অসহিঞ্চু বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোন পথে?
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক এহ্সান ০১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:০২:৩০ বিকাল
বাংলাদেশ আজ এক নতুন সংকটের মুখোমুখি। হাজার বছরের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা নিয়ে যে জাতি গৌরবময় ইতিহাস তৈরি করেছিলো তা আজ হুমকির সম্মুখীন। পরস্পর সংক্্ষুদ্ধ এই অবস্থায় আমার শুধু এটাই মনে হচ্ছে বাংলাদেশ কি তবে ইরাক, সিরিয়া বা আফগানিস্তান এর মত পরস্পর লড়াইরত অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে? আমাদের শান্তিপ্রিয় যে সহাবস্থান এর ঐতিহ্য আমরা হাজার বছর ধরে গড়ে তুলেছিলাম তা কি নষ্ট হয়ে যাবে? ইরাক, সিরিয়ার মত আমার দেশেও মানুষ অনিরাপদ থাকবে?
বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশের চাইতে বাংলাদেশ এর ব্যপারটা ভিন্ন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ পরস্পরের কাছাকাছি এসে দেশ বা রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেছে কিন্তু বাংলাদেশ এর অধিকাংশ মানুষ এর সংস্কৃতি এক। তারা অধিকাংশইঈ বাংলায় কথা বলে, একই খাবার খায়, একই সংস্কৃতি এর ঐতিহ্য কে লালন করে। এইদেশে অধিকাংশ মুসলিম আর হিন্দু প্রত্যেকেই ধর্মপ্রাণ হওয়াই পরস্পর সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে তাদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি লালন পালন করেছে। কখনো কোন সমস্যা তৈরি হয় নি। রাজনৈতিক বিভিন্নতা ছিল তবে তা কখনোই দেশকে এতটা অনিরাপদ করেনি।
কিন্তু হঠাৎ সব যেন উল্টে যাচ্ছে শত বছরের আবহমান বাংলাদেশ আজ পুরোপুরি বদলে গেলো। যুদ্ধাপরাধ এর বিচারকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধীদের প্রতি নিপীড়ন, বিরোধী মতের প্রতি দলন পীড়ন, ক্ষমতার উগ্র বহিঃপ্রকাশ দেশে এক নয়া ফ্যাসিবাদ এর জন্ম দিলো। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর সব কিছুতেই পাকিস্তান এর হাত আবিস্কার করে "জঙ্গী" দমনের বুলি আউরে গেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠি। বিরোধী দলগুলোর প্রতি ফ্যাসিবাদী আচরণ এর ফলে বিরোধী দলগুলোর রাজপথে বাধ্য হয়ে আন্দোলন এর নামে সন্ত্রাস করতে থাকে। চারিদিকে জঙ্গী আবিস্কার এর ধুয়া তুলার ফলে বাংলাদেশ ক্রমেই অসহিঞ্চুতার দিকে পা বাড়াই।
আজ সরকার যখন অসহিঞ্চুতার পথ ধরলো ঘৃণার নিয়ম মেনে বিরোধীদলও অসহিঞ্চুতার পথ ধরলো। জামায়াতে ইসলামি কে দমন এর জন্য ধর্মনিরেপেক্ষতার নামে নাস্তিকতা কে প্রণোদনা দেওয়া হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আই ওয়াশের আন্দোলনে তাদেরকে গণজাগরণ মঞ্চের সুচনা করতে দেওয়া হলো। এরপর আমরা দেখতে পায় গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদী বিভক্তির রাজনীতি শুরু হলো। ক্রমে ক্রমে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, ভারতের দালাল-পাকিস্থানের দাল, নাস্তিক -আস্তিক সহ নানা শ্রেণীতে মানুষ কে বিভক্ত করা হলো। এবং তখনই বাংলাদেশ ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে কারন হাজারো বিভক্ত জাতি কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। আর হিফাজত এর প্রতি ক্রাকডাউন, আর হিফাজত কতৃক সকলকে নাস্তিক ট্যাগ দেওয়া। বিরোধী দলকে জঙ্গী উপাধি দিয়ে ক্রসফায়ার আর রাজপথে গুলি করে আর বিরোধী দলের রাজপথে সন্ত্রাস এই আগুনে ঘি ঢেলেছে মাত্র। আর রাজনীতিতে কখনো শুন্য স্থান থাকে না তাই গনতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়াই অসহিঞ্চুতার পথ তৈরি হয়েছে। যার ফলাফল আজ চারিদিকে জঙ্গী ভুত সত্যে পরিণত হয়েছে।
আমাদের সবচাইতে বড় দুর্ভাগ্য মনে হয় স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও আজো একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি থেকে বিভক্ত জাতিতে পরিণত হওয়া। আজ বাংলাদেশে ভারতপন্থী অনেক খুজে পাওয়া যাবে আবার পাকিস্তানপন্থী ও একেবারে বিরল নয়। কিন্তু বাংলাদেশ পন্থী হয়ত পাওয়া যাবে না। সত্যি বলতে কি বাংলাদেশ এর আজ প্রয়োজন বাংলাদেশ পন্থী মানুষ। সকল মত পার্থক্য ভুলে নিজেকে বাংলাদেশী মনে করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই সংকটের সমাধান করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে অসহিঞ্চুতা কখনোই ভাল কিছু দেয় না। বরং আরেকটা অসহিঞ্চুতার জন্ম দেয় মাত্র। আপনি যখন আপনার বিরোধী কে পাকিস্তান এর দালাল বলে তার অধিকার কে অস্বীকার করছেন তখন সেও আপনাকে ভারতের দালাল নাস্তিক বলে ভারতে পাঠাতে চাইবে। তখন এই দুস্কৃতিকারীরা এর সুযোগ নেবে এটাই স্বাভাবিক। আর যেকোন কিছুতে শুধু বিরোধী দলকে দায়ী করতে কাজ শেষ করাটা খুব ভালো উদাহরণ তৈরি করবে না।
বিষয়: বিবিধ
১০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন