সিকিমের পথে কি দেশ ? অনিমেষ রায়, বাংলাদেশ বনাম সিকিম।

লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে বাংলাদেশ ১৮ জুন, ২০১৬, ০২:৪৬:১৪ দুপুর

সিকিমঃ এ সাকসেসফুল মিশন অব "র"

- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -

সিকিম ভারতের উত্তরঅংশে অবস্থিত তিব্বতের পাশের একটি রাজ্য।

রাজ্যটির স্বাধীন রাজাদের বলা হত চোগওয়াল। উপমহাদেশে বৃটিশ শাসন শুরুর পুর্বে সিকিম তার পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। বৃটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নেপালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সিকিম। এসময় রাজা ছিলেন নামগয়াল।কিন্তু বৃটিশরা তিব্বতে যাওয়ার জন্য এক সময় সিকিম দখল করে নেয় এবং ১৮৮৮ সালে রাজা নামগয়াল আলোচনার জন্য কলকাতা গেলে তাঁকে বন্দী করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮৯২ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয় এবং সিকিমের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়া হয়।

পরবর্তী চোগওয়াল (রাজা) থাসী নামগয়ালের সময়ে বৃটিশরা ভারত ছেড়ে গেলে গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয় এবং ভারতের পন্ডিত নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন।

সিকিমের অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব ভারত অনুধাবন করে ১৯৬২ সনে। সেই সময় চীন-ভারত যুদ্ধ হয়। ১৯৬৩ সালে থাসী নামগয়াল এবং ১৯৬৪ সালে নেহরু মারা গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। নতুন রাজা (চোগওয়াল) হন পাল্ডেন থন্ডুপ নামগয়াল।

নেহেরু কন্যা প্রধানমন্ত্রী হবার পর সর্বশক্তি নিয়োগ করেন সিকিমকে দখল করার জন্য। তিনি কাজে লাগান সিকিমের প্রধানমন্ত্রী কাজী সাব খ্যাত লেন্দুপ দর্জিকে।

আস্তে আস্তে ১৯৭০ সালের দিক থেকে লেন্দুপ দর্জির ন্যশনাল কংগ্রেস দেশে অরাজকতা সুচনা করেন। মুলত তখন ছিল ঘটনার সুত্রপাত। এইতো কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশে পেট্রোল বোমার "ফলন" বেড়ে গিয়েছিল তেমনটা।

১৯৭৩ সালে এসএনসি লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বে মূলধারার চগিয়ালবিরোধী আন্দোলন শুরু করে, যার নেপথ্যে ছিল একজন আয়রনওম্যান। ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর অনুচর "গবেষণা এবং বিশ্লেষণ শাখা"। বুঝেন নি বাংলায় বললাম বলে ??

RAW এর কথা বলছি ।

তখন বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে র এজেন্টরা সাদা পোশাকে সিকিমে ঢুকে বিভিন্ন বিক্ষোভ, মিছিলে যোগ দিত। চগিয়ালের তৎকালীন এডিসি ক্যাপ্টেন সোনাম ইয়াংদা দাবি করেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে সিকিমে ঢুকে এসব বিক্ষোভে অংশ নিত। দার্জিলিংসহ আশপাশের ভারতীয় এলাকা থেকে লোক এনে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হতো। এসব আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় সিকিমিদের সংখ্যা ছিল খুব কম। ক্যাপ্টেন সোনামের ভাষ্য অনুযায়ী লেন্দুপ দর্জির আন্দোলনে ভারত আর্থিক সহযোগিতাও প্রদান করত।

দর্জি পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন, ভারতীয় সিক্রেট এজেন্টরা বছরে দুই থেকে তিনবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আইবি এজেন্ট তেজপাল সেন ব্যক্তিগতভাবে দর্জির কাছে টাকা হস্তান্তর করতেন।

১৯৬৮ সালে আত্মপ্রকাশের সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তি ‘র’ এর একটি ঐতিহাসিক সাফল্য।‘র’ দু’বছর সময় নেয় সিকিমে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য । ভুটান ১৯৬৮ সালে জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়। সিকিমের ব্যাপারে ‘র’ এর কুশীলবরা তাই আগাম সতর্ক পদক্ষেপ নিতে ভুল করেননি, তারা যাতে জাতিসংঘের সদস্য পদ না পায় সেজন্যে তারা রীতিমত পাহারা দিত। ঠিক সময়ে ভুটান অন্তর্ভুক্ত না হলে ভুটানও খেয়ে ফেলত !!

এ সম্পর্কে অশোক রায়না তার গ্রন্থ RAW : The Story of India's Secret Service এ লিখেছেন, নয়াদিল্লি ১৯৭১ সালেই সিকিম দখল করতে চেয়েছিল। ‘র’ দুই বছর সময় নেয় সিকিমে একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। এ ক্ষেত্রে নেপালী বংশোদ্ভূত হিন্দু ধর্মাবলম্বী সিকিমি নাগরিকদের ক্ষোভকে ব্যবহার করা হয়। তাদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ ছিল, সিকিমের বৌদ্ধ রাজা স্থানীয় নেপালী হিন্দু প্রজাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। (নিচে সুত্র উল্লেখ করা হোলও)

গ্যাংটক টাইমস পত্রিকার সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী সিডি রাই এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, সিকিম রাজার বৈষম্যমূলক শাসনের চাইতে ভারতীয় নাগরিক হওয়া ভালো।’

- - - - - - - - - - - - - - - -

যা বলছিলাম, ভারতীয় গোয়েন্দারা দক্ষতার সাথে নাশকতা, অরাজাকতা করতে থাকেন। যার ফলে ১৯৭৩ সালের মার্চ-এপ্রিলে ন্যাশনাল কংগ্রেস ও জনতা কংগ্রেস রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তোলে। এবং তখন রাজার পরিবেষ্টিত "র" এজেন্ট দের পরামর্শে সিকিমের রাজার(চোগিয়াল) অনুরোধে ভারতীয় পুলিশ (!) আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই ১৯৭৩ সালের ১৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় যে, চোগিয়াল রাজনৈতিক সংস্কার মেনে নিতে রাজি আছেন ! এ এক অসাধারন এস্পিওনাজ অর্জন ছিল "র" এর।

পরে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা স্বীকার করেছে যে, আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল। সংস্কারে রাজি না হলে রাজা সিংহাসন থেকে উৎখাত করা হবে, এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন নিশ্চিত।

তাই ফেলতেও পারছিনা আবার গিলতেও পারছিনা এই অবস্থায়, সিকিমের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টায় রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার করেন। অঙ্গীকার মোতাবেক ১৯৭৪ সালের জুন সিকিম রাষ্ট্র আইনে পরিবর্তন আনা হয়। ওই আইনের অধীনে চোগিয়ালের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি হন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। অবশ্য আইন পরিষদে পাস হওয়া আইন অনুমোদনে ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি !

নতুন প্রধানমন্ত্রী "কাজী সাব" লেনদুপ দর্জির নির্বাচনে জিতে ২৭ মার্চ ১৯৭৫ প্রথম ক্যাবিনেট মিটিং-এ প্রধানমন্ত্রী লেনদুপ দর্জি রাজতন্ত্র বিলোপ ও জনমত যাচাইয়ে গণভোটের সিদ্ধান্ত নেন । তত দিনে সিকিমের অলি গলিতে ভারতীয় সেনা বাহিনী এবং র এর এজেন্টরা গিজ গিজ করছিল, তারা ওয়ালথার আর কারবাইনের নলের মুখে সাধারণ জনগণকে"হ্যাঁ" ভোট দিতে বাধ্য করে।

রাজতন্ত্র বিলুপ্ত সিকিমের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী কে সি প্রধান গণভোটের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘গণভোট ছিল একটা বাধা মাত্র। ভারতীয় সৈন্যরা ভোটারদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে। গণভোটের ফলাফল দাঁড়ায় সিকিমে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি। এরপর প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জি পার্লামেন্টে সিকিমের ভারতে যোগদানের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করেন।সিকিমের পার্লামেন্টে ভারতে যোগদানের প্রস্তাব পাস সিকিমের ৩২ আসনের পার্লামেন্টে ৩১ জনই ছিল লেন্দুপ দর্জির এসএনসির সদস্য। প্রস্তাবটি সংসদে বিনা বাধায় পাস হয়।

পুরোটাই ছিল একটি ক্ল্যাসিক পাতানো খেলা।

- - - - - - - - - - - - - - - -

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঠিক ৪মাস ১০ দিন আগে ৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সালের সকালে সিকিমের রাজা যখন নাস্তার টেবিলে বসে সংবাদ পান ভারতীয় জওয়ানরা প্রাসাদ ঘিরে ফেলেছে। তারা অরাজক পরিস্থিতি "স্বাভাবিক" করার জন্য অনুপ্রবেশ করেছিল। রাজাকে বন্দী করে প্রাসাদ দখল করে নেয়া। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে নিখাদ এসপিওনাজ তৎপরতায় গ্রাস করে ভারতের প্রদেশে পরিণত করা হয়। মজার ব্যপার হোলও সিকিম সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী।

যাই হোক, মেশিনগানের মুহুর্মুহু গুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজপ্রাসাদের ১৯ বছর বয়সী প্রহরী বসন্ত কুমার ছেত্রি ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত হন। আধা ঘণ্টার অপারেশনেই ২৪৩ প্রহরী আত্মসমর্পণ করে। বেলা পৌনে ১টার মধ্যেই অপারেশন সিকিম সমাপ্ত হয়।

সিকিম প্রহরীদের কাছে যে অস্ত্র ছিল তা দিয়ে ভারতীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সময় লড়াই করা যেত। কিন্তু রাজা ভুগছিলেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তিনি আরেকটি সুযোগ হারালেন। রাজাপ্রসাদে ট্রান্সমিটার বসানো ছিল, যাতে বেইজিং ও ইসলামাবাদের কাছে তিনি জরুরি সাহায্য চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চীনা সৈন্যরা প্রয়োজনে সিকিমে ঢুকে চগিয়াল লামডেনকে উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু রাজা সেটাও করতে ব্যর্থ হন।

প্রহরীরা তখনো গাইছিল ‘আমার প্রিয় মাতৃভূমি ফুলের মতো ফুটে থাকুক’ আত্মসমর্পণকারী রাজ প্রহরীদের ভারতীয় সেনাদের ট্রাকে তোলা হয়।

প্রহরীরা তখনো গাইছিল ‘ডেলা সিল লাই গি, গ্যাং চাংকা সিবো’ (আমার প্রিয় মাতৃভূমি ফুলের মতো ফুটে থাকুক)।

অবশেষে স্বাধীন সিকিমের রাজ প্রাসাদের মাথায় দুলে ঊঠে তেরঙ্গা "হামারা ভারত মহান" কা পাতাকা!

- - - - - - - - - - - - - - - -

ভারতীয় সাংবাদিক সুধীর শর্মা ‘পেইন অব লুজিং এ নেশন’ (একটি জাতির হারিয়ে যাওয়ার বেদনা) নামে একটি প্রতিবেদনে জানান, ভারত তার স্বাধীনতার গোড়া থেকেই সিকিম দখলের পরিকল্পনা করেছিল। " র " এর এজেন্টরা প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন, হত্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছিল। তারা ছোট ছোট ইস্যুকে বড় করার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। তার মধ্যে হিন্দু- নেপালী ইস্যু অন্যতম। যা বর্তমানে বাংলাদেশে "সংখ্যালঘু" হিসেবে চলছে !

ক্যাপ্টেন ইয়াংজু লিখেছেন, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেসামরিক পোশাকে রাজার বিরুদ্ধে গ্যাংটকের রাস্তায় মিছিল, আন্দোলন ও সন্ত্রাস করত। নেহেরুর পরামর্শ, মদদ ও উৎসাহে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন লেনদুপ দর্জি। শ্লোগান তুলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে, চলবে’/লেনদুপ দর্জির গণতন্ত্রের শ্লোগান শুনে সিকিমের সাধারণ জনগণ ভাবতেই পারেনি এই শ্লোগানের পিছনে প্রতিবেশী দেশ একটি জাতির স্বাধীনতা হরণ করতে আসছে।"

সিকিমে কর্মরত তৎকালীন ভারতীয় দূত (পলিটিক্যাল অফিসার) বিএস দাস তার গ্রন্থ 'The Sikkim Saga' এ লিখেছেন, ‘ভারতের জাতীয় স্বার্থেই সিকিমের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন ছিল। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করেছি। চগিয়াল যদি বিচক্ষণ হতেন এবং তার কার্ডগুলো ভালোভাবে খেলতে পারতেন, তাহলে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তা না হয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারতো।’

চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শেও কান দেননি সিকিমের চগিয়াল । ১৯৭৪ সালে যখন সিকিমে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা চগিয়াল তখন কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন নেপালের রাজা বীরেন্দ্রর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজা বীরেন্দ্র, সফররত চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী চেন লাই ইয়ান এবং পাকিস্তানি দূত চগিয়ালকে সিকিমে না ফিরতে পরামর্শ দেন।

ক্যাপ্টেন সোনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এই তিন দেশের নেতৃবৃন্দ সিকিমকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে একটি মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করেন। কিন্তু চগিয়াল লামদেন তাতে সম্মতি দেননি। এর কারণ তিনি নাকি স্বপ্নেও ভাবেননি, ভারত সিকিম দখল করে নিতে পারে। ভারতের দ্বৈত ভূমিকাভারত এ ক্ষেত্রে দ্বৈত খেলা খেলেছে। এক দিকে চগিয়াল লামডেনকে বলেছে, সিকিমে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হবে। অপর দিকে লেন্দুপ দর্জিকে বলেছে যেকোনো মূল্যে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করতে হবে।

চগিয়ালকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনারারি মেজর জেনারেল পদবিও প্রদান করা হয়েছিল।

- - - - - - - - - - - - - - - -

এখানে এরেকটা বিষয় ছিল, সিকিম রাজা চগিয়াল পালডেন ১৯৬৩ সালে আমেরিকান কন্যা হোপ কুকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পরিচয় হয়েছিল দার্জিলিংয়ে। সিকিমের রানী হওয়া কুকের জন্য ছিল এক বিরাট স্বপ্নপূরণ। বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিবেশ তিনি সিকিমের স্বাধীনতা রক্ষার বানী যুবসমাজের মধ্যে প্রচার করতে থাকেন। " র " বুঝতে পারে একজন মার্কিন নারী ক্ষমতার থাকা মানে সিআইএ কে ডেকে আনা, তাতে তাদের সাজানো প্ল্যানে ভাটা পড়তে পারে।

তাকে সিআইএর এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর টেকনিক্যালি তাকে চগিয়াল পালডেনের সাথেও তার দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরানো হয়। ১৯৭৩ সালে হোপ কুক তার দুই সন্তানকে নিয়ে নিউ ইয়র্কে চলে যান। তিনি আর কখনোই সিকিমে ফিরে আসেননি।

যাক এরপরে লেন্দুপ দর্জিকে ছুঁড়ে ফেলা হয়, যেভাবে ফেলা হয়েছিল মীর জাফরকে।

সাপ্তাহিক জন আস্থা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে লেন্দুপ দর্জি বলেন,

“আগে নয়াদিল্লিতে আমাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করা হতো। এখন ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়”।

“সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হেন চেষ্টা নেই যা আমি করিনি। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নয়দিল্লি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে”।

২০০০ সালে অপর এক সাক্ষাৎকারে লেন্দুপ দর্জি বলেন,

“প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরু ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে এক সময় আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতেন। কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চে কাজ শেষ হলে আমাকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা হয়”।

এরপর থেকে লেন্দুপ দর্জি একা জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। তার কোনো সন্তান-সন্ততি ছিল না। আত্মীয়স্বজনও তাকে দেখতে যেত না। গণরোষ ও মানুষের ঘৃণা থেকে বাঁচতে লেন্দুপ দর্জি নিজেকে সবার কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। ১০৩ বছর বয়সে সে মারা যায়, শোনা যায় তাঁর লাশ দেখতে দালাল ছাড়া আর কেউ কখনও যায়নি !

- - - - - - - - - - - - - - - -

এই ছিল সংক্ষেপে সিকিমের কাহিনী। দেখুন তো একটু ঘটনা গুলো বাংলাদেশের সাথে মিলিয়ে !!

বর্তমান সময়ে কোন দেশ দখল করার জন্য সফলতার সাথে যেটা চলছে সেটা হলো ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ বা ‘Psychological warfare’।

সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার কেজিবি এজেন্ট মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিশারদ " আলেক্সন্ডার ব্রেজমেনভ" মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের দ্বারা কোন দেশ দখল করার জন্য চারটি ধাপ বর্ণনা করেছে।

প্রথম স্টেজ : ডি-মরালাইজেশন বা নৈতিক চরিত্র অবক্ষয়। [স্টার জলসা, আমি জুনায়েদ]

দ্বিতীয় স্টেজ : ডি-স্টেবিলাইজেশন বা স্বাভাবিক পরিবেশকে ভেঙ্গে দেওয়া। [বাংলাদেশ ব্যাংক]

তৃতীয় স্টেজ : ক্রাইসিস বা চরম অস্থিতিশীলতা তৈরী করা। [ সামনে আসছে ]

চতুর্থ স্টেজ : নরমালাইজেশন বা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নাম দিয়ে দখল করা।

দেখুন তো এই কথা গুলো সিকিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে কিনা ? প্লিজ একটু মিলিয়ে দেখুন। ভারতীয় সেনাবাহিনী কিন্তু নরমালাইজেশন বা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নাম দিয়েই সিকিমের রাজপ্রাসাদ আক্রমন করেছিল।

এই খবর এক আমেরিকান সাংবাদিক গোপনে পাহাড়ের ভিতরে ভিতরে দিয়ে সিকিমে প্রবেশ করে জেনেছিল এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলে ছেড়ে দিয়েছিল। তৎকালীন সকল দেশ এর প্রতিবাদ করেছিল !

- - - - - - - - - - - - - - - -

জানিনা কি ঘটবে এই দেশের ভাগ্যে ? দেশ প্রেম আজ ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। যেখানে আজ নিজের ধর্মের প্রতি আঘাত এসেছে সেখানে আজ কিছু মানুষ ছাড়া বড় বড় ইসলামিক দল গুলো নিশ্চুপ।

একদল আছে নির্বাচন নিয়ে, আরেকদল আছে তাদের নেতা নিয়ে ! রাস্ট্রধর্ম নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায় ?

লেন্দুপ দর্জিদের প্রেতাত্মা আজ বাংলাদেশের অলিতে গলিতে ঘুরে ফিরছে। এই দেশে এদের নাম আনিসুজ্জামান, বদরুদ্দীন উমর, সিআর দত্ত বা রানা দাশগুপ্ত বা গরেশ্বর চন্দ্র রায়, বা ভিন্ন নামে বললে সিএইচটি কমিশন, মতিউর-মাহফুজ, সুলতানা কামাল, ডেভিড বার্গম্যান, শফিক রেহমান নামে পরিচিত।

এক ব্লক " CIA " র পক্ষে কাজ করে তো আরেক পক্ষ " RAW "

অনেকেই আমাকে উপহাস করে আমি নাকি সব কিছুতে "এসপিওনাজ" খুঁজে পাই! এই পোস্ট পড়ার পরও যদি তাদের "এসপিওনাজ" কি এই সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন না হয় তাদের জন্য দুই/তিনদিনের মধ্যে পারমানবিক বোমা নিয়ে আসছি।

চোখ রাখুন, আর এই পোস্ট কে উপেক্ষা করে ক্রিকেটে মগ্ন থাকুন।

তথ্যসুত্রসমুহঃ

১। Smash and Grab: Annexation of Sikkim by Sunanda K. Datta-Ray

২। Sikkim - Wikipedia

৩। http://is.gd/vXBb4n

এছাড়া " র " এর অফিসিয়াল ফাইলে এই অপারেশন সফলতার তালিকায় দ্বিতীয় নাম্বারে আছে।

ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবাইকে ।

বিষয়: বিবিধ

২০৪৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372393
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
তবে সিকিম এর ভু-রাজনৈতিক গুরুত্ব আর বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য আছে। পরাশক্তিগুলি এটা চাইবে না ভারত বেশি সুবিধা পাক।
১৯ জুন ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
309220
হৃদয়ে বাংলাদেশ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভাই ঠিক বলছেন গত কালের গঠনা টা খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন।
372400
১৮ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:৩৬
শফিউর রহমান লিখেছেন : বড় কঠিন।
পড়লাম কিন্তু মন্তব্য করতে পারলাম না। কারণ সবটাইতো মিলে যাচ্ছে। তাহলে মন্তব্য করার আর থাকে কি?
১৯ জুন ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
309222
হৃদয়ে বাংলাদেশ লিখেছেন : ধন্যবাদ
372408
১৮ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৬
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সিকিমের পথে বাংলাদেশ কি আজ থেকে..? লেন্দুপ দর্জির ভূমিকায় আছে বলেইতো শেখ হাসিনার এত কদর ভারতের কাছে। হাসিনা দেশ প্রেমিক হলে ৫ম দিনেই সে জাহান্নাম গামি হয়ে যাবে।
১৯ জুন ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
309224
হৃদয়ে বাংলাদেশ লিখেছেন : ধন্যবাদ, কিন্তু ৫ম দিনে সে জাহান্নাম গামি কথাটা বুঝলাম না ভাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File