম-পন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থকতে দেখা যায়। যদিও গ্রাম-বাংলার আপামর জনসাধারণের এই আন্দোলনের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিলনা। আর বাম-পন্থা আর ইসলাম যে দুইমেরুর চিন্তা চেতনা সেটা সকলেই অবগত।

জাগতিক বিচারে এ জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নানাভাবে ইসলামকে দূরে ঠেলা দেয়ার প্রয়াস জাতির মনে আর একটি আদর্শিক দ্বন্দ্ব তৈরী করে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এ দ্বন্দ্বে রসদ সরবরাহ করে যা জাতিকে দুটি প্রান্তিক ধারার দিকে নিতে প্রয়াসী হয়। ইতিমধ্যে ষাট ও সত্তর দশকের বাম-পন্থিরা সমাজ ও রাস্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্টিত হয়।

সুতরাং এ কথা হয়ত বলা যায়, মনস্তাত্তিক ভাবেই এ জাতি কখনোই পরিপূর্ণ ভাবে বিশুদ্ধ ইসলাম চর্চাকারী ছিলনা।

সোভিয়েত রাশিয়ার পতন, ঈংগ-মার্কিন আধিপত্যবাদ ,ভারতীয় আধিপত্যবাদ সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে যুদ্ধ বৈশ্বিক পরিস্থিতি নতুন মাত্রায় নিয়ে যায় যা জাতির মনস্তত্বকে ভারসাম্যহীন করে। ফরহাদ মাজাহারের মতে যা বাংলাদেশ কে প্রক্সি- যুদ্ধের জন্য উর্বর ভুমি হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের দোয়ার কারণে জাতি একবারে ধ্বংস না হলেও মুসলিম উম্মাহ হিসাবে দলে দলে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ করে ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। যার লক্ষণ এ দেশটিতে পরিপূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান। ( আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন )

এখন দেখা যাক পুর্ব-বর্তী জাতি গুলো যে কারণে ধ্বংস হয়ে ছিল তা এ জাতির মধ্যে বিদ্যমাণ আছে কিনা।

নূহ আলায়হিসসাল্লাম এর জাতি, আদ ও সামুদ জাতি দ্বয়ের ধ্বংসের কারণ আল্লাহদ্রোহীতা এবং তাদের রসুলদের অস্বীকার করা। (এখন রোগটি এ জাতির শিরা- উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ার উপসর্গ দেখা দিয়েছে।)

লুত আলায়হিসসাল্লামএর জাতি ধ্বংস হয়েছিল সমকামীতার কারণে ( অতি সম্প্রতি সমকামীদের নিয়ে একটি এন জি ও সমাবেশ করেছে, যা পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে)

মাদইয়ান বাসী ধ্বংস হয়েছিল ওজনে কম দেয়ার অপরাধে তথা অবিচারের কারণে। ( আমাদের সমাজে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দরকার আছে?)

এ ছাড়া নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা তথা ব্যাভিচারের প্রসার , পতিতা কে যৌনকর্মী নাম দিয়ে এ আদিম পেশা কে বৃত্তি হিসাবে স্বিকৃতী প্রদান। নিভৃত পল্লীর পর্ণ কুটির পর্যন্ত সুদের প্রাদুর্ভাব। পার্শবর্তী দেশের মুসলমান ভায়েরা যখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমাদের দুয়ারে আসে, আমরা তাদের আশ্রয় দিতে ব্যার্থ হয় এবং মৃত্যুর মুখে ফেরত পাঠিয়ে দেই।

আজ যেখানে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের মুসলমান ভাইয়েরা নির্যাতনে গৃহ ছাড়া, দিশে হারা, দুধের শিশু যখন বোমার আঘাতে আহত হয়ে বিচার দেয়ার কোনো জায়গা না পেয়ে বলে আমি আল্লাহকে বলে দেব। আর আল্লাহকে বলে দেয়ার নিমিত্তে এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে দু দিন পর অবিনশ্বরের পানে রওনা দেয়।

সে বিচারে আমরা তাদের চেয়ে তেমন পূণ্যবনা জাতি নয়। হয়তবা পাপ বেশীই করে ফেলেছি। তাই দু জন মন্ত্রী যখন বলে এ দেশকে যুদ্ধ ক্ষেত্র বানানোর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে , তখন আতঙ্কিত হই, শংকিত হই।

তবে হতাশ হলে চলবেনা , ব্যাক্তি যখন আকন্ঠ পাপে নিমজ্জিত হয়ে পরিত্রানের আশায়, আল্লাহর শরনাপূর্ণ হয়ে তওবা করে, আল্লাহ মাফ করে দেন। তেমনি জাতি হিসাবে আসুন আমরা তওবা করে আল্লাহ মুখী হয়। আল্লাহ হয়ত আমাদের থেকে গজব সরিয়ে নেবেন। ইউনুস আলায়হিয়াসসাল্লামের জাতি এ ভাবেই আল্লাহর গজব থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

লা-তাহজান, হতাশ হবেননা।

RELATED READING:

দেশ বিভাগ, স্বপ্ন ভঙ্গ ও বাংলাদেশ

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356087
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৪:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ব্যক্তিই গঠন করে জাতি। যেখানে ব্যাক্তি চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে সেখানে জাতিগতভাবে কিছুই আশা করা জায়না।
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:২৯
295691
তট রেখা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
363000
২০ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : চমৎকার একটা লেখা পড়লাম। বলা বাহুল্য, চিন্তার গভীরতা অনেক দূর।
জাযাকাল্লাহু খাইর
২০ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০৩:২৯
300915
তট রেখা লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফিক। Good Luck Good Luck Good Luck
364662
০৫ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:১২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : এককথায় বাস্তবভিত্তিক চম?কার লেখা কিছুদিন আগে আমিও এমন একটা লেখা লিখেছিলাম। আসলে যেসকল হাদিস আমাদের অঞ্চল কে কেন্দ্র করে বর্ণিত (এগুলোকে দুর্বল হাদিস বলা হয়, কিন্তু দূর্বল ও জাল হাদিসের মাঝে পার্থক্য আছে), তা যদি সত্যি হয়, তবে আমাদের কপালে সত্যিই বিশাল দুর্গতি অপেক্ষা করছে আর কুরআনের ভবিষ্যত বাণীগুলোও তো আছেই।
http://www.first-bd.net/blog/blogdetail/detail/3557/warrior2013/75097
,অামার লেখা এটা অাপনার পরের লেখাতে কাজে দিতে পারে।
০৫ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:৫০
302555
তট রেখা লিখেছেন : ধন্যবাদ। আমাদের সবারই শেষ জামানা সংক্রান্ত হাদিস গুলো উপলব্ধিতে রাখা প্রয়োজন।

আপনার পোস্টে আমি কমেন্ট করেছি। Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File