হিজরতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৬:৪৪ বিকাল
সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। যুগ-যুগ ধরে চলে আসছে হকের বিরুদ্ধে বাতিলের লড়াই। ইতিহাস সাক্ষী, যেখানেই সত্যের আগমন ঘটেছে, হকের উন্মেষ ঘটেছে..মিথ্যা ও বাতিল হাজারো অন্ধকার নিয়ে সামনে হাজির হয়েছে। সত্যের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই বলে কি সত্যের অগ্রযাত্রা বন্ধ থাকবে? কখনোই না। এক জায়গায় না হলে অন্যত্র সত্যের আলো ছড়াতে হবে। এজন্যই হিজরত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে হিজরত করেছেন। অসংখ্য সাহাবি হিজরত করেছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা ‘আনকাবূত:৫৬ নং আয়াতে হিজরতের বিধি-বিধান ও এ সম্পর্কিত সন্দেহের নিরসন করা হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ‘ইবাদত কর।’ অর্থাৎ, পৃথিবীর কোনো জনপদে আমার ‘ইবাদত করতে সমস্যা হলে অন্যত্র চলে যাবে। প্রতিকুল স্থান ত্যাগ করে অনুকুল স্থানে চলে যাবে।
হিজরতের শাব্দিক অর্থ: ত্যাগ করা। সাধারণের মধ্যে প্রচলিত ভাষায় দেশত্যাগ করাকে হিজরত বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় দারুল-কুফর তথা কাফেরদের দেশ ত্যাগ করে দারুল-ইসলাম তথা মুসলমানদের দেশে গমণ করার নাম হিজরত। -(রূহুল মা‘আনি) মোল্লা আলি কারি মিশকাতের ব্যাখ্যায় বলেন, ধর্মীয় কারণে কোনো দেশ ত্যাগ করাও হিজরতের অন্তর্ভূক্ত। (মিরকাত, ১ম খন্ড, ৩৯ পৃঃ)।
জিহাদ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ যেমন সমগ্র কুরআনে ছড়িয়ে রয়েছে, তেমনি হিজরতের বর্ণনাও কুরাআনের অধিকাংশ সূরায় একাধিকবার বিবৃত হয়েছে। সবগুলো আয়াত একত্রিত করলে জানা যায়, হিজরত সম্পর্কিত আয়াতসমূহে তিন রকমের বিষযবস্তু বর্ণিত হয়েছে। এক. হিজরতের ফযিলত। দুই. হিজরতের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক বরকত। তিন. সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দারুল-কুফর থেকে হিজরত না করার কারণে সতর্কবাণী। যেমন সুরা তওবায় বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে ও হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর কাছে বিরাট পদমর্যাদার অধিকারী এবং তারাই সফলকাম।’ এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘হিজরত পূর্বেকার সব গোনাহকে নিঃশেষ করে দেয়।’ হিজরতের বরকত সম্পর্কে সূরা নাহলের এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর জন্যে হিজরত করে নির্যাতিত হওয়ার পর, আমি তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম ঠিকানা দান করব এবং পরকালে বিরাট সওয়াব তো রয়েছেই, যদি তারা বুঝে।’
মোটের উপর ইসলামে হিজরতের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে হিজরতকে মুসলমানদের জন্যে কাফিরদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করা, সত্য প্রচার করা এবং দুনিয়াতে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার একটি কৌশল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। হিজরতের গুরুত্বের দিক বিবেচনা করেই হিজরি ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয়েছে। বিগত ১৪৩৬ বছর থেকে মুসলিম সমাজে এই হিজরি ক্যালেন্ডার অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যের সঙ্গে অনুসৃত হয়ে আসছে। অল্প কয়েকদিন পর নতুন হিজরি সন ১৪৩৭ হি. আরম্ভ হবে। হিজরি নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা রইল সবার প্রতি। সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হোক সবার জীবন- এই কামনা করছি মহান আল্লাহর দরবারে।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন