বিনীত ধিক্কার
লিখেছেন লিখেছেন অদৃশ্য কলম ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:১৮:৩০ রাত
সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়ে টমটমে উঠছি, এমন সময় গাড়িতে দুই মহিলার কথোপকথন, “মধ্যরাতে গ্রামের সবাই ঘুমে, মসজিদের ইমাম সাহেবও ঘুমে, এমন সময়ে মসজিদে দুই ভদ্রলোকের আগমন ঘটে এবং ইমাম সাহেবকে পানি পড়া নেওয়ার জন্য ডাক দেয়, ইমাম সাহেব দরজা খোলামাত্র স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে ইমাম সাহেবের মাথা কেটে নিয়ে যায়” এরাই নাকি কল্লা কাটা। প্রশ্ন করলাম, গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমে তখন দুজন লোক এসে পানি পড়া নেওয়ার ভান করে ইমাম সাহেবের কল্লা কেটে নিয়ে গেল- তাহলে ইমাম সাহেব তো মারাই গেলেন, আপনাদের এ খবর কে পৌঁছালো যে ওরা পানি পড়া নিতে আসছিল ? ওরা স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে দিল. ওরা যে দুজন ছিল এ খবর গুলো জানলেন কি করে ? জবাব নেই, কথা বাড়াইনি ! শুধু বললাম এভাবে না জেনে না বুঝে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
বিকালে অফিস থেকে বের হয়ে সি.এন.জি তে উঠছি, কিছু সামনে যেতেই চোঁখে পড়লো ৭/৮ জন যুবক লাঠি হাতে সুদর্শন এক যুবককে বে - ধড়ক পেটাচ্ছে, যুবকটি মোটর সাইকেলে ছিল, ওদের আঘাতের তালে পড়ে যায়, পড়ার পরও ওরা পেটাচ্ছে, আরো ৪/৫ জন আতঙ্কিত অবস্থায় তামাশা দেখছে, থামাতে বললে ড্রাইভার গাড়ি থামায় নি বরং ততোক্ষণে অনেক দূরেই চলে যায়। মনে পড়ে বড়গুনার সেই আলোচিত রিফাত শরীফের কথা।
ওপারে তাবারেজ এপারে রিফাত ! ওপারে তাবারেজ নামক ছেলেটিকে পিঠিয়ে হত্যার সপ্তাহ না ঘুরতেই এপারে রিফাতকে কুপিয়ে মেরে জানান দেয়া হল পশু সভ্যতার দৌড়ে আমরাও আছি। রিফাতকে প্রকাশ্য দিবালোকে যেভাবে কুপিয়ে মারা হল এই বর্বরতা পশু সমাজে ও হয় না। আর যারা তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলো তারা ও নখ - দন্তহীন নপুংশক ছাড়া আর কিছু বলে মনে হয় না।
গাধা আর ঘোড়ার মিলনে খচ্চরের জন্ম হয়, দুইপার ভরে গেছে খচ্চরে। মানবতার মৃত্যু অনেক আগেই হয়েছিল এখন চলছে শ্রাদ্ধ, মানব সভ্যতায় বিচার থাকে, পশুর বিবেক নেই, পশু সভ্যতার বিচারও থাকতে হয় না। মানুষের বিবেক যখন বিকৃত হয়ে যায় তখন সেই মানুষে আর পশুতে কোন ব্যবধান থাকে না। মানুষই তখন পশু হয়ে যায় পশুর চেয়েও পশু হয়।
মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে হলে বা মানুষ হিসেবে থাকতে হলে প্রয়োজন নৈতিকতা, তাকে নৈতিক মুল্যবোধর অনুসারী হতে হবে। নৈতিকতা হচ্ছে এক ধরনের ঐচ্ছিক ক্রিয়া, এক ধরনের মানসিক অবস্থা, যা কাউকে অপরের মঙ্গল কামনা করতে এবং সমাজের প্রেক্ষিতে ভাল কাজের প্রেরণা দেয়। মুলত: নৈতিকতা হল সমাজের বিবেকের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কতগুলো ধ্যান - ধারণা ও আদর্শের সমষ্টি। এটি এমন একটি গুন যা ভাল আচরণ, সচ্ছতা - সততা ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত। সমাজের প্রথা ধর্ম আদর্শ ও ন্যায়বোধ থেকেই নৈতিকতার জন্ম, এটি সার্বজনীন যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি চিন্তাকে ও নিয়ন্ত্রণ করে। এর উদ্দেশ্য সৎ ও ন্যায়বান মানুষ সৃষ্টি করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সঠিক উন্নতি সাধন ও নীতিবোধ প্রতিষ্টা করা। নৈতিকতা সমাজ স্বীকৃত আচরণবিধি, এর শিক্ষা শুরু হয় পারিবারিক ভদ্রতা, শিষ্ঠাচার, সততা, ন্যায়পরায়নতা, নিয়ম নিষ্ঠা ইত্যাদি দ্বারা, রাষ্ট্রের আইন ও নৈতিকতার উপর নির্ভরশীল। আইন ও নৈতিকতার উৎপত্তিস্থল অভিন্ন, আইনের সাফল্য মুলত নীতিবোধের উপর নির্ভর করে। সু - শাসনের অন্তনির্হিত শক্তিই হচ্ছে নৈতিকতা।
নৈতিক নিয়মানুযায়ী কর্তব্য করার মানসিক প্রবণতা বা বাসনা হচ্ছে সততা, নৈতিকতা একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার দ্বারা একটি কাজ ভাল না মন্দ নির্ধারন করা হয়। ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ ও সিদ্ধান্ত থেকে এর উদ্ভব ঘটায়।
নৈতিকতার অভাবেই সমাজে অশান্তি - বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়, এর লঙ্গনে শাস্তি পেতে হোক বা না হউক বিবেকের দংশনে দংশিত হতে হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে বিবেকের এই দংশন নেই। অনৈতিকতাই যেখানে নৈতিকতা সেখানে বিবেকের দংশন থাকবেই বা কেমন করে। একবার এক বিয়ের গাড়িতে একটি গান শুনছিলাম -
“দাড়ি ছাটা গুঁফে আটা গাঁজায় মারে দম,
নামাজ নাই, রোজা নাই, ইফতার খাওয়ার যম!
এটাই তাদের মূলনীতি
এরা হল সমাজপতি ন্যায় বিচারে গুম।
আসলেই কথাগুলো বাস্তব সম্মত ! নৈতিক মুখোশের অন্তরালে অনৈতিকতাই যাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ন্যায় বিচারে গুম হওয়া তাদের জন্য স্বাভাবিক ই বঠে। এদের কাছে সমাজ অনৈতিক, বিবেক বর্জিত আচরণ ছাড়া ভাল কিছু আশা করতে পারে?
বাতাসে অভিশাপের গন্ধ, পাপের পর পাপ জমা হয়ে আছে। মানবতার জানাজা পড়ায় কখনো সিরাজ, কখনো পরিমল, কখনো বা ওসি ওসমান গনির মতো পাষন্ড/রা, আমরা শুধু দেখে যাই, আমাদের সয়েও যায়। প্রতিবাদে গরম হই, প্রতিরোধের দেয়ালটা আর দাড়ায় না, ফুলগুলো অরক্ষিতই থেকে যায়, পাষন্ডরাও বেঁচে যায়।
'কিছু মনে করবেন না জনাব/বেগম, আপনাদের এই নির্লজ নতজানু চাটুকারিতাময় মেরুদন্ডহীন, ব্যক্তিত্ববর্জিত, বিবেক বিকৃত, মস্তিষ্ক বিক্রিত, মনুষ্যত্বহীন, মানষিকতা কে বিনীতভাবে ধিক্কার জানাই।'
কেউ একশোটা থাপ্পর দিলে নিয়ে নাও, কিন্তু একটি অভিশাপ নিওনা, কারণ থাপ্পরগুলো কিছু সময় তোমার শরীরকে কষ্ট দিবে, আর অভিশাপ কেড়ে নেবে ঘুম, কেড়ে নেবে শান্তি। একবেলা না খেয়ে মানুষ ভালো থাকতে পারে। কিন্তু অশান্তির যন্ত্রনা নিয়ে একমুহুর্ত ও বেঁচে থাকা কঠিন।
পৃথিবীটা মানুষের হোক, মানুষগুলো হোক পৃথিবীর ব্যসার্ধ্যমতো। অবিকল মানুষের মতো দেখতে মানুষগুলো মানুষ হয়ে উঠুক!
বিষয়: বিবিধ
৯৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন