শ্রেষ্ট সংস্কারক হযরত মোহাম্মদ (স
লিখেছেন লিখেছেন অদৃশ্য কলম ০৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:০৫:০৩ রাত
মানুষ সামাজিক জীব। তার জন্ম প্রতিপালন, আবাসন সমাজের বাইরে অসম্ভব। নারী পুরুষের সমন্বয়ে প্রাথমিক পরিবার গঠিত হয়ে পরবর্তীতে তার ব্যাপক সমন্বয়ে গঠিত হয় সমাজ।
ধাবমান কালের স্রোতে সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতিতে জ্ঞান - বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অস্থিত্ব পূর্নমাত্রায় বিদ্যমান হলেও এর দ্বারা সামাজিক ভারসাম্য পরিমাপ অযৌক্তিক। এর জন্য প্রয়োজন মানবীয় মূল্যবোধ তথা পারস্পরিক সহানুভূতি, প্রেম - প্রীতি, ন্যায় - নিষ্ঠা, বদান্যতা, মানবতা, বিশ্বস্ততা প্রভৃতি পূর্ণমাত্রায় কার্যকর থাকা। কেননা, যে সমাজে মানবীয় মূল্যবোধ সমুহ সু - প্রতিষ্টিত নেই সেখানে শান্তি - শৃংখলা, নিরাপত্তা ও কল্যান অকল্পনীয়।
সমাজ জীবন সদা পরিবর্তনশীল। কিন্তু মৌলিক মানবীয় মূল্যবোধ গুলো চিরন্তন ও শাশ্বত, যেটা সর্বক্ষেত্রে বিকশিত হয়ে একটি সুখী, কল্যান ও সোনালী সমাজ প্রতিষ্টায় সহায়ক হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সামগ্রিক খোরাকে যখন সুশৃংখল মানবীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে রাহনুমায়ী করে উভয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করত: যথাযোগ্য স্থানে তা প্রয়োগ করা হবে, তখনই একটি সমাজ সুশৃংখল ও সমৃদ্ধশালী সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এটাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার দর্শন।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার স্বরূপ অনুসন্ধান করতে হলে আমাদেরকে তাকাতে হবে দেড় হাজার বৎসর পূর্বেকার মহান সমাজ সংস্কারক হযরত মোহাম্মদ (স এর কর্মপরিধির প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বাধিক নিকৃষ্ট সমাজ পরিনত হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট সমাজে, সেই মহা মানবের গঠিত সমাজ ব্যবস্থাই তাবৎসমাজ ব্যবস্থার আলোকবর্তিকা তথা অনুকরনীয় আদর্শ হতে পারে।
রাসুল (স এক চরম দিকভ্রম জাতিকে অক্লান্ত মেহনত আর অবর্নণীয় আত্মত্যাগের বিনিময়ে মহান আল্লাহর দ্বীনের দীক্ষায় দীক্ষিত করে এক অনবদ্য পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও সভ্য সমাজের দিশা দেখিয়েছিলেন। ফলে সমাজের প্রতিটি সদস্য যেমনি সৎ ও আদর্শ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন তেমনি তাদের সমাজ ও প্রষ্ফুটিত হয়েছিল একটি সুশীল, সুখী ও সোনালী সমাজে।
বস্তুত একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মৌলিক উপাদান তিনটি :-
১. একটি সামগ্রীক ও সার্বজনীন আদর্শ গ্রহণ।
২. সেই আদর্শের ভিত্তিতে মজবুত সংগঠন ও ব্যক্তি গঠন।
৩. সেই আদর্শ বাস্তবায়নে উপযুক্ত নেতৃত্ব প্রদান।
রাসুলুল্লাহ (সা কর্তৃক বিনির্মিত সমাজ ব্যবস্থার এ তিনটি উপাদান পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। তিনি পার্থিব নানামুখী সমস্যার যুক্তিপূর্ণ সমাধানকল্পে মহান আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত সর্বশ্রেষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ আদর্শ ইসলামের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে তার মিশন শুরু করেন। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা যেমনিভাবে ছিলেন ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল বিভাগের জন্য পূর্ণ আদর্শ ব্যক্তিত্ব, তেমনি তাঁর হাতে গড়া দক্ষ ও আত্মত্যাগী কর্মীবাহিনী ছিলেন তাঁর যাবতীয় বিষয়াবলীতে তাঁরই বে- নজীর ছায়া স্বরূপ। ন¤্রতা, উদারতা, দানশীলতা, ন্যায়পরায়নতা, আত্মত্যাগ ইত্যাদির ন্যায় চারিত্রিক উৎকর্ষতা অর্জনের পাশাপাশি মানবাত্মায় প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্ট ক্ষতিকর রিপু, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ - লালসা, অহংকার প্রভৃতির ন্যায় পার্শবিকতা দূরীকরণার্থে তারা ছিলেন সদা সচেষ্ট।
আদর্শ প্রণয়ন ও ব্যক্তি গঠনের পর রাসুলুল্লাহ (সা অধ:পতিত্ত সমাজকে একটি আদর্শ সমাজে রূপান্তরের লক্ষ্যে যে মহান প্রকল্প সমুহে হাত দেন, মুলত: সেগুলো ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মহানবী (সা কর্তৃক গৃহীত সেই কর্মসূচী তথা ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমুহ হচ্ছে -
ইনসাফ :- ইনসাফ সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার চাবিকাটি। ইসলামে ইনসাফের দর্শনটি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং যেকোন আবিলতা থেকে মুক্ত। এর অনুপম বৈশিষ্ট্য কোন ধরনের শক্রুতা মিত্রতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মতো নয়। আত্মীয়তা ও বংশীয় সম্পর্ক এর পবিত্রতায় কোন প্রকার খুত সৃষ্টি করতে পারে না । এক চুরির ঘটনায় মহানবী (সা বলেছিলেন“যদি আমার কন্যা ফাতেমা ও এই অপরাধ করত তাহলে তার ও হাত কেটে দিতাম।”
সাম্য :- সাম্য ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম মূলনীতি। পরস্পর ভেদাভেদ যখন পৃথিবীজুড়ে চরম অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে যাচ্ছিলো, তখন শান্তির প্রতীক মহানবী (সা যাবতীয় বৈষম্যের দেয়ালকে ধ্বসিয়ে দিয়ে ঘোষনা করেন, “তোমরা এক আদমের সন্তান, তোমােেদর পরিচয় আপন ভাই বোনের, বংশ কিংবা জাতীয়তার শ্রেষ্টত্বে অহংকারের কিছুই নেই।”
নাগরিক অধিকার:- মহানবী (সা কর্তৃক বিনির্মিত সমাজ ব্যবস্থায় যেমনিভাবে বর্ণ ও জাতিগত বৈষম্য অনুপস্থিত ছিল, তেমনি সু - প্রতিষ্টিত ছিল মানুষের আননগত, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নাগরিক অধিকার। সেখানে ছিল না আশ্রয় গ্রহণে কোন প্রতিবন্ধকতা, বরং ছিল নানামুখী কাজে স্ব স্ব যোগ্যতা প্রকাশের অপূর্ব ক্ষেত্র।
পরামর্শ:- রাসুলুল্লাহ (সা কর্তৃক প্রতিষ্টিত রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মকান্ড যেমনি ভাবে পরামর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তেমনি সমস্ত কার্য পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। আর স্বত:সিদ্ধ কথা হচ্ছে যে : যতদিন সমাজের কার্যাবলী শুরার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে ততদিন সমাজে শান্তি - শৃংখলা সংহতি বজায় থাকবে।
ভ্রাতৃত্ব:- একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্টাকল্পে মহানবী(সা কুরআনের অমিয় প্রসবন থেকে মানুষের অন্তরে ভ্রাতৃত ও সৌহার্দ্য সৃষ্টির মাধ্যমে ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের ¯্রােতস্বীনি মুসলমানদের সামাজিক জীবনে এক সুদৃঢ় ও প্রশস্ত মোহনার সৃষ্টি করেন।
আত্মত্যাগ:- রাসুলুল্লাহ (সা কর্তৃক বিনির্মিত সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আত্মত্যাগ ও কোরবাণী। যে সমাজ ব্যবস্থার প্রত্যেকেই নিজের পছন্দনীয় বস্তুকে অন্যের জন্য পছন্দ করে এবং নিজের অপছন্দনীয় বস্তুকে অন্যের জন্য অপছন্দ করে। বস্তুত, প্রত্যেকেই নিজের স্বার্থের চেয়ে অন্যের স্বার্থকে অধিক প্রাধান্য দেয়। কেউ কেউ নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের কল্যান সাধন করে।
প্রকৃতপক্ষে, হযরত মোহাম্মদ (সা এর কোন বৈশিষ্ট্যই লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট সমাজ সংস্কারক। তার অনুপম আদর্শ, মেধা, যোগ্যতা, চরিত্র ও সংস্কারের মাধ্যমে জাহেলী যুগের চরম বর্বর ও অধ:পতিত একটি সমাজকে সর্বকালের শ্রেষ্ট আদর্শ সমাজে পরিণত করেন। যদি মহানবী (সা কর্তৃক প্রতিষ্টিত সমাজের মুলনীতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহের আলোকে সমাজের ভীত রচনা করা যায়, তাহলে বর্তমান অশান্ত পৃথিবীর বিশৃংখল সমাজগুলোতে বইবে প্রশান্তির অমিয় ঝর্নাধারা এবং সেসব মুলনীতি ও বৈশিষ্ট্যের অনুসরনের মাধ্যমেই কেবল গড়ে তোলা সম্ভব একটি নিরাপদ সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা।
বিষয়: বিবিধ
৯৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন