ফাইটার মোহাম্মদ আলী স্মরণে--

লিখেছেন লিখেছেন রফিক খন্দকার ০৬ জুন, ২০১৬, ০২:৫৩:১৮ রাত

"সর্বকালের সেরা" বক্সার মোহাম্মদ আলীর স্মরণে--





মোহাম্মদ আলী। একজন লিজেন্ড, একজন ফাইটার এর নাম। যিনি বক্সিং জগতে সবাইকে ছাড়িয়ে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌছাতে পেরেছিলেন কবেই। তবে তার এই সাফল্যের চুড়ায় আহরণ যে খুব সহজ ছিল সেটা বললে হয়ত ভুল বিচার করা হবে।

শ্বেতাঙ্গ মা আর কৃষ্ণাঙ্গ বাবার ঘরে আমেরিকার ক্যান্টাকিতে আলীর জন্ম হয় ১৯৪২ সালে। রং মিস্ত্রি বাবা আর গৃহিণী মায়ের সন্তান মোহাম্মদ আলীর নাম কিন্তু সেটা ছিল না। তার আসল নাম ছিল 'ক্যাসিয়াস ক্লে'।

১২ বছর বয়সী এই 'ক্যাসিয়াস ক্লে' কে একজন সাইকেল চোরের সাথে মারপিট করতে দেখেন এক পুলিশ অফিসার। সেই পুলিশ অফিসার জাত সোনা চিনতে পেরেছিল সেদিন।অফিসার তাই উদ্বুদ্ধ করেন কাসিয়াস ক্লে কে বক্সিং শিখতে। তারপর থেকে বাকিটা ইতিহাস।

প্রচণ্ড আত্মমরযদাশীল এই মানুষটি সহজে মাথা নিচু করেন নি কারো কাছে। সে কারনেই বোধ হয় বাসন মাজা আর ঝাড়ু দেবার কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তার প্রশিক্ষক আর্চি মুরকে ত্যাগ করতে দ্বিতীয়বার ভাবেন নি ক্লে। ১৯৬৬সালে আমেরিকান সরকার তাকে জোর করে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে বাধ্য করতে চেয়েছিল, কিন্তু থোরাই কেয়ার করেছেন মোহাম্মদ আলী। সরাসরি অস্বীকার করে বসেন আলী। কারন আলী বিশ্বাস করতে কোন ধর্ম কোন নবী যুদ্ধ সমর্থন করে না। এই যুদ্ধে যাবার অস্বীকৃতির কারনে তৎকালীন সরকার তাকে ৩ বছর খেলতে দেয়নি এবং শিরোপা কেড়ে নিয়েছিল। ১৯৭০ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আবার লড়াইয়ের জন্য রিং এ ফিরে আসেন।

সেই সময় আমেরিকান সমাজে বর্ণ বৈষম্য তো ছিলই সাথে ছিল ধর্মীয় বৈষম্যের নোংরা রূপ। কিন্তু আলী এইসব বৈষম্য কে শুধুমাত্র একটি ঘুষি দিয়েই উড়িয়ে দিলেন। বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। ১৯৭৫ সালে নেশন অফ মুসলিম এর প্রধান ডব্লু. ডি. মুহাম্মদ এর সহায়তায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হলেন। আর নাম নিলেন "মোহাম্মদ আলী"

দীর্ঘ দিন ধরেই বর্ণ বৈষম্য এর বিরুদ্ধ লড়ে আসছেন নেলসন ম্যান্ডেলা, মারটিন লুথার কিং সহ অনেক মহান মানুষেরা। কিন্তু আলী একধাপ এগিয়ে এসে লড়াই টা করলেন। তিনি একই সাথে বর্ণ এবং ধর্ম বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন। যা কেউ করেনি আগে।

মোহাম্মদ আলী তার জীবনে ৬১ টি খেলার মাঝে জিতেছেন ৫৬ টি খেলায়। এ ছিল তার জীবনে অভাবনীয় এক সাফল্য। তার একটি মজার কৌশল ছিল যা সহজেই প্রতিপক্ষ কে ঘায়েল করে দিত। প্রতিপক্ষকে কথার মাধ্যমেই এক রকম হারিয়ে দিতেন আলী। কোন পাত্তাই দিতেন না। যার ফলে প্রতিপক্ষ আগেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যেত অথবা অতিমাত্রায় রেগে গিয়ে ভুল চালে খেলত। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতেন আলী।

একটি বিদেশী সংস্থার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন আলী ১৯৭৮ সালে, সাথে তার পুরো পরিবার। একরকম প্রেমে পড়ে যান এই দেশের সোঁদা মাটির গন্ধে। উষ্ণ আভ্যারথনা আর আতিথেয়তায় মুগ্ধ আলী সে কারনেই হয়ত বলেছিলেন, পৃথিবী তে সুখি মানুষের দেশ দেখতে চাইলে বাংলাদেশে যাও।

একটা বিষয় আমি গভীর ভাবে লক্ষ করি। মোহাম্মদ আলীর প্রায় প্রতিটি ছবিতেই দেখা যায় যে তার মুষ্টিবদ্ধ হাত বা ঘুষি পাকিয়ে থাকে সামনের দিকে। এর কি কারন থাকতে পারে? আলী নিজেকে একজন বক্সার হিসেবেই প্রকাশ করতে চান তার জন্য ? না কি অন্য কোন কারন আছে? প্রায় সব মানুষই হয়ত প্রথম কথাটির সাথে একমত হবে। সবাই বলবে হা উনি একজন বক্সার তাই সেটা প্রকাশ করার জন্য উনি ঘুষি পাকিয়ে ছবি তোলেন।

আমি এই কথায় বিশ্বাসী নই। আলী তার এই ঘুষি অন্য অর্থে ব্যাবহার করেছেন। এইটাই আলীর প্রতিবাদের চিন্হ। সমস্ত বর্ণবাদ আর ধর্মীয় বৈষম্যের বিপরীতে আলীর এই ঘুষি অব্যাহত থাকবে। আলী সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন। আলী বলতে চেয়েছেন অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রয়োজনে চরম পন্থা অর্থাৎ ঘুষি মারতেই পিছিয়ে যেও না। দরকার হলে এই সব সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করতে হবে, সেটা রাষ্ট্র করুক আর জনগণ করুক। প্রতিবাদ চলুক।

মোহাম্মদ আলী শান্তিতে থাকুন আপনি , এই পৃথিবীর মানুষ আপনাকে সারাজীবন মনে রাখবে। আপনার চেতনা আমাদের প্রেরনা।

বিষয়: বিবিধ

১৫২৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371141
০৬ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
ফাইটার না লিখে বক্সার শব্দটি সঠিক হবে।
০৭ জুন ২০১৬ রাত ১১:২৩
308099
রফিক খন্দকার লিখেছেন : ধন্যবাদ, আমি সজ্ঞানে ফাইটার শব্দটি ইউজ করেছি। আমি তাকে ফাইটার হিসেবে মনে করি। শেষের অংশটি ভাল করে পড়লে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।
371189
০৬ জুন ২০১৬ রাত ০৯:৪৪
নিশা৩ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক।
371303
০৭ জুন ২০১৬ রাত ১১:২১
রফিক খন্দকার লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File