প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রসঙ্গে
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৫৮:২১ বিকাল
আমি তরুণ সম্প্রদায়ের কথা বলছি। মেডিক্যাল ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রদের কথা বলছি। আনুমানিক চার সপ্তাহ আগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যখন ভ্যাট আরোপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল, তাদের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিলাম। সরেজমিন ছাত্রদের কাছে যেতে পারিনি, কিন্তু ফেইসবুকে এবং পত্রিকার কলামে বলিষ্ঠভাবে তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। আমি মেডিক্যাল ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রদের বর্তমান দাবির পক্ষে পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেয়া, বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। এখন থেকে আট-নয় বছর আগে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করার পরেও সেই পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করা হয়েছিল। বিসিএস পরীক্ষা আবার নেয়া হয়েছিল। আমার ছেলে ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। এরপর সে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ এবং মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি (এমআইএসটি) থেকে এমবিএ পাস করেছে। অতঃপর আমার ছেলে আন্তরিক প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিল। কোনো প্রকার অসততার সাথে সে বা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জড়িত হয়নি। ছেলে প্রথমবার পাস করেছিল। কিন্তু সেই বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফলাফল যখন বাতিল করে দেয়া হয়েছিল, তখন রাগ করে আমার ছেলেকে বললাম, আর বিসিএস দিতে হবে না। বললাম, ব্যাংকে চাকরি খোঁজ। ছেলে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে প্রাইভেট সেক্টরে একটি ব্যাংকে ঢুকল।
অসততার তাৎপর্য
অসৎভাবে বিসিএস পাস করা এবং অসৎভাবে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা পাস করা, দুটোই মারাত্মক অন্যায়। কিন্তু নেতিবাচক তাৎপর্য বা সমাজের ওপরে প্রভাব বিশ্লেষণ করলে মেডিক্যালের ক্ষেত্রে সেটি বেশি বিস্তৃত। মেধাবিহীন প্রশ্ন-চোর একজন যুবক মেডিক্যালে ঢোকার পর অসৎভাবেই ভবিষ্যতেও পাস করবে, এরূপ প্রবণতা থাকাই স্বাভাবিক। মেধাবিহীন মেডিক্যাল ছাত্রের মাথায় মেডিক্যালের পড়ালেখা কি ঢুকবে? যদি না ঢোকে, তাহলে সে অবশ্যই অসৎভাবে বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করার চেষ্টা করবে। সার্টিফিকেট পাবে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে সরকারি চাকরিতেও ঢুকবে অথবা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবে। ওই মেধাহীন এবং অসৎভাবে পাস করা কোনো ডাক্তারের হাতে যদি কোনো রোগী পড়ে, তাহলে ওই রোগী কি নিরাপদ? আমার মতে, মোটেই নিরাপদ নয়। বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একরোখা নীতির কারণে, রাজনৈতিক গোঁ ধরার কারণে, অতি মন্দ একটি উদাহরণ বাংলাদেশের অ্যাকাডেমিক জগতে সৃষ্টি হতে চলেছে। হাজার হাজার মেডিক্যাল ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র আবার পরীক্ষা নেয়ার জন্য আন্দোলন করছে। সেসব ছাত্র সবাই আবার পরীক্ষা দিলেও ভর্তির সুযোগ পাবেন এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ, মেডিক্যাল কলেজে সিট সংখ্যা সীমিত। কিন্তু সৎ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অসফল হলেও সেটিই সম্মানের এবং গৌরবের বিষয়।
সত্য উদঘাটনে ও সমস্যা সমাধানে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কামনা করছি।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন