আমার মা-- (ব্যাক্তিগত পোস্ট)

লিখেছেন লিখেছেন রফিক খন্দকার ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৪:৫৬ রাত

আজ আমার জীবনের একটা সবচেয়ে কঠিন বেদনার দিন, সবচাইতে কষ্টের দিন। গত ২০০৭ সালের এই ২৯ শে ডিসেম্বর আমার সর্ব শ্রেষ্ঠ সম্পদ আমাদের "মা" আমাদের ছেড়ে তারার দেশে স্থায়ী ভাবে চলে যান। তার এই চলে যাওয়াটা খুবই অনাকংখিত ছিল। বড় কোন রোগ বালাই ছিল না তার। তবুও উনি আজকের দিনে সামান্য একটু বুক ব্যাথা অনুভব করেছিলেন। আর এই ব্যাথা টাই উনার হৃদপিণ্ড টা বন্ধ করে দেয় মাত্র ২০ মিনিটের মাথায়। কোন ধরনের চিকিৎসার সুযোগ ও হয়নি আমাদের। খুব কম বয়সে তার এই চলে যাওয়া মেন নিতে পারিনি আমরা তার তিন সন্তান।

খুব সম্ভবত রাত ৮ টা ২০ মিনিটে আমি খবর পাই ফোনে। আমি কোনমতেই বিশ্বাস করতে পারি নাই, মনে হয়েছে আমি ভুল শুনেছি অথবা আমার ছোটভাই ভুল বলেছে। তখন এই ফোনটাকেই পৃথিবীর জঘন্য তম যন্ত্র মনে হয়েছিল আমার কাছে। বন্ধুর মোবাইলে ওয়েলকাম টিউন দেয়া প্রিয় গানটা তখন পৃথিবীর জঘন্যতম চিৎকার। তার শেষ বিদায়ে পাশে থাকার সুযোগ হয়নি আমার মত অধম সন্তানের। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ছিলাম বাড়ি থেকে, উত্তরবঙ্গের শীতে এই ডিসেম্বরের শেষে রাত ১২টার কিছু আগে বাসায় পৌছাতে পারি বন্ধুদের সহযোগিতায়। বাড়ির সামনে অনেক মানুষ আর ভেতরে কান্নার শব্দ। আমার কাছে পৃথিবীর ভয়াবহ পরিস্থিতি মনে হয়েছিল। কেন জানি তখন বুকের ভিতরে আমার কাপুনি টা খুব অসহ্য লাগছিল। তাহলে কি সত্যি মা নেই। আমাকে যখন ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় তখন দেখি মা মেঝেতে শুয়ে আছে। মায়ের পায়ে হাত রাখতেই বুজতে পারি মায়ের পা শীতল। আর কোন সম্ভাবনা নেই আমার বিশ্বাস সত্যি হবার।

জীবনে সবচেয়ে বেশি কেদেছিলাম আমি। অনেক বছর কাদিনি, পাষাণ প্রকৃতির মানুষ আমি। সেই কয়দিন সবচেয়ে বেশি কেদেছি। আমার মনে হয়েছিল যদি উপরওয়ালা সবকিছুর বিনিময়ে আমার মাকে ফিরিয়ে দেয় তো আমি সব কিছু দিতে প্রস্তুত। জানি এটা হবার নয়। তারপর থেকে পৃথিবীর কোন কষ্টই আর আমার কাছে কষ্ট মনে হয় না। কারন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট আমি পেয়েছি। তারপর থেকে আমার মাঝে একটা পরিবর্তন হয়েছে। আমি খুবই ইমোশনাল হয়ে গেছি। একটা আবেগি বিজ্ঞাপন দেখলেও চোখে পানি আসে। মাকে নিয়ে কোন গান আমি শুনতে পারি না। কেউ ফোনে মাএর সাথে কথা বললে আমার খুব কষ্ট হয়। কেউ মাকে দেখতে যেতে চাইলে আমার খুব ইচ্ছে করে আমিও দেখতে যাব। কিন্তু যাব কোথায়?

মা মারা যাবার পর আমাদের ৩ ভাইয়ের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। আমরা সবচেয়ে বড় শুন্যতার মাঝে বসবাস করতে থাকি। সব কিছু আছে কিন্তু তারপরেও কিছু নেই। কোন কিছুতেই কোন ছন্দ নেই। আর দশটা বাবার মত আমার বাবাও ব্যাসত হয়ে পরে তার নিজরে জীবন নিয়ে।

আর আমরা তিন ভাই অনেকটা লাটাই ছাড়া ঘুড়ির মত আকাশে ভাসতে থাকি। উড়ছি তো উড়ছি ভাসছি তো ভাসছি। কোন পিছুটান নেই। কেউ আর লাটাই ধরে টান দেয় না, তাই সাথে সাথেই নিচে নামি না। মন চাইলে নামি না চাইলে নামি না। আমাদের সব আছে কিন্তু ঐযে লাটাইয়ের টান টা নেই। তাই নামার তাড়াও নেই। ঘুরিতে ঘুরিতে অনেক দুরুত্ব, মাটি ছোঁয়া হয় না সহজে। অথচ সেই মাটি ছোঁয়ার দিন গুলো কতই না মধুর ছিল। এখন সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত। মা থাকলে নিশ্চয়ই মাকে কেন্দ্র করেই সবাই ঘুরপাক খেতাম নিউক্লিয়াসের মত। মাঝে মাঝে ভাবি কোথায় ছিলাম আর কোথায় আছি আর যাচ্ছি বা কোথায়?

আমি যখন মায়ের লাশ কাধে নিই তখন কার অনুভুতির কথা বলা সম্ভব না, ওটা কোন ভাষায় প্রকাশ করা যাবে কিন তাও জানি না। আমার মত কেউ থাকলে হয়ত তারা বুঝবেন। মাকে নিজে হাতে কবরে নামাই আমি। ভাবছিলাম হায়রে জীবন যার নাড়ি ছিরে দুনিয়ায় এলাম আমি আজ তাকেই নিজে হাতে কবরে নামাতে হচ্ছে। আমি কত নিষ্ঠুর আর হতভাগা মানুষ।

মায়ের ব্যাবহার করা জিনিষপত্র কাপড় চোপড় মায়ের স্যান্ডেল আজো আমি যত্ন করে রেখেছি, সারাজীবন রাখব এবং পরবর্তী জেনারেশন কেও রাখতে বলব। আমাদের মা আমাদের মাঝেই বেচে থাকবে সারাজীবন।

ইদানিং একটা ভয় হয় আমার। আমাকে ভালবাসত এমন তিনজন মানুষের মাঝে একজন আমার প্রিয় দাদি যিনি চলে যান ২০০০ সালে, আরেকজন আমার মা যিনি বিদায় নেন ২০০৭ এ। আরেকজন আমার সঙ্গেই থাকে অনেক বছর। তার জন্যই ভয় হয়। সেও কি এমন করে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো?

আমা সারা জীবন যাকে কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করব সে হচ্ছে আমার বন্ধু Jewel Dce

ও লিটন কে যারা আমার বিপদের মুহূর্তে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। আসল বন্ধু তারাই যারা বন্ধুর বিপদে পাশে এসে দাড়ায়। ভাল থাকুক পৃথিবীর সব মায়েরা। ভাল থাকুক ভাল বন্ধুরা।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355674
২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩৮
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনার লেখা পড়ে আমিও আনমনা হয়ে গেলাম। আল্লাহ আমার মাকে যেন দীর্ঘায়ু দান করেন। আপনার মাকে যেন আল্লাহ জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন এবং আপনাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করেন
355676
৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১২:০৩
আফরা লিখেছেন : হৃদয়ের কান্না দিয়ে লিখাটা পড়ে মনটা কেমন যেন করে উঠল নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল ।

দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে । এটাই বাস্তব মেনে নিতে কষ্ট হলে ও মেনে নিতে হয় ।
আল্লাহ আপনার মাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন । আমীন ।
355697
৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:০৭
শেখের পোলা লিখেছেন : একদিন এমন করে সকলকেই যেতে হবে৷ তাই তৈরী থাকাই উচিৎ৷ আসুন সবাই যাবার জন্য প্রস্তুত হই৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File