মুখোশের আড়ালে পরিচিতি লাভের আশায় রাজনৈতিক নেতারা !!!
লিখেছেন লিখেছেন সিয়াম রিজভী ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:১২:৩৩ রাত
কোন এক স্থানে লাইটিং করা হয়েছে।ছোট একটা জায়গায় লাইটিং সহ আছে নামকরা টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকবর্গ আর অনেকগুলো ক্যামেরা।অনেকেই হয়ত ভাবছেন হয়ত সেখানে কোন পার্টি হবে।না! আসলে সেটা নয়।
.
কোন এক রাজনৈতিক নেতা বা সমাজের বড় কোন ব্যক্তি বা সমাজের কোন এক সুনামধন্য ব্যক্তি সেখানে বস্ত্র বিতরন করবেন।চারিপাশ থেকে অনেকজন গরীব মানুষ বস্ত্রের আশায় এসে উপস্থিত হয়েছেন সেই মঞ্চেরই সামনে।ঐদিকে চারিপাশ ক্যামেরা আর সাংবাদিকে ঘেরা।সবকিছুই রেকর্ড করা হবে।পরেরদিন বা আজকে রাতে বা লাইভ টিভিতে টেলিকাস্ট করা হবে।কাল পত্রিকায় ছাপা হবে আরও কত কিছুই না হবে।প্রায় ২০০ জনেরও বেশি গরীব দুস্থ মানুষ সেখানে হাজির হয়েছেন কয়েকটা বস্ত্র পাওয়ার আশায়।যাদের কাছে দিন রাত সবই সমান।মাথার গাম পায়ে ফেলে যারা রোজগার করে।
.
বস্ত্র বিতরন শুরু করা হয়েছে।সেখানে সিরিয়ালের প্রথম ৭৫ জন বস্ত্র পেল।বাকি ১৭৫ জন পরে রইল।যারা বস্ত্র পেয়েছে তারা তো মহাখুশি কিন্তু যারা পায়নি তারা? বুঝাই যাচ্ছে।যেই সুনামধন্য ব্যক্তি বা নেতা যেই হোক কাপড় এনেছিল মাত্র ৭৫ টি।তার কি বিন্দুমাত্র ধারনা ছিলনা বাকি ১৭৫ জনের ব্যাপারে?নাকি সে ইচ্ছে করেই মাত্র ৭৫ টা বস্ত্র নিয়ে এসেছিল?
.
তার হয়ত ধারনা ছিল মানুষগুলো সম্পর্কে।কিন্তু সে ধারনা থাকার স্বত্তেও মাত্র ৭৫ টি বস্ত্র নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছে।কিন্তু সেই ভাগ্যবান ৭৫ জনের জন্য মনমরা হতে হয়েছে ১৭৫ জন অভাগাদের।তাদেরও কি প্রাপ্য ছিলনা একটা করে কাপড়?অবশ্যই ছিল।কিন্তু তা তারা পায়নি।১৭৫ জন খুবই নগন্য একজন সুনামধন্য ব্যক্তির জন্য।কিন্তু ১৭৫ জনের মধ্যে প্রত্যেকেই নিজেরা নিজেদের কাছে অসহায়।কি বলবে তারা?৭৫ জনকে দিয়েছে আমাদের দেয়নি কেন?এটা বলবে?সেই সাহস কোথায় পাবে?বললেই যে চড়,পুলিশের লাঠির বাড়ি বা গালাগালি শুনতে হবে।কেউ কি আছে দাম দেয়ার মত তাদের?নাকি থাকবে?না!সেই ১৭৫ জনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটা মানুষও থাকবে না।তারা অসহায় হয়েই আপসুস নিয়ে পড়ে থাকবে।
.
৭৫ জনকে খুশি করবার বদলে ১৭৫ জনকে অবজ্ঞা করার কোন মানে আছে কি? ৭৫ জনকে খুশি করতে গিয়ে ১৭৫ জনকে অভাগাদের তালিকায় ফেলতে হল সেই সুনামধন্য মানুষটাকে।
.
৭৫ টি বস্ত্র বিতরনের পর দামি গাড়ী হাকিয়ে পুলিশের নিরাপত্তায় সে ফিরে যাবে গন্তব্যস্থলে।১৭৫ জন মানুষের দিকে কোন প্রকার না তাকিয়েই তাদের কোন গুরুত্ব না দিয়েই সে চলে যাবে।তখন তো কিছু বলার থাকবে না সেই মানুষগুলোর।তারা যে গরীব! কিভাবে বলবে? বললেই স্বীকার হবে সেই পূর্বে বলা গালিগালাজ আর পুলিশের লাঠির বাড়ির।কিছু না বলে ফিরে আসবে তারা।অসহায়ভাবেই।তাদের পাশে দাঁড়ানোর সত্যিই কেউ নেই।
.
.
অন্যদিকে ঐদিন টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজে দেখা যাবে-"অমুক নেতা তমুক জায়গায় গরীবদের পাশে দাঁডিয়েছেন।তাদের বস্ত্র বিতরনের মত মহৎ কাজ করেছেন।এরকম নেতাই বা কতজন আছে ,যে কিনা গরীবদের পাশে এসে দাঁড়ায়!!"।চারিদিকে তার নাম ডাক।উনিই তো তমুক,উনিই তো অমুক।কত্ত ভাল মানুষ উনি।বাহ!!৭৫ জনকে বস্ত্র বিতরন করেই নিজের নামডাক কত সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিল সে।পরেরদিন পত্রিকায় বের হবে তার ছবি।এমন একজনকে পাওয়া যাবে না বা এমন কোন টেলিভিশন চ্যানেল পাওয়া যাবে না যেখানে সেই গরীবদের দুর্দশা গুলো তারা ফুটিয়ে তুলবে।সবাই জানবে সেই নেতা খুব ভাল মানুষ।কিন্তু সে কতগুলো কাপড় দিয়েছে বা কতজন খালি হাতে ফিরে গেছে তার খবর কেউ রাখবে না।রাখার মত কেউ নেই।
.
.
গরীবদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আজো আমাদের সমাজে মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।পেলেও ১০০ জনে ১ জন পাওয়া যাবে হয়ত।বিভিন্ন নেতারা এভাবে কয়েকজনকে সাহায্য করে নামডাক ছড়াবে। আর অপরদিকে সেই কয়েকজনের জন্য দুস্থ আর অসহায় থেকে যাবে অনেক গরীবেরা।
.
.
.
সিয়াম রিজভী
বিষয়: বিবিধ
৯২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন