ছোটদের প্রিয় বিজ্ঞানী নিউট..

লিখেছেন লিখেছেন তুই নাস্তিক ১২ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:৪২:১৭ সন্ধ্যা



ছোট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই বিজ্ঞানী নিউটনের কথা শুনেছ । অনেকে হয়তো এখানো শুন নাই। যারা শুনে নাই তাদের জন্য বিজ্ঞানী নিউটনের এক গুচছ মজার কথা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অবদান এবং যারা অল্প সামান্য শুনেছ তাদের জন্য রয়েছে আরো কিছু বিচিত্র তথ্য। “বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ”- কথাটি অনিবার্য সত্য। তবে নিউটনের অবদান বিজ্ঞানকে দিয়েছে অফুরšন্দন্ত বেগ যার কোমলস্পর্শে বিজ্ঞানের অনেক শাখা হয়েছে সমৃদ্ধ। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে বিশ্বে সমাদৃত এবং চিরকাল স্বমহিমায় ভাস্ব^র হয়ে থাকবেন।

প্রথমেই নিউটনের জন্ম নিয়ে কথা। তিনি ১৬৪২খ্রীষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ল্যাংকাশায়ার শহরের উইলথর্প গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পুরো নাম আইজ্যাক নিউটন। মজার ব্যাপার হলো তাঁর পিতার নাম ও আইজ্যাক নিউটন ছিল। তাঁর জম্ম গ্রহন করার কয়েক মাস পর্বেই তিনি পিতৃহারা হন। নিউটনের মা স্বামীর স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে নিজের ছেলের নামও আইজ্যাক নিউটন রাখেন।

শৈশব কালে নিউটন তাঁর মাতামহীর কাছে বড় হন। তিনি খুবই শান্ত স্বভাবের ছিলেন। নিরিবিলি নির্জন স্থান তাঁর খুবই প্রিয় ছিল। বন্ধু বান্ধবের সাথে হৈচৈ করা তিনি পছন্দ করতেন না। লেখা পড়ার প্রতি তাঁর প্রবল ঝোক ছিল। শৈশবেই তাঁর মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু নিউটনের বয়স যখন ১৫ তখন আবার দ্বিতীয় বারের মত স্বামী হারা হন। তখন তাঁর মা হ্যানা আবার দ্বিতীয় স্বামীর বাস্তুভিটা ত্যাগ করে নিউটনের কাছে ফিরে আসেন। মা ও ছেলে একসাথে বসবাস করতে লাগলেন। মায়ের আশা ছিল নিউটন হবে কৃষক। তাই ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে কৃষিকাজে লাগিয়ে দিলেন। এদিকে কৃষিকাজে তাঁর মন বসত না। সবসময় নিউটন চাকরদের সাথে কাজ করতেন এবং ক্ষেতখামারের দেখা শুনা করতেন। প্রত্যেক শনিবার হাটের দিন চাকরদের সাথে নিউটনকে যেতো হত ফলমুল বিক্রি করার জন্য। কিন্তু যাঁর মনে শৈশব কাল থেকেই পড়ার অদম্য আগ্রহ তাঁর তো কখনো পড়ালেখা ছাড়া কিছুতেই সহজে মন বসবে না। সর্বদাই তাঁর মন জ্ঞান পিপাসায় কাতর হয়ে উঠত। সময় পেলেই তিনি চুপিসারে বই নিয়ে বসতেন। হাটে যাওয়ার পথে ছিল নিউটনের স্কুল বন্ধুক্লার্কদের বাড়ী। বন্ধুর পাঠাগারেই ছিল বইয়ের বিশাল সম্ভার। তাদের পাঠাগারে ঢুকে গভীর অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে নিমগ্ন থাকতেন ঘন্টার পর ঘন্টা।

চাকরদের কাছে এসব শুনার পর তাঁর মা ভাবলেন ছেলেকে দিয়ে কৃষিকাজ হবে না। অগত্যা তিনি আবারো ভর্তি করে দিলেন স্কুলে। স্কুল শেষ করে মাত্র আঠারো বৎসর বয়সে ক্যাম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে নিউটন ভর্তি হন। পড়ার সাথে সাথে তিনি চালিয়ে যেতেন গবেষনার কাজ। মাত্র উনত্রিশ বৎসর বয়সে রয়েল সোসাইটির সভ্য হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। পরবতীতে নিজের প্রচেষ্টায় রয়েল সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

ছোট বন্ধুরা, সপ্তদশ শতকে বিজ্ঞানের যতগুলো আবিস্কার হয়েছে তার অর্ধেকের চেয়েও বেশী ছিল নিউটনের আবিস্কার । তিনি গতিসুত্র, মহাকর্ষ ও অভিকর্ষসুত্র, শব্দের গতি, ক্যালকুলাস, গনিতের ইনট্রিগ্র্যাল, আলোর বিচছুরণ, দোলন সুত্র, শীতলীকরন সুত্র ও বর্নালী তত্ত্ব প্রভৃতি তাঁর আবিস্কারের মধ্যে অন্যতম। নিউটন ছিলেন একজন মহান বিজ্ঞানী । তিনি তাঁর গবেষনায় অত্যন্ত নিরলস ভাবে, ধৈর্য এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করতেন। একদিন তাদের বাড়ীর পোষা কুকুর তাঁর গবেষনার অনেক তথ্য বিনষ্ট করে ফেলেন। পরে আবার ও তা তৈরী করেন অত্যন্ত অবিচলতার সাথে।



প্রিয় বন্ধুরা, বিজ্ঞানী নিউটনের মাধ্যাকর্ষন শক্তির আবিস্কার নিয়ে একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে। একদিন তিনি একটি আপেল গাছেরনীচে বসে ছিলেন হঠাৎ দেখলেন একটি আপেল মাটিতে পড়তে। তখন তাঁর মনে প্রশ্ন উকি দিল। আপেলটি নীচের দিকে কেন পড়ল? মনে মনে ভাবল নিশ্চয়ই আপেলটি আপনা থেকে পড়েনি। কোন এক শক্তি তাকে মাটির দিকে আকর্ষন করছে। এই চিন্তা থেকেই তিনি আবিস্কার করেন বিজ্ঞানের যুগান্তর কারী সৃষ্টি মাধ্যাকর্ষন শক্তি।

ছোট বন্ধুরা, বিজ্ঞানী নিউটনের কোন ঘর সংসার ছিল না, জীবনে তিনি বিয়েও করেননি। প্রশ্ন জাগতে পারে তাঁর মনে কি কোন প্রেম ভালোবাসা ছিল না? অবশ্যই ছিল। ভাগ্যের পরিহাসে তা হয়ে উঠেনি। নিউটনের বিয়ে সম্পর্কেও একটি মজার কাহিনী রয়েছে। তিনি একটিমেয়েকে খুব ভাল বাসতেন। উভয় বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত ও নিয়ে ছিলেন। একদিন তারা নির্জন কক্ষে বসে আলাপ চারিতায় মগ্ন। হঠাৎ নিউটনের মনে পড়ল বিজ্ঞানের এক গভীর তত্ত্ব। গভীর চিন্তায় মগ্নহলে তিনি সিগারেট খেতেন। চিন্তাক্লিষ্ট অবস্থায় তিনি দিয়াশলাই জ্বেলে মেয়েটির হাতের আঙ্গুলকে সিগারেট মনে করে আগুন ধরাতেই মেয়েটি ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে পালিয়ে যান। তার পর বিয়ে ভেঙ্গে যায়। এই কারনে তাঁর বিয়ে করা সম্ভব হয়নি। এর পর তিনি আজীবন বিজ্ঞান সাধনায় নিজের জীবনকে চিরতরে বিলিয়ে দেন।



বিজ্ঞানের এই মহান দিকপাল বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৭২৭ সালের ২০শে মার্চ এই সুন্দর পৃথিবীর ছেড়ে পরপারে চলে যান । রেখে যান বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অনেক মহৎ অবদান। যার বদৌলতে বিজ্ঞান আজ এতদুর অগ্রসর হয়ে মহাশুন্য পর্যন্ত পৌছে গেছে। পদার্থবিজ্ঞান ও গনিত শাস্ত্রে নিউটনের অবদান কত খানি তা তোমরা একটু বড় হলে বুঝতে পারবে। এসো বন্ধুরা আমরা বিজ্ঞানের মহান সাধনায় নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিই। বিশ্বকে আবার নতুন করে উপহার দিই এক একজন নতুন নিউটন হিসাবে।

বিষয়: সাহিত্য

১৮৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File