প্রধান মন্রীর অর্থায়নেই সুস্থ হয়েছিলো বদরুল;
লিখেছেন লিখেছেন হারেছ উদ্দিন ১২ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:৩৭:২৬ দুপুর
সিলেট সরকারী মহিলা কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের উপর পৈশাচিক হামলাকারী শাবি ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের অতীত কর্মকান্ডের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বদরুল শুরু থেকেই সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে ছিল জড়িত। খাদিজার বাড়িতে লজিং থাকাকালীন খাদিজা ছিল তার কিশোর ছাত্রী। একপর্যায়ে বদরুল আসক্ত হয়ে পড়ে খাদিজার উপর। উত্যক্ত করতে থাকে তাকে। একারণে তাকে লজিং থেকে তাড়িয়ে দেন খাদিজার অভিভাবকরা। এরপরও থেমে থাকেনি বদরুল। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই খাদিজাকে উত্যক্ত করতো সে।
২০১২ সালের মধ্য জানুয়ারীর ঘটনা। খাদিজাকে উত্যক্ত করতে গিয়ে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার জাঙ্গাইল সফির উদ্দিন স্কুলের সামনে গনধোলাই খেয়ে গুরুতর আহত হয় বদরুল। তখনকার সময়ে আওয়ামীলীগ নেতা ও কিছু মিডিয়া এটাকে রাজনৈতিক হামলা বলে চালিয়ে দেন এবং ঘটনার জন্য প্রতিপক্ষ জামায়াত-শিবিরকে এককভাবে দায়ী করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে দেন। সে সময়ে বদরুলের পক্ষে শাসকদল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা মানববন্ধনও করেন। পত্রিকায় বক্তৃতা বিবৃতি দেন। তাদের কর্মসূচী পালনের সচিত্র সংবাদ গনমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ পায়। উত্যক্ত ও গনপিটুনী খাওয়ার ঘটনায় অতি উৎসাহী হয়ে থানা পুলিশ মামলা নেয় এবং জামায়াত-শিবিরের ৮ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। মামলাটি এখনো আদালতের বিচারাধীন।
তখনকার ঘটনায় মিডিয়া তাকে ছাত্রলীগের নিবেদিত উল্লেখ করে সংবাদের শিরোনাম করেছিল “বদরুল আর হাটতে পারবে না, শিবির কেড়ে নিল তার স্বপ্ন”। তার প্রতি সহানুভতি দেখাতে গিয়ে ড. জাফর ইকবাল লিখেছিলেন “মেধাবী বদরুলের আর হাটা হবে না”। আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং মিডিয়া আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূল বুঝিয়ে তাঁকে বদরুলের চিকিৎসার ভার গ্রহণ করান। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদরুলকে দুই লাখ টাকা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থায়নেই সুস্থ হয়েছিল ছাত্রলীগের বদরুল। এছাড়া গনপিটুনী খাওয়ার পুরস্কার হিসেবে দুবছরের জন্য তাকে শাবি’র হলে একটি উন্নতমানের সিটও বরাদ্দ দেয়া হয়।
পরবর্তীতে সে আর ওই হল ত্যাগ করেনি। এখানেই শেষ নয়, ইভটিজিংয়ে গনপিটুনী খাওয়ার পুরস্কার স্বরূপ তাকে দেয়া হয় শাবি ছাত্রলীগের সহ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ন পদ, যে পদে সে এখনো বহাল রয়েছে। কিন্তু গত ৩ অক্টোবর সোমবার সিলেট এমসি কলেজের পুকুরপারে প্রকাশ্যে খাদিজার উপর পৈশাচিক হামলার পর ঘটনার মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। ওই মিডিয়াই অতীত ভুলে গিয়ে এখন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে খাদিজাকে উত্যক্তের ঘটনায়ই সে সময় মার খেয়েছিল বদরুল। আর তখনই ছাত্রলীগ বলছে বদরুল তাদের দলের কেউ নয়। প্রবাদ আছে, “মুখের কথা বাতাসে মিশে যায়, কিন্তু কগজের লেখা শতাব্দিকাল থেকে যায়।" ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন তার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনপত্রটা এখন আর বদলাতেও পারছেন না তারা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকালে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম।
এ সময় সে চাপাতি দিয়ে খাদিজার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপাতে থাকে। এতে খাদিজা মাথা ও পায়ে গুরুতর আঘাত পান। পরে খাদিজার সহপাঠী ও স্থানীয়রা ধাওয়া করে বদরুলকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।একই সঙ্গে স্থানীয়রা খাদিজাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করে সেলাই দেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার ভোরে খাদিজাকে রাজধানী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আরেক দফা তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল খাদিজার ওপর হামলার কথা স্বীকার করে গত বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
-আমাদের সিলেট ডটকম
বিষয়: বিবিধ
৯৮৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন