নেতা তুমি. . . .

লিখেছেন লিখেছেন আধার রাতের মুছাফির ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:০৬:২৪ রাত



পরিবার সমাজ তথা দেশ, সব জায়গাতে যে নিতৃত্ব প্রয়োজন সে কথা সর্বোজন স্বীকৃত।এগুলোর স্হায়ীত্ব কিংবা সুর্ন্দয্য নির্ভর করে নেতৃত্বের গুনাবলির উপর। যদিও ইবনে খালদুনের মতে কোন বংশ, রাজ্য সর্বোচ্চ টিকে থাকে একশত বছর। কিন্তু ইতিহাস মাঝে মাঝে ভিন্ন কথা বলে। যেমন পালবংশ, মোঘলবংশ ছাড়াও আছে স্পেনের মুসলমানদের সাড়ে সাতশত বছর শাষনের অভিজ্ঞতা। যাইহোক সমাজের এই নেতা বা দায়িত্বশীল যদি শুধু বাস্তব অভিজ্ঞতা কিংবা দুনিয়াবি যোঞ্জতার মানদন্ডে নির্মিত হয় তাহলে ভূল হবে। ইতিহাস তার বাস্তব সাক্ষি। আসুন শুধু অন্ধ বিশ্বাসের উপর নয় তথ্য ও প্রমান সহ দেখার চেষ্ঠা করি। পৃথিবীতে অনেক বাহ্যিক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা ছিল কিন্তু তাদের দ্বারা এমন কিছু কাজ হয়েছে যা ইতিহাম তাদের কখনও ক্ষমা করবে কিনা আমার জানা নাই। আসুন নিকট অতিতের কিছু বাস্তব সাক্ষী দেখার চেষ্ঠা করি…………..



• ৭১৫-১৬ সালে মুসলিম বিশ্বের খলিফা ছিলেন সোলাইমান। সেই সময় মাত্র সাতহাজার সৈন্য নিয়ে সিন্ধু বিজয় করে ইতহাস খ্যাত মোহাম্মাদ বিন কাসিম। মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে সেখানের অধিকাংশ এলাকা বিজয় করে। ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে তাকে ডাকা হয়।তাকে যখন নিয়ে যাওয়া হয় তিনি জানতেন তাকে হত্যা করা হবে।কিন্তু তিনি বলোছিলেন আমাকে হত্যা করা হবে হোক কিন্তু আমি চাইনা আমি খলিফার আদেশ অমান্য করে এখানে বিদ্রোহ করি। আর সারা মুসলিম জাহানে রক্তের বন্যা বয়ে যাক। আমার রক্তের বিনিময়ে যদি হাজারো মানুষের জীবন রক্ষা পায় তাহলে আমি গর্বিত আর যদি আমার হত্যা অন্যায় হয় তাহলে আমার মৃত্যুর পরে মানুষ এর পরিনতি দেখতে পাবে। লক্ষ রাখা দরকার আমরা যারা আজ ক্ষুদ্র পরিসরে নেতা হয়ে অনেক কিছু মনে করছি। মোহাম্মাদ বিন কসিম সিন্ধু থেকে যাওয়ার আগে তার কাছে আশি হাজার সৈন্য ছিল। তিনি পারতেন অনেক কিছুই করতে।



যাই হোক মূলকথায় আসা যাক। খলিফা সোলায়মান কিন্তু বাস্তবিক যোগ্যতা সম্পন্ন ছিল কিন্তু ইসলামী বিশ্বে নেতা হওয়ার মত গুনাবলি তার ছিল না। তাই না হলে তরুন নেতা মোহাম্মাদ বিন কাসিম কে ছোটবেলায় যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার অহেতুক কারনে হত্যা করাটা নিশ্চিত প্রতিশোধ ছাড়া আর কিছুই নয়।

• ৭৯১ সালে খলিফা ছিলেন আব্বাসীয় খেলাফাতের নামকরা নেতা হারুন আর রশিদ। সে যুগের অধ্যত্বিক বা সর্বোশ্রেষ্ঠ সাধু পুরুষ ছিল আলী (রাঃ) এর বংশধর মূসা আল কাজিম। শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দী হতে পারে এ আশংখায় তাকে বন্দি করে এবং আট বছর আটক রাখার পরে তার মৃত্যু হয়। আমরা জানি ইতিহাস খলিফা হারুন আর রশিদ কে অনেক উচ্চমাপের জানলেও ইসলামের ইতিহাস তাকে কতটুকু নেতা মনে করে সেটা যুগের প্রশ্ন।

• ৬৯২ সালে উমাইয়া বংসের খলিফা আব্দুল মালেক। ইরাকের গভনর ছিলেন নামকরা বিজিতা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। সে সময় মক্কা মদিনার শাষনভার ছিল আবু বকর (রাঃ) এর কন্যার ছেলে ইবনে যুবাইর এর কাছে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ মক্কা মদিনা অবোরধ করে প্রায় একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং আব্দুল্যা বিন যুবায়ের এর খন্ডিত মস্তক মদিনাতে প্রদর্শিত করেন।

শুধু তাই নয় আছমা (রাঃ) কে অসম্মান করতেও ক্ষ্যান্ত হয় নি। কিন্তু ইতিহাস সবসময় বিজয়ীদের পক্ষে কথা বলে। তাই হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কৃর্তি ইতিহাসেকে সমৃদ্ধ করেছে।

• এখন আসাযাক চার ইমামের জীবনীর দিকে। চার ইমামের উপর অত্যাচারের কথা আমরা সবাই জনি। আরেক খলিফা জাফরের শষন আমলে ইমাম আবু হানিফাকে চাবুক মেরে, নজর বন্দিকরে, কারো কারো মতে বিষপানে হত্যা করা হয়। অতপর ইমাম মলেক থেকে হাম্বলি সবাই কিন্তু আমাদের নামকরা শষনকর্ত্য্ দ্বারা নির্য্যতনের স্বীকার হয়ে মারা যান। পৃথিবীর ইতিহাস স্বাক্ষী দুনিয়াবী যোগ্যতা যখন ইসলামী আন্দলোনরে দায়িত্বশীল নির্বাচনের জন্য প্রধান হয়ে দাড়ায় তখন ইসলামী আন্দোলন ক্ষতির সম্মুখিন হয়। তাছাড়া জাতীয়তাবাদ ইসলামী আন্দোলনের জন্য মারাত্বক ব্যাধি। ছোট্ট একটা উদহরন দেয়া যাকঃ আব্বাসীয় খেলাফাতের শেষের দিকের খলিফা ছিলেন মুতাসিম। তার সেনাবাহিনীতে তুর্কি সেনাদের অনেকবেশি অগ্রাধিকার দেয়ার কারেনে সেনাবাহিনী তুর্কিদের দখলে চলে যায়। পরবর্তিতে খলিফা রাজধানী স্থান্ন্তর করেও সমাস্যা কাটেনি যার ফলে তার পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারন হল এই তুর্কি সেনাবাহিনী।

সুতরাং দায়িত্বশীল যারা নির্বাচন করেন তাদের মনে রাখা আসু প্রয়োজন যে-

 আমরা যেন দায়িত্বশীল নির্বাচনের জন্য শূধু বাহ্যিক গুনাবলির দিকে না তাকাই। কারন শুধু রাজনৈতিক গুনাবলি দিয়ে আমরা নেতা হতে পারি কিন্তু তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অনেক বড় ক্ষতির। এইসব গুনাবলি দিয়ে দায়িত্বশীল হওয়া যায় তবে সেটা আর ইসলামী আন্দোলন থাকবে না। সেটা হবে ………

 পয়োজনে তার সাথে পরিকল্পিতভাবে সময় দিয়ে তার মোহামেলাত, তাকওয়া ও আমানাতদারিতার দিকে লক্ষ রাখি।

 সংবিধানের দায়িত্বশীল নির্বাচনের ধারার দিকে তাকালে দেখতে পাবো, সেখানে প্রথমত কিন্তু বাহ্যিক গুনাবলির দিকের গুনাবলির কথা বলা হয়নি।

সুতরাং শুধু আবেগের বসে যদি নেতা নির্বাচন করা হয় তবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেই পরিবার, সেই সমাজ, সেই দল, সেই রাষ্ট্র।পরিশেষে বলতে চাই বিখ্যাত ইতিহাস-রচয়িতা Sir William Muir রাসুল (সHappy এর ইতিহাস লিখতে গিয়ে উল্লেখ করেন,

"Our authorities all agree in ascribing to the youth of Muhammad a modesty of deportment and purity of manners rare among the Makkans …….. Endowed with a refined mind and delicate taste, reserved and meditative, he lived much within himself, and the pondering of his heart no doubt supplied occupation for leisure hours spent by others of a low stamp in rude sports and profligacy. The fair character and honourable bearings of the unobtrusive youth won the approbation of his fellow-citizens: and by common consent he received the title of al-Amin the Faithful"



এখন কথা হল এই খ্যাতি রাসুল (সHappy নিশ্চয় ঘরে বসে পান নাই বরং সে খ্যাতি অর্জনে তিনি মানুষের সাথে উঠা বসা চলা ফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন দেন ও তার উত্তম চারিত্রিক ব্যবহারের মধ্যমে সমাজে রোল মডেল হিসাবে খ্যাতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন । তারপর মোহাম্মদ (সHappy বয়স ৪০ বৎসর অতিক্রম হওয়ার পরই আল্লাহ তাঁকে রাসুল হিসাবে ইসলামের আদর্শ প্রচারের দায়িত্ব দেন। তাই দায়িত্বশীল নির্বাচনে বয়সের একট ব্যাপারতো আছেই যদিও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)অনেক কম বয়সে আধুনিক মন্ত্রি হওয়ার যোগ্য ছিলেন।

তাই চাওয়া হোকঃ দায়িত্বশীল হবে আমাদের প্রেরনা, আমাদের আদর্শের বাতিঘর। পাবো কি আমরা সেই আদর্শের আর অনুপ্রেরনার জায়গা? যেখানে কষ্ঠগুলো অকুন্ঠচিত্যে শেয়ার করা যায়। অপ্রত্যাসিত নয় প্রত্যাসিত বিপ্লবের স্বপ্নে হোক আগামিসর যাত্রা।



বিষয়: বিবিধ

১৪১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File