ছোট্ট রুমাল বিক্রেতা যখন অনুপেরণা জোগায়
লিখেছেন লিখেছেন শরীফুল ইসলাম শরীফ ০৬ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৪০:২৯ সকাল
সুন্দর একটা পার্ক। কেউ বেঞ্চিতে বসে আছে। কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে। হকাররা এলোমেলো পশরা নিয়ে ঘুরছে। একজন যুবতী একা বসে বসে, হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
.
ছোট্ট একটা মেয়ে হেঁটে হেঁটে হাতরুমাল বিক্রি করছিল। তার চোখ পড়লো কান্নারত যুবতীর ওপর। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে পিঠে হাত দিয়ে একটা রুমাল বাড়িয়ে দিল। ইশারায় চোখ-মুখ মুছে ফেলতে বললো।
.
যুবতী অবাক! তবুও কান্না থামিয়ে মুখ মুছল। রুমালের দাম চুকানোর জন্যে, ভ্যনিটি ব্যাগ খুলে হাতড়াতে লাগল। টাকা বের করে দেখে, ছোট্ট মেয়েটা টাকা না নিয়েই চলে গেছে। অনেক দূরে।
.
যুবতি স্বামীর সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। ছোট্ট খুকিটার আচরণে তার মনটা ভীষণ ভাল হয়ে গেল। সকালের তিক্ত ঝগড়ার সামান্য রেশও মনে অবশিষ্ট থাকলো না। সাথে সাথে ক্ষমা চেয়ে স্বামীর কাছে একটা সুন্দর মেসেজ পাঠাল।
.
স্বামী বেচারা মনের দুঃখে একটা রেষ্টুরেন্টে মন খারাপ করে বসে ছিল। সামনে এক গাদা খাবার। কিন্তু গলা দিয়ে একটা দানাও নামাতে পারছে না। মনে এত জ্বালা নিয়ে খাওয়া যায়? হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। দেখবে না দেখবে না করেও মোবাইলটা হাতে নিল:
= স্ত্রীর মেসেজ!
স্বামী ভীষণ অবাক হলো। এমনটা তো সচরাচর ঘটে না! ঝটপট মেসেজটা পড়ে স্বামী আকাশ থেকে পড়লো:
-সে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে! কী আশ্চর্য! কী আনন্দ!
টেবিলে খাবারগুলো আধখাওয়া রেখেই উঠে পড়লো। বেয়ারাকে বিল আনতে বললো। তুরন্তু বিল মিটিয়ে বের হয়ে এল। কী মনে করে আবার রেস্তোরাঁয় দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো। বেয়ারার হাতে মোটা অংকের একটা নোট গুঁজে দিল। বেয়ারা এতবড় নোট দেখে রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লো। তার হাসি দু’কানে গিয়ে ঠেকলো।
.
বিকেল বেলা। রেস্তোরা এখন বন্ধ হয়ে যাবে। বেয়ারা তার আটপৌরে ইউনিফর্ম ছেড়ে বাড়ির পোষাক পরলো। সুপার মার্কেটে গিয়ে দু’হাত খুলে বাজার করলো। অনেকদিন ঘরে ভালাবুড়া রান্না হয় না। ব্যাগভর্তি বাজার হাতে ঘরে ফিরছে। সামনে পড়লো বড় মসজিদ। আসরের আযান হচ্ছে। কোনও দিন যা করে না, আজ তাই করলো। ওযু করে নামাযটাও পড়ে নিল। মনটা আজ বেশ ফুরফুরে। এত বাজার করার পরও পকেটে অনেক টাকা!
নামায পড়ে বের হলো। মসজিদের সামনে বিশাল চত্ত্বর। ঝাঁক ঝাঁক পায়রা উড়ছে। একটা জীর্ণ কাপড় পরা শীর্ণ বুড়ি বসে আছে। সামনে ছোট ছোট প্যাকেটে গম-যব-ভুট্টা রাখা আছে। বেয়ারা দ্রুত বুড়িমার কাছে গেল:
-সবগুলো প্যাকেট একসাথে কতো?
-একশ টাকা।
বুড়ির মুখে ফোকলা হাসি। আজ ভালোই বেচাকেনা হয়েছে। বেয়ারা পকেট থেকে একশ টাকার দুইটা নোট বের করে বুড়ির দিকে এগিয়ে দিল। কিছু না বলে, পেছনের দিকে না তাকিয়ে হনহন করে হাঁটা দিল।
.
বুড়ি তখন খুশিতে চতুর্থ আসমানে। তাড়াতাড়ি লাঠিটা হাতে নিয়ে ঠকঠক বাড়ির পথ ধরলো। পাড়ার ছোট্ট বাজারে গিয়ে কী মনে করে একটা মোরগ কিনল। সাথে প্রয়োজনীয় মশলাপাতি। মুচকি হাসতে হাসতে ঘরে ফিরল।
রান্না চড়িয়ে দিল। সব শেষ করে, খাবার সাজিয়ে ফেললো। জোরে ডাক দিল:
-নাদিয়া! এসো দাদুভাই রাতের খাবারটা আজ একটু আগেই সেরে ফেলি! খাবারের পর আবার পড়তে বসো!
একটা ছোট্ট বালিকা খরগোশের মতো ছুটতে ছুটতে হাযির হলো:
-ও মা! দাদু এ যে মোরগ রান্না করেছ! আগে বলবে তো! ইশ কত্তো দিন হলো, মোরগের গোশত খেয়েছি!
-আজ কয়টা রুমাল বিক্রি করেছো?
-একটাও না!
-তাহলে একটা রুমাল কম দেখলাম যে…………….
(ফেসবুক হতে সংগৃহিত)
বিষয়: বিবিধ
১৪৭০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন