মজার মানুষ রবীন্দ্রনাথ
লিখেছেন লিখেছেন পুরনো স্মৃতি আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৫২:০৫ সকাল
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শান্তিনিকেতনে গুরুদেব বলা হত। তিনি যখন শান্তিনিকেতনে থাকতেন, তখন তাকে ঘিরে ছাত্রছাত্রী, ভক্তদের আনন্দের হাট জমত।
কথাবার্তায় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন দারুণ রসিক। রবীন্দ্রনাথ তার ছাত্রদের যেমন ভালোবাসতেন এবং তাদের ব্যাপারে যত্নশীল ছিলেন, তেমনি তাদের সঙ্গে অনেক হাস্যপরিহাসও করতেন।
তার ছাত্র প্রমথনাথ বিশী গুরুদেব সম্পর্কে অনেক ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন।
একদিন সকালবেলায় রবীন্দ্রনাথ জলখাবার খেতে বসেছেন।
প্রমথনাথ এসে তার পাশে বসলেন। উদ্দেশ্য, গুরুদেবের খাবারে ভাগ বসানো।
ফল, লুচি, মিষ্টি সবকিছুরই ভাগ পেলেন তিনি। কিন্তু তার নজর একগ্লাস সোনালি রংয়ের সরবতের দিকে যেটা তাকে দেওয়া হয়নি।
গুরুদেব তার ভাব লক্ষ করে বললেন, “কী হে এই সরবত চলবে নাকি?”
প্রমথ তাতে খুব রাজি। অমনি গুরুদেব বড় এক গ্লাসে সেই সরবত প্রমথকে দেওয়ার আদেশ দিলেন। বড় গ্লাস ভর্তি হয়ে সেই সোনালি সরবত এল।
প্রমথনাথ এক চুমুক খেয়েই বুঝলেন সেটা চিরতার সরবত। এদিকে গুরুদেব তার মুখের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছেন। ভাবখানা এমন-- ‘কেমন জব্দ’।
শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের ছেলেরা ফুটবল খেলছে। শান্তিনিকেতনের ছেলেরা আট-শূন্য গোলে জিতেছে। সবাই দারুণ খুশি।
শুধু রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করলেন “জিতেছে ভালো,তা বলে আট গোল দিতে হবে? ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে।”
শান্তিনিকেতনে নতুন একটি ছেলে ভর্তি হয়েছে, তার নাম ভাণ্ডারে।
ছেলেটির সঙ্গে তখনও রবীন্দ্রনাথের পরিচয় হয়নি। রবীন্দ্রনাথ একদিন শান্তিনিকেতনের পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, তার পরনে দীর্ঘ আলখাল্লা,মাথায় টুপি। ভাণ্ডারে তাকে দেখে ছুটে গিয়ে হাতে আধুলি মানে আটআনা পয়সা দিয়ে এল। অন্য ছেলেরা জিজ্ঞাসা করল,“গুরুদেবকে তুই কী দিলি?”
“গুরুদেব কোথায়? ও তো একজন ফকির। মা বলেছে ফকিরকে দান করলে পুণ্যি হয়।” ভাণ্ডারের সাফ জবাব।
অল্পদিনেই বোঝা গেল ভাণ্ডারে ভীষণ দুরন্ত ছেলে। তার দৌরাত্মিতে ছাত্র শিক্ষক সবাই অস্থির। নালিশ গেল গুরুদেবের কাছে।
গুরুদেব তাকে ডেকে বললেন, “ভাণ্ডারে তুই কত ভালো ছেলে। তুই একবার আমাকে একটা আধুলি দিয়েছিলি। কেউ তো আমাকে একটা পয়সাও কখনও দেয় না। তুই যদি দুরন্তপনা করিস, তা হলে কি চলে ?”
গুরুদেবের কথায় ভাণ্ডারের দুষ্টুমি কিছুটা কমেছিল।
রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের ছাত্রদের বকাঝকার পক্ষপাতি ছিলেন না। তিনি কাউকে কখনও আঘাত দিতে চাইতেন না।
একবার প্রমথনাথ বিশী সম্পর্কে একটা নালিশ এল। এমন অবস্থা যে, তাকে না বকলেই নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গুরুদেব প্রমথকে অনেকক্ষণ ধরে বকলেন। তিনি একটু থামলে প্রমথ বললেন, “কিন্তু ঘটনা হল আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”
রবীন্দ্রনাথ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, “বাঁচালি। তোকে বকাও হল আবার তুই কষ্টও পেলি না।”
grin ইমোটিকন
রবীন্দ্রনাথ একবার এক ভদ্রলোককে বললেন, “আপনাকে আমি দণ্ড দেব।”
ভদ্রলোক তো ভীষণ বিব্রত। না জানি কী অপরাধ হয়েছে তার। বললেন “কেন, আমি কী অপরাধ করেছি?”
রবীন্দ্রনাথ বললেন, “গতকাল আপনার লাঠি মানে দণ্ডটা আমার এখানে ফেলে গিয়েছিলেন। এই নিন আপনার দণ্ড।”
বলে তার দিকে লাঠিটা বাড়িয়ে ধরলেন।
একবার এক ঘরোয়া আসর জমেছে। সবাই হাসি গল্পে মশগুল।
রবীন্দ্রনাথ বললেন, “এ ঘরে একটা ‘বাঁদোর আছে।”
সবাই এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। গুরুদেব কাকে বাদর বললেন।
রবীন্দ্রনাথ বুঝিয়ে দিলেন,“এ ঘরে দুটো দরজা বা দোর। একটা ডান দিকে অন্যটা বাম দিকে। তাই বলছিলাম এ ঘরে একটা বাঁদোর রয়েছে।”
রবীন্দ্রনাথ তার ভক্ত ও ছাত্রছাত্রীদের সামনে গান গাইছেন, “হে মাধবী, দ্বিধা কেন ?”
তখন ভৃত্য বনমালী আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে তার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বনমালী ভাবছে ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। কারণ রবীন্দ্রনাথ গান গাইছেন, এ সময় বিরক্ত হবেন কিনা কে জানে।
গুরুদেব বনমালীর দিকে তাকিয়ে গাইলেন “হে মাধবী, দ্বিধা কেন?”
বনমালী আইসক্রিমের প্লেট গুরুদেবের সামনে রেখে লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
রবীন্দ্রনাথ বললেন, “বনমালীকে যদিও মাধবী বলা চলে না। তবে তার দ্বিধা মাধবীর মতোই ছিল। আর আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে দ্বিধা করা মোটেই ভালো নয়।”
একবার রবীন্দ্রনাথ ঘুমুচ্ছেন। ঘরের জানালা খোলা। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। ফুটফুটে জ্যোৎস্না। আলোতে ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ ভৃত্য মহাদেবকে ডেকে বললেন, “ওরে মহাদেব, চাঁদটাকে একটু ঢাকা দে বাবা।”
মহাদেব তো হতভম্ব। চাঁদ সে কীভাবে ঢাকা দেবে?
গুরুদেব হেসে বললেন, “জানালাটা বন্ধ কর, তাহলেই চাঁদ ঢাকা পড়বে।”
এমনি মজার মানুষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এত বড় প্রতিভার অধিকারী একজন মানুষ। কিন্তু মোটেই রাশভারী বা গুরুগম্ভীর নন। বরং সবার সঙ্গে সহজ, সরল তার ব্যবহার ।
--------নেট থেকে সংগৃহীত---------------
বিষয়: বিবিধ
১০৬৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সৈয়দ মুজতাবা আলির বিভিন্ন বইতে এমন অনেক ঘটনার কথাই পড়েছি। কোন মহামানব কেই সার্বক্ষনিক গম্ভির হতে দেখা যায়না। বরং সাধারন মানুষ থেকে তারা অনেক বেশি হাসিখুশি থাকেন।
"At the age of 39, he composed 'Katha Kahini' poetry based on the ancient Brahmo mythological legends and chronological narratives of Buddha, Rajput, Maratha and Sikhs. But the 750 year-old indigeneous events or dervishes arriving from foreign lands or the magnanimity of Muslim rulers did not seem worthy of his consideration -- not even those of Emperor Akbar, Moinuddin Chisti, Razia, Anarkoli, Nurjahan. Nothing (except Tajmahal) of a nation or society that ruled India with might, knowledge, wealth and achievements for previous 600 years appealed to his good sense. This shows how deep hatred or permanent disrespect he harboured deep down his heart for this ruling class coming from foreign lands. [Prof Ahmed Sharif, Rabindruttor Trityo Projonmey Rabindra Mullayan, Quaterly Uttaradhikar, published by Bangla Academy, Baisakh-Ashar issue, 1393].
গুরু যখন গরীবের বন্ধু:
Not only Rabindranath, but
the entire Tagore dynasty did not have any record of donating anything, he did not have any reputation of making any donation towards primary schools, orphanage or dam constructions in Shahzadpur, Shilaidoh or Patishor. On the contrary, conniving threat from Tagore dynasty, Kangal Harinath Majumdar published narrative of Tagore dynasty's oppression and setting of arson to the entire villages." [Prof Ahmed Sharif, Rabindruttor Trityo Projonmey Rabindra Mullayan, Quaterly Uttaradhikar, published by Bangla Academy, Baisakh-Ashar issue, 1393]
মন্তব্য করতে লগইন করুন