রামদা শান দেয় কে আর নাম হয় কার?
লিখেছেন লিখেছেন জয় সত্যম ০৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:১৫:৫০ রাত
পৃথিবী জুড়ে শান্তির বাণী ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা। শেখাচ্ছেন কিভাবে দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হয়। তার সুযোগ্য পুত্রও বিদেশে বসে বাংলাদেশের জঙ্গিদেরকে চিহ্নিত করে ফেলেছেন। হঠাৎ বিদেশি নাগরিক হত্যা। মিডিয়ায় আইএস এর দায় স্বীকার, বাংলাদেশের জঙ্গি আইএস উত্থানের খবরে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়। এবার টনক নড়ল সরকারি দলের। এতদিন জঙ্গি জঙ্গি বলে চিল্লাচিল্লি করে তো ভুল করে ফেলেছে। তো এবার শুধরানোর পালা। এক এক করে নেতারা বলা শুরু করলেন বাংলাদেশে জঙ্গি বলে কিছু নেই, থাকতে পারেনা, আসলে যা আছে সব জামায়াত শিবির বিএনপি ইত্যাদি। তাদের জঙ্গি জঙ্গি চিৎকার ও পরে অস্বীকার অনেকটা সেই কৌতুকের মত
ছেলে মাকে বলছে-
-মা আমি বিয়ে করব
-না বাবা তোর এখনো বয়স হয়নি
-মা তাহলে পাশের বাড়ির জড়িনার সাথে খেলি
-ছি বাবা তুই যথেষ্ট বড় হয়েছিস
দোষ চাপানোর সেই সংস্কৃতিতে এভাবেই রমনার বটমূল, ২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা, ব্লগার হত্যা, বিদেশি হত্যা থেকে আজকের শিল্প পুলিশ হত্যা পর্যন্ত সব ঘটনায় বিরোধিদলের উপর মুখস্ত দোষারোপ করা হয়েছে। অনেকটা গ্রামের ওঁঝা বা কবিরাজের তেল মাখানো আয়না দেখে চোর ধরার মত, অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ক্ষমতাসীন কবিরাজরা নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছেন জামায়াত শিবির জড়িত। এরপর শুরু হচ্ছে কবিরাজের অনুগত পাইক পেয়াদাদের চোর ধরার অভিযান। মাঠ, ঘাট, স্কুল মাদরাসার ক্লাস থেকে ধরে আনা হচ্ছে সন্দেহভাজন চোরদের। যখন বোঝা যাচ্ছে তারা নিতান্তই ছাপোষা নিরাপরাধ অথবা আওয়ামী ঘরানার তখন অনেকেই সুর পাল্টাচ্ছেন। আবার অনেক সময় পুলিশ ধরার মত কাউকেই খুজে না পেয়ে বলছে চোর ডাকাত আর নিরীহ জামায়াত শিবির ধরতে অভ্যস্ত পুলিশের পক্ষে বিদেশি, ব্লগার, বা প্রকাশক হত্যার খুনিদের ধরা সম্ভব নয়। কবিরাজের কাণ্ডকারখানা দেখে আড়াল থেকে হাসছে আসল খুনিরা। তারা বুঝে নিয়েছে যে, দেশে সহজে দোষ চাপানোর মত নন্দঘোষ জামায়াত শিবির থাকতে আমাদের দিকে আর কেউ আঙুল তুলবে না। এভাবে তারা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের চাপাতির কসরত, আর কবিরাজ মশাইও বার বার তার তেল মাখানো ঘোলা আয়নায় জামায়াত শিবিরের মুখ দেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঘোলা আয়নায় মুখ দেখে জামায়াত বিএনপির চেহারা মনে করলেও ঘোলা চেহারার লোক খুজতে ঘোল খাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। অন্যদিকে আবার সবগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও ঘোলা, খুনিদের চেহারা নাকি স্পষ্ট নয়। আগে জানতাম মানুষের চোখে ছানি পড়ে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে এসে জানলাম ক্যামেরার চোখেও ছানি পড়ে। ব্লগার, বিদেশি নাগরিক ও প্রকাশক হত্যার পরের এই ঘটনা প্রবাহ অনেকটা ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের মত-
১ম দৃশ্য: এক ছেলে ও এক মেয়ের গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগা।
২য় দৃশ্য: রিঅ্যাকশন: কেন ধাক্কা লাগল, অন্যরা ভাববে কেন তারা এখানে, কেউ বলবে প্রেম, সম্পর্ক, বিয়ে ইত্যাদি নানা সন্দেহ।
৩য় দৃশ্য: পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি
এবার আসুন বাংলাদেশের সরকারি সিরিয়ালে
১ম দৃশ্য: ব্লগার, বিদেশি নাগরিক, প্রকাশক বা পুলিশ হত্যা।
২য় দৃশ্য: রিঅ্যাকশন-
“একজন বলবে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর জন্য এই খুন”
২য় জন “জামায়াত বিএনপি শিবিরের কাজ”
৩য় জন “আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কাজ”
৪র্থ জন “যাহাই জামায়াত তাহাই শিবির তাহাই আনসারুল্লাহ, আল-কায়েদা” ইত্যাদি
৩য় দৃশ্য: পরামর্শ্, পরিকল্পনা, বা ষড়যন্ত্র:
কিভাবে ঘটনাকে ছলে বলে কৌশলে জামায়াত বিএনপির ঘাড়ে চাপানো যায়?
কয়েকদিন আগে টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখা যেত -
-ডাক্তার সাব, আমার মাথাব্যাথা
-প্যারাসিটামল তিন বেলা
-আমার বুকে ব্যাথা
-প্যারাসিটামল তিন বেলা
-আমার প্রেমিকা চলে গেছে
-প্যারাসিটামল তিন বেলা
ঠিক তেমনি:
ব্লগার হত্যা
-জামায়াত শিবির জড়িত
বিদেশি হত্যা
-জামায়াত শিবির জড়িত
তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা
-জামায়াত শিবির জড়িত
প্রকাশক হত্যা
-জামায়াত শিবির জড়িত
পুলিশ হত্যা
-জামায়াত শিবির জড়িত
তাদের কথা তাদের অনুমান দেখে বুঝা যায় দেশ কতটা এগিয়ে গেছে জামায়াত শিবির ছাড়া দেশে যত জঙ্গি, সন্ত্রাসী বা খুনি ছিল সব থাইল্যান্ডের পাতায়ায় ছুটি কাটাতে গেছে অথবা হস্তপদহীন পঙ্গু হয়ে গেছে। যেহেতু তাদের পক্ষে খুন করা সম্ভব নয় তাই জামায়াত শিবিরই জড়িত। যদিও তদন্ত শেষে জামায়াত শিবিরের নূন্যতম সংশ্লিষ্টতা খুজে পেতে তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। বরং তাদের দলীয় লোকের সংশ্লিষ্টতা খুজে পেয়ে কেঁচো খুরতে সাপ বেড়িয়ে আসার ভয়ে তদন্ত স্লো হয়ে গেছে অথবা থেমে গেছে। এভাবেই দেশজুড়ে অস্ত্রবাজি, শিক্ষাঙ্গনে রামদায় শান দেয়া সন্ত্রাসীদের অভিভাবকেরা রক্ষীবাহিনী বাকশালীদের উত্তরসূরীরা আজ কত ভদ্র কত সভ্য কতটা সাধু। কবির ভাষায়-
আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে-
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!
বিষয়: রাজনীতি
৯৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন