মধ্যবিত্ত বাবা

লিখেছেন লিখেছেন পুরনো স্মৃতি আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৩৫:০৬ সকাল

রাতে খাওয়ার পর বাবার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু করে বলেই ফেললো,

" বাবা, আমার একটা এন্ড্রয়েড লাগবে ! "

এন্ড্রয়েড কি?

"মোবাইল"

" দাম কত ফোনের ? "

" পনের বিশ হাজারের মতো ! "

.

দাম শুনে বড় একটা ধাক্কা খেলেও ছেলেকে বুঝতে দেন না বাবা ...

তবু ছেলে খুশী থাক। ছেলেকে জাতে ওঠাতে গিয়ে নিজে সেধে খাদে নামেন বাবা ...

.

মধ্যবিত্ত বাবাদের জুতোর তলা সবসময় ইতিহাসের সাক্ষী হয়...

ক্ষয়ে ক্ষয়ে ... সয়ে সয়ে ...

.

প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার পথে বাটার দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেন বাবা ...

"চার বছর হয়ে গেলো, এই জোড়া জুতোকে এবার মাফ করা দরকার।"

.

জুতো কিনবো কিনবো করে ছোট ছেলের ফাইনাল সেমিস্টার চলে আসে, তিরিশ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার ব্যাপার...

কিংবা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এ ভর্তি কোচিং...

নিজেকে বলেন, "ছেলের ক্যারিয়ার সবকিছুর আগে!"

.

অতঃপর আরও একবার প্রাগৈতিহাসিক জুতো জোড়া নিয়ে জুতোর ডাক্তারের কাছে দৌড়ায় মধ্যবিত্ত বাবা ...

সে জুতো দেখে মুচিও নাক কুঁচকায় ...

"এ জোড়ায় আর কত দিন যাবে, স্যার ? পকেটটা একটু খুলুন !"

.

শুনে যায় বাবা। কিছু বলে না। ছেলেটা সকালে টাকা নিয়ে গেলো...

শীত এসেছে, জুতো কিনবে।

কি যেন নাম! কনভাস না ক্যানভাস ...

যে ক্যানভাসে ছবি আঁকে, সে ক্যানভাস আবার কখন মানুষের পায়ের কাছে পৌঁছে গেলো, ভেবে পান না বাবা ...

.

মধ্যবিত্ত বাবাদের অবশ্য বুঝতে হয় না কখনো ...

একটু আধটু বুঝতে গেলে বৌ, ছেলে কিংবা মেয়ের ধমক জোটে কপালে •••••

"তুমি আমার চেয়ে বেশী বোঝো ?"

.

মধ্যবিত্ত বাবারা তাই অবুঝের মতো দিয়ে যান ...

এভাবে দিতে দিতে একদিন বুকের বামপাশের ব্যাথাটা জেগে উঠে ...

অবহেলায় অবহেলায় একদিন এনজিওগ্রাফি করান বাবা ...

ধরা পড়ে, হার্টে নাকি জ্যাম, ব্লক ট্লক ... !

.

রিং পড়াতে হবে ...

সারাজীবন জ্যাম ঠেলে বাসে ঝুলে

হার্টেও জ্যাম লেগে যায় মধ্যবিত্ত বাবার ...

ঠিক যে মুহূর্তে নিজের হার্টে রিং পড়ানো নিয়ে টেনশন করা দরকার ...

বাবার টেনশন লাগে মেয়েকে "রিং" পড়ানো নিয়ে ...

তিনি মারা গেলে মেয়েটার বিয়ে দেবে কে?

.

রাজকন্যা ধরে আনে এক রাজপুত্রকে। সে রাজপুত্রের আবার ভীষণ ক্ষিদে ...

ঘর সাজানোর পাশাপাশি রাজপুত্র টুয়েন্টি টু ক্যারেটের ডায়মন্ডের আংটি আবদার করে ...

মেয়েও বলে, "দাও না, বাবা ! একটাই তো জামাই তোমার !"

.

রাজকন্যার রাজপুত্রকে ডায়মন্ডের রিং পড়াতে গিয়ে নিজের হার্টের রিং পড়ানোকে শিকের ওপর তুলে রাখেন মধ্যবিত্ত বাবা ...

একটাই তো জামাই। বিয়ে হয় মহা ধুমধামে ...

হাজার মানুষ মিলে গন্ডে পিণ্ডে খায়, হলদে ব্যান্ড পার্টি আসে, লাল সুতো বের হয় বাবার ... তবু হাসিটা ধরে রাখেন ... !

.

তারপর একদিন ...

সেই মুহূর্তটা আসে ...

ব্যাথাটা জেগে উঠে ...

অবাক হন না বাবা ...

জানতেন, অবহেলার শোধ নেয়া হবে ...

বেশীরভাগ সময় ,হাসপাতালের পথেই চোখ বন্ধ করেন বাবা, আর না হলে আইসিইউতে নিভে যায় সূর্যটা ...

কিছু না বুঝেই ...

.

মধ্যবিত্ত বাবাদের হয়তো বুঝতে হয় না ...

তাদের কাজ হল দিয়ে যাওয়া ... মধ্যবিত্ত বাবারা হলেন চলমান সুপার স্টোর। কামধেনুর জায়গায় বাবাদের বসিয়ে দিলেই হয় ...

.

মধ্যবিত্ত বাবারা সূর্য হন ...

রোদ দেন ...

আবার গাছকে টেনে তুলে ছায়া দেন, অক্সিজেন দেন।

আমরা সেই সূর্যের খেয়ে পড়ে চোখে একটা রোদচশমা লাগাই সূর্য থেকে পালাবার জন্য।

.

বোঝা যায় না ...

কিন্তু যেদিন দপ করে সূর্যটা নিভে যায়, সেদিন বোঝা যায় সূর্যগ্রহণ কাকে বলে ... !!!

বিষয়: বিবিধ

১৩২৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

341114
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
শেখের পোলা লিখেছেন : মর্মস্পর্শী ও সত্য কথন৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File