আধুনিক বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের আহ্বান ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৩০:৫৬ রাত
ভূমিকা:
১.সংস্থার বাইরের দুর্যোগ এর চেয়ে অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ অধিকতর ভয়াবহ।
২.দৃষ্টিভঙ্গির ভ্রান্তি, নেতাদের আদর্শচ্যুতি, আদর্শচ্যুতদের নেতৃত্ব ও চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত এ বিষয়গুলো অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে।
জ্ঞান, কাঙ্খিত গুণ ও যোগ্যতার ঘাটতি:
১.আল্লাহ বলেন, “বলো, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?” (৩৯/সূরা আয যুমার:৯) এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি আমাদেরকে মর্যাদাশীল হতে হলে অনেক বেশি জানতে হবে। সংগত কারণেই ইসলামপন্থীদের সবচেয়ে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে নেওয়া প্রয়োজন। মেধাহীন ও পেশীশক্তিনির্ভর নেতৃত্ব বর্জণীয়। যোগ্য ও মেধাবী লোকদেরকে যথাসম্ভব সর্বস্তরের নেতৃত্বে আনা প্রয়োজন। আল্লাহ আমানাতসমূহকে প্রকৃত হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। (৪/সূরা আন নিসা:৫৮) বাস্তবতা হলো, সাধারণত যোগ্যরা সর্বদাই মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন। ইসলামপন্থীরা যোগ্যদের মূল্যায়ন না করলেও তারাই সমাজের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
২.অনেকে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন ঠিকই কিন্তু তারা খুব কমই বই পড়েন। অল্প পড়েই তারা ভুল আত্মবিশ্বাসে দিশেহারা হয়ে যান। বই পড়ার বাইরেও যে সাহচর্য ও গণ সংযোগ থাকা দরকার তা তাদের নেই। এমনটি কাম্য নয়।
৩.ক্যারিয়ার গঠনের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত উদাসীনতা বা মাত্রাতিরিক্ত সচেতনতা বিদ্যমান থাকা উচিত নয়।
৪.আদর্শের সঠিক, পূর্ণ ও সূক্ষ্ম জ্ঞান বর্জিত লোক কিংবা না জেনে ও কম জেনে আন্দাজে বর্ণনা করার স্বভাববিশিষ্ট লোককে অথবা মানসিক ভারসাম্যবিহীন ও বদমেজাজী লোককে নেতৃত্বে আনাটা জাতি বা দলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৫.আদর্শিক, পারিপার্শ্বিক বা পরিবেশগত, বৈজ্ঞানিক, সাংগঠনিক, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রজ্ঞাবান, বুদ্ধিমান, উদ্ভবনী শক্তিসম্পন্ন, মেধাবী, শৃংখলা বিধানে অধিকতর যোগ্য, বিশ্লেষণী শক্তিসম্পন্ন, কোন জিনিসকে কতোটুকু গুরুত্ব দিতে হবে তা নির্ধারণে সক্ষম লোকদের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখাটা হলো ‘ছাগল দিয়ে হালচাষ’ এর সমতুল্য। সঙ্গত কারণেই নবী করীম (সা.) এক হাদীসে বলেন, “তোমাদের মধ্যে ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগের উত্তম লোকগণ ইসলামী যুগেও উত্তম ও শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হবে।”
৬.অনেকে ঠকে ও ঠেকে শেখেন। তাদের দূরদর্শিতার বড়ই অভাব। এ অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। ‘দেখি না; কি হয়’ ধরনের কথা দূরদর্শিতা কম থাকার লক্ষণ প্রকাশ করে।
৭.পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল না হওয়া পর্যন্ত কাজে লেগে না থেকে অনেকে অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। অথচ, সফলতা আসে হাজারো ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সে অভিজ্ঞতাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার পর। তাই কেবল আবেগ দিয়ে বিজয়ের আশা করা উচিত নয়। প্রাণান্তকর চেষ্টা করেই সাধারণত জেতা সম্ভব হয়ে থাকে। অনেকে আবার চূড়ান্ত যুদ্ধ ছাড়া কোনো সমাধান খুঁজে পান না। যুদ্ধের বিপরীতে জনমত গঠনের মাধ্যমে আদর্শিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত ও দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা তাদের কাছে বিরক্তিকর ঠেকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে চোরা পথে বিজয় হলেও তা সাধারণত স্বল্পস্থায়ী হয়।
৮.কিছু গুণ থাকা জরুরী। যেমন: উন্নত রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্ব, অপবাদ আরোপ না করা, অলস ও বিলাসী না হওয়া, ধৈর্য ও দৃঢ়চিত্তের অধিকারী হওয়া, স্বার্থপর না হওয়া, পার্থিব কাজ- চাকরি- ব্যবসা ইত্যাদিকে লক্ষ্য না বানানো, সৎসাহসী হওয়া, কৃপণ ও সংকীর্ণমনা না হওয়া, সতর্ক থাকা, মোটা বুদ্ধির অধিকারী না হওয়া, মানুষের মন বুঝা, জাতীয়তাবাদী বা নিজ জেলা ও অঞ্চলের বিচারে নিয়োগ দানের রোগী না হওয়া, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে পারা, আকৃষ্ট করতে ও প্রভাব সৃষ্টিতে সমর্থ হওয়া, সংক্ষিপ্তভাবে ও কম সময়ে অধিক অর্থবহ ও আকর্ষণীয় বক্তব্য দিতে পারা প্রভৃতি।
আত্মপূজা, নেতৃত্বের লোভ, প্রদর্শনীমূলক আনুগত্য ও প্রদর্শনেচ্ছা:
১.প্রত্যেকেই অনুসরণীয় হতে চায়, তাহলে অনুসারী আসবে কোত্থেকে। নিজেকে মুক্তাদী (বা অনুসরণকারী) বানালে শুরুতে সাধারণত ইখলাস (বা আন্তরিকতা) থাকে এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তেই থাকে। আর শুরুতে ইখলাস না থাকলেও এক পর্যায়ে তা সৃষ্টি হয়ে যায়। যে অন্যের সাথে মিলে কাজ করতে পারে সে সাধারণত দ্বীনের যে কোনো সেবকের সহযোগী হয়ে থাকে, প্রতিপক্ষ হয় না।
২.মূল্যায়ন নির্ভর করা উচিত ইসলামী নৈতিকতা ও বৈষয়িক যোগ্যতার ভিত্তিতে; ব্যক্তিগত চিন্তা নিজের সাথে মিললো কিনা সে ভিত্তিতে নয়। দ্বীনী যোগ্যতা ও বৈষয়িক যোগ্যতার মাপকাঠিতে দায়িত্ব না দিয়ে নিজ পছন্দকে মাপকাঠি বানানো দ্বীনদারী তো নয়ই বরং তা হলো নফসের পূজা ও নেতৃত্বের লোভের লক্ষণ। হাদীস মতে, পরকালে নেতা ও পদের অধিকারীদের হিসেব কঠিন হবে।
৩.আল্লাহভীতিসম্পন্ন (বা তাকওয়াবান) ও গুনাহ বর্জনকরী নেতার গুণাবলী এই হয়ে থাকে যে, তিনি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে নিজের চেয়েও যোগ্য ও আমানাতদার ব্যক্তি গঠন করে বা যোগ্য লোক খুঁজে নিয়ে তাকে নেতার আসনে আনার সুযোগ সৃষ্টি করেন। নিজের চেয়েও যোগ্য ও আমানাতদার ব্যক্তি গঠন বা সন্ধানে চেষ্টার অভাব থাকার অর্থ হচ্ছে হয় তার মধ্যে নেতৃত্ব লাভের অভিলাষ রয়েছে বলে সে পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় অথবা সে যোগ্যতর উত্তরসূরী গঠন বা সন্ধানে যথেষ্ট মনোযোগী বা সক্ষম নয়।
৪.আল্লাহভীরু লোকগুলো চালাকের অভিনয় করতে পারেনা। কিন্তু চালাক লোকেরা আল্লাহভীরু হওয়ার সফল অভিনয় করতে পারে।
৫.সার্বিকভাবে সততা ও যোগ্যতার বিচার না করে আত্মীয় হওয়ার কারণে, বিশেষ ব্যক্তির আস্থাভাজন হওয়ার কারণে, বিশেষ এলাকার লোক হওয়ার কারণে, ব্যক্তিগত চিন্তায় মিল থাকার কারণে, নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার কারণে বা নেতার প্রতি প্রদর্শনীমূলক আনুগত্যের কারণে যদি কম যোগ্য লোককে পদ দেওয়া হয় তাহলে তা আর ইসলাম থাকে না; তখন তা জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়ে যায়। ইসলামে এ সকল ‘ইজম’ এর কোনো স্থান নেই। স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ এগুলো ঘৃণ্য কাজ। আল্লাহ বলেন, “আর যখন কথা বলো, তখন ইনসাফের কথা বলো, যদিও ব্যাপারটি নিজের আত্মীয়েরই (বিরুদ্ধে) হোক না কেনো।” (৬/সূরা আল আনআম:১৫২)
৬.কেবল দেখানোর জন্য বা রিপোর্টে লেখার জন্য কুরআন পড়া ঠিক নয়। কুরআন দ্বারা নিয়মিত ঈমানকে বৃদ্ধি করা যাচ্ছে কিনা সেটাই বড় কথা।
৭.প্রদর্শনেচ্ছার চর্চা হওয়া উচিত নয়। অনেকে ফেসবুকে বা অন্যভাবে নিজেকে প্রদর্শন করিয়ে থাকে।
৮.জনশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বা জনপ্রিয় হওয়ার জন্য অর্থ খরচ বা অপচয় করা ঠিক নয়।
৯.নেতাদের উচিত নিজের ব্যাপারে কোনো সন্দেহসূচক প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়ার কারণ না রাখা। নেতারা যেনো সাধারণ একজন ব্যক্তির কাছেও জবাবদিহিতা করতে বাধ্য হয় এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাছাড়া, নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ যিনিই উত্থাপন করুন তা অবশ্যই যাচাই করা উচিত এবং অভিযোগ সত্য হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তব্য।
অন্ধ আনুগত্য করা, অন্ধ আনুগত্য দাবি করা এবং তোষামোদী:
১.ইসলাম- আল্লাহ ও রাসূল সা. ছাড়া অন্য কারোর অন্ধ আনুগত্য করতে নিষেধ করে। (৪/আন নিসা:৫৯, ৯/সূরা আত-তাওবা:৩১ এবং ৩৩/সূরা আল আহযাব:৬৭-৬৮ দ্রষ্টব্য) পার্থিব স্বার্থের লোভ আল্লাহ ও রাসূল (সা এর চেয়েও অধিক গুরুত্ব সহকারে নেতার আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তাই নেতাকে মনে রাখতে হবে ‘অতিভক্তি চোরের লক্ষণ’।
২.আদর্শবাদী দলে তোষামোদী থাকে না। তাছাড়া লোকচক্ষুর অন্তরালে চমৎকার পদ্ধতিগত উপায়ে (Systematic way) ছাটাই করা আদর্শবাদী বা ইসলামী দলের লক্ষণ নয়।
৩.দায়িত্বশীলদের খুশি করাকে লক্ষ্য বানানোর প্রয়োজন নেই। আল্লাহর সন্তোষ ছাড়া আর কারোর সন্তোষকে লক্ষ্য বানালে তা তো শিরক পর্যায়ে চলে যায়।
৪.পরিচালককে সন্তুষ্ট রাখার কারণে আদর্শবাদী দলে কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা নয়। মত ভিন্ন হওয়ার কারণে তিরস্কার, ছাটাই, বদলী বা অন্য শাস্তি অন্তত ইসলামী দলে দেখা যাওয়ার কথা নয়। কারণ, ভিন্নমত পোষণ করেও শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা বজায় রাখা যায়। কারোর ব্যক্তিগত মত ভিন্ন হওয়ার কারণে তাকে নাজেহাল ও হেয় করার কাজ ব্যক্তিস্বার্থের কাজ হতে পারে; এ কাজকে কোনোভাবেই ইসলামের স্বার্থরক্ষার কাজ বলা যায় না।
৫.অন্ধ আনুগত্য করা যেমন অন্যায় তেমনি অন্ধ আনুগত্য দাবি করাও অন্যায়।
৬.কারোর অন্যায় দেখেও প্রতিকারবিহীন থাকা এবং অন্যায়কারীর গুণকীর্তন করা কোনোভাবেই ইসলামী স্বভাব হতে পারে না। নেতাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করা মানেই তোষামোদী বা ‘জি হুজুর- জি হুজুর’ করা নয়।
৭.নেতার অপকর্মের সাক্ষী হয়ে গেলে সংশোধনের নিয়তে উপযুক্ত স্থানে ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ তথ্য দেওয়া উচিত। কারোর অপকর্ম জেনেও সে কাজের প্রশংসা করা মানেই মিথ্যার কবীরা গুনাহে জড়িত হওয়া।
সুবিধা গ্রহণ, অনাকাংখিত উপকার গ্রহণ এবং বিলাসিতা::
১.রাসূল (সা.) এবং সুপথপ্রাপ্ত খলিফা চতুষ্টয় রাষ্ট্রীয় (বা জামায়াতী/দলীয়) কোষাগার থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করেননি, মানুষের কষ্টের অর্থ দিয়ে নিজেরা বিলাসিতা করেননি, উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি হিসেবে নিজেরা নিজেদের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান করেননি বরং এ জাতীয় উপহার প্রদানকারীকে তাঁরা সতর্ক করে দিতেন যেনো পরবর্তীদের মাঝে এটা নিয়মে পরিণত হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে।
২.উপহার নিজের উপার্জন বা নিজের অর্থ থেকে দেওয়া উচিত। মানুষের কষ্টের হালাল টাকায় পরিচালিত সংগঠনে নেতারা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক উপহার বিনিময় করবেন- এটা শোভন আচরণ নয়। সংগঠনের অর্থ দিয়ে এ উপহার সর্বস্তরের জনশক্তি না পেলে শুধু নেতারা বহু উপহার পাওয়াটা এক ধরনের অসাম্য। মাঠ পর্যায়ের একজন লোককে আন্দোলনে আকৃষ্ট করতে এ উপহার দেওয়াটাই অধিক ফলপ্রসূ। আর সংগঠনের অর্থ দিয়ে উপহার দেওয়া হচ্ছে বুঝতে পারলে নেতৃত্বস্থানীয় সচেতন ব্যক্তিগণ তাতে আপত্তি জানানোরই কথা।
৩.দায়িত্বশীলরা পরিশ্রম করেন বিধায় তাদেরকে সামর্থের আলোকে ভালো খাওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু তা যেনো বিলাসীতা, প্রদর্শনী, স্বার্থসিদ্ধি,অপচয় ইত্যাদির পর্যায়ে না পড়ে। বিশেষ করে ঠিকমতো খেতে পায় না এমন জনশক্তির উপস্থিতিতে উর্ধ্বতন নেতাকে অতিরিক্ত আপ্যায়ন করানো ঠিক নয়। কর্মীদেরকে অবহেলিত রেখে নেতা ব্যক্তিগত উপভোগ করবেন- এটা ইসলামী রুচি হতে পারে না। তাই, জনশক্তির এ দরিদ্র অবস্থায় সচেতন দায়িত্বশীলমাত্রই অতিরিক্ত খরচ করার প্রবণতার বিরোধিতা করে থাকেন।
৪.নেতা হওয়ার পর রাতারাতি জীবনমান উন্নত হয়ে যাওয়াটা প্রশ্নবোধক। তবে, নেতার কাজকে সহজ ও বাধামুক্ত করতে কিছুটা অগ্রাধিকার প্রয়োজনীয় ও স্বাভাবিক। কিন্তু প্রয়োজন যেনো বিলাসীতায় পরিণত না হয়- সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
৫.ইসলাম সকলকেই পরিশ্রমী হতে শেখায়; কেবল অনুসারীকে নয়।
৬.দলের সম্পদ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে, দলীয় ব্যস্ততার কারণে দায়িত্বশীলের ব্যক্তিগত কাজ করা সম্ভব না হলে এবং ঐ ব্যক্তিগত কাজ সম্পাদনে দায়িত্বশীল বেশি সময় ব্যয় করলে দলের কাজে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকলে সামষ্টিক অনুমতি সাপেক্ষে ও বৃহত্তর স্বার্থে নির্দিষ্ট সীমার ভেতরে থেকে কিছুটা সুবিধা গ্রহণ করা যেতে পারে।
৭.যারা ধনী হওয়ার পরও গায়ে অতিরিক্ত দামী পোষাক পরেন না, যাদের শরীর পরিশ্রমজনিত ঘামে ভেজা, সংগঠনের জন্য পরিশ্রম করতে করতে যাদের চেহারায় থাকে ক্লান্তির ছাপ ঐ দায়িত্বশীলগণ সাধারণত হাজার টাকার সুগন্ধি মাখানো ‘পলিটিক্যাল লিডারদের’ চেয়ে অনেক ভালো।
পরামর্শ গ্রহণ না করা, আড়ালে সমালোচনা, সামনে প্রশংসা ও স্বার্থবাদিতা:
১.বিকৃতি রোধে সতর্ক করার কেউ না থাকাটাই বিপদের কারণ। তাই, কুরআনে কাজে-কর্মে পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা আছে (৩/সূরা আলে ইমরান:১৫৯ দ্রষ্টব্য)। ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বস্তরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজনীয়।
২.মাঠ পর্যায়ে কাজের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের লোকদের পরামর্শই অধিক ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। কারণ পরিস্থিতি সকল এলাকায় হুবহু এক রকমের থাকে না। ইসলামী সংস্থার বা দলের মধ্যে শিক্ষক, ছাত্র, পুরুষ, নারী, আলিম, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, বুদ্ধিজীবী, কৃষক ও শ্রমিকসহ সকলকে অংশগ্রহণ করানো প্রয়োজন। পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিটি বিভাগ বা সেক্টর থেকে অন্তত একজন যেনো পরামর্শ কমিটিতে থাকতে পারে যে ব্যবস্থা করাটা উপকারী।
৩.রাসূল (সা.) কর্তৃক নিজের মত পরিহার করে সাহাবীদের (রা.) মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাই সভাপতি নিজেকে স্বৈরশাসক ভাবতে পারেন না।
৪.সবার বা অধিকাংশের মতামতের বিপরীতে সিদ্ধান্ত নেওয়াকে নিয়ম বানানো ঠিক নয়। রাসূল (সা.) এর ধরনের নিয়ম বানাননি।
৫.সম্মিলিত পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে ফল ভালো হোক আর মন্দ হোক- এ বিষয়ে কারোর দোষ বা গুণ বর্ণনা করাটা ইসলামের কাজ নয়।
৬.সামনে প্রশংসাকারী আর আড়ালে নিন্দাকারী ব্যক্তি ইসলামে ঘৃণিত। পক্ষান্তরে উপযুক্ত ফোরামে, যথাযথভাবে, সামসা-সামনি, স্পষ্ট করে, গঠনমূলকভাবে ও সংশোধনের লক্ষ্যে সমালোচনাকারীকে ইসলাম উপকারী ও আবশ্যক মনে করে।
৭.চাটুকাররা সাধারণত সুযোগ-সন্ধানী হয়। আর সংশোধনের উদ্দেশ্যে সমালোচনাকারীরা (বা ইহতিসাবকারীরা) সাধারণত স্বার্থহীনভাবে কাজ করে থাকে। তাই, সমালোচককে শত্রু না ভেবে সংশোধনে সহযোগী বন্ধু মনে করা উচিত।
(ক)সত্য সমালোচনা কাফির করলেও তাতে নিজেদের সংশোধনের খোরাক থাকতে পারে। কে সমালোচনা করলো তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কি বিষয়ে সমালোচনা করা হলো (অর্থাৎ, সমালোচনা সত্য কি না?)।
(খ)ব্যক্তির সমালোচনা না করে পদ্ধতির বা সিস্টেমের সমালোচনা করা অধিক ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।
(গ)সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের উচিত- সমালোচনাকারীদেরকে ভালোবেসে কাছে টেনে তাদের কথা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করে করণীয় নির্ধারণ করা এবং নিজের বা সিস্টেমের ভুলের কারণে কেউ যেনো সমালোচনা করার সুযোগ না পায় যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাছাড়া, অন্যের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে নিজে অন্যায় করা যাবে না।
(ঘ)সংস্থার বাইরের লোককে সংস্থার নির্দিষ্ট ফোরামে সমালোচনা করার উপদেশ দিয়ে লাভ নেই। আর সংস্থার ভেতরের লোক হলে সমালোচনাকারী এমন লোককেই পরামর্শ দেবেন যারা তার পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন এবং গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন এবং পরামর্শ অনুসরণ না করলে যুক্তি দিয়ে আন্তরিকতার সাথে পরামর্শের দুর্বলতা ধরিয়ে দেবেন। তাই দায়িত্বশীলদের গতি-প্রকৃতি দ্বারা যদি এ সমালোচনাকারী এ আস্থা পান যে দায়িত্বশীলগণ সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ কথাকে বিবেচনা করার মানসিকতা রাখেন তাহলে সমালোচনাকারী উপযুক্ত ফোরামেই সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা করতে আগ্রহী হবেন।
(ঙ)সমালোচনাকারীদের আমাল ভালো নাকি খারাপ তার ওপর সমালোচনার সত্যতা নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ কারো আমাল কমে গেলে বা কেউ আরামপ্রিয় জীবন যাপন করলে এটা প্রমাণ হয় না যে, অতীতে তার অমুক ভূমিকা ভুল ছিলো।
(চ)সমালোচনাকারীরা কারো ক্রীড়ণক হয়ে সমালোচনা করছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে কেবল ভিন্নমত হওয়ার কারণে আন্দাজে (বা বিনা প্রমাণে) তাকে কারোর দালাল (বা তাগুতের এজেন্ট) সাব্যস্ত করা উচিত নয়। এতে অকারণে শত্রুতা বাড়ে। কারোর ভিন্ন অবস্থানকে বিনা বিচারে ‘বদ নিয়ত’ বলাটা একটি রোগ।
(ছ)নবীর দল ত্যাগ করা মানেই কুফরী। কিন্তু আজ কোনো একটি ইসলামী দল ত্যাগ করা মানেই কুফরী নয়। সমাজে বিভিন্ন ইসলামী দল রয়েছে। দুর্বল হলেও অন্য ইসলামী দলে যোগ দেওয়া যায় আবার তুলনামূলক সবলটাকেও সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া যায়। যথাযথ ফোরামে সমালোচনা পৌঁছানোর পর কাজ না হলে জনতাকে সতর্ক করা বা তাদের উপকারার্থে তাদেরকে সত্য জানানোর ব্যাখ্যা সামনে চলে আসতে পারে।
৮.পার্থিব স্বার্থ হারানোর আশংকায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে তোষামোদী ধরনের ভূমিকার দ্বারা দুনিয়ায় পদ-পদবী, চাকরী, সম্মান ইত্যাদি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু পরকালে ঐ ভূমিকার জন্য আল্লাহর দরবারে আসামী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৯.নেতৃত্বের লোভী লোকেরা চায় অন্যেরা তার সামনে তার প্রশংসা করুক। তারা অন্যকে নিজের প্রশংসা করতে দেয়। তাই, ইসলামী নেতার কর্তব্য হলো চাটুকার, সামনে প্রশংসাকারী, সুযোগসন্ধানী, অভিভক্তি প্রদর্শনকারী, ‘তেলবাজ’ ও মানুষকে খুশি করাকে লক্ষ্য নির্ধারণকারী লোকদেরকে যথাসম্ভব সকল পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখা। আর অনুসারীদের কাজ হলো এ সকল বদ স্বভাব থেকে সর্বদা দূরে থাকা।
১০.নেতা হতে না চাইলে বা সুবিধা পেতে না চাইলে কেউ সাধারণত চাটুকার হয় না, সামনে প্রশংসা করে না এবং সংস্থা বা সংগঠন থেকে কোনো পার্থিক স্বার্থ আদায়ে তৎপর তথা সুবিধাবাদী হয় না। এ কাজে তৎপর হলেই বুঝতে হবে এ লোক নেতা হওয়ার যোগ্য নয়।
জনশক্তিতে আমানাত ভাবতে না পারা:
১.নিজের ক্ষতি করে হলেও জনশক্তির হিফাজাত করাই প্রকৃত দায়িত্বশীলের কাজ।
২.অপমানিত হতে নয় বরং দুনিয়ার জীবনেই ক্ষুদ্র এক জান্নাতী পরিবেশ প্রাপ্তির আশাতেও অনেকে ইসলামী দল করে। এ আশা ইসলামের প্রাণশক্তি ও পারস্পরিক শুভাকাঙ্ক্ষার কারণে অমূলক নয় বরং যুক্তিপূর্ণ। তাই, কাউকে অবমূল্যায়ন করা বা মূল্যায়িত হতে চাওয়া দু’টোই ইসলামের প্রাণশক্তির বিপরীত।
৩.ইসলামী নেতারা কর্মীদের সাথে ভাতৃসুলভ আচরণ করে থাকে; দাসসুলভ বা মুরীদসুলভ আচরণ করার প্রশ্নই আসে না।
৪.অনুসারীদেরকে অধ্যবসায়ী, আত্মপ্রত্যয়ী, লেখক, চিন্তাবিদ, সুবক্তা ইত্যাদি হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। তাদেরকে নিজস্ব ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন।
৫.দায়িত্বশীলের বৈধ নির্দেশের আনুগত্য, নিজ দায়িত্ব পালন, দায়িত্বশীল ভুল করছে মনে হলে তাকে শুধরে দেওয়া, দায়িত্বশীলকে ভালোবাসা ইত্যাদি সকল দায়িত্ব পালনই জরুরী।
কেবল রাজনীতি সর্বস্ব ইসলাম:
১.ইসলামের অগণিত কাজের ভেতর রাজনীতি একটি মাত্র কাজ। কিন্তু এ রাজনীতিই যদি মোট কাজের প্রায় সব অংশ দখল করে নেয় তখন তা আর ‘ইসলামের রাজনীতি’ থাকে না বরং সেটাকে ‘রাজনীতির ইসলাম’ বলাই হবে অধিক যুক্তিযুদ্ধ। ২.রাসূল (সা.) এর জীবনে আমরা ‘রাজনীতির ইসলাম’ পাই না বরং ‘ইসলামের রাজনীতিই’ পাই।
৩.কিছু লোকের কাছে রাজনীতি এতো বড় হয়ে পড়ে যে তার কাছে নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ, চরিত্র এগুলো প্রাপ্য গুরুত্বও যেনো পায় না।
৪.বেশি রাজনীতি করতে করতে এক সময় দলের ভেতরেও রাজনীতি চালু হয়ে যায়।
৫.কাফিরের উপরেও যেখানে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার বৈধতা নেই সেখানে অনেক সময় নিজ দলের ভিন্ন চিন্তার অধিকারীকেও রাজনীতির প্যাঁচে ফেলার উদ্দেশ্যে তার নামে মিথ্যে অপবাদ দেওয়ার জঘন্য কাজকে হালাল মনে করা হয়।
ভোটিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা:
১.ভোট পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যেনো যোগ্য লোককে সহজে নেতৃত্বে পৌঁছানো যায়। মাঝে মাঝে কম যোগ্য লোক বেশি ভোট পায় এবং বেশি যোগ্য লোক কম ভোট পায়। এ পদ্ধতি ইসলামী চেতনার বিপরীত। অনেক সময় দেখা যায়, কম যোগ্য ৫০০ লোকের নেতা প্রায় ৫০০ ভোট পায়। কিন্তু অধিক যোগ্য ৫০ লোকের নেতা হয়তো ১০০ ভোটও পায় না। ফলে কম যোগ্য হয়েও অধিক ভোট পাওয়া সম্ভব হয়। এভাবে নেতৃত্ব বাছাইয়ে যোগ্যতা মাপকাঠি থাকে না বরং সংখ্যাই মাপকাঠি হয়ে ওঠে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এবং বাস্তবতার বিচারে সংখ্যার চেয়ে মানই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
২.জনশক্তি বেশি বিদায় নেওয়ায় কম দক্ষরা নেতৃত্বে উঠে আসতে পারে। এটা কাঙ্ক্ষিত বিষয় নয়।
ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা:
১.মোবাইল ল্যাপটপে যাচ্ছেতাই গান শোনা, নাটক দেখা ও আগ্রহ সহকারে নারী প্রসঙ্গ নিয়ে (এবং নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষ প্রসঙ্গ নিয়ে) অশালীন কথা বলার অভ্যাস ঘৃণ্য।
২.জীবনমান স্বাভাবিক না রেখে উচ্চমানের করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। বেশি টিউশনী করানো ঠিক নয়। টিউশনীর ক্ষেত্রে পুরুষ শিক্ষক দ্বারা মেয়েদেরকে (বা নারী শিক্ষক দ্বারা ছেলেদেরকে) পড়ানো ঠিক নয়। ছাত্র/ছাত্রী পড়াতে বিপরীত লিঙ্গের বিবাহিত শিক্ষককে অগ্রাধিকার দেওয়াও অপ্রয়োজনীয় এ কারণে যে, বিয়ে করার পরও পর্দার বিধান পূর্ণ মাত্রায় বহাল থাকে।
৩.যেখানে ঝুঁকি কম আর সুবিধা বেশি সেখানে সক্রিয় আর যেখানে ঝুঁকি বেশি আর সুবিধা কম সেখোনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া দুর্বল বা অস্তিত্বহীন ঈমানের পরিচয় বিধায় এ স্বভাব বর্জনীয়।
৪.নেতাদের অবস্থা, নির্যাতন, খারাপ রেজাল্ট ইত্যাদি কারণে হতাশ না হয়ে নিজ দায়িত্ব মযবুতভাবে পালন করা প্রয়োজন।
৫.কথা ও কাজের গরমিল, পর্দা সমস্যা, মোবাইলে নিষিদ্ধ প্রেম ইত্যাদি বর্জনীয়। সংস্থাকে না জানিয়ে গোপনে বা হঠাৎ বিয়ে করা শোভন আচরণ নয়। পিতা-মাতা, অভিভাবক ও দায়িত্বশীলগণকে জানিয়ে বিয়ে করার পরই কেবল একত্রে চলাফেরা করা যেতে পারে।
৬.শরীরচর্চা ও সুস্থ দেহ গঠনকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
পারিবারিক দুরবস্থা:
১.পরিবারের প্রতি যথাযথ প্রভাব থাকা আবশ্যক। পরিবার অনৈসলামিক স্বভাব ও রুচিসম্পন্ন হলে সমাজ ইসলামী হতে পারে না।
সামাজিক ক্ষেত্র:
১.অনেকে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভোঁতা যুক্তি উপস্থাপন করে। তাদের অনেকেই জীবন নিয়ে মিশনহীন। এমনটা কাম্য নয়।
২.সত্যের দাওয়াতের (বা আহ্বানের) ক্ষেত্র সাধারণ ও সর্বস্তরের মানুষ না হয়ে কেবল স্বগোত্রীয় হওয়া কাম্য নয়।
৩.সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের কর্মসূচী থাকা উচিত। অনেকে দু-একটি মানবসেবামূলক কাজ করেই মহাতৃপ্ত হয়ে পড়েন। এমনটা কাঙ্খিত নয়।
৪.অপরাধকে ঘৃণা করাকেই অনেকে যথেষ্ট মনে করেন কিন্তু বাস্তবে কেবল ঘৃণা করা বড় সমাধান নয়।
৫.ইসলামপন্থী হওয়ার দাবিদারদের অনেকেই নিছক পুরুষতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতা পোষণ করেন- যা বর্জনীয়।
৬.ইসলাম চূড়ান্তভাবে আধুনিক কিন্তু বর্তমান ইসলাম উপস্থাপনকারীদের অনেকেই সভ্যতার সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। তাই তারা অনেক সময় মূলস্রোতের মন-মানসিকতা বুঝতে পারেন না। আধুনিক জ্ঞান সম্পন্নরা ইসলামের অনুসরণে বিকল্প তৈরি না করলে নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজ গোটা জাতির ওপর চেপে বসতে পারে।
৭.পারিবারিকভাবে ইসলাম সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অত্যন্ত সংকীর্ণ জ্ঞান থেকে আহরিত। দেশে ‘ইসলাম শিক্ষা’ নামক একটি অতি ক্ষুদ্র পুস্তক হতে জ্ঞান বিতরণ করা হয় যা ইসলামকে অদ্বিতীয়, সর্বশ্রেষ্ঠ, অভ্রান্ত ও অব্যর্থ জীবনবিধান হিসেবে প্রমাণ করার দক্ষতা সৃষ্টি করে না বললেই চলে। আর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই ছাত্ররা সাধারণত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক (Academic) ইসলামী শিক্ষার সুযোগ পায় না। ফলে ইসলাম সম্পর্কে প্রায় শূণ্য জ্ঞান নিয়ে গড়ে উঠে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। তারা তখন ইসলামের পরিশিলিত রুচিবোধকে পটু ও চটপটে হওয়ার পরিপন্থী মনে করে। তারা ইসলাম দিয়ে ‘স্মার্টনেস’কে পরিশিলিত না করে তথাকথিত ‘স্মার্টনেস’ দিয়ে ইসলামকে বিচার করতে চায়। এ দুরবস্থার সফল মোকাবেলা আবশ্যক।
রাষ্ট্রীয় চ্যালেঞ্জ:
১.নিজস্ব প্রচার মাধ্যম সৃষ্টি ও তাতে যোগ্যদের নিয়োগ করা প্রয়োজন।
সাংগঠনিক (তথা নেতৃবৃন্দের) যোগ্যতার ঘাটতি:
১.নিজেকে কুরআনের অনুসারী বানানো এবং সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি বা সংশোধন করা প্রয়োজন। নিজের সুবিধামতো কুরআন-হাদীসের উপস্থাপন করা মুমিনের স্বভাব ও লক্ষণের বিপরীত।
২.নেতাদের উচিত ইসলাম মানায় সকলের চেয়ে এগিয়ে থাকা। কর্মে বা আমালে পিছিয়ে থাকা লোকের দ্বারা উচ্চ ব্ক্তব্য সাধারণত ফলপ্রসূ হয় না। কথার সাথে কজের মিল থাকলেই সেই কথার মধ্যে বরকত আসে।
৩.পারস্পরিক যোগাযোগ বেশি হতে হবে। সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা বা ইহতিসাব চালু থাকতে হবে। আড়ালে সমালোচনার প্রবণতা থাকা ঠিক নয়। ‘আড্ডা মানেই সমালোচনা’ এমনটি কাম্য নয়।
৪.জনশক্তিকে প্রচলিত ধরনের মুরীদ ভাবা যাবে না। নেতার কথাকে গুরুত্বহীন মনে করা অথবা তাদের কথাকে কুরআন-সুন্নাহর দলীলের মতো অখণ্ড পর্যায়ের মর্যাদা দেওয়া উভয়টিই ঈমাননাশক কাজ।
৫.মতবিরোধ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বড় বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে দূরে রাখতে হবে- এমন কোনোন কথা নেই। উর্ধ্বতন সংগঠনে তার বিরুদ্ধে অকারণে বিষোদগার করাও কাম্য নয়।
৬.তাকওয়া, যোগ্যতা ইত্যাদি কম থাকা সত্ত্বেও নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে একক সিদ্ধান্তে দায়িত্বশীল বানানোর বা রাখার চেষ্টা করা অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং পরকালে অবিশ্বাসের লক্ষণ।
৭.বর্তমান সদস্যদের চিন্তার বিপরীতে সাবেক কিছু নেতাদের মতের হুবহু বাস্তবায়ন করা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। বড়দের গুরুত্ব থাকলেও ময়দানের লোকের চিন্তার গুরুত্বও কম নয়।
৮.অতিবিশ্বাসের কারণে অস্বচ্ছতা এবং অবিশ্বাস কোনোটাই কাম্য নয়। উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে নিজ উদ্যোগে অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রকৃত হিসেব সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা উচিত।
৯.সংগঠনের সম্পদ (যেমন: বাহন, মোটর সাইকেল) নিয়ে নিজ বাড়িতে যাওয়া বা সেটা পরিবার বা আত্মীয়কে দেওয়া খিয়ানাতের পর্যায়ভুক্ত বিধায় তা বর্জন করা আবশ্যক।
১০.দায়িত্বশীল বিভিন্ন দুর্বলতার শিকার হলে এবং জনশক্তি সেগুলোর সাক্ষী থাকলে সংস্থার লোকজন খারাপ হওয়ার লাইসেন্স পেয়ে যায়। দায়িত্বশীলের দুর্বলতাগুলো পরে অনুসারীদের আনুগত্য কমিয়ে দেয়। এভাবে আনুগত্য কমে গেলে সেটা মূলগতভাবে দায়িত্বশীলেরই ত্রুটি। সেক্ষেত্রে অধীনস্তের ত্রুটি দায়িত্বশীলের ত্রুটির ফলাফল মাত্র। কাজেই এর সমাধানে দায়িত্বশীলকেই বেশি সচেতন হতে হবে।
১১.সোনালী ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে, ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে আদর্শের বিপরীতে চলা যাবে না।
(ক)নিজেদের সিদ্ধান্তকে হুদায়বিয়া সন্ধিতুল্য ভেবে আত্মতৃপ্তিতে থাকা উচিত নয়। কারণ আমরা ওহী দ্বারা আগাম কিছু জানতে পারি না। তাছাড়া সময়ের পরিবর্তনে নিজেদের সিদ্ধান্ত ভুল বলেও প্রকাশিত হতে পারে।
(খ)ভুল স্বীকার না করাটা অন্যায়। কেউ ভুল করে বিজয়ী হলে বিজয়ের পর ভুলকে এড়িয়ে ইতিহাস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করে যেনো সে আদৌ ভুল করেনি। এ প্রবণতা ক্ষতিকর।
(গ)কোনো ইসলামী দলের অতীতকালের কোনো সিদ্ধান্ত আল্লাহর ‘ইচ্ছায় হয়েছে’ বলার চেয়ে ‘অনিচ্ছায় হয়নি’ বলাটাই বেশি ঠিক। কারণ, এমনও তো হতে পারে যে, ঐ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু লোকের ভুল বা অন্যায় আচরণ সত্ত্বেও আল্লাহ তাদেরকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেননি।
(ঘ)কারোর শাসন মজবুত হওয়া বা থাকা মানেই সে সর্বদা ঠিক- এ কথার ভিত্তি নেই। মুসলিম উম্মাহর সাম্রাজ্যগত পরিধির বিস্তৃতিতে ইমাম হুসাইন (রা.) এর চেয়ে ইয়াজিদের ভূমিকাই হয়তো বেশি ছিলো। তার মানে এই নয় যে, ইয়াজিদের মর্যাদা ইমাম হুসাইন (রা.) এর চেয়ে বেশি।
(ঙ)ইসলামী সংস্থার কোনো অঙ্গ সংগঠন তৈরি করা বা না করা শরয়ী মাসআলার ব্যাপার নয়। প্রয়োজনে তা করা যেতে পারে বা বিলুপ্তও করা যেতে পারে।
১২.উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা একপেশে হলে চলবে না। শাখা নেতার অভিযোগে বিনা যাচাইয়ে কারোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় (যেমন: ছাত্রজীবন শেষ করা, বহিষ্কার করা)। কাউকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
শেষকথা:
১.‘পলিটিক্যাল লিডার’ ভাব ধারণকারীদের দ্বারা ইসলামী সংগঠনকে অপবিত্র হতে দেওয়া উচিত নয়।
২.শহীদের পরিবার, আহত ব্যক্তিগণ, নির্যাতীত জনতা স্বপ্ন দেখেন এক গঠনমূলক ও আমূল পরিবর্তনের।
৩.জনশক্তি ও সুধীরা ইসলামী সংস্থাকে অনেক পবিত্র মনে করে। আল্লাহর সন্তোষের লক্ষ্যে সর্বক্ষেত্রে ইসলামের সঠিক অনুসরণ করলে জনশক্তিদেরকে বর্তমান সুধারণার যোগ্য হওয়া যেতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একসাথে পূরোটা দেয়াতে সাধারণ পাঠকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়েছে!
তবে লেখাটাও কষ্টসাধ্য বটে!
জাযাকাল্লাহ…..
মন্তব্য করতে লগইন করুন