"জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান"
লিখেছেন লিখেছেন শেখ জাহিদ ২৪ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:২২:৫৪ রাত
জ্ঞান অর্জন না করে নিজেকে জানা য ায় না, সৃষ্টিতত্ত্ব বোঝা যায় না, আল্লাহকে চেনা যায় না, ক্ষমতাধর হওয়া এবং নেতৃত্বও দেয়া যায় না।
ইকরা’ অথাত্ ‘পড়’। ‘পড় তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃ ষ্টি করেছেন। এ পড়ার মূল কথা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের সব শাখায় বিচরণ এবং মাতৃভাষায় জ্ঞানার্জন।
খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী নাগাদ জ্ঞান- বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলমানেরা ছিল সর্বে সর্বা। আল কুরআনের পাশাপাশি তারা জ্ঞান- বিজ্ঞান বিষয়ক সকল প্রকার বই পড়েছেন, গবেষণা করেছেন। তারা মহান আলস্নাহর সৃষ্ট প্রকৃতির নির্দশনাবলীর ওপর গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করেছেন। আত্মশুদ্ধি ঘটিয়েছেন। কুরআন ও অন্য যাবতীয় জ্ঞান- বিজ্ঞানের বই পড়েছেন। হিকমত অর্থাত্ বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইবনে আল হাইসাম ছিলেন সর্বকালের সর্ব শ্র্রেষ্ঠ একজন পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনিই সর্বপ্রথম প্রদান করেন জড়তত্ত্ব ও আলোর প্রতিসরণ তত্ত্ব। পরবর্তীতে যা নিউটনের হাতে পুনরাবিষ্কৃত হয়। জাবির বিন হাইয়ান রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি রচনা করেন। চিকিত্সা বিজ্ঞানে ইবনে সিনা, জাবির হাসান বিন হাইয়ান, আল রাযীর নাম উলেস্নখযোগ্য। তাদের লিখিত বইয়ের ল্যাটিন অনুবাদ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল। কম্পিউটারের আবিষ্ড়্গার কিন্তু অঙ্ক শাস্ত্রনির্ভর। বস্তুর ‘সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ’ আল খাওয়ারেযমীই প্রথম প্রণয়ন করেছিলেন। নিউটনের বহু আগেই কবি ওমর খৈয়াম ‘বাইনোমিয়াল থিউরাম’ আবিষ্ড়্গার করেন। পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ মানচিত্র প্রণয়ন করেন মুসলিম ভূগোলবিদ ইবনে হাক্কল। আল ফারাবি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ও দার্শনিক। তিনি ৭০টি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। আল বিরুনি (প্রসিদ্ধ গ্রন্থ কিতাব আল হিন্দ), ইবনে বতুতা প্রমুখ মুসলিম মনীষী ভূবিদ্যার প্রসারে অনেক অবদান রাখেন। ইবনে খালদুনকে বলা হয় ইতিহাস, দর্শন ও সমাজ বিজ্ঞানের জনক। বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন ইবনে জাবির তাবারি। ‘তারিখ আল রাসূল ওয়া আল মুলুক’ তার এ গ্রন্থটি সারাবিশ্বে রেফারেন্স হিসেবে পঠিত হচ্ছে। আল ফিন্দি গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, চিকিত্সা বিজ্ঞানের ৩৬৯টি গ্রন্থ রচনা করেন। অতীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান- প্রযুক্তিতেই নয়; বরং ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কল- কারখানাতেও মুসলমানদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আব্বাসীয় খলিফা মামুন বাগদাদে ‘দারম্নল হিকমাহ’ নামে যে বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন তাতে সে যুগেই প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল।
’ ‘The Bible, the Quran and Science’ গ্রন্থে ড• মরিস বুকাইলী উল্লেখ করেন, ‘অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে ইসলাম জ্ঞান- বিজ্ঞানকে অনেক ঊর্ধে তুলে ধরে। যখন খ্রিষ্টীয় জগতে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বহুসংখ্যক গবেষণা ও আবিষ্ড়্গার সাধিত হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রীক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা ইউরোপ থেকে পণ্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন, যেমন আজকের দুনিয়ায় মানুষ তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতার জন্য আমেরিকা যায়। ‘ইসলাম ও আরবি সভ্যতার ইতিহাস’ বইতে ওস্তাভলি বোঁ লিখেছেন, ‘ইউরোপে যখন বই ও পাঠাগারের কোন অস্তিত্ব ছিল না, অনেক মুসলিম দেশে তখন প্রচুর বই ও পাঠাগার ছিল। সত্যিকার অর্থে বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমাহ,য় ৪০ লক্ষ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লক্ষ, সিরিয়ার ত্রিপোলী পাঠাগারে ৩০ লক্ষ বই ছিল। অপরদিকে মুসলমানদের সময়ে কেবল স্পেনেই প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার বই প্রকাশিত হতো। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতে বইয়ের কদর নেই, বই প্রকাশের বিষয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপ্রতুল। ইউরোপের একটি ক্ষুদ্র দেশ গ্রিসে বছরে ৫০০টির মতো বই অনুবাদ করে থাকে। মুসলমানদের অতীত ইতিহাস বই পড়ার ইতিহাস। জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস। অতীত ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়ে জ্ঞান- বিজ্ঞানে পুনরায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য আজ সারাবিশ্বের মুসলমানদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। কারণ আল কুরআনে বার বার জ্ঞান চর্চার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই মুসলমানদের জন্য জরুরি ধর্মীয় জ্ঞানের সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ ব্যবহারিক জীবনের যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করা, জ্ঞান- বিজ্ঞানের বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত হওয়া !
বিষয়: বিবিধ
১১০৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেলফি আসার ফলে ছবি তোলার হার আগের চেয়ে ১০০০০ গুন বেড়ে গেছে।
এর কোনই ভাল দিক নেই , বরং বিপদে বা ঝামেলায় পড়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন