সহযোগী হও, প্রতিপক্ষ হইও না।
লিখেছেন লিখেছেন অদৃশ্য কলম ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:১৯:০১ রাত
বর্তমান যূগে আমাদের সমাজে খুব সাধারন দুটি শব্দ হচ্ছে সহযোগিতা ও বিরোধীতা। সামনে বিদ্যমান সমস্যা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আমাদের মাঝে পরস্পর সু-সম্পর্ক ও সহযোগিতার মানসিকতা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে, কোন এক শাখার একই ব্যবস্থাপনাধীন লোকদের মধ্যে ও পরস্পর বিরোধ দেখা যায়। জীবনের বেশীরভাগ সময় ব্যায় হয় অন্যকে খাট করে নিজের অবস্থা ঊর্ধ্বে তোলার জন্য। প্রত্যেকের ধারনা আমি যা কিছু করছি বা আমার দ্বারা যা কিছু হচ্ছে তাই সত্য ও মহৎ কাজ। অন্যরা যা করছে তা কোন কাজই না। এভাবে নিজের কাজকে গুরুত দিতে গিয়ে অন্যের কাজকে তুচ্ছ করার মানসিকতা আমাদের মাঝে গড়ে উঠেছে। অন্যের কাজের স্বীকৃতি ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মানসিকতা হারিয়ে গেছে।
প্রাণী জগতের বৈশিষ্টই এরকম। যারা শক্তশালী তারা ক্ষমতার দাপটে ঠিকে থাকবে আর নিজের ঠিকে থাকা নিশ্চিত করতে অন্যকে নিজের চেয়ে বড় হতে দেবে না। ক্ষমতাবানরা দুর্বলদের উপর কর্তুত্ব বজায় রাখবে এবং তাদেরকে নিজের কাজে ব্যবহার করতে থাকবে।
মানবজাতি একসময় এমন অবস্থানে ছিল যেখানে প্রকৃতি যেভাবে চালাত সেভাবেই চলতো। ধীরে ধীরে মানুষ প্রকৃতির শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। মুক্ত হওয়ার পর এখন উল্টো প্রকৃতিকে শাসন করছে। অপব্যবহার চালাচ্ছে প্রকৃতির সব উপাদানের উপর। অপব্যবহারের ছোঁয়া শুধু প্রকৃতির উপর নয়, নিজেদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে আমাদের মেধা, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা অসৎ ও অকল্যানকর কাজে ব্যয় হচ্ছে। এই ব্যাধি দূর করতে হলে জাতির শিক্ষিত বিবেকবান ব্যক্তি তথা সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
দুটি বস্তুকে একত্রিত করতে একটি মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। তদ্রুপ অন্তরের সংগে অন্তর মেলানোর জন্যও একটি বিশেষ মাধ্যম রয়েছে, আর তা হল ভদ্রতা ও শিস্টাচার। শিষ্টাচার ও নিয়তের উপর ভিত্তি করে হতে পারে পরস্পর মিলন। এতে স্পষ্ট যে, আমাদের মাঝে পরস্পর সম্পর্ক ও দুরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারন হল শিষ্টাচার কম ও বিশুদ্ধ নিয়তের অভাব। বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত কোন কাজই গ্রহনযোগ্য নয়। আর এর মাপকাটি হল সহকর্মীর প্রতি তার দ্বারা অনুগৃহীত হওয়ার অনুভূতি নিজের অন্তরে সৃষ্টি করা। যদি অন্তরে প্রতিহিংসা সৃষ্টি হয় তবে অন্যের দ্বারা কোন কাজ সম্পাদিত হলে সেটাকে কোন কাজই মনে হয়না। "ভাল কাজ তো এটিই, যা আমি করছি" নিয়ত যদি এমন হয়, তাহলে তার উচিৎ সে যেন তার নিয়তকে শুদ্ধ করে। অন্যথায় কাজটি বন্ধ করে দেয়।
আফসোস! আমরা নিজেদের মহত্বগিরীর কারনে, অন্যের সম্মানকে ধূলিস্যাৎ করার হীন চেষ্টা করছি। কোন ব্যক্তি বা দলের সাথে যদি সামান্যতম বিরোধ থাকে, তাকে ছার দেওয়ার পরিবর্তে অগ্নিবর্ষার মতো তার বিরোধীতা করতে থাকি। কোন নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব বা প্রতিষ্টানের সম্মান ও সফলতাকে স্বীকার করার স্পৃহা আমাদের মাঝ থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সামষ্টিকভাবে পরস্পরের সহযোগিতার যোগ্যতা আমাদের থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে। কাউকে একটু এগিয়ে যেতে দেখলে তার বিরুদ্দে পুরো শক্তি ব্যয় করা আমাদের স্বভাবে পরিনত হয়ে গেছে। পরিবেশ থেকে চক্ষু বন্ধ করা এবং পরিস্থিতিকে অনুকূল করার চেষ্টা না করা আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে।
আমরা না অবস্থা বুঝার চেষ্টা করি, না সমাজের প্রতি খেয়াল করে কখনো একথা চিন্তা করি যে, সমাজকে আমাদের কিছু দেয়ার রয়েছে।
আসলে মানুষ চেনা বড়ই কঠিন। পৃথিবীতে নানা রকমের মানুষ বসবাস করে। ধনী-গরীব, সাদা-কালো, লম্বা-খাটো। তবে এজন্যে কেউ কাউকে অবহেলা করতে নেই। কার মধ্যে কোন প্রতিভা আছে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তাই কাউকে অবহেলা করতে নেই, প্রতিপক্ষ ভাবতে নেই।
আমাদের সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। স্বার্থবাদী, সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করে সহযোগিতার মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে সাম্যবাদী ধারায় এগিয়ে যেতে হবে।।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
নেকী ও আল্লাহভীতির সমস্ত কাজে সবার সাথে সহযোগীতা করো এবং গুনাহ ও সীমালংঘনের কাজে কাউকে সহযোগীতা করো না৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ তাঁর শাস্তি বড়ই কঠোর৷ সূরা মায়িদাহ আয়াত ২
মন্তব্য করতে লগইন করুন