সুস্থ থেকে হঠাৎ হাজারো প্রতিবন্ধী, কেউ জানে না কেনো এমন হচ্ছে!
লিখেছেন লিখেছেন আমি আধার ০২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৭:৪৪:২৮ সন্ধ্যা
[q]দশ বছর বয়সে একেবারেই সুস্থ ছিলেন ২ ভাই কাদের ও মনির হোসেন। হঠাৎ করে জ্বর হয়। জ্বর তাদের শরীর থেকে গেছে ঠিকই কিন্তু দিয়ে যায় প্রতিবন্ধীত্বের চরম অভিশাপ। আস্তে আস্তে হাত ও পা শুকিয়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যায় তারা দুজনেই।
[/q]
এভাবে ধুকে ধুকে কয়েক বছর আগে মারা যান কাদের। শুধু শুয়ে থেকে থেকে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন মনিরও। তাদের সেবা করতে গিয়ে তার মাও এখন প্রতিবন্ধী।
শুধু মনির নয় সুমাইয়া, অহিদ, কুলসুমসহ এই গ্রামের অনেক শিশুরাই হঠাৎ করে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে।
ঝালকাঠির রাজাপুরের বিষখালী নদীর ভাঙনকবলিত বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রায় ১৫,০০ প্রতিবন্ধী আছেন। কেউ শিশু বয়সে, কেউ মধ্যবয়সে আবার কেউ বৃদ্ধ বয়সে প্রতিবন্ধী হয়েছেন। দিব্যি সুস্থ থেকে হঠাৎ করে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ আজও জানা যায়নি।
ব্যক্তি বা এনজিও এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাদের কাছে। বছরের পর বছর তারা প্রতিবন্ধী ভাতা থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসেছন।
বঞ্চিত হচ্ছেন মৌলিক অধিকার থেকেও। প্রতিবন্ধী গ্রাম হিসেবে পরিচিত এ ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ইয়া, পালট ও বড়ইয়ার প্রতিবন্ধীরা পরিবারের বোঝা হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
এ ব্যাপারে পালট, বড়ইয়া প্রতিবন্ধী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আলমগীর শরিফ বলছিলেন, বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রায় ১৫,০০ প্রতিবন্ধী আছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ বড়ইয়া, পালট ও বড়ইয়া গ্রামেই ৫ শতাধিক।
এসব প্রতিবন্ধী পরিবারের জীবন-জীবিকার একমাত্র উপায় জেলে, দিনমজুর ও ভিক্ষাবৃত্তি। তাছাড়াও পরিবারগুলো বিষখালী নদীর ভাঙনে ভিটেবাড়ি হারিয়ে অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখী।
‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই অসহায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি। তবে প্রথম থেকেই আমরা এই বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দাবি করে আসছি। কিন্তু সে দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি।’
দিব্যি সুস্থ থেকে হঠাৎ করে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ আজও অনুসন্ধান হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধীদের কল্যানে কাজ করা পালট বড়ইয়া প্রতিবন্ধী সমিতির হিসেব অনুযায়ী গোটা জেলার মধ্যে পালট-বড়ইয়া ও দক্ষিণ বড়ইয়ায় প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা অনেক বেশি।
এদের অধিকাংশই শারিরীক প্রতিবন্ধী। নিম্ন আয়ের এই পরিবারগুলো তাদের প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে চরম অসহায় জীবন যাপন করছেন। অনেকের জীবন আবার অতিষ্ট হয়ে গেছে।
তবে হঠাৎ করে প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার এই কারন অনেকটাই অজ্ঞাত। স্থানীয় অশিক্ষিত মানুষেরা মনে করছেন হঠাৎ অসুস্থতা বা পঙ্গুত্ব এই গ্রামের কোনো অভিশাপ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই প্রতিবন্ধীতের বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যাও তুলে ধরতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
প্রতিবন্ধী কিশোরী কুলসুমের মায়ের আকুতি, ‘অসহায় মেয়েকে আর বহন করতে পারছিনা। এমনকি যেখানে নিজেদেরই পেট চলেনা সেখানে এই আতুর (প্রতিবন্ধী) মেয়েকে নিয়ে বড়ই বিপদে আছি। নিজের পেটের বলে নিজ হাতে গলা টিপে হত্যাও করতে পারছিনা।’
এক এলাকায় এত বেশি প্রতিবন্ধী হওয়ার সঠিক কারণও বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা। রাজাপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ইউনিয়নে এত বেশি প্রতিবন্ধী ও হঠাৎ করে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ হতে পারে অপুষ্টি জনিত বা জেনিটিক।’
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ভবানী শঙ্কর বল বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতায় অসংখ্য প্রতিবন্ধীদের মধ্যে গোটা উপজেলার মাত্র ৩২৭ জন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। কিন্তু এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য তা অপ্রতুল।
এ উপজেলায় ৩,০০০ এর অধিক মত প্রতিবন্ধী রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া বলেন, ‘এত সংখ্যক প্রতিবন্ধীর এই বিষয়টি অত্যন্ত ভাবনার বিষয়। ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য ওই এলাকা থেকে ছবি সংগ্রহ করে তা নমুনা হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে পাঠানো হয়েছে।’
বিষয়: বিবিধ
৯২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন