ফেসবুক এবং নদি শাসন
লিখেছেন লিখেছেন রফিক খন্দকার ২৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:০২:০০ রাত
সত্যি একটা এলোমেলো অবস্থা বিরাজ করছে এখন। সামাজিক গণমাধ্যম গুলো যেমন ফেসবুক ই ধরুন , এই মাধম গুলো তধ্যের প্রবাহে খুবই কার্যকর ভুমিকা রাখছে নিঃসন্দেহে। মিডিয়া যেখানে ব্যার্থ সেখানে সোশ্যাল মিডিয়া সফল। মিডিয়ার বা প্রশাসনের পক্ষে দেশের কোনায় কোনায় পৌঁছানো সম্ভব নয় কোনমতেই। সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। এখানে প্রত্যেকটা ইউজার ই একজন তথ্য সরবরাহকারী নিঃসন্দেহে। তধ্য যেখানে অধিকার। যেমন সিলেটের শিশু রাজন বলুন আর রাকিব বলুন এই সব হত্যার খবর প্রথমে সোশ্যাল মাধ্যমেই ছড়ায়, আমরা এখান থেকেই জানতে পারি এসব। এর ফলে প্রশাসনের পক্ষে খুব দ্রুত কার্যকর ব্যাবস্থা নেওয়া এবং দ্রুত বিচার করার মাধ্যমে সুনাম কুড়িয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে কি সামাজিক মাধ্যমের ভুমিকা কম? বিভিন্ন সরকারী সেবা, উন্নয়ন, সফলতা, গাজীপুর টাফিক বিভাগ, পুলিশের ফেসবুক নির্ভর সেবা প্রদান, ফাহিম মাসরুরের সাহস,এই সব কি ফেসবুক ছাড়া হয়েছে
বিভিন্ন ধরনের ক্রাইম, সহ যাবতীয় সংবাদের উৎস এখন ফেসবুক। সেই সাথে সরকারের সফলতা উন্নয়ন ব্যার্থতা, করনীয় সব কিছুই এখন ফেসবুক নির্ভর। ফেসবুক এখন কোন একটা "চাদের" মধ্যে সিমাবদ্ধ নেই, এত বিস্তৃত হয়েছে যে এটা কল্পনার বাইরে এখন। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর কারনে ক্রাইম বেড়ে যায়, আবার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক না থাকলে ক্রাইম হ্রাস পায় এমন ধারনা মনে হয় পৃথিবীতে বিরল। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক মানেই সামাজিক নেটওয়ার্ক অসামাজিক নয়। দু একটা ব্যাতিক্রম সব যায়গায় আছে তাই বলে সেটা ধর্তব্য মধ্যে পড়ে না।
বাংলানিউজের সংবাদ এ দেখলাম তারানা হালিম বলেছেন "ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বন্ধ না করে ফেসবুক শতভাগ বন্ধ করা সম্ভব কি-না, এটা আপনারাই খোঁজ নেন। আশা করি খোঁজ নিয়ে আপনারাই উত্তরটা দেবেন। পৃথিবীর কোন দেশে, এমনকি যেখানে ফেসবুকের অ্যাডমিনও আছে, হান্ড্রেড পার্সেন্ট (শতভাগ) বন্ধ করা সম্ভব নয়। "
আবার আজ বাংলাদেশ প্রতিদিন লিখেছে তারানা হালিম বলেছেন, 'জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ও জননিরাপত্তার খাতিরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে। যারা বিকল্প পথ ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহার করছেন তারা 'আইন অমান্য' করছেন। এই পন্থাও বন্ধ করা হচ্ছে।
তার মানে বিকল্প পথে চললে সেটাও বন্ধ করা হচ্ছে মানে বন্ধ করা যায়। অথচ আগের নিউজে উনি বলেছেন বন্ধ করা যায় না।
সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে তারানা হালিম বলেছেন" বিকল্প পথ ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহার করছেন তারা 'আইন অমান্য' করছেন। আমরা যারা বিকল্প পথে ব্যাবহার করি তারা কি আইন অমান্য করছি? কিভাবে? আইন হিসেবে কখন এটা প্রতিষ্ঠিত হল। সরকার তার প্রয়োজনে এসব বন্ধ করেছে কিন্তু ব্যাবহার না করতে তো কোন আইন জারি করেন নাই। তাহলে আমরা কিভাবে আইন অমান্য করলাম? বাংলাদেশে তো ফেসবুক ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ না। ইরানের কথা হলে না হয় মেনে নিতাম। এই হল অবস্থা। কেউ কিছু বুজছে না।
আমরা একটা জিনিস জানি যে নদীর পানি কে আটকানো যায় না তবে নদী শাসন বা নিয়ন্ত্রন করে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করা যায়। এই ভিন্ন পথে প্রবাহিত করা হয় কোন না কোন উদ্দেশে। জমিতে চাষ বাস অথবা বিদ্যুৎ উৎপাদন এমন অনেক কারনে এটা করা হয়। আরেকটা কারনে করা হয় সেটা হল অন্যকে ধ্বংস করতে। যেমন ভারত আমাদের ন্যায্য পানি না দিয়ে আমাদের নদীগুলো এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা কে তিলে তিলে ধ্বংস করছে।
আমার কাছে ফেসবুক কেও এমন মনে হয় নদীর মত। এখানে যে কোন কিছু ভেসে চলতে পারে। কিন্তু কি কারনে এই ফেসবুক নদীর প্রবাহ সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে তা উপরওয়ালারাই জানেন। এবং আদৌ এটা কবে স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহিত হবে তা আমরা জানিনা। আমাদের পক্ষে এটাও জানা সম্ভব নয় যে, এই ফেসবুক শাসন ঠিক কি কারনে হচ্ছে? নিরাপত্তার জন্যে না অন্যকে অনিরাপদ করতে। এটাও হতে পারে সরকার ফেসবুকের কাছে বাংলাদেশ থেকে আয়ের হিস্যা দাবি করছে। সেক্ষেত্রে তো ভালই হবে দেশের আয় বাড়বে।
তবে এরই মাঝে অনেক বড় বড় সত্যি এবং অনেক খবর অনেক সম্ভাবনা অনেক ঘৃনা অনেক উদ্বেগ অনেক কিছু মিস করছি আমরা, আমার তো তাই মনে হয়। যে গুলো হয়ত আমরা আর জানতেই পারব না।
উপসংহারে বলা যায় যে, নির্দোষ ফেসবুক কে নিরাপত্তার ঝুকি হিসেবে নয়, নিরাপত্তার সহায়ক হিসেবে দেখুন। দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে পুরো বিষয়টিকে মাপবেন না। আমরা কিন্তু অনেক সরকারী সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা যারা বিকল্প পথে ফেসবুক ইউজ করি তারা কেউ ই কোন ভাবেই ঝুকি পূর্ণ নই। খুব ভাল লাগবে যদি ফেসবুক স্বাভাবিক ভাবে খুলে দেওয়ার পর আমরা জানতে পারি যে ফেসবুক বন্ধ থাকা কালিন সরকার এই এই সফলতা অর্জন করেছে। এইসব এইসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বাড়িয়েছে। আমরা আশাবাদী মানুষ তাই আশায় চেয়ে আছি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন