কোর আন এর গল্প
কৃপণ কারূন
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে বাংলাদেশ ১০ মে, ২০১৬, ০১:২০:২৬ রাত
ref. কোর আন এর গল্প
কৃপণ কারূণ
তোমরা হয়তো জানো মাটির নিচে সোনা, রূপা, হীরা, মণি-মাণিক্যের খনি এবং সমুদ্রের নিচে ইয়াকুত, জমরদ, প্রবাল ও মুক্তা অনেক আছে। তোমরা শুনে আশ্চর্য হবে যে, এই সবই আগে একজন মাত্র লোকের সম্পত্তি ছিলো।
এত বড়ো ধনী পৃথিবীতে আর একজনও ছিলো না এবং আর কেউ কখনো হবে না। তার সেই ধনসম্পত্তি কিরূপে ছড়িয়ে পড়লো এবং ভূগর্ভে ও সমুদ্রের মধ্যে কেমন করে প্রবেশ করলো সেই আজব কাহিনী আজ তোমাদের কাছে বলবো।
হযরত মুসার জ্ঞাতি সম্পকরঈয় এক চাচাতো ভাই –নাম ছিলো তার কারূণ। কারূণের বরাত ছিল খুব ভাল। দুনিয়ার সব জায়গায় তার মালগুদাম ছিলো। সমস্ত নদীতে ও সমুদ্রে ঝাঁকে ঝাঁকে তার নৌকা ও জাহাজ চলাফেরা করতো। পৃথিবীর সকল সওদাগরের সে ছিলো একমাত্র মহাজন, সুতরাং সমস্ত কাজ কারবারের মূল। নিজেও কারবার করে সে অনেক অর্থ উপার্জন করতা এবং সওদাগরীর মুনাফা থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মুদ্রা তার আয় হতো।
হযরত মুসা তাকে খুব ভালবাসতেন। তাকে আদর করে মাটি দিয়ে সোনা তৈরি করবার কায়দা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এসব নানা ব্যাপারে চারিদিক থেকে কত টাকা যে তার আয় হতো তার লেখাজোখা ছিলো না। এই সব টাকার বদলে সে হীরা, মণি, মু্কতা, জহরৎ, চুনি, পান্না, ইয়াকুত, জমরদ যোগাড় করে লক্ষ লক্ষ সিন্দুক বোঝাই করে রাখতো। সেই সমস্ত সিন্দুকের চাবি একটা মজবুত সিন্দুকে রেখ সেই সিন্দুকের চাবি দড়িতে বেঁধে নিজের কোমরে সর্বদা ঝুলিয়ে রাখতো। সারাদিন রাতের মধ্যে তাকে বড় একটা কেউ বাইরে দেখতে পেতো না। চাবি হাতে করে সে প্রত্যেক দিন গুদামে গুদামে ঘুরে বেড়াতো। তোমরা হয়তো ভেবেছো, এত যার টাকাকড়ি, ধন-দৌলত সে নিশ্চয় খুব বিলাসী এবং ব্যয়ে মুক্ত হস্ত ছিলো। কিন্তু বিলাস বা সখ তার বিন্দুমাত্র ছিলো না। একটা চিন্ন ময়লা তালিযুক্ত পায়জামা এবং গায়ে একটা জামা ও পায়ে একজোড়া চটি জুতা ছিলো তার বেশ। ছেঁড়া চাটাই পেতে মাটিতে শুয়ে সে রাত্রি কাটাতো। দুই একখানি শুকনো রুটি, কিছু খেজুর ও কয়েক পাত্র পানি ছিলো তারা সারাদিনের আহার্য। কথিত আছে, কিছুদিন পরে তাও নাকি সে গ্রহণ করতো না। একখানি মাত্র রুটি এক পাত্র পানিতে ডুবিয়ে সেই পানি পান করে জীবন ধারণ করতো, তারপর সেই রুটিটি শুকিয়ে রাখতো। আত্মীয়-বন্ধু তাকে বলতোঃ তোমার এত ধন-দৌলত তুমি মিছামিছি এত কষ্ট করো কেন? তুমি একজোড়া জুতা কিংবা একটা জামাও কিনতে পারো না?
কারূণ হেসে বলতোঃ বাঃ তোমা তো আমাকে বেশ পরামর্শ দিচ্ছো! ক’টা পয়সা বা আমি সিন্দুকে বাক্সে তুলেছি যে তোমরা আমাকে ধনী বলে ঠাট্টা করছো। এখন আমিরীকরে এ ক’টি পয়সা যদি খরচ করে ফেলি তবে বুড়ো বয়সে ছেলেপুলে নিয়ে উপোস করলে দেবে কে বলো? তোমরা আমাকে পথে বসবার বেশ ফন্দি করছো দেখছি।
উপদেশ দাতারা এই কথা শুনে অবাক হয়ে চলে যেতো।
মুসা একদিন বললেনঃ কারূণ খোদা তোমাকে এত ধন-দৌলত দিয়েছেন, তার একটা সামান্য অংশ গরীব দুঃখীদের মধ্যে জাকাত (দান) দেওয়া তোমার উচিত। ধর্মে নিয়ম আছে যে, শতকরা আড়াই টাকা জাকাত দিতে হয়। আশা করি তুমি শতকরা একটি টাকা জাকাত দেবে।
কারূণে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে খানিকক্ষণ চেয়ে বললোঃ জাকাত কাকে বলে?
মুসা বললেনঃ শতকরা এক টাকা গরীব-দুঃখীদের দান করাকে জাকাত বলে।
অন্য কেউ যদি কারুণকে দান করার কথা বলতো তাহলে সে কি করতো বলা যায় না, কিন্তু মুসা সম্পর্কে তার বড় ভাই, কখনো তাঁর কথা সে অমান্য করেনি, সুতরাং মাথা নিচু করে খানিকক্ষণ চুপকরে থেকে জবাব দিলোঃ দেখতেই পাচ্ছো আমি অতি গরীব, টাকা-পয়সা কোথায় পাবো যে জাকাত দেবো?
মুসা বললেনঃ কারূণ এত যার ধন-দৌলত সে যদি গরীব হয় তবে ধনী লোক কাকে বলে?
কারূন প্রত্যুত্তর করলোঃ খেয়ে না খেয়ে, কত কষ্ট করে ক’টি পয়সাই বা জমেছে, তা’ যদি এখন দান-খয়রাত করে বসি বুড়ো বয়সে খাবো কি? ভিক্ষা করা ছাড়া তো আমারকোন উপায় থাকবে না ভাই। আমাকে মাফ করো, জাকাত আমি দিতে পারবো না।
মুসা বিরক্ত হয়ে বললেনঃ খোদা তোমাকে এত দিয়েছেন যে, তুমি যদি সারাজীবন দান করো তা’হলেও শেষ হবে না।
কথা শুনে কারূণ হো-হো করে হেসে উঠলো। বললোঃ না বুঝে দান করলে রাজার রাজত্ব উড়ে যায়, আর আমার তো সামান্য ঐ ক’টা পয়সা ও আর উড়তে কতক্ষণ।
মুসা বললেনঃ তুমি গরীব কি ধনী সে তর্ক তোমর সঙ্গে করতে আসি নাই। জাকাত দেওয়া তোমার পক্ষে একান্ত কর্তব্য, তাই তোমায় বলতে এসেছি। তুমি জাকাত দেবে কি না বলো?
নিরুপায় হয়ে কারূন আমতা আমতা করে বললোঃ আচ্ছা আজ ভেবে দেখি কাল জবাব দেবো।
কারূনের মনে আনন্দের লেশ মাত্র নেই। সমস্ত দিন তার একরূপে অনাহারে ও দুশ্চিন্তায় কাটলো। কি করা যায়, মুসাকে কি জবাব সে দেবে, ভেবে-চিন্তে কিছুই সে ঠিক করতে পারলো না। দিন গত হয়ে সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এলো। একটা প্রদীপ জ্বেলে কারূণ হিসাব করতে বললো। একশত টাকায় এক টাকা, হাজার টাকায় দশ টাকা, এক
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন