অল্প রিজিকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে-মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে বাংলাদেশ ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ০২:৪৩:৩৬ দুপুর

দিন দিন আমাদের প্রয়োজন যেন বেড়েই চলছে। আমরা সবাই সব কিছু আরও চাই। আরও উপার্জন চাই। আরও সম্পদ চাই। আরও সম্মান চাই। আরও ক্ষমতা চাই। আরও সুখ-শান্তি চাই। আমাদের চাহিদা যেন শেষ হয় না। অথচ যাকে যে পরিমাণ রিজিক দেওয়া হয়েছে সে যদি তাতে খুশি থাকে তাহলে আল্লাহতায়ালাও তার প্রতি খুশি থাকেন। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন— যে ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে অল্প রিজিক পেয়ে তুষ্ট থাকে, আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে অল্প আমলে খুশি থাকেন (মুসনাদে আহমদ)। প্রকৃতপক্ষে মৌলিক প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে মানুষের আর অন্য কিছু দাবি করা চলে না। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম (সা.) বলেছেন— আদম সন্তানের জন্য এ (চারটি) জিনিস ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর হক ও অধিকার নেই। (১) বসবাসের ঘর (২) লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় (৩) শুকনো (অথবা মোটা) রুটি এবং (৪) পানি। তিরমিজি শরিফ। হাদিসটির ব্যাখ্যায় ‘মিরকাত’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে— এ চারটি জিনিস যেহেতু মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত, তাই আখেরাতে বিশেষ কোনো জবাবদিহিতা ও কৈফিয়ৎ দেওয়া ছাড়াই দুনিয়াতে আল্লাহর হুকুম মতো মানুষ এগুলো ভোগ করতে পারে। কিন্তু এর বাইরে নিয়ামতগুলোর শুকরিয়া ঠিকমতো আদায় করেছে কিনা এ ব্যাপারে কঠোর জবাবদিহি করতে হবে। দুনিয়ার বেলায় নিজের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকদের দেখার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবুজর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয়তম বন্ধু রসুল (সা.) আমাকে সাতটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (১) দরিদ্র মিসকিনদের ভালোবাসতে এবং তাদের কাছে থাকতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। (২) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন আমার নিম্নস্তরের লোকদের দেখি এবং আমার উপরের স্তরের লোকদের যেন না দেখি (৩) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখি, যদিও তা দূরের সম্পর্ক হয় (অথবা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যায়) (৪) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন সত্য বলে যাই, যদি তিক্তও হয় (৫) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন সত্য বলে যাই, যদি তিক্তও হয়, (৬) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আল্লাহর হুকুমের বেলায় কোনো ভর্ত্সনাকারীর তিরস্কারকে ভয় না করি। (৭) তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন বেশি করে ‘লা হাওলা ওয়ালা কু ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়ি। কেননা, এ বাক্যগুলো আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে আগত। (মুসনাদে আহমাদ)। আমরা যদি বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করি তাহলে বুঝব একজন মানুষের জন্য তার সম্পদে আসল অংশ খুবই কম। বাকি সব অন্যদের জন্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল বলেছেন— মানুষ বলে, আমার মাল, আমার সম্পদ। অথচ তার সম্পদের মধ্যে কেবল তিনটি (খাতে ব্যয় করার) সম্পদই হচ্ছে তার আসল সম্পদ। (১) যা সে খেয়ে ফেলল এবং শেষ করে দিল। (২) যা পরিধান করল এবং পুরাতন করে ফেলল। (৩) যা দান করে দিল এবং (আখেরাতের জন্য) সঞ্চয় করে রাখল। এর বাইরে যে সম্পদ রয়েছে তা সে লোকদের জন্য রেখে চলে যাবে (মুসলিম)। দুনিয়ার অন্যান্য ধন-সম্পদ এক সময় ভাগ-বণ্টন হয়ে যাবে। কিন্তু যে অর্থ দান করা হয়েছে তার সওয়াব কেউ নিতে পারবে না। তা একান্তই নিজের রয়ে যাবে।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

বিষয়: বিবিধ

১১৪২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376423
১৭ আগস্ট ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ শিক্ষনিয় পোস্ট টির জন্য।
376430
১৮ আগস্ট ২০১৬ রাত ১২:২৯
হৃদয়ে বাংলাদেশ লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File