প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা এবং কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন আমি আধার ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৭:৪২:৫৫ সন্ধ্যা
রাজশাহীতে শিক্ষিত এই যুবক-যুবতীর এমন বোকামী দেখে খুবই মর্মাহত হলাম। মৃত্যুই কি সমাধান?
এ জনমে মিলন হবেনা তাই পর জনমে মিলনের আশায় আত্মহত্যা করলো প্রেমিকজুটি। নাম শারমিন এবং মমিন। দুই জনই নাসিং ইন্সটিটিউট এর শিক্ষার্থী।
শারমিনের বাবা একজন রাজমিস্ত্রী। নাম চাঁন মিয়া। অনেক কষ্ট করে টাকা রোজগার করে টাকা আয় করে মেয়েকে পড়াত। কিন্তু তার প্রতিদান এমনভাবে দিবে বাবা ভাবতে পারেনি।
বাবার ভাষায়, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে পড়ালাম। এভাবে কষ্ট দিয়ে যাবে তা কখনোই ভাবিনি।’
মমিনের পড়ালেখার খরচ পাঠাতো বড় ভাই। নাম জালাল উদ্দিন। বড় ভাইয়ের কষ্ট এভাবে প্রকাশিত হলো: ‘মাসে মাসে পড়ার খরচ পাঠাতাম। এভাবে সে সর্বনাশ করবে তা টের পাইনি।’
ভালোবাসা স্বর্গীয় তবে, এই প্রেমিক জুটি সেটা পবিত্র রাখতে পারেনি। স্থানীয়দের ভাষায়:- প্রায় তিন মাস আগে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর কদমতলার মোড় এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নেন মমিন ও শারমিন। দুজনে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ওই বাড়িতে বাস করতেন।
শারমিন আর মমিন জানিনা কোন কারণে এমন জঘণ্য কাজ করেছে। তারা যদি নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে দুজনে এগিয়ে যেতো। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতো আরো সুন্দর করে জীবন গড়ার আমার মনে হয়না তাদের মিলনে কেউ বাঁধা হত।
তাদের পরিবারের সকলের আকুতিতে মনে হয়না পরিবার ভালোবাসার অবমাননা করত। পরিবার চেয়েছিল তাদের সন্তান যেনো মানুষের মত মানুষ হয়। তাদের এমন ইচ্ছা ছিলনা যে তারা প্রেম করুক আর তাদের স্বপ্ন নষ্ট করুক।
মমিন-শারমিন ইচ্ছা করলে পারতো ক্যারিয়ারকে গড়তে।
যায় হোক, তারা মৃত্যুর সময় দুজনেই দুটি চিরকুট রেখে গেছে। চিরকুট দুটি হলো:-
শারমিনের লেখা চিরকুট: ‘বাবা-মা আমায় তোমরা মাফ করে দিও। আমি মমিনকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি। আমরা দুজনকে সারা জীবন পেতে চাই। আমি জানি তোমরা মেনে নিবেনা। এই দুনিয়ায় না পাই, পরের জনমে তো পাব। আমার ছোট বোনদের মানুষের মতো মানুষ করো। আমার জন্য দোয়া করিও। আমাদের কবর যেন একই কবরে হয়। মমিনকে ছেড়ে যেতে পারলাম না। ভালো থেকো মা-বাবা। ইতি তোমাদের বেয়াদব শারমিন।’
এটা পারিবারিক সীমাবদ্ধতা নাকি শারমিনের মানসিক সীমাবদ্ধতা? তার বাবার আকুতি বলে তাকে তার পরিবার অনেক ভালোবাসতো। হয়তো সাময়িক তারা চাঁপ দিচ্ছিলো যেনো মেয়ে বিগড়ে না যায়। আফসোস মা-বাবার চিন্তায় সত্য হলো।
মমিনের চিরকুট:- ‘আমরা দুজন দুজনকে সবচাইতে বেশি ভালবাসি। কিন্তু ভালবাসা এতো কষ্টের দুজন বুঝি নাই। একজনকে ছেড়ে অন্য জন্য কখনো থাকতে পারবো না, তাই দুজন চলে গেলাম সবাইকে ছেড়ে। আমাদের দুজনের শেষ ইচ্ছা, আমাদের যেনো একই জায়গায় কবর দেওয়া হয়। আর বাবা-মা তোমরা খুব ভালো থেকো। দোয়া করো। এ জনমে আমাদের মিলন হলো না, পরজনমে যেন মিলন হয়। আমাদের একই জায়গায় যেন কবর দেওয়া হয়। আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয়। ইতি শারমিন+মোমিন।’
মমিনের মা-বাবা আছে। অর্থ পাঠাতো ভাই জালাউদ্দিন। তার সীমাবদ্ধতা আমার বোধগম্য নয়, কিভাবে সে পরিবারের সবার চায়তে একটি মেয়েকে ভালোবাসে।
আমার বিশ্বাস তার মা-বাবা দুই জনেই বয়স্ক। পরিবারের হাল ধরে আছে বড় ভাই। কতটুকু ভালোবাসা থাকলে ভাই লেখাপড়ার খরচ দেয় যারা এমন সমস্যায় পড়েছে তারাই বুঝবে।
ভালোবাসা তার সব অন্ধ করে দিলো। এখন হয়তো মা-বাবা সন্তানের শোকে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হবে।
চিরকুটে তাদের একটা আশার কথা ছিলো। তাদের যেনো একই কবরে মাটি দেওয়া হয়। কিন্তু তা হয় কি করে?
আর তারা কার কাছে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করলো আমার মাথায় এলোনা। ভালোবাসলে মানুষের বোধশক্তি লোপ পায় এটাই তার প্রমাণ।
শারমিনের লাশ পবার শিতলায় এলাকায় এবং মমিনের লাশ মান্দা উপজেলার চকরধিনাথ গ্রামে শনিবার রাতেই দাফন হয়েছে।
যুগলের পরিচয়:
শারমিনের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার শিতলাই গ্রামে। তার বাবার নাম চান মিঞা। শারমিন নগরের ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আর আবদুল মমিন নওগাঁর মান্দা উপজেলার চকরঘুনাথ গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে। তিনি নগরের ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল নার্সিং কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন