স্কুলে সেইদিন কি সত্যিই নীচে ছিলাম...?

লিখেছেন লিখেছেন পুরনো স্মৃতি আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪১:০৩ সকাল

।।এক।।

Benchএর ওপর দাঁড়িয়েছিলাম। High bench, কান ধরে। ইতিহাস ক্লাসে দু'বার পড়া না পারার শাস্তি! বাকিরা কেউ বসে, কেউ low benchএ আর গুটিকতক আমার মতই!

এতোটা উঁচুতে দাঁড়িয়েও নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হচ্ছিল। অনেকটা তলায়, বড্ড নীচুতে...

তৃতীয়বার না পারলে পিটুনি আছে কপালে! সম্রাট অশোকের সেনাবাহিনীর মত প্রশ্ন আমার কাছে আছড়ে পড়ার আগেই হঠাৎ ভাগ্য সদয় হল... ঘন্টা পড়ে গেছে, টিফিনের!

স্যার ক্লাস ছেড়ে চলে গেলে আমরাও হাঁফ ছেড়ে ভয়, দুঃখ, tension ভুলে হৈ হৈ করে বেরিয়ে পড়লাম!

তবে কোথাও মনের ভেতরে একটা খচখচানি থেকে গেল, high benchএ দাঁড়ানোর অপমান!

যাইহোক, স্কুল ক্যান্টিনের লুচি আলুরদমের পর আচারওলা কাকুর তেঁতুলের আচার আর currentনুনে জ্বালাটা খানিকটা জুড়লো। মানে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে আক্ষরিক ঐতিহ্য রাখতে সক্ষম হল না! তারপর খোলা মাঠে দৌড়, কাগজের বল, চোর পুলিশ...

এভাবেই হাসি, মজা, book cricket, pen football, কিছুটা পড়াশুনো, কিছুটা গল্প আর কল্পনার আঁকিবুকি তে ছুটির যবনিকা উঠত!

ঘুড়ি, মাঞ্জা, লাটাই এর বিকেল,

কাদায় জড়ানো ফুটবল,

চটি,জুতো ঘেরা ক্রিকেটের বাউন্ডারি,

"এক ড্রপে বাইরে" আউট হলে "জোরে, নো-বল!" এর বাওয়াল,

খেলা শেষে ঘেমে নেয়ে টিউবওয়েলের পাড়ে ভিড়,

ধুয়ে ফেলা ধুলো-কাদা, ধুয়ে ফেলা ক্লান্তির ঘাম, ঠান্ডা জলের ঝাপ্টায়, সাঁঝবাতি, লোডশেডিং, হ্যারিকেনের আলো আর অংকের মারপ্যাঁচে সন্ধ্যের romanticism জাহির করত নিজের অস্তিত্ব।

তারপর কখন তারার রাত মশারির ঘেরাটোপে স্বপ্নের নক্সীকাঁথা বুনতে বুনতে পাড়ি দিত ঘুমের দেশে, খেয়াল করিনি কখনও...

গরমের ছুটির অলস দুপুরগুলো কুনো ব্যাঙের পৌষ্টিকতন্ত্র আঁকায়,

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ জানার অনাগ্রহে,

বৈচিত্রময় ভারতবর্ষের প্রতিবেশীদের বর্ণনা খোঁজার আলসেমিতে আর

গল্পের বইয়ের রোমাঞ্চে...

রোদ পড়ার অপেক্ষায় সময় গুনত।

ঘড়ির কাঁটাও কি আলসেমীর শিকার ছিল?

ঘুম থেকে টেনে তোলা কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের সকাল ছিল,

পরীক্ষার tension,

নতুন বইএর গন্ধ,

খাতার পিছনে অবান্তর আঁকিবুকি,

দোকান শেষে আট আনার ঝালমটর,

জমানো পোস্টকার্ড,

গান, কবিতা, নাটক, rehearsal,

ছোট ছোট অনুভুতি,

মনের গভীর থেকে আসা হাসি, দুঃখ, অভিমান,

ছিল প্রথম বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ,

জমা জলে কাগজের নৌকো,

উনুনের ধোঁয়া, Pencilbox, জলছবি...

কিছু ইচ্ছে ছিল, যেগুলো কথা হয়ে ঠোঁটের বাইরে আসেনি কখনও...

... আর ছিল মন কেমনের কল্পনারা,

যারা স্বপ্ন বুনতে শিখিয়েছিল...

।।দুই।।

অফিসের Cafeteriaতে দাঁড়িয়েছিলাম। একাই। বাইরে বৃষ্টি। Annual appraisal discussion এর পর।

আভাস পাওয়া গেল সারা বছরের পরিশ্রমের result কেমন হতে চলেছে, তার। মাইনে বাড়বে কিনা, তার।

Mechanical হাসি হেসে বস জানালেন, এবারেও ভাল rating দেওয়া যাচ্ছেনা! Up to the mark কাজ হয়নি, শুধু technical কাজ, code করলেই হয়না functional হতে হয়, business বুঝতে হয়, innovative idea দিতে পারিনি, ইত্যাদি ইত্যাদি...

হাল্কা প্রলেপ হিসেবে বোঝালেন তাছাড়া Corporate থেকে নাকি ঝামেলা করেছে, ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই (গতবারের সংলাপটা মনে আছে এখনো?)!

তবে দেখলাম projectএ একদম নতুন join করা ফর্সা মত মেয়েটি বেশ খুশি। আর যে ছেলেটি রোজ বিকেলে মুড়ি তেলেভাজা নিয়ে আসে বসের জন্যে, যার গুনে production issue সামলাতে আমি সারারাত অফিসে ছিলাম, তাকেও তো অখুশি মনে হলোনা..!

...কে জানে সত্যিই হয়ত "business"টা বুঝতে পারিনি..!

বৃষ্টিটা বেশ জোরে নামল। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। আমার আর বৃষ্টি, প্যাচপ্যাচে কাদা, রাস্তায় জমা জল, ভাল লাগে না...

জীবনপ্রবাহের অমোঘ নিয়মে সময়টা পালটে গেছে হয়তো...

এটা 8th floor এর cafeteria। এতোটা উঁচুতে দাঁড়িয়েও নিজেকে আবারও ভীষণ ছোট মনে হল। অনেকটা তলায়, বড্ড নীচুতে...

...স্কুলে সেইদিন কি সত্যিই নীচে ছিলাম...?

...মনে হল একটু উঁচুতে উঠতে পারতাম, যদি একটা high bench থাকত সামনে!

যদি সত্যি করে "ছোট" হতে পারতাম...

আরেকবার যদি high benchএ উঠে দাঁড়াতে পারতাম... কান ধরেই হোক...আরেকবার যদি উঠে দাঁড়াতে পারতাম...

বিষয়: বিবিধ

৯৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File