ইজতেমা বিষয়ক ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন রফিক খন্দকার ১১ জানুয়ারি, ২০১৬, ০১:৫৪:৫০ রাত
ইজতেমা শব্দের অর্থ হল সমাবেশ বা সম্মেলন। একটা বিশাল সংখ্যক একত্ববাদে বিশ্বাসী মানুষ ধর্মীয় উদ্দেশ্য এক জায়গায় সমাবেত হয়ে নিজেদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করে পালন করে এবং অন্যকেও পালন করতে সহায়তা করে এই ইজতেমার মাধ্যমেই।
ইজতেমা কে চার টুকরা করার পরে অর্থ হয়ত বদলায়নি কিন্তু বদলেছে চিরচেনা দৃশ্যপট। সারা দেশে তাবলীগ জামাতি বা ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের কাছে ইজতেমার সময়টা বিশাল একটা আনন্দের বা উৎসবের বাপারও বটে। এই শীতে সারা দেশের মানুষ অনেক খরচ করে কষ্ট করে ইজতেমায় এসে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়। ইমান কে মজবুত করে নেয়। এটা একটা তৃপ্তি একটা মানসিক প্রশান্তির ব্যাপার। বিশ্বাসীদের সাথে স্রষ্টার এক ধরনের কমিউনিকেশন এর ব্যাপার। একমুখী না দুইমুখি কমিউনিকেশন সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। এত এত মানুষের একসাথে স্রষ্টার দরবারে নিজের আর্তি জানানোর খুব একটা সুযোগ নেই।
ইজতেমার ধর্মীয় গুরুত্ত জেমন ব্যাপক তেমনি সামাজিক গুরুত্তও বিশাল। দেশী বিদেশী লাখোলাখো মানুষের মাঝে একটা নিস্পাপ সম্পর্কের সেতু বন্ধন করে এই ইজতেমা। জাগতিক লোভ লালসার বাইরেও যে একটা বিশাল জগত আছে সেটা সম্পর্কে উপলব্দি এবং লোভ লালসার বাইরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটা সংগবদ্ধ প্রচেস্টা এই ইজতেমা। ইজতেমার আগত মানুষ গুলি যদি একদিনের জন্য ও নিজেকে সমাজের বা বাক্তির অকল্যাণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে তবুও এই পৃথিবী একদিনের জন্যও তো শান্তিতে থাকল। সেটাই বা কম কিসে।
জাগতিক পৃথিবীর পুরনো একটা সুত্র হল যদি কোন শক্তি বা প্রচেষ্টা কে ধ্বংস করতে চাও তাহলে আগে তাকে বিভক্ত কর। বিভক্তি হচ্ছে দুর্বল আর নিষ্ক্রিয় করার বড় হাতিয়ার। এরপর তার সাথে নানা মতের মিশ্রন ঘটিয়ে দাও। আবার নানা মতের মিশ্রন নিজেও কোন কিছুকে বিভক্ত করতে কার্যকর অনুঘটকের কাজ করে। অনেক পুরনো যে প্রবাদ আমারা বলি " একতাই বল " এটিকে স্রেফ উল্টিয়ে দিন, কেল্লা ফতে। আমরা যত মতে বিভক্ত হব ততো বেশি দুর্বল আর অকার্যকর হব। এই তত্ব টি রাজনিতি, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মের ক্ষেত্রেও সমান কাজ করে। এই তত্ব অনুজায়ী কোন কিছুকে ধ্বংস করতে কোন অস্ত্র বা শক্তির প্রয়োজন হয় না, শুধু লাগে বুদ্ধি।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খুব বেশি ধর্ম কর্ম না করলেও প্রতিবারই ইজতেমায় অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করি। লাখো মানুষের ভিড়ে নিজেকে আবিষ্কার করতে কেন জানি ভালই লাগে। আমার কোন উদ্দেশ্য নেই নেই কোন অভিযোগ। চারিদিকের উৎসব মুখর পরিবেশ আমাকে টানে। মানুষ গুলো কি এক বিশ্বাসে দূর দুরান্ত থেকে হেটে যায় ইজতেমায়, আমিও হাটি যতক্ষণ পায়ে কুলায়। ওদের দলে নিজেকে ভিরিয়ে নেই। নিজেকে একজন সরল বিশ্বাসী হিসেবে ভাবি আবিষ্কার করি। এমনিতে আমার ক্রাউড ভাল লাগে না তবে এই ক্ষেত্রে খুব উপভোগ করি।
হ্যাঁ এবার আমার কাছে মনে হয়েছে ইজতেমাকে চার টুকরো করা হয়েছে সত্যি। একটার পর একটা ট্রেন চলছে না, ট্রেন সীমিত। উপচে পড়া ভিড় নেই আছে সমাগম। চারপাশের চিরচেনা উৎসবের আমেজ এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। আগের জৌলুশ এবার দেখলাম না। সব কিছুই কেমন যেন নিয়ন্ত্রিত, স্বতস্ফুরত না।
সময় বদলাবে, অসুরেরা পরাজিত হবে, মানুষের বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে, মানুষে মানুষে সম্পর্ক বাড়বে ইজতেমাও আগের মত জৌলুশ ফিরে পাবে। এর চেয়ে আর কি বা কামনা করতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন