পাঠাগারের বইয়ের সাথে ভাল আচরণ
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান ২২ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৫৩:২১ দুপুর
‘পড় তোমার রবের নামে’ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য প্রথম নির্দেশ পড়। যে জাতির জন্য পড়ার এই আদেশ তাদের মধ্যেই পড়া এবং পাঠ করার আগ্রহ সবচেয়ে কম। আমাদের দেশে সরকারীভাবে জেলা পর্যায়ে পাবলিক লাইব্রেরী আছে। একজন লাইব্রেরীয়ানসহ দু’তিনজন কর্মকর্তা এ সব লাইব্রেরী পরিচালনা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিকেল বেলা এ সব লাইব্রেরী পাঠকদের জন্য খোলা থাকে। এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাব এবং ব্যাক্তিগত উদ্যোগে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করা হয়। সরকারী উদ্যোগে আর এক ধরণের লাইব্রেরী/পাঠাগার সারাদেশে চালু আছে তা হলো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার। শতকরা পচানব্বই ভাগ ক্ষেত্রে এ পাঠাগারের একটি সাইন বোর্ড, এবং বুকসেলফে তালাবদ্ধ কিছু বই ব্যতীত অন্য কোন কার্যক্রম নেই, এ সকল পাঠাগারে বই বিলি অথবা বই পাঠের কোন ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মসজিদের ইমাম অথবা মুয়াজ্জিন সাহেবের কাছে বইয়ের আলমিরার চাবি থাকে তারা কখনোই এ সকল বই বিলি বা পাঠের জন্য দেয়ার ক্ষেত্রে কোন উৎসাহ বোধ করেন না। মসজিদ পাঠাগারের দুটি অভিজ্ঞতার কথা লিখছি। ২০০২ সালের দিকে একটি বই আমার খুব প্রয়োজন হলো, যে বই আমার ব্যাক্তিগত সংগ্রহে ছিল না। যে মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করি -সে মসজিদের মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগারের আলমিরায় দেখলাম বইটি আছে। আমি প্রথমে ইমাম সাহেবের কাছে বইটি চাইলাম, তিনি বললেন চাবি মুয়াজ্জিন সাহেবের কাছে। মুয়াজ্জিন সাহেব বললেন আগামী কাল আসেন। মুয়াজ্জিন সাহেবের দেয়া সময় মতো ‘সেই আগামী কাল’ গেলাম তিনি বললেন ‘চাবি নেই’। মসজিদ পাঠাগার থেকে আমার আর বই সংগ্রহ করা হয়নি। তৃতীয় দিনে বাইতুল মোকাররমের নীচতলার লাইব্রেরী থেকে বইটি কিনে এনেছি। এমন লোকদের কাছে মসজিদ পাঠাগারের চাবি রক্ষিত যারা কখনোই ঐ বইয়ের মলাট উল্টিয়ে দেখেন না, জানার চেস্টা করেন না, বইয়ের মধ্যে কি আছে? তারা কিভাবে জনগণকে বই পড়তে বলবেন? বই পড়তে বলা তো দূরের কথা তাদের কাছে চাইলেও বই পাওয়া যায় না। অন্য এলাকায় একদিন কোন এক কাজে গিয়েছি। মসজিদে আসরের নামাজ আদায়ের পর তুমুল বৃস্টি। বের হওয়ার কোন উপায় নেই। মসজিদের এক কর্ণারে দেখলাম একটি আলমিরায় লেখা ‘মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার-ইসলামিক ফাউন্ডেশন’। আমি মুয়াজ্জিন সাহেবকে বললাম বাহিরে বৃস্টি বের হতে তো পারছি না, কিছু সময় অবস্থান করবো। আলমিরা থেকে একটি বই দিলে পড়তে পারতাম। মুয়াজ্জিন সাহেব জবাব দিলেন, ‘চাবি নেই’। হায়রে মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার? মূল সমস্যা হচ্ছে জাতি হিসেবেই আমাদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ কম। আর যাদেরকে আমরা মসজিদের খেদমতের জন্য নিয়োজিত করছি তাদের অধিকাংশের অবস্থা আরো বেশী করুণ। ওনারা অনেকেই মনে করেন ছাত্র জীবনে তো কিতাব পড়েছি আবার বই পড়ার কি দরকার? আমি একবার এক ইমাম সাহেবকে ড. ইউসুফ আল কারজাভীর লেখা একটি বই পড়ার জন্য দিয়েছিলাম। একমাস পরে যখন বইটি আনতে গেলাম বুঝলাম যে তিনি বইটি পড়েন নি। তার ভাবসাব দেখে বোঝা গেল জীবনে কত বই পড়লাম। ড. ইউসুফ আল কারযাভী আবার কে? তিনি আর কি লিখবেন ইসলাম সম্পর্কে? একই অবস্থা সাধারণ মুসুল্লীদের মধ্যে-ও ২০০৭/০৮ সালের রমযান মাসে দুজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা মসজিদে ইতিকাফ করার জন্য এসেছেন, আমিও সে বছর তাদের সঙ্গী হয়েছি। সাথে বেশ কয়েকটি বই এবং তাফসীর ও হাদীস নিয়ে গিয়েছি। ইতিকাফ মানে সারাক্ষণ ইবাদাত আর পড়া। এ ব্যতীত আর কোন কাজ যেহেতু সুযোগ নেই, আমি ঐ দুজনের একজনকে ‘ভালো মৃত্যুর উপায়’ অন্য জনকে ‘মজবুত ঈমান’ ও ‘জীবন্ত নামায’ বইগুলো পড়তে দিলাম। তারা বইয়ের ৪/৫ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়ার পর আর পড়েছেন বলে মনে হলো না। অথচ তারা সময়গুলো শুয়ে বসেই কাটিয়ে দিয়েছেন। আমার পরিচিত এক স্কুল শিক্ষক। যার বই পড়া এবং বই সংগ্রহ করার প্রবল নেশা। জীবনে অনেক বই পড়েছেন এবং সংগ্রহ করেছেন। বয়স ষাট পার হয়ে গেছে সম্ভবত; একদিন আমাকে বললেন, হাফিজ সাহেব ‘আমার ব্যাক্তিগত লাইব্রেরীতে অনেক বই। আমার স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ কেউই এ সব বই পড়ে না। আমার মৃত্যুর পর এ বইগুলো তারা কোন কাজে লাগাতে পারবে বলে মনে হয় না। এমন কোন লাইব্রেরী কি আছে যেখানে বইগুলো দিলে তারা এ বইয়ের সাথে ভাল আচরণ করবে/?’ একজন স্কুল শিক্ষক, যার স্ত্রী-ও একজন শিক্ষিকা, ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেটধারী। তিনি ভাবছেন -তাঁর মৃত্যুর পর ওনার ব্যাক্তিগত লাইব্রেরীর বইয়ের সাথে ভাল ব্যবহার করার লোক খুজে পাচ্ছে না।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন