মগজ ও কাগজ
লিখেছেন লিখেছেন অদৃশ্য কলম ০৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫৪:০৪ রাত
আমরা বাস করি বর্তমানে, যদিও বর্তমান বলে কিছু নেই। কথা বলি ভোকালকর্ড এর সাহায্যে। জীব জন্তু ভোকালকর্ড থাকার পরও কথা বলতে পারে না। আমরা মানুষ পরিচালিত হই ব্রেইন ব্যবহার করে। পশু, পাখির মাথার খুলিতেও ব্রেইন আছে। তবুও তারা অবুজ। আমরা সবাই নকশা। কেউ একজন নকশাকার আছেন। জীবন একটি পরিকল্পনা। কেউ একজন পরিকল্পক আছেন। থাকতেই হবে! ডিজাইন উইদাউট ডিজাইনার হতেই পারে না।
দুনিয়া হল পলক ফেলা সময়কাল। নাস্তিতেই অস্তিত্ব আমাদের। শূণ্যমাঝে বেঁচে থাকা। আমারা বেঁচে আছি। কীভাবে বেঁচে আছি, সেটাও এক রহস্য! প্রযুক্তিবিদদের ভাষায় তাকে ফ্যাক্ট বলে। এমন না যে, আত্মার স্বরূপ সন্ধানের চেষ্টা করা হয়নি। অনেক হয়েছে! কাজ হয়নি। রহস্য আরো জট পাকিয়েছে। তবুও আমরা বেঁচে আছি। অনেকগুলো বাঁচার উপকরণ নিয়ে। প্রযুক্তি তার মধ্যে একটি।
প্রযুক্তি হল প্রয়োগিক কৌশল, যা মানুষ তার উন্নয়নকার্যে ব্যবহার করে। প্রযুক্তি হল, যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান এবং ব্যবহারের দক্ষতা। তার মানে উপকরণ এবং কৌশল দুটোকেই প্রযুক্তি বা Technology বলা যায়। প্রযুক্তি কখনো হয় আশির্বাদ আবার কখনো হয় অভিশাপ। নির্ভর করে ব্যবহারের উপর। প্রযুক্তি হল পানির মতো, মদের সাথে মিশাবে নাকি দুধের সাথে, নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর।
প্রযুক্তি যখন বিজ্ঞানের সাথে থাকে, নাম হয় Science & Technology বা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। যখন তথ্যের সাথে যায়, নাম হয় Information & Technology বা তথ্য ও প্রযুক্তি (IT)। আইটির আরেক ধাপ পরে আছে আইসিটি Information & Communication Technology বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আর সবগুলো টেকনোলটিরই বেসিক ফাউন্ডেশন হল আমাদের আইটি বা আইসিটি।
প্রাচীন যুগে কাগজের আবিস্কার পৃথিবীকে আলোর পথ দেখিয়েছিল। পরবর্তীতে প্রিন্টিং প্রেস বা ছাপাখানার অগ্রযাত্রা গোটা মানব সভ্যতাকে আমুল পাল্টে দিয়েছিল। আধুনিক যুগে কম্পিউটারের আবিষ্কার আজ আমাদেরকে সভ্যতার চরম শিখরে পৌছে দিয়েছে। চার্লস ব্যাবেজ এর হাত ধরে সুচিত এই স্বপ্নসভ্যতা টিম বার্নার্স লি’র ইন্টারনেট আবিস্কারের মধ্যদিয়ে স্বপ্ন বাস্তবতার রূপ নিয়েছে।
একুশ শতকের তথ্য-প্রযুক্তি বিপ্লব মানব সভ্যতাকে এমন স্বপ্নচূড়ায় নিয়ে যাচ্ছে যা লোকেরা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। কল্প কাহিনীকে হার মানিয়ে চোখের পলকে এই পৃথিবীকে পাল্টে দিচ্ছে আইসিটি বিপ্লব। ফলে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের আবেগ-অনুভূতি, ভালোলাগা-ভালোবাসাও। ফলে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে আজ কাগজের ব্যবহা । গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আয়েশ করে খবরের কাগজ পড়ার দিন শেষ হচ্ছে। তথ্য ও পযুক্তি পাল্টে দিচ্ছে আমাদের লাইফ স্টাইল। খবরের কাগজের পরিবর্তে মুটোফনেই পড়তে হচ্ছে স্মার্ট পেপার। ড্রইংরুমে বসে নয় চলার পথেই পড়া যাচ্ছে হাজারো খবর। শুধু খবর নয়, সাথে শুনা যাচ্ছে অডিও, দেখা যাচ্ছে ভিডিও। ঘরে কিংবা অফিসে নয়, টয়লেটে বসেও দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর চাঞ্চল্যকর সব ঘটনার লাইভ টেলিকাস্ট। শুধু শুনা কিংবা দেখা নয় সঙ্গে সঙ্গে এর বিশ্লেষনও করা যাচ্ছে। মন্তব্যের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতে পারছেন পাঠকরা। অর্থাৎ নিউজ হয়ে গেছে এখন মিউজ। অর্থাৎ, নিউজের সাথে মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক বিশ্লেষণের মিশ্রণে তা আজ মিউজে পরিণত হয়েছে। আর তাতেই হারিয়ে যাচ্ছে কাগজের যুগ। একদিন তা চলে যাবে যাদুঘরে। নতুুন প্রজন্ম যাদুগঘরে গিয়ে সেই খবরের কাগজ দেখবে আর ভাববে কাগজ নামের এমন অদ্ভুদ বস্তুও ছিল প্রথিবীতে!
কাগজের সাথে সাথে মগজের যুগও শেষ হতে চলল বুজি! অর্গানিক মগজের পরিবর্তে চালু হচ্ছে সিনথেটিক মগজের কারবার। হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স এর জায়গা দখল করে নিচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স। মানুষের সৃজনশীলতা যাচ্ছে মেশিনের ভেতর। এখন বাঘা বাঘা সব ইন্টেলিজেন্স কাভার করে দিচ্ছে রোবট। কেমন থাকবে দিন। বৃষ্টি হবে নাকি রোদ, এমনসব পূর্বাভাসও করে দিচ্ছে রোবট। নতুন এমন অতিথির আগমনে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন বুদ্ধিজীবীরা। এমনিতেই বিশ্বে বেকার সমস্যা দিনদিন প্রকট হচ্ছে। এমতাবস্থায় মানুষ্য ইন্টিলিজেন্স এর পরিবর্তে রোবটিক ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার হলে তা সংকটেই রূপ নিতে পারে।
তথ্য-প্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সোস্যাল মিডিয়া তথা ফেইসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি। যুব ও ছাত্র সমাজ আজ মারাত্মকভাবে এদিকে ঝুকে আছে। দৈনন্দিন ঘুম, খাওয়া, পড়ালোখা বাদ দিয়ে আজ ওরা ফেইসবুক ইউটিউবে ব্যস্ত। ফেইসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় চলে আসছে। ঘরে বসেই যখন-তখন যোগাযোগ করা যাচ্ছে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে। শেয়ার, লাইক, কমেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জানা-অজানা যেকোন বিষয় সরাসরি দেখা যাচ্ছে ইউটিউবে। অন্যদিকে, এগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষ নিজের ব্যক্তিগত তথ্য হারাচ্ছে। ফাঁস হচ্ছে পরীক্ষার প্রশ্ন। হ্যাক হচ্ছে এ্যকাউন্ট। সৃষ্টি হচ্ছে অশান্তি। রয়েছে অশ্লীলতা, সৃষ্টি হচ্ছে নগ্নতা। বাড়ছে ধর্ষণ। ফলে হারিয়ে ফেলতে চলছে সমাজের স্বাভাবিক মূল্যবোধ। তাইতো আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে ভয়াবহ আশংকার কথা প্রকাশ করেছেন প্রয়াত বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। তার মতে, “আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স মানব সভ্যতাকে হুমুকির মুখে ফেলে দেবে। মানবীয় গুণাবলী ধ্বংস হয়ে যাবে। এর কারণে পৃথিবীও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।”
আধুনিক আইসিটি বিপ্লবের ফলে পৃথিবী থরথর বেগে এগিয়ে গেলেও সবগুলো বিষয় যে খুব সুখের তা কিন্তু নয়।
----------------------------------------------------------------------------------------
বিষয়: বিবিধ
৯৪২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন