ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি সম্মান এবং কোরবানি প্রসঙ্গ মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:৪১:৪৭ সকাল
আজকে অরাজনৈতিক বিষয় লিখব। আমার কলাম প্রতি বুধবারে নয়া দিগন্তে বের হয়। গত বুধবারের পর থেকে আজ বুধবার ১৬ সেপ্টেম্বর এই সপ্তাহের সবচেয়ে বড় খবর ছিল ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন। গত সাত দিনে আরেকটি আবেগস্পর্শী খবর ছিল মক্কা নগরীতে পবিত্র মসজিদুল হারামে ক্রেন ভেঙে পড়ার দুর্ঘটনায় শতাধিক হাজীর মৃত্যু। আগামী সাত দিনের ব্যস্ততা হবে, কাছে এগিয়ে আসা পবিত্র ঈদুল আজহার প্রস্তুতি। তাই আজকের কলামে, এই দু’টি বিষয়ে সংপ্তি কথা লিখছি। প্রথমেই ছাত্রদের আন্দোলন; সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকদের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন।
ভ্যাট আরোপিত হয়েছে অনেক আগেই। প্রথমে ছিল ১০ শতাংশ। তারপর, দেনদরবার করে এটাকে ৭.৫ শতাংশে আনা হয়েছে। কোনো কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আদায় করা শুরু হয়। বেশির ভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আদায় শুরু হয়নি। এমতাবস্থায় ছাত্ররা অধিকতর সচেতন হলো, নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করল, সঙ্ঘবদ্ধ হলো। ফেসবুকে একটা শব্দ পেলাম ইংরেজি ভাষায় ক্যাপিটাল লেটারে : পিইউএসএবি অর্থাৎ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ অথবা স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ। কে বা কারা এই ভ্যাটবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলল সেটা হুবহু জানা মুশকিল।
প্রত্যেক মানুষই তার অন্তরে একাধিক সত্তা লালন করে। আমি একজন পিতা; আমি একজন সচেতন কলামলেখক; আমি একজন রাজনীতিবিদ। অন্য কিছু বললাম না। আমার সন্তানেরা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি ইত্যাদিতে পড়েছে। আমার ঘনিষ্ঠরা প্রাইম এশিয়াতে পড়েছে। সুতরাং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের মনের বেদনা ইত্যাদির সাথে একদম আপ টু ডেট না হলেও মোটামুটি সুপরিচিত। এরূপ প্রোপটে আমার পিতার সত্তা বলছিল, ছাত্রদের কাছে ছুটে যাই; তাদের পাশে দাঁড়াই। ঢাকা মহানগরের ছাত্রদের বড় বড় জমায়েত হয়েছিল চারটা জায়গায় যথা উত্তরা, রামপুরা, মহাখালী ও বনানী। মহাখালী ছাত্র জমায়েতের স্থান আমার আবাসস্থল থেকে খুব কাছে। কিন্তু আমার ভেতরের রাজনীতিবিদ সত্তা বলছিল, ‘ইবরাহিম তুমি যেও না। তুমি গেলে তোমার বিরুদ্ধে তাৎণিক অভিযোগ আনার সুযোগ পাবে সরকার, এই মর্মে যে, তুমি উসকানি দিতে গিয়েছো।’ শেষমেশ রাজনীতিবিদ অংশই জিতে গেল। কিন্তু পুরোপুরি জেতা নয়।
ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড তথা ইন্টারনেট জগৎ যেহেতু ফেসবুকের সাথে জড়িত, সেটার সদ্ব্যবহার করলাম। ছাত্রদের দাবির সমর্থনে আছি, এই মর্মে তিনবার পোস্ট দিলাম। আমার মন একটু শান্ত হলো। ছাত্রদের কষ্ট, অভিভাবকদেরই কষ্ট। সোমবার ১৪ সেপ্টেম্বর সকালবেলা কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলো, ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। বিভিন্ন মিডিয়া বা অনলাইন পত্রিকার ব্রেকিং নিউজ পেলাম। খুব খুশি হলাম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন সফল হলো। আমরা যারা অভিভাবক, আমাদের শুভেচ্ছা ও দোয়া কাজে লাগল। ছাত্রদের আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল আধা-সরব আধা-নীরব নেতৃত্ব; শান্তিপূর্ণ কর্মতৎপরতা, আন্দোলনের পাশাপাশি নাগরিকদের কষ্ট লাঘবের জন্য ছাত্রদের দ্বারাই যথাসম্ভব চেষ্টা ইত্যাদি। আন্দোলনটিকে বেশি দিন গড়াতে না দিয়ে, আন্দোলন আরো ব্যাপক হওয়ার আগেই, ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে, সরকার বিচণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে।
আমার ফেসবুকের পোস্টের সাথে প্রচুর ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। করাটাই স্বাভাবিক। সবার মন্তব্য পড়ে আমার প থেকে আমিই উত্তর দিতে চেষ্টা করব; এটাই সৌজন্য, কিন্তু সময় লাগবে। অনেক মন্তব্যকারীর প থেকে যে কয়েকটি কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো এবং ছাত্র তথা তরুণ সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া ফোনের কথাবার্তা ইত্যাদির সারমর্ম থেকে পাঁচটা পয়েন্ট উল্লেখ করছি। (এক) অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান সন্তোষজনক নয়। (দুই) অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এমন পরিবেশে এমন দালানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে যে, সেটাকে বাজার মনে হয়। (তিন) অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক সঙ্কট প্রকট। (চার) অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের হাতে নোট বা শিট দিয়ে দেয় এবং ওইটুকু থেকেই পরীক্ষা নেয়, অর্থাৎ ব্যাপক লেখাপড়ার সুযোগ নেই। (পাঁচ) অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীকেরা অস্বচ্ছতা অবলম্বন করেন এবং ছাত্র বা ছাত্রীর চেহারা দেখে পপাতিত্বমূলক আচরণ করেন। মন্তব্যকারীরা বললেন, আমরা যারা টেলিভিশনে টকশোতে অংশগ্রহণ করি অথবা পত্রিকায় কলাম লিখি, তারা যেন এই প্রসঙ্গগুলো তুলে আনি।
যেহেতু আমি অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যাপকভাবে চিনি না সেহেতু আমার পে ব্যাপকভিত্তিক নেতিবাচক মন্তব্য করা ন্যায়সঙ্গত হবে না। কিন্তু মন্তব্যকারীদের কথার ভিত্তিতে অন্তত এতটুকু বলতে পারি যে, ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের আরো শক্তিশালী, আরো কর্মতৎপর এবং আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নাগরিক জীবনের যেকোনো েেত্রই অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অঙ্গন, তাদের অভিভাবক হলো ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশন। সুতরাং কোনো একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কখন যাবে, স্থায়ী ক্যাম্পাসটি সঠিকভাবে করা হচ্ছে কি না, ছাত্রছাত্রীদের সিলেবাসগুলো বাস্তবসম্মত কি না, পরীক্ষা নেয়ার পদ্ধতি স্বচ্ছ কি না ইত্যাদি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করার দায়িত্ব বর্তায় ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের ওপর। ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের বক্তব্য বা সুপারিশগুলোকে সিরিয়াসলি নেয়ার প্রয়োজন আছে।
সবচেয়ে মজার কথা হলো, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন করতে গিয়ে, ফেসবুকে অংশগ্রহণ করে বা কথাবার্তার মাধ্যমে আরো দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আবিষ্কার করলাম। এ রকম একটি কথা হলো, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার করার জন্য হলে থাকে না তথা অনাবাসিক একজন ছাত্রের যে খরচ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সে খরচ বহু বহু গুণ বেশি। এটা হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশে বিদ্যমান পুঁজিবাদী, শোষণবাদী, বৈষম্য সৃষ্টিকারী সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ফল। আবিষ্কার করা আরেকটি জিনিস হলো, প্রাইভেট প্রাইমারি বা হাইস্কুলগুলো তথা কিন্ডার গার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর মধ্যে অনেকই তাদের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করছে অনেক দিন ধরে। ফেসবুকে অনেক স্কুলের মাসিক টাকা জমা দেয়া রসিদের ফটোকপি দেখলাম। আমার নিজের তিন নাতি। মেয়ের ঘরের দুই নাতি এক স্কুলে পড়ে এবং ছেলের ঘরের এক নাতি আরেক স্কুলে পড়ে। কিন্তু এরূপ স্কুলগুলোতে পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের আন্দোলনে নামা সম্ভব নয়। তাদের অভিভাবকদেরও তাদের কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে আন্দোলনে যাওয়া সম্ভব নয়। শিশু ‘আইলান’ নিজের জীবন দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে সচেতন করেছে বিদ্যমান শরণার্থী সমস্যা প্রসঙ্গে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন করে আমাদেরকে বলে গেল প্রাইভেট শিক্ষাব্যবস্থায় গরমিলের দু-একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।
আমি কেন ছাত্রদের ভ্যাটবিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করলাম? আমার মতে, শিক্ষাকে পণ্যের স্তরে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। শিক্ষা কোনো পণ্য নয়। যদিও বারবার বলা হচ্ছিল যে, ছাত্ররা এই ভ্যাট দেবে না, কিন্তু এটা আমি বা আমার মতো সচেতন নাগরিকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের কথাবার্তার স্থিতিশীলতা নেই। মুহিত সাহেবের কথার সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কথার মিল নেই। আরো একটি ব্যাখ্যা আছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তথা তাদের কর্তৃপ এমন কোনো দুঃখে পড়েনি যে, তারা নিজেদের তহবিল থেকে এই ভ্যাট দেবে। বাংলাদেশের রেওয়াজ মোতাবেক, ছাত্ররা প্রতারিত হতে বাধ্যই ছিল তথা ছাত্রদের কাছ থেকেই এই ভ্যাট আদায় হতো। এই কথাগুলো ছাত্ররা বুঝেছিল। তাই তারা আন্দোলনে নামে। তাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। তাদেরকে অভিনন্দন। এখন শিক মহোদয়দের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলি।
শিক্ষাঙ্গনে দুইটি অংশ। একটি অংশের নাম ছাত্র; আরেকটি অংশের নাম শিক। ছাত্ররা যখন ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন করছে, তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিকেরাও আন্দোলন করছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি। আমার পোস্টের ভাষাটি ধার করেছি প্রথম আলোতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি কলাম থেকে। আমি সম্মানিত শিকদের দাবির সাথে সম্পূর্ণ একমত। যতটুকু বুঝতে পেরেছি, মাননীয় শিকদের দাবিতে দুইটি অংশ আছে। যথা প্রথম অংশ হচ্ছে সম্মান ও মর্যাদা এবং দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে আর্থিক পাওনা। প্রথম অংশ সঠিকভাবেই গুরুত্ব বেশি পাচ্ছে। আমি এই দাবি সমর্থন করি। সমাজের অন্য পেশাজীবীদের সাথে বা তুলনায়, সম্মানিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকদের মর্যাদা উপযুক্তভাবে দেয়া না হলে, আমরা ছাত্ররাই লজ্জা পাওয়ার কথা। আমি নিজেও শিক হতে পারতাম কিন্তু হতে পারিনি। কারণ, অন্য পেশা বেছে নিয়েছিলাম। মতাসীন রাজনৈতিক সরকারের কাছে আমার আবেদন, শিকমণ্ডলীর দাবি মেনে নিন। শিকদের যে সংখ্যা তাতে অতিরিক্ত আর্থিক ব্যয়ের অঙ্কটি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ার কথা নয়। তাদেরকে মর্যাদার আসনটি ফেরত দেবেন কি না এটাই প্রশ্ন। আমার আবেদন, ফেরত দিন। এখন পবিত্র মক্কা শরিফ প্রসঙ্গ।
পবিত্র হারাম শরিফে দুর্ঘটনা হয়েছে। যে দিন দুর্ঘটনা হয়, ওই দিনটি ছিল শুক্রবার ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যাবেলা। ঘটনাক্রমে মোবাইল ফোনটি সামনে ছিল। বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের সময়ের মধ্যে পার্থক্য তিন ঘণ্টা। আমাদের দেশে সূর্য আগে ওঠে এবং আগে অস্ত যায়। বাংলাদেশে যখন রাত ৯টা, সৌদি আরবে পবিত্র মক্কা-মদিনায় তখন সন্ধ্যা ৬টা। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার কিছু পর ফেসবুকের নিউজ ফিডে দেখতে পেলাম মক্কা শরিফে গিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের পোস্ট। মক্কা শরিফে, হারাম শরিফের এলাকায় ঘূর্ণিঝড় তথা টর্নেডো তথা বালুঝড় হচ্ছিল। এর পর পরই মুষলধারে বৃষ্টি নামে। তুফানের প্রভাবে এবং অন্য কোনো অজ্ঞাত কারণে একটি বিশাল আকারের ক্রেন ভেঙে পড়ে। সাথে সাথে মানুষ হতাহত হয়। কিছুণ পরই ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু তথ্য জানা শুরু হয়। আরো কিছুক্ষণ পর টেলিভিশনের সংবাদমাধ্যমে খবর আসা শুরু হয়। প্রথমে খবর বের হলো, ৫০ জন মারা গিয়েছেন। ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১০৭ জন বা ১০৮ জন হয়েছে। এই খবর আমাদের মনকে ব্যথিত করেছে। তবে এই খবর মনকে আনন্দিতও করেছে। ব্যথিত করেছে এ জন্য যে, দুর্ঘটনা হয়ে গেল, কারো না কারো পরিবার তাদের সদস্য হারালো। আনন্দিত হয়েছি এ কারণে যে, যারা দুর্ঘটনায় মারা গেলেন তাদের মৃত্যুকে মহান আল্লাহ তায়ালা দয়া করে শাহাদতের মর্যাদা দিতেও পারেন। আর পবিত্র মক্কা শরিফ বা মদিনা শরিফে মারা যাওয়া, অথবা মারা যাওয়ার পর মদিনার মসজিদে নববীতে অথবা মক্কার মসজিদুল হারামে নামাজে জানাজা পাওয়া বিরল সৌভাগ্যের বিষয়। পবিত্র মদিনা নগরীতে অথবা পবিত্র মক্কা নগরীতে নির্ধারিত মর্যাদাপূর্ণ কবরস্থানগুলোতে দাফন হওয়ার সুযোগ, সেটাও বিরল সৌভাগ্য।
কিছু ব্যক্তি, অতি অল্পসংখ্যক যদিও, বিুব্ধ হয়েছেন যে, কেন অ্যাক্সিডেন্ট হলো। নির্মাণকাজ চলছে। পবিত্র মসজিদুল হারামকে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। অতএব দুর্ঘটনা হতেই পারে। প্রশ্ন হলো, কোনো মানবীয় অবহেলা অথবা ষড়যন্ত্র এই দুর্ঘটনার সাথে জড়িত কি না। আমাদের দেশে এসব েেত্র তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির ফলাফল জানা যায় না। সৌদি আরবের বাদশাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুর্ঘটনার দু-এক ঘণ্টা পরেই মক্কার গভর্নর মহোদয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটি রিপোর্টও দিয়ে দিয়েছে অথবা দেবে দেবে অবস্থা। সৌদি আরব যে আদর্শ বা নিয়মের ভিত্তিতে চলে তার থেকে কিছুটা ভিন্ন নিয়ম ও আদর্শের ভিত্তিতে চলে আরেকটি দেশ যেটির নাম পিপলস রিপাবলিক অব চায়না; রাজধানী বেইজিং। চীনেও, এমন কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে যদি তদন্ত করতে হয়, তাহলে সেই তদন্ত তাৎণিক এবং গরম গরম আদিষ্ট ও সম্পন্ন হয়। আমরা আমাদের এই কলামের মাধ্যমে, বাংলাদেশীসহ যে কয়জন হাজী সাহেব দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন, তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। এখন ছোট দুইটি আবেদন।
সাত-আট দিন পর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের চাঁদ দেখার হিসাব মতে যে দিন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হবে, সে দিন ইয়াওমুল আরাফাত তথা আরাফাত দিবস। অকুফে-আরাফাত তথা আরাফাতের ময়দানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান পবিত্র হজের অন্যতম স্তম্ভ। এ দিন হজের দিবস। এ দিন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেলিভিশন, সৌদি টেলিভিশন এবং বাংলাদেশের একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আরাফাতের ময়দানের দৃশ্য এবং ইমাম সাহেবের ভাষণ দেখাবেন। আমার আবেদনটি হচ্ছে, হজের রাত ও হজের দিন পবিত্র সময়। ভাষণটি শোনার, অর্থ বোঝার এবং দৃশ্যটি দেখার জন্য আমরা যেন চেষ্টা করি। দ্বিতীয় আবেদন হচ্ছে, আমাদের সমাজে কোরবানি প্রসঙ্গে। বিত্ত-বৈভব ও সম্পদ প্রদর্শনের নিমিত্তে নয়, মানুষের কাছ থেকে বাহবা কুড়ানোর নিমিত্তে নয় বরং মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই ১০ জিলহজ তারিখে আমরা কোনো না কোনো পশু কোরবানি দেবো। আমার আবেদন, আমরা যেন নিয়ত ঠিক করি। গণমাধ্যমের কাছে আবেদন, এই অংশটিকে যেন গুরুত্ব দেয়।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
[লেখাটি ১৬ই সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল]
বিষয়: বিবিধ
১০০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন