আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
লিখেছেন লিখেছেন আমি আধার ২৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৫১:১২ দুপুর
বাংলাদেশে আত্মহত্যা
বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর এই আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার দেওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের দশম আত্মহত্যা প্রবণ দেশ।
বাংলাদেশ পুলিশ এবং অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮টি তাজা প্রাণ আত্মহত্যার মাধ্যমে ঝরে যাচ্ছে।
শারমিন আর মমিন। দুইজনই নাসিং ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী। তারা একালে একে অপরকে পাবেনা, তাই পরকালে পাওয়ার আশায় আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবারের সকলের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে তারা আত্মহত্যাও করে।
তারা আত্মহত্যার পূর্বে দু’জনেই চিরকুটে তাদের শেষ ইচ্ছার কথা জানায় যে, মৃত্যুর পর তাদের যেনো একই কবরে দাফন করা হয়।
রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যার ঘটনা সচেতন মানুষের মাঝে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এভাবে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায়, অনলাইন মিডিয়ায় মৃত্যুর সংবাদ আমরা পাচ্ছি। অনেক সংবাদ আবার অগোচরেই রয়ে যায়।
মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড ডালবার্গ বলেছেন, ‘যখন কেউ উপলব্ধি করে যে, তার জীবনের কোনো মূল্য নেই, তখন সে আত্মহত্যা করে।’
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, আত্মহত্যাকারীদের নব্বই শতাংশই কোনো-না-কোনো ভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
যৌতুক, নির্যাতন, বখাটের অত্যাচার, আর্থিক টানাপড়েন, জীবন মূল্যহীন ভাবা, মানসিক সমস্যায় পড়া, পারিবারিকভাবে হতাশা হওয়া, সামাজিকভাবে অবহেলিত ভাবা- আত্মহত্যার কারণ যায়ই হোক না কেনো এটা কোনো সমাধান নয়।
আমাদের জীবন এতোটা অর্থহীন নয় যে, আমাদের আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিতে হবে। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা আত্মহত্যাকে হারাম করেছেন এবং আত্মহত্যাকারীর ভয়াবহ পরিণামের কথা জানিয়েছেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যার পরিণাম:
ইসলামে আত্মহত্যা হলো মহাপাপ। আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মৃত্যু ঘটান।
কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ।
আল্লাহর দেওয়া প্রাণ ও আয়ুষ্কাল একটি বিরাট নিয়ামত এবং পরকালের জন্য ভালো কাজ করার সীমিত অবকাশ। একে যারা স্বহস্তে ধ্বংস করে তাদের ওপর স্রষ্টার ক্রোধ আপতিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে সূরা নিসার ২৯ থেকে ৩০ নম্বর আয়াতে ঘোষণা দেন-
‘তোমরা নিজেকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর দয়ালু। আর যে বাড়াবাড়ি ও জুলুমের মাধ্যমে এ কাজ করবে, তাকে আমি আগুনে পোড়াব। আর এ কাজ করা আল্লাহর পক্ষে সহজতর।’
উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা আত্মহত্মাকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি ঘৃণ্য এ কাজের পরিণামেরও চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আত্মহত্মা কেবল সকল নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে একমাত্র সমাধান হতে পারে না। কারণ মানব জীবন অতি মূল্যবান।
আর যার এপথকে অনুসরণ করে তাদের পরিনতিও ভয়াবহ। এ জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) উম্মাতকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন- হযরত জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেললো। তারপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করলো। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারী)
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন- ‘যে ফাঁসি লাগিয়ে বা গলা টিপে আত্মহত্যা করে, জাহান্নামে সে নিজেই নিজেকে অনুরূপভাবে শাস্তি দিবে। আর যে ব্যক্তি বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে জাহান্নামেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি ভোগ করে।’ (বুখারী)
আত্মহত্যা সম্পর্কে রাসূল (সা.) আরো বলেন- ‘যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে।’
অন্য হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে তাকে সে অস্ত্র দিয়েই দোযখের মধ্যে শাস্তি দেয়া হবে।’ (বুখারী)
দেখা গেছে, নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই আত্মহত্যাকে প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। বাস্তবতা হচ্ছে- একটি মেয়েকে যখন বখাটেরা উক্ত্যক্ত করে, তখন সে আশ্রয় পায় না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ তাকে দূরে ঠেলে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীর কোনো সাজা হয় না।
আবার দেখা যায়, সাজা হতেও বড্ড দেরি হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত মেয়েটি আরো বেশি নিগৃহীত হয়। সে মনে করে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
কোনো মানুষ কেবল তখনই আত্মহত্যা করতে উদ্যোত হতে পারে যখন তার নিরাশা অত্যন্ত চরমে পৌঁছে, যখন আশার কোনো আলো তার হৃদয়ে অনুভূত হয় না এবং যখন তার অস্তিত্ব ও সত্ত্বার কোনো মূল্যবোধ অবশিষ্ট রয়েছে বলে অনুভূত হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন- আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি মানসিক সহায়তা ও চিকিৎসা সেবা দরকার।
এ ক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম সাহেব তার সাপ্তাহিক খুতবায় বা ভাষণে, শিক্ষক তার ক্লাসে পাঠদানে এবং ইসলামি গবেষকগণ তাদের লেখনিতে কিংবা সংবাদ মাধ্যমে আলোচনায় ইসলামে আত্মহত্যার কুফল এবং এ কাজে লিপ্ত ব্যক্তির কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করে আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং ধরণীতে স্রষ্টার প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র জাতি। এই কথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে স্রষ্টার প্রতিনিধিত্বমূলক কাজে তথা মানবতার সার্বিক কল্যাণে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতায় মানব জীবনের পরম স্বার্থকতা নিহিত।
মোটকথা, যখনই নিজেকে অসহায় ও আশাহত মনে হয় এবং আত্মহত্যার চিন্তা আসে তখনই মনে করতে হবে যে, আমি শয়তানের ধোকার মধ্যে আছি।
ইসলামে আত্মহত্যা হারাম এবং পরিণতি জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন। তাই এ থেকে দূরে থাকা এবং অন্যকে নিরুৎসাহিত করা বাঞ্ছনীয়। সাথে সাথে একথাও স্মরণ রাখতে হবে যে, একমাত্র আল্লাই আমার সহায় এবং হতাশায় আশার আলো।
তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে আমাদের সবর বা ধৈর্য ধারণ করার জন্য আল্লাহর অনুকম্পা ও সাহায্য কামনা করা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
১১০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন