সিরিয়া: নতুন স্নায়ু যুদ্ধের লীলাভূমি ১ম পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক এহ্সান ২৩ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৩৯:৩০ রাত
বিশ্ব আবার নতুন একটি সংকটের মুখোমুখি। আরব বসন্ত
যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বসন্তের আশা নিয়ে
এসেছিলো তা আজ শীতের রুক্ষতার রুপ নিয়েছে। আরব
বসন্তের সুতিকাগার তিউনিসিয়ায় রাশিদ ঘানুচির মত
নির্লোভ নেতা থাকায় মোটামুটি শান্তির পরিবেশ
বজায় থাকলেও বাকি দেশগুলোতে শান্তি এখনো অধরা।
মিশর আবার ফিরে গেছে স্বৈরশাসনে, লিবিয়া
গৃহযুদ্ধতে লিপ্ত। তবে সবচাইতে ক্ষতির সম্মুখীন মুলত
সিরিয়া। এখানে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো পরস্পর যুদ্ধে
লিপ্ত। আর তাদের শক্তির লড়াইয়ে বলী হচ্ছে নিরীহ
সিরীয় নাগরিকগন।
সংকটের ইতিহাস
সিরীয় সংকটের ইতিহাস অনেক পুর্ব থেকে চলে আসবে।
মুলত স্বাধীনতার পর থেকেই প্রাচ্যের অনেক দেশের মত
এখানেও নেতাদের খেয়ালখুশির স্বৈরশাসন শুরু হয়।
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর হাত থেকে যখন এই দেশগুলো
স্বাধীন হয় তখন তারা উদ্ভট এক সীমানা তৈরি করে। মুলত
সিরিয়াতে তিনটি জাতিগোষ্ঠী বাস করে আরব
(সুন্নি), কুর্দি, শিয়া তাদের পরস্পরের ভেতর সদ্ভাব নেই
বললেই চলে। এর ভেতর কুর্দিরা কুর্দি ভাষাভাষী
অঞ্চলগুলো নিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠন করতে চাই। আরব
সুন্নিরা কখনো শিয়াদের মেনে নেয়নি আর জনসং্খ্যার
মাত্র ৮% হওয়ার পরেও শিয়ারা সিরিয়ার প্রায় সর্বময়
ক্ষমতার অধিকারী। আর বাশার আল আসাদের পিতা
হাফিজ আল আসাদ এক সামরিক অভ্যুত্থান এর মাধ্যমে
ক্ষমতা দখল করে পুরো সিরিয়াজুরে এক ভয়ের শাসন
কায়েম করেন। তার শাসনামলে তার বিরোধী
ইসলামপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুড এর প্রায় আড়াই লাখ নেতা
কর্মী কে হত্যা করেন। তিনি রাশিয়ার মিত্র হিসেবে
একনিষ্ঠ রাশিয়ার দালালী করেন। বাদশাহ ফয়সালের
মৃত্যুর পর উপযুক্ত নেতার অভাবে যখন উপসাগরীয় আরব
দেশগুলো আমেরিকান দালালে রুপান্তরিত হয় তখন
হাফিজ আলল আসাদ একাই রাশিয়ার দালালী করতে
থাকেন। আর রাশিয়াও তার একনিষ্ঠ দালাল কে রেখে
কোথাও যায়নি।
পরবর্তীতে হাফিজের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসে বাশার আল
আসাদ।
নতুন বতলে পুরনো মদ: বাশার আল আসাদ
হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায়
এলেন বাশার আল আসাদ। বাশার তার
বাপের মত জানোয়ার হলেও বুদ্ধিমান
ছিল। তাই স্বৈরশাসক দের চিরায়ত
চমক দেওয়ার রাজনীতি শুরু করেন।
ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দেন
শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের। উদার
গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা
চালুর ঘোষণা দেন তিনি। জনগণ কে
অনেক আশার বাণী শুনালেন। জনগণ
বিশ্বাস করলো। এমন কি এক বছর
মেয়াদী সংস্কার কমিটিও গঠন
করলেন। বুদ্ধিজীবীরা ধন্য ধন্য করে
না না থিওরি দিলেন। বাশার
মনযোগ দিয়ে শুনলেন। এরপর যখন ক্ষমতা
মোটামুটি পাকাপোক্ত হয়ে গেলো।
বাশার তার পিতার মত নিপিড়নের
শাসন চালু করলেন। সকল রাজনৈতিক
নেতাদের টাকা দিয়ে কিনে
নিলেন, যারা বিক্রি হলো না
তারা মারা গেলো। আর
ইসলামপন্থীরা তাদের কাজ করে
যেতে লাগলো আর মারা যেতে
থাকলো। এছাড়া বাশারের হাতে
ছিল "ইসরাইল" নামক কুমীর। বাশার
যখনি কোন বিপদে পরতো। তখনি
সিরিয়া-ইসরাইল সীমান্তে কোন
ঝামেলা হতো। আসাদ তখন জাতীয়
ঐক্যের ডাক দিয়ে জনগণ এর দৃষ্টি
অঅন্যদিক ফিরিয়ে দিত। আর
আসাদের সার্বক্ষণিক সসহযোগী ছিল
তার গোত্রভুক্ত শিয়ারা। মুলত তারাই
ছিল সকল ক্ষমতার অধিকারী। এছাড়া
সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক জনগণ সরকারী
কিংবা সরকার নিয়ন্ত্রিত
প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে তাই তাদের
পক্ষে কখনোঈ সম্ভব নয় আসাদের
বিরোধিতা করে। আর বাকিদের
কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে আসাদের
বিরোধিতা করবে? তাই মাঝে
মাঝে পাঁচই জানুয়ারি মার্কা
নির্বাচন দেওয়া আর ইসরাইল কে
হুমকি দিয়ে আসাদ এর দিনকাল বেশ
ভালোই চলছিল। ও আরেকটা কথা তার
প্রভু রাশিয়া কিন্তু তাকে কখনো
ছেড়ে যায় নি। সাম্রাজ্যবাদীদের
পুরাতন নিয়ম মেনে সাপ হয়ে দংশন
আর ওঝা হয়ে ঝেড়ে রাশিয়াও বেশ
খুশি ছিল। কারন সিরিয়া ছিল
রাশিয়ার অন্যতম অস্ত্র ক্রেতা।
আরব বসন্ত
সবার সবকিছু ভালো চললেও ঝামেলা
তৈরি করলো বুজাওজী নামের এক
সব্জী বিক্রেতা। সারাজীবন আরব
শেখ আর নেতারা শুধু বিলাসিতা
করেছে আর সুইস ব্যাংকে টাকা
জমাইছে। কিন্তু আরব সাধারণ জনগণ এর
ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা
দুঃখ আর দারিদ্রে দিন কাটাতো।
সে যায় হোক বুজাওজী বেকারত্বের
জ্বালা সইতে না পেরে নিজের
গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করলো।
আর তাতেই সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যে আগুন
জ্বলে উঠলো। গণবিক্ষোভ এর মুখে
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট
পালিয়ে সৌদিআরব এ আশ্রয় নিলো।
বিশ্ব দেখলো এক নয়া জাগরণ।
মিডিয়া খুব সুন্দর গালভরা একটা নাম
দিল "আরব বসন্ত"। মিসরের ত্রিশ বছরের
স্বৈরশাসক মুবারক এর যখন পতন হলো
সিরিয়াবাসীও তখন বিক্ষোভ করছে।
বাশার তখন তার পুরনো অস্ত্র ব্যবহার
করলো। বললো শাসনতান্ত্রিক
সংস্কার করবো নির্বাচন দিব আরো
কত কি!!! এরপর নেতাদের কিনতে
চাইলো কারন তরুন ইসলামপন্থী
নেতাদের কেনা সম্ভব নয়। তখন শেষ
অস্ত্র হিসেবে গণহত্যা চালালো।
কাহাতক আর সহ্য হয়? আরব সুন্নি আর
কুর্দি সেনারা বিদ্রোহ করলো এবং
গঠন করল ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। তারা
আআলেপ্পো দখল করলো। আর বিদ্রোহ
এর ডাক দিল। তাদেরকে সর্বাত্মক
সহযোগিতা করল আমেরিকা ও তার
পশ্চিমা মিত্ররা। গৃহযুদ্ধ শুরু হলো
সভ্যতার অন্যতম জন্মদাতা সিরিয়াই।
রাশিয়া কিন্তু তার পুরনো দালালকে
তখনো ত্যাগ করেনি
বিষয়: আন্তর্জাতিক
৯৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন