ভালবাসা দিবস ও অশ্লীলতার বিস্তার
লিখেছেন লিখেছেন জনগনমন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৫৮:৩৮ রাত
"আয়েশা ইসলাম" নামের এক বোন ফেইসবুকে ভালবাসা দিবসের নামে অশ্লীলতা বিস্তারের আয়োজন নিয়ে একটি লেখা লিখেছেন। প্রাসঙ্গিক ও অত্যন্ত সময়োপযোগী মনে হওয়ায় লেখাটি সবার সাথে শেয়ার করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না (উল্লেখ্য এই বোনও তার লেখাটির মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করার জন্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বলেছেন)
শিরোনামঃ "ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত 'ক্লোজআপ কাছে আসার সাহসী গল্প' প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত সেরা তিন গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ভালোবাসা দিবসের তিনটি নাটক।"
__________________________
.
সবিনয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই এই বিষয়ে। আশা করছি ৫ মিনিট সময় দেবেন আমাকে।
.
মুসলিম মাত্রই বিশ্বাস করে যে, বিয়ে ছাড়া একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মেলামেশা সুস্পষ্টভাবে হারাম। এই বিষয়ে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন বোধ করছি না - শুধু একটি হাদীস ছাড়া -
.
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ "তোমাদের জন্য হালাল নয় এমন কোন নারীর হাত স্পর্শ করার চেয়ে কেউ যদি লোহার পেরেক দিয়ে নিজ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়, সেটিও তার জন্য উত্তম।"
[সহীহ আল-জামে' - হাদীস ৫০৪৫। মা'ক্বিল ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত।]
.
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো - "প্রকাশ্য পাপ" এবং "গোপন পাপ"। আমরা সবাই জানি যে, প্রকাশ্য পাপ তুলনামূলকভাবে গোপন পাপের থেকে অনেক বেশি ভয়াবহ। গোপন পাপ মহান আল্লাহ ইচ্ছে করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এই সংক্রান্ত বেশ কিছু আহাদীসও রয়েছে। উলামাদের ঐকমত্য রয়েছে যে, প্রকাশ্য পাপ একটি ভয়ংকর গুনাহ। প্রকাশ্য পাপের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে। সমাজে ফিতনাহ সৃষ্টি হয়। অন্যান্য মুসলিম ভাইবোনেরা প্রকাশ্য পাপের মাধ্যমে অশ্লীলতার দিকে আকৃষ্ট হয়। একই সাথে, কেউ প্রকাশ্যে হারাম কাজ করলে এটি-ই মনে হয় যে বিষয়টির গভীরতা সম্পর্কে তার ধারণা নেই অথবা ধারণা থাকলেও সে থোড়াই কেয়ার করছে মহান আল্লাহর বিধি-নিষেধকে। যদি দ্বিতীয়টি (থোড়াই কেয়ার) হয়, তবে সেটি কুফরের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বৈকি।
.
দ্বীন ইসলাম সেকারণেই প্রকাশ্য পাপ-কে অত্যন্ত গর্হিত বিষয় মনে করে। আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি -
.
‘‘আমার সকল উম্মাত মাফ পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত। আর এক প্রকার প্রকাশ এমন যে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো পাপ কাজ করে, যা মহান আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়, ‘হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত পার করেছিল যে, মহান আল্লাহ তার পাপ গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে তার উপর মহান আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলে!"
[মুত্তাফাক্বুন আলাইহিঃ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]
.
পাঠককুল, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর অন্যতম ব্র্যান্ড 'ক্লোজআপ' এই "কাছে আসার সাহসী গল্প" প্রতিযোগিতা আয়োজন, গল্প বাছাই, শ্রেষ্ঠ ৩টি গল্প নির্বাচন এবং সেই গল্প ভিত্তি করে নাটক নির্মান ও প্রচারের মাধ্যমে কীভাবে একটি "হারাম ও গর্হিত" কাজকে "প্রকাশ্যে" নিয়ে আসছে এবং "হারাম বিষয়ে প্রতিযোগিতা করার মানসিকতা" সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছে। না'উযুবিল্লাহ।
.
দুর্গন্ধময় স্থানে বেশী দিন থাকলে সেই দুর্গন্ধ সহ্য হয়ে যায়। একইভাবে, হারামের সাথে বসবাস করতে করতে আমাদের এইসব ভয়ংকর বিষয়কেও অতি তুচ্ছ মনে হয় ইদানিং। আমরা কি কোনভাবেই টের পাচ্ছি না যে এই "কাছে আসার গল্প" আসলে "জাহান্নাম এর লেলিহান আগুনের কাছে যাবার গল্প"? রাতের আঁধারে হঠাৎ কোথাও আলো জ্বালালে পোকামাকড়ের দল যেভাবে "আগুনের কাছে এসে আত্মাহুতি" দেয়, এই "কাছে আসা" কি সেইরকম কাছে আসা নয়?
.
লেখাটি শেষ করছি নিজের একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে।
.
দ্বীন ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান; আল'হামদুলিল্লাহ। "ভালো কাজের আদেশ" এবং "মন্দ কাজের নিষেধ" দ্বীনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রকাশ্য পাপ দেখেও চুপ করে থাকা একজন মুসলিমের পক্ষে শোভনীয় নয়। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর কাছে আমাকে উত্তর দিতে হবে - "আমি কি কিছু অন্তত করেছি এই প্রকাশ্য গর্হিত বিষয়কে আটকাতে?"
.
না, আমি অতি সামান্য একজন মানুষ। ফেইসবুকে কিছু লিখে সচেতন করা এবং পরিচিতদের মুখে দাওয়াত দেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই আমার।
.
তবে হ্যাঁ, আরো একটি বিষয় রয়েছে আমার কাছে করণীয়। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে – "ক্লোজআপ টুথপেস্ট" আমি বর্জন করবো। বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট আছে। সেইগুলো ব্যবহার করব ইন-শা-আল্লাহ। একইসাথে চেষ্টা করব "ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড" এর সমুদয় প্রোডাক্ট এড়িয়ে যেতে - যতটুকু সাধ্যে কুলোয়। আমার নিজেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও আমি নুন্যতম এতটুকু তো চেষ্টা করব ইন-শা-আল্লাহ।
.
অনেকেই এটিকে "হাস্যকর" মনে করতে পারেন। কেন এই "হাস্যকর সিদ্ধান্ত" নিলাম?
.
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন-
.
"তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি কোন মন্দ (নিষেধকৃত) কাজ দেখে, সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে। আর যদি সে এতে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন তা মুখ দিয়ে প্রতিহত করে। যদি তাতেও সক্ষম না হয়, তাহলে যে যেন তাকে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটি (অন্তর থেকে ঘৃণা) ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর।"
[সহীহ মুসলিমঃ অধ্যায় ১ (কিতাবুল ঈমান), হাদীস ৭৯]
.
হে আমার ভাই ও বোনেরা, কিছু কি করার আছে আপনাদের? "ক্লোজআপ টুথপেস্ট" দিয়ে দাঁত না মাজলে কি চলবে না আপনার বা আপনাদের? নুন্যতম এই প্রোডাক্টটি তো আমরা বর্জন করতে পারি, তাই না? ঈমানের সর্বনিম্ন স্তরে আর কতদিন?
.
একবার ভাবুন - যদি "প্রকাশ্য পাপ উদ্বুদ্ধ করার কারণে" আমাদের দেশের ৮০ ভাগ মানুষ আজকে থেকে "ক্লোজআপ টুথপেস্ট" ব্যবহার করা ছেড়ে দেন, ৭৫ ভাগ মানুষ যদি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রোডাক্ট সম্পূর্ণ বর্জন করা শুরু করেন, মোটামুটি নিশ্চিত করে বলতে পারি - "মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করে এই 'ইউনিলিভার বাংলাদেশ'-ই খুব শীঘ্রই "প্রকাশ্যে দ্বীন ইসলাম প্রচার" এর সাথে সম্পর্কিত কোন উত্তম বিষয় স্পন্সর করবে।" কারণ সবাই "ব্যবসা" বুঝে।
.
বাকী সিদ্ধান্ত আপনাদের। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
.
পুনশ্চঃ
যদি বিষয়টি কল্যাণকর মনে করেন, শেয়ার করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন