নবী-জীবনের সোনালী অধ্যায়-৩ কে কিনবে এই গোলামটাকে ?!
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০১:৪৪:২৫ রাত
মানবজীবনের শ্রেষ্ঠফুল, আল্লাহর রাসূল। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর চরিত্র ফুলের চাইতেও পবিত্র। তাঁর উন্নত চরিত্রের একটি দিক এটাও ছিল, তিনি সাধারণ লোককেও গুরুত্ব দিতেন। এমন লোকের প্রতিও সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন যার তেমন কোনো গুরুত্বই ছিল না সমাজে।
বনি আশযা‘ আরবের অন্যতম প্রসিদ্ধ গোত্র বনি গাতফানের একটি শাখা। প্রাচীন যুগ থেকে এ গোত্রটির বসবাস ছিল মদিনার শহরতলীতে। ওই গোত্রের এক বেদুইন যাহির ইবন হারাম রা. মদিনা থেকে কিছু দূরত্বে বাস করতেন। অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন তিনি। চেহারার দিক দিয়েও দেখতে খুব একটা সুন্দর ছিলেন না। তবে তার একটা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আল্লাহর রাসূল সা.ও তাকে খুব মহব্বত করতেন।
যাহির ইবন হারাম আশযায়ি‘ রা. যখনই মদিনা আসতেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্য কিছু না কিছু গ্রাম্য উপঢৌকন নিয়ে আসতেন। যেমন: টাটকা সবজি, ফলমূল, যব, মধু ইত্যাদি নিয়ে আসতেন। যাহির রা. যখন ফিরে যেতেন, আল্লাহর রাসূলও তাকে শহুরে হাদিয়া-তোহফা দিয়ে বিদায় জানাতেন। একদিন তো আল্লাহর রাসূল সা. যাহির রা. কে এমন সম্মান দিলেন, অনেকটা এধরনের সম্মান অন্য কোনো সাহাবির ভাগ্যে জোটে নি। তিনি সা. বললেন, ‘যাহির আমার গ্রাম্য বন্ধু আর আমি তার শহুরে বন্ধু।’
আসুন, হাদিসে বর্ণিত শব্দগুলোর উপর একটু চিন্তা করি:
(إن لكل حاضرة بادية وبادية آل محمد زاهر بن حرام)
“নিশ্চয়ই প্রত্যেক শহুরে পরিবারের একজন গ্রাম্য বন্ধু থাকে আর মুহাম্মদের পরিবারের গ্রাম্য বন্ধু হচ্ছে যাহির ইবন হারাম।” (মু‘যামুস সাহাবা, আবূল ক্বাসিম: ২/২৯২।)
যাহির রা. ছিলেন সাদাসিধে মানুষ। শহুরে চালচলন সম্পর্কে বেখবর ছিলেন তিনি। নিজ গ্রাম থেকে যখন আসতেন, সঙ্গে আনা পণ্যসামগ্রী নিয়ে বাজারের মধ্যেই কোনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যেতেন এবং বিক্রি আরম্ভ করে দিতেন। প্রাচীন কাল থেকে প্রথা চলে আসছিল, যখনই গ্রাম থেকে কোনো ব্যক্তি সবজি, ফলমূল ইত্যাদি নিয়ে আসত লোকজন দৌড়ে এসে তার চতুর্দিকে জড়ো হয়ে যেত। এভাবে তারা তাজা টাটকা সবজি পেয়ে যেত যা প্রায়শই সস্তা হতো। একদা একই কায়দায় যাহির রা. সঙ্গে আনা গ্রাম্য কিছু পণ্যসামগ্রীসহ বাজারে এলেন এবং এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তা বিক্রি করতে লাগলেন। তার ভাগ্য ভালোই ছিল, আল্লাহর রাসূল সা.ও বাজারে আসেন তখন। এসে রাসূলুল্লাহ সা. যখন তাঁর গ্রাম্য বন্ধুকে দেখলেন, পিছনের দিক দিয়ে গিয়ে তার চোখের উপর তিনি (সা.) তাঁর পবিত্র হাত রাখলেন।
সম্মানিত পাঠক! সামনে যাবার আগে একটু চিন্তা করুন তো, রাসূলুল্লাহ সা.এর চরিত্র কত উন্নত ও মহৎ ছিল! যাহির অতি সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তার অত্যন্ত ভালো গুণ হচ্ছে, আল্লাহর রাসূল সা. তাকে ভালোবাসেন আর তিনিও আল্লাহর রাসূল সা.কে মহব্বত করেন। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন:
(ابغوني ضعفاءكم) “আমাকে তোমরা দুর্বলদের মধ্যে তালাশ করো।”
তিনি আরো বলেন: (فإنما ترزقون وتنصرون بضعفائكم) “তোমাদেরকে রিযিক ও বিজয় দান করা হয় সেই দুর্বলদের কারণেই।”
সম্মানিত পাঠক! একটু কল্পনা করুন তো, যাহিরের চোখের উপর রাসূলুল্লাহ সা.এর রেশমের চেয়েও নরম ও তুলতুলে এবং কস্তুরি ও গোলাপের চাইতেও বেশি সুগন্ধিময় হাত। প্রথম প্রথম তো যাহির ভড়কে গেছেন। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি বলতে লাগলেন, কে ভাই? আমার চোখের উপর কে হাত রাখল? কিন্তু যখন তিনি রাসূলুল্লাহ সা.এর মোবারক হাতের ছোঁয়া অনুভব করলেন, তাঁর সুরভির ঘ্রাণ নিলেন তখন তিনি বুঝতে পারলেন, তার পিছনে জগতের ইমাম দাঁড়িয়ে। এ সুযোগকে তিনি গনিমত মনে করলেন এবং পিঠ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.এর সিনার সাথে ঘষা আরম্ভ করে দিলেন।
আল্লাহর রাসূল সা. মহব্বতপূর্ণ ভঙ্গিতে বললেন, "হে লোকজন! কেউ কি আছো, যে এই গোলামকে কিনে নিবে?”
যাহিরও ভালোবাসাসিক্ত ভঙ্গিমায় আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মত কালো কৃঞ্চ গ্রাম্য লোককে কিনে নিয়ে কেউ করবে টা কী? আমাকে কিনে বড় লোকসান হবে তার। কোনো মান বা মূল্যই তো নেই আমার। আমি তো বেকার, অপদার্থ মানুষ। রাসূলুল্লাহ সা. জবাবে বললেন: “আরে প্রিয়! এমনটি বলো না। কেউ কি তোমাকে বলেছে, তোমার কোনো মান - মূল্য নেই? তুমি আল্লাহর নিকট অপদার্থ নও। তুমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাস। এ জন্যে তুমি আল্লাহর নিকট বড়ই মূল্যবান।”
(সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৩/১০৭, শারহুস সুন্নাহ: ১৩/১৮১ ও জামঊল ওসায়েল ফী শারহিশ শামায়েল: ২/২৯।)
(সংকলিত ও অনুদিত)
বিষয়: বিবিধ
৯১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন