নীরব ঘাতক মোবাইল টাওয়ার থেকে সাবধান!

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন এরশাদ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪৭:৫৯ সকাল

বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ ও শব্দ

দূষণের চাইতে ভয়াবহ দূষণ হ’ল

মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন দূষণ।

মোবাইল ফোন, কম্পিউটার,

ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও বিদ্যুতের

লাইনের মাধ্যমে সারা দেশে

ছড়িয়ে পড়ছে এই ইলেক্ট্রো

ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন। যা আধুনিক

প্রযুক্তি অভিশাপের ডালায় একটি

নতুন সংযোজন। ডঃ মার্টিন কুপারের

হাতে যা ১৯৭৩ সালে নিউইয়র্কে

জন্ম লাভ করে এবং ১৯৯৩ সালের

এপ্রিলে প্রথম বাংলাদেশে চালু হয়।

গন্ধ, বর্ণ ও শব্দহীন এই অদৃশ্য ঘাতক

তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণের ফলে

‘স্লো পয়জন’-এর মতো দেশে ভয়াবহ

স্বাস্থ্য ঝুঁকির উদ্ভব ঘটেছে। মানুষ ও

জীবজগতের সবাই এই মৃত্যু ঝুঁকির

মধ্যে পড়েছে। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ

মোবাইল টাওয়ার লোকালয়, বাড়ী ও

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে স্থাপিত

হওয়ায় এই ঝুঁকি শতগুণ বেড়ে গেছে।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে

রেডিয়েশনের মাত্রা মনিটর করা

হলেও আমাদের দেশে তার ব্যবস্থা

নেই। ফলে লোভী কোম্পানীগুলো

যত্রতত্র টাওয়ার বসাচ্ছে আর মানুষ

অল্প কিছু টাকার জন্য এই আত্মঘাতি

পথে প্রলুব্ধ হচ্ছে। যেখানে-সেখানে

বিল্ডিংয়ের মাথায় প্রায় দু’টন ও

তার অধিক ওজনের টাওয়ারগুলি

বসানো হচ্ছে। যা পরে ঐ বিল্ডিং-

এর জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়।

গত বছর ২৩শে এপ্রিলে সাভারের নয়

তলা রাণা প্লাজা ধসের অন্যতম

প্রধান কারণ ছিল এই বিধ্বংসী

মোবাইল টাওয়ার, যা ঐ প্লাজার

ছাদে বসানো ছিল। যাতে ১১৩৫ জন

হতভাগ্য মানুষের জীবন্ত সমাধি হয়

এবং শত শত মানুষ পঙ্গু হয়। বিশ্বে

মন্দ রেকর্ড সৃষ্টিকারী এতবড়

ধ্বংসলীলার পরেও মানুষ শিক্ষা

গ্রহণ করেনি। ভূমিকম্প বা

ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লে এইসব

টাওয়ারযুক্ত বিল্ডিংগুলির অবস্থা ও

সেখানে বসবাসকারীদের অবস্থা

কেমন হবে, ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।

সেই সাথে টাওয়ারের বৈদ্যুতিক তার

থেকে সংঘটিত অগ্নিকান্ডে

বিস্তীর্ণ এলাকা ভস্মীভূত হতে

পারে। টাওয়ারের ওজন সইতে না

পেরে যদি কোন বিল্ডিং এভাবে

ধসে পড়ে, তাহ’লে অগণিত রাণা

প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে যাবে সারা

দেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের পদার্থ

বিজ্ঞান বিভাগের ছাদে এই টাওয়ার

বসানো হয়েছে। ফলে এই বিভাগের

অধিকাংশ শিক্ষক-ছাত্র এখন

ক্যান্সার আতংকে রয়েছেন। ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার

মধ্যে অবস্থিত উদয়ন স্কুলের ছাদে

কয়েকটি মোবাইল কোম্পানী

টাওয়ার বসিয়েছে। শিক্ষক ও

অভিভাবকদের আতংক ও প্রতিবাদকে

আদৌ গুরুত্ব দেয়া হয়নি। দৈনিক ৬/৭

ঘণ্টা ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে

অবস্থান করে। স্কুলের ও

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাযার

ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক এইসব

টাওয়ারের সার্বক্ষণিক বিকিরণের

অসহায় শিকার। এভাবে অর্থলোভী

দালান মালিক ও টাওয়ার মালিকদের

যোগসাজশে মারাত্মক স্বাস্থ্য

ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে মানুষ ও

জীবজগত। বিশেষজ্ঞদের হিসাব মতে

যেসব প্রতিষ্ঠানের ছাদে বা

কাছাকাছিতে টাওয়ার বসানো

হয়েছে, তার বিকিরণের কুপ্রভাবে

এখনকার শিশুরা ২০ বছর পরে

লিউকোমিয়া (রক্তস্বল্পতা),

ক্যান্সার, স্মৃতিহীনতা প্রভৃতি

দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে

পারে। বিশেষ করে যারা এসব

টাওয়ারের কর্মকর্তা ও কর্মচারী

অর্থাৎ লাইন ম্যান, ইলেকট্রিক

অপারেটর বা অনুরূপ পেশায়

দায়িত্বরত, তারাই এসব রোগে দ্রুত

আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া এইসব

লাইনের নিকটবর্তী এবং দুই

টাওয়ারের মধ্যবর্তী এলাকায় যারা

বসবাস করে, তারা দূরবর্তীদের

তুলনায় বেশী এবং দ্রুত আক্রান্ত হয়।

মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশনের

কারণে মানুষের ব্রেইন টিউমার,

ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, নিদ্রাহীনতা,

উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও গর্ভপাত সহ

মারাত্মক রোগসমূহ অকল্পনীয়

মাত্রায় বেড়ে গেছে। এছাড়াও এর

রেডিয়েশন আমাদের মগযের মধ্যে

ঢুকে ডিএনএ ভেঙ্গে মারাত্মক ক্ষতি

সাধন করতে পারে। দেহের নার্ভের

সেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং মানুষ

পারকিনসন্স, আলঝেইমারস প্রভৃতি

শিরাঘটিত দুরারোগ্য ব্যাধিতে

আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে

ভবিষ্যতে দেশে একটি বিকলাঙ্গ ও

অকেজো প্রজন্ম সৃষ্টি হ’তে পারে।

শুধু মানুষ নয়, টাওয়ারের বিকিরণের

ফলে পশু-পক্ষী ও জীবজগতের ব্যাপক

ক্ষতি হচ্ছে। নারিকেল গাছের ফলন

কমে যাচ্ছে। অকালে নারিকেল ঝরে

পড়ছে। অধিকাংশ ডাব-নারিকেলে

পানি নেই।

এইসব রোগের বাহ্যিক লক্ষণ হ’ল

শরীরে ঝিম ঝিম ভাব হওয়া, অবসাদ,

বিষণ্ণতা, অহেতুক ভয় করা এবং

কাজে অমনোযোগী হওয়া,

স্মরণশক্তি কমে যাওয়া ও ভুলে

যাওয়া। অধিক মোবাইল ফোন

ব্যবহারকারীগণ ইতিমধ্যেই এসব

রোগে ভুগতে শুরু করেছেন। মোবাইল

ব্যবহারের ফলে দেশের অগণিত শিশু

এখন ‘অটিজমে’ (মানসিক প্রতিবন্ধী)

আক্রান্ত হচ্ছে। এতে পরিবার, সমাজ

ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে

ক্রমেই এক দারুণ অরাজকতা। দেশ দ্রুত

এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসাত্মক পরিণতির

দিকে।

সতর্কতা : (১) কর্ডলেস ফোন ও

মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে দিন।

ল্যান্ডফোন ব্যবহার করুন। কেননা

তারযুক্ত হওয়ায় এটি অনেকটা

নিরাপদ। (২) একটানা ৬ মিনিটের

বেশী মোবাইল ফোনে কথা বলবেন

না। তাতে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হতে

পারে। (৩) মোবাইল ফোন শিশুদের

থেকে কমপক্ষে ৫ ফুট দূরে রাখুন এবং

রাতে ঘুমানোর সময় কমপক্ষে ৭ ফুট

দূরে রাখুন (৪) কাছে বা বালিশের

নীচে রেখে ঘুমাবেন না। এর নীরব

রেডিয়েশন তার ঘুমন্ত মালিককে

হত্যা করবে। মনে রাখতে হবে

প্রতিটি মোবাইল ফোন এক একটি

মৃত্যুদূত সমতুল্য। সাম্প্রতিক গবেষণায়

দেখা গেছে যে, এসব ক্ষতি বুঝতে

পেরেই আমেরিকা সহ উন্নত দেশগুলি

ইতিমধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার

কমিয়ে দিয়েছে এবং তারা এখন

এগুলি তৃতীয় বিশ্বে চালান করে

দিচ্ছে। আর এটাই তাদের চিরন্তন

বদস্বভাব। অথচ বাংলাদেশে

মোবাইল ফোনের ব্যবহার হু হু করে

বেড়ে চলেছে। বর্তমানে যার গ্রাহক

সংখ্যা ৫ কোটিরও অধিক।

সুফারিশ : (১) লোকালয় থেকে দূরে

বহুদূরে টাওয়ার স্থাপন করতে হবে।

যার উচ্চতা কমপক্ষে ৪০ তলা

বিল্ডিংয়ের সমান হবে। যা ভূমি

থেকেই কেবল উক্ত উদ্দেশ্যে

স্থাপিত হবে আন্তর্জাতিক নিয়ম

মেনে। (২) টাওয়ারের রেডিয়েশন

মাত্রা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন

হতে হবে। যা মনিটরিং করার মতো

নিজস্ব প্রযুক্তি ও জনবল মোবাইল

কোম্পানীগুলির থাকতে হবে। অথচ

এরূপ কোন মেশিন ও যন্ত্রপাতি

কোম্পানীগুলির দূরে থাক, খোদ

সরকারি বিটিআরসি-র কাছেই নেই।

(৩) মোবাইল ফোন ব্যবহারে

সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ

করতে হবে এবং টাওয়ার বসানোর

ব্যাপারে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন

ও বাস্তবায়ন করতে হবে। (৪) টাওয়ার

বিহীন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক

চালুর ব্যাপারে কোম্পানীগুলিকে

বাধ্য করতে হবে। (৫) নীরব ঘাতক

এইসব টাওয়ার স্থাপনের বিরুদ্ধে

জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং

যেসব টাওয়ার বসানো হয়ে গেছে,

সেগুলি দ্রুত সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা

নিতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায়

হৌন- (আমীন!

বিষয়: বিবিধ

১৮৮৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

353502
১১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:২১
মুন্সী কুতুবুদ্দীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File