নবী-জীবনের সোনালী অধ্যায়-১ আল্লাহ ধ্বংস করেন না আপনার মত লোককে
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:৫০:৩২ রাত
হযরত খাদিজা রা.। অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমতি একজন মহিলা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর প্রিয় সহধর্মিণী ছিলেন। নবুয়তপ্রাপ্তির পনের বছর আগ থেকেই রাসূলুল্লাহ সা. এর পত্নী ছিলেন তিনি। যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তখন মহানবী সা. এর বয়স ছিল পঁচিশ বছর।
এ মহীয়সী নারী মহানবীর প্রতিটি সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন। আপন স্বামীর একান্ত ব্যক্তিগত ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানতেন। জীবনের মুহূর্তগুলোকে খুব ভালো করেই বুঝতেন।
হেরা গুহায় রাসূলল্লাহ সা. এর মাথায় যে নবুয়তের মুকুট পরানো হয়, তা কিন্তু সাধারণ ঘটনা ছিল না। জিবরিল আ. যখন প্রথম ওহি নিয়ে আসেন তখন নবী কারিম সা. হেরা গুহায় ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। মহানবী সা. কে বললেন, পড়ুন। মহানবী সা. বললেন, “আমি পড়তে জানি না।” রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ফেরেশ্তাটি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন যে, খুব ব্যথা পেলাম আমি। একটু পর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, “আমি তো পড়তে জানি না।” তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে ধরে চাপ দিলেন। ফলে আমি খুব ক্লান্তি অনুভব করলাম। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, “আমি পড়তে জানি না।” তৃতীয়বারও একই রকম ঘটনা ঘটল। অত:পর তিনি বললেন, (اقرأ باسم ربك الذي خلق) “ আপনার প্রভুর নামে পড়ুন যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (خلق الإنسان من علق) “তিনি মানুষকে এক জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন।” (اقرأ وربك الأكرم) “ পড়ুন এবং আপনার প্রভু নিতান্ত দয়ালু।” (الذي علم بالقلم) “ তিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন।” (علم الإنسان ما لم يعلم) “ মানুষকে তিনি এমন জ্ঞানের শিক্ষা দিয়েছেন যা সে আগে জানত না।”
ওহির আগমন, ফেরেশ্তা কর্তৃক একবার নয় তিন তিনবার সজোরে চাপ দেয়া এবং তাতে রাসূলুল্লাহ সা.এর ব্যথা পাওয়া.. এসব খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল। এতে আল্লাহর রাসূল সা. খুব সন্ত্রস্ত হলেন।
হযরত খাদিজা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ওহির আয়াতসমূহ পড়তে পড়তে যখন ঘরের দিকে রওয়ানা দেন, ভয়ের তোড়ে তাঁর স্কন্ধ কাঁপছিল। বাড়ি পৌঁছালে সুখ-দুঃখের সাথী হযরত খদিজা রা. পূর্বের মতই হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। মহানবী সা. বললেন, (زملوني.......زملوني) “ আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও... লেপ দিয়ে মুড়িয়ে দাও আমাকে”।
রাসূলুল্লাহ সা. থরথর করে কাঁপছিলেন তখন। খাদিজা রা. তাঁকে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। একসময় ভয় যখন দূর হয়ে গেল, রাসূলুল্লাহ সা. খাদিজা রা.কে বললেন, “খাদিজা! আমার কী হয়ে গেল?” অত:পর তাকে পুরো ঘটনা শোনালেন এবং বললেন, (لقد خشيت على نفسي) “আমি তো আমার প্রাণ নিয়ে শংকা বোধ করছি।”
এখন হযরত খাদিজা রা. এর প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি দেখুন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় সান্তœনা দিলেন। বললেন,
(كلا والله! ما يخزيك الله أبدا) “কখনোই হতে পারে না তা! আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে কখনো অপমান করবেন না।” কারণ আল্লাহ তা‘আলা আপনার মত ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করেন না। অত:পর রাসূলুল্লাহ সা. এর মহৎ গুণসমূহ উল্লেখ করেন। তাঁর উন্নত চরিত্রগুলোর সাক্ষ্য দেন এ বলে, আপনি তো আত্মীয়তা রক্ষা করেন। সর্বদা সত্য কথা বলেন। অক্ষম লোকদের বোঝা হালকা করেন। দরিদ্র ও নিঃস্বদের উপার্জন করে দেন। মেহমানদের খাতির করেন এবং বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস:৩ এবং সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬০)
সম্মানিত পাঠক! উপর্যুক্ত মহৎ গুণাবলির প্রতিটি গুণ নিয়ে একটু ভাবুন তো। আত্মীয়দের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা এবং সম্পর্ক জোড়ানো কতই না ভালো কাজ!
সত্য বলা, মানুষের বোঝা হালকা করা, মেহমানদের খাতির-যতœ করা, মানুষের বিপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা.. সবই মহৎ ও উন্নত চরিত্র।
ইতিহাস সাক্ষী, রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকৃষ্ট শত্রুরাও কখনো তাঁকে বকধার্মিক ও মিথ্যুক বলে নি। মক্কায় লোকেরা তাঁকে নামে কম; গুণেই বেশি চিনতো। তারা রাসূলুল্লাহ সা. কে ‘আস সাদিক’ ও ‘আল আমিন’ তথা সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত উপাধি দিয়েই জানতো ও ডাকতো। তারা বলতো, দেখো, ‘আস সাদিক’ এসে গেছে, ‘আল আমিন’ এসেছে। এ জন্যই কাফিররা নবুয়তপ্রাপ্তির পরও রাসূলুল্লাহ সা. কে সরাসরি মিথ্যুক বলে নি। এ কথার সাক্ষ্য পবিত্র কুরআনে এভাবে এসেছে:
(فإنهم لا يكذبونك ولكن الظالمين بآيات الله يجحدون) “নিশ্চয়ই তারা আপনাকে মিথ্যুক বলে না। কিন্তু এসব জালিম আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করে।” (সূরা আল আন‘আম ৬/৩৩)
(সংকলিত ও অনুদিত)
বিষয়: বিবিধ
১১৪১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন