‘বাবা’
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন ১২ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪২:১৫ রাত
পৃথিবীটা খুব সুন্দর। সুন্দর এ পৃথিবীর সুন্দরতম শব্দসমূহের মধ্যে ‘বাবা’ শব্দটি অন্যতম। দুই বর্ণের এই ছোট শব্দটির মধ্যে কত যে আদর, ভালোবাসা, স্নেহ, ত্যাগ লুকিয়ে আছে তা হয়ত আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। অনেকে আবার মায়ের গুরুত্ব বুঝলেও বাবার গুরুত্ব বুঝতে চান না। অথচ নিজ নিজ ক্ষেত্রে মা-বাবা উভয়জনের গুরুত্ব অপরিসীম।
‘বাবা’ আমাদের সংসার জীবনের বটবৃক্ষ। আমাদের লালন-পালনে জন্মদাতা পিতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ‘বাবা’ শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে সীমাহীন ভালোবাসা, আবেগ আর বটবৃক্ষের ছায়া। সন্তানের মুখে ‘বাবা’ ডাক ভুলিয়ে দেয় পিতার বুকের ভেতরের দুঃখ আর কষ্ট। ভুলিয়ে দেয় আর্থিক অনটনের কথা। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা স্বপ্ন দেখে- তার বিশাল ছায়ার নিচে আজকের এই শিশুটি একদিন বড় হবে, মানুষ হবে, সন্তানের পরিচয়ে বাবার পরিচিতি বাড়বে।
সংসারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এই ‘বাবা’র প্রতিও ইসলাম যারপরনাই দয়া ও রহমত প্রকাশ করেছে। দুনিয়ার সকল সন্তানকে বাবার প্রতি যত্নবান হতে নির্দেশ দিয়েছে। সবকাজে পিতার খুশি ও সন্তুষ্টির দিকে লক্ষ রাখার জন্য সন্তানকে আদিষ্ট করেছে। রাহমাতুল লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম যেখানে মা-জননীর কথা বলেছেন, বাবার কথাও উল্লেখ করেছেন।
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার ‘বাবা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। আসলে বাবার প্রতি সন্তানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা হিসেবে এই একটি দিবসই কি যথেষ্ট? কখনোই নাহ। সন্তান যত বড়ই হোক, তার অভিমান আর অবহেলার গুণিতক যতই বিশাল হোক, বাবার স্নেহের দরজাটা সবসময়ই খোলা থাকে তার সন্তানের জন্য।
সন্তানের লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা এবং সার্বিক তরবিয়তে বাবার যে অসামান্য ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে তার কারণেই হয়ত সামনের হাদিসটি উচ্চারণ করেছেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রসিদ্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবন আমর রা. থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে। আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে রয়েছে।’ (তিরমিযি, হাদিস নং ১৮৯৯)
শৈশবে যে বাবার হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে পথচলা শুরু হয়। সেই হাত ধরেই আমাদের জীবনের শৈশব কৈশোর পেরিয়ে যায়। কবে যে ধরা হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পড়ি তা টের পাই না কেউই। পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি- বাবার বয়স বেড়ে গেছে। এই পথপ্রদর্শক বাবাই একসময় বন্ধু, একসময় শাসক ছিলেন। তার বিশাল ছায়ার নিচেই সন্তানতুল্য গাছগুলো বিকশিত হয়েছে। কবিগুরু সুন্দর বলেছেন:
তুমি কি গো পিতা আমাদের, ওই যে নেহারি মুখ অতুল স্নেহের,
ওই যে নয়নে তব, অরুণ কিরণ নব,
বিমল চরণ- তলে ফুল ফুটেছে প্রভাতের।
ওই যে স্নেহের রবে, ডাকিছ মোদের সবে,
তোমার আসন ঘেরি দাঁড়াব কি কাছে গিয়া !
হৃদয়ে ফুলগুলি, যতনে ফুটায়ে তুলি,
দিবে কি বিমল করি প্রসাদসলিল দিয়া।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন