শোকরানা সমাবেশ,মোসাহাফা ও মন্তব্যের সতর্কতা।
লিখেছেন লিখেছেন শেখ জাহিদ ০৬ নভেম্বর, ২০১৮, ০১:১৭:২৩ রাত
এক.সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্টিত ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’আয়োজিত ‘শুকরানা মাহফিল’কে কেন্দ্র করে স্যোসাল মিডিয়ায় এখন পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।কেউ কেউ খুবই নির্দয় ভাবে সমালোচনার হাতুড়িপেটা চালাচ্ছেন যাতে কওমী শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটছে।
কওমী সনদের স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সম্বর্ধনা দেয়া হবে বলে কয়েকদিন থেকে মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল।কিন্তু অনেকের সমালোচনা ও নিজেদের মাঝে মতপার্থক্যের মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত তা 'সম্বর্ধনা'র পরিবর্তে 'শোকরানা মাহফিল' নামে বাস্তবায়িত হয়।কল্যাণকর কিছু হাসিল করার পর শোকরিয়া আদায় করা এটা শিষ্টাচারের অংশ।যেহেতু কওমী সনদের স্বীকৃতি পাওয়া ছিল কওমী শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য বড় রকমের আবেগ ও খুশীর বিষয়,তাই এই প্রাপ্তিতে তাঁদের শোকরিয়া মাহফিল করা কোন দোষনীয় কাজ নয়।আর সনদের কাঙ্খিত মান দেয়ায় সে মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করা হয়।অবশ্য সম্পূর্ণ আয়োজন ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অাসা-যাওয়ার খরচের সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে অনকেই মনে করেন।সরকারের পক্ষ থেকে শাপলা চত্বরে ভয়াবহ তান্ডবের দরুণ কওমী মহলে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, সনদের স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা তা ভূলিহয়ে দিতে সক্ষম হন।এটা তাঁর রাজনৈতিক বিরাট সফলতা।রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এখানেই শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার পার্থক্য।৪দলীয় জোটের অংশীদার থাকার পরও যেখানে খালেদা জিয়া ইসলামপন্হীদের মন জয় করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছেন,চরম অাঘাত দেয়ার পরও সেখানে শেখ হাসিনা অনেকাংশে সফল।অবশ্য এই সফলতা নির্বাচনী মাঠে খুব একটা ফল দেবেনা।
দুই.বাংলাদেশের খ্যাতিমান ও শ্রদ্ধাভাজন আলেমগনের মধ্যে আল্লামা আহমদ শফি হাফেজাহুল্লাহ অন্যতম। শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তাঁর 'অনাকাঙ্ক্ষিত মুসাহাফা'কে কেন্দ্র করে কেউ কেউ যে অশালীন ও বিরুপ মন্তব্য করছেন তা চরম শিষ্টাচার বহির্ভূত।যে কোন কারণেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন আলেমকে নিয়ে এরুপ নীচু মানের মন্তব্য করা অনুচিৎ।অবশ্য একজন মহিলার সাথে এমন উঁচু মানের একজন আলেম এর হাজার হাজার ওলামা-মাশায়েখের সম্মূখে মোসাহাফা করায় মন্তব্যকারীরা বিক্ষোব্ধ হয়েছেন।আমি মোবাইলে অনুষ্টানের লাইভের কিছু অংশ এবং পরবর্তীতে মোসাহাফার ভিডিও ক্লিপটি দেখেছি।সেখানে আল্লামা শফি সাহেবকে অনুষ্টানে বেশ মাজুর হিসেবে প্রায় নিদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী যখন ষ্টেইজের পেছন সারির নেতৃবৃন্দের সাথে কোশল বিনিময় করে অাল্লামা শফি সাহেবের পাশে আসেন তখন আরেকজন তাঁর কাছে গিয়ে কিছু বললে তিনি অপ্রস্তুত ভাবে হাত সামান্য বাড়িয়ে দিলে সাথে সাথেই কৌশলী প্রধানমন্ত্রী তখন 'সুযোগের সদব্যবহার' করে নির্বাচনী 'ফয়েজ' হাসিলের চেষ্টা করেন।আল্লামা শফি সাহেবের মতো একজন বিজ্ঞ আলেম 'হুস-বুদ্ধিতে' এমন কাজ করবেন বলে আমি মনে করিনা।
ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও দলকে নিয়ে কওমীপন্থীদের ইতোপূর্বে দেয়া 'বেফাস ফতোয়ার' প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিক্ষোব্ধরা এখন ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ নিচ্ছেন,যদিও তা মোটেও কাম্য নয়। অবশ্য শোকরানা মাহফিলে অনেক আলেমের বক্তব্য ছিল অনভিপ্রেত ও অধিক তৈলাক্ত।মাওলানা রুহুল আমিন শেখ হাসিনাকে ‘কওমী জননী’ উপাধি না দিয়ে যদি আল্লামা শফি সাহেবকে "কওমীর জনক" উপাধি দিতেন তা হলে হয়তো কিছুটা গ্রহণযোগ্য হত।
এ বিষয়ে একজন মন্তব্য করেছেন,"মাওলানা রুহুল আমীনের পিতা মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্পূর্ণ বিপরীত উপাধি দিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া নির্বাচনী আসন থেকে ইলেকশন করার সময় শামসুল হক ফরিদপুরী এবং পীর ও মাওলানাদের বিরোধিতার বিবরণ দিতে গিয়ে শেখ সাহেব লিখছেন,
‘‘মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব ও মুসলিম লীগ যখন দেখতে পারলেন তাদের অবস্থা ভাল না, তখন এক দাবার ঘুটি চাললেন। অনেক বড় বড় আলেম, পীর ও মওলানা সাহেবদের হাজির করলেন। গোপালগঞ্জে আমার নিজের ইউনিয়নে পূর্ব বাংলার এক বিখ্যাত আলেম মওলানা শামসুল হক সাহেব জন্মগ্রহণ করেছেন। আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে খুবই শ্রদ্ধা করতাম। তিনি ধর্ম সম্বন্ধে যথেষ্ঠ জ্ঞান রাখেন। আমার ধারণা ছিল, মওলানা সাহেব আমার বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। কিন্তু এর মধ্যে তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করলেন এবং আমার বিরুদ্ধে ইলেকশনে নেমে পড়লেন। ঐ অঞ্চলের মুসলমান জনসাধারণ তাঁকে খুবই ভক্তি করত। মওলানা সাহেব ইউনিয়নের পর ইউনিয়নে স্পিডবোট নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন এবং এক ধর্মসভা থেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, ‘আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে’। সাথে শর্ষিনার পীর সাহেব, বরগুনার পীর সাহেব, শিবপুরের পীর সাহেব, রহমতপুরের শাহ সাহেব সকলেই আমার বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন এবং যত রকম ফতোয়া দেওয়া যায় তাহা দিতে কৃপণতা করলেন না। দুই চারজন ছাড়া প্রায় সকল মওলানা, মৌলভী সাহেবরা এবং তাদের তালবেলেমরা নেমে পড়ল।’’ (শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনায়: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, জুন ২০১২, পৃষ্ঠা নং- ২৫৬)"।
শোকরানা মাহফিলে কারো কারো বক্তব্য ছিল বিদ্বেষপূর্ণ।সেখানেও তাঁরা তাদের চিরাচরিত অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি।
তিন.এদেশে যারা ইসলামের জন্য বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন,তাঁদের একের অন্যের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ ও গভীর ভালবাসা থাকা অাবশ্যক।যে কোন বিষয়ে একে অন্যের প্রতি এমন কোন কটুক্তি,কাঁদা ছোড়াছুড়ি বা অশালীন সমন্তব্য করা সমীচিন নয়-যাতে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অান্তরিকতা বিনষ্ট হয় এবং ইসলাম বিরোধীরা আনন্দিত হয়। এ ব্যাপারে বেশী দায়িত্ব বর্তায় যারা এদেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ইসলামী দলের কর্মি হিসেবে নিজেদেরকে গর্বভরে দাবী করেন।জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি অনেকেই বুঝে-না বুঝে বিভিন্ন সময়ে কটুক্তি ও ফতোয়াবাজী করলেও জামায়াত-শিবিরের কোন নেতৃবৃন্দ কোন দিন কোন ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও দলের বিরুদ্ধে কখনো বিরুপ বা অসম্মান জনক মন্তব্য করার কোন রেকর্ড নেই।এ বিষয়টি জনশক্তিকে সামনে রাখতে হবে।এবং আবেগের ঘোড়াকে বিবেকের লাগাম দিয়ে কন্ট্রোল রাখতে হবে। ইসলামী আদর্শবাদী দলের কর্মি হিসেবে অন্যান্য ইসলামী ব্যক্তি,দল ও প্রতিষ্টানের সাথে যাতে সম্পর্কের অবনতি না হয়ে বরং সু-সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় এ ব্যাপারে সচেতন ও তৎপর থাকা জরুরী।
অামাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্টায় আল্লাহ যেন সকল ইসলামী মহলকে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করার তৌফিক দান করেন।আমীন!
বিষয়: বিবিধ
৮৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন