জামায়াতের বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করতে পারছে না কেউই
লিখেছেন লিখেছেন বিশ্বাসী ভাই ০৯ মে, ২০১৭, ০২:৪৯:২৮ দুপুর
সামছুল আরেফীন : সারা দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুঞ্জরণ চলছে। বিভিন্ন দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টাও দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের সাথে গণভবনে বৈঠক করেছেন। মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টি বিভিন্ন দল নিয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ গঠন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি ‘ইসলামী দল’ও রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাদের অবস্থা আর আগের মতো নেই। কিন্তু অতীতের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা, জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ, চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার আলোচনাও সেই সাথে চলছে।
গত ৭/৮ বছর যাবত জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে মাঠে নামতে পারছে না। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন মহানগর, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলো তালাবদ্ধ। অবর্ণনীয় জুলুম, নির্যাতন, গুম, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে শহীদ করে দেয়ার মধ্যদিয়ে তাদের উপর নির্যাতন স্টিম রোলার চলেছে। এসব দিক বিবেচনায় এনে এবং জামায়াতের নীরবতা দেখে বিশ্লেষকরা কেউ কেউ জামায়াতকে দেশের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন না।
কিন্তু ভোটের হিসাব নিকাশে বসে তারাই আবার ভিন্ন চিত্র দেখতে পাচ্ছেন। বিশেষ করে অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী ছিল ক্ষমতায় যাওয়ার একটা ফ্যাক্টর। কেন না ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন দেয়ার কারণে তারা ক্ষমতায় আসীন হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন না দেয়ায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আবার ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী চারদলীয় জোট গঠনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসে। চারদলীয় জোটের বিরোধীদের বিশ্লেষণ ছিল এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০০৬ সালের নির্বাচনেও এই জোট পুনরায় ক্ষমতায় আসবে। এ কারণেই সেই নির্বাচন হতে দেয়া হয়নি। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ১/১১ ঘটানোর মধ্য দিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়।
এতো কিছুর পরও জামায়াতের রয়েছে সেই কর্মী, সমর্থক, জনসমর্থন। যার প্রতিফলন আমরা দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পরপর যেসব উপজেলা নির্বাচন, পৌর নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার সবগুলোতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ীও হয়। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন জামায়াতের ৪ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এখনও রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী ফ্যাক্টর। এ কারণেই আলোচনার টেবিলে কেউই জামায়াতের বাস্তবতাকে ‘ইগনোর’ করতে পারছে না।
অতীতে প্রায় প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করেছে জামায়াতে ইসলামী। সেগুলোতে জামায়াতের প্রতিনিধিত্বও ছিল। কয়েকটি নির্বাচনের পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হলো :
২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি, নেযামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রব্বানী পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (ওউখ) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন। মাওলানা ছিদ্দিক আহমদকে (নেযামে ইসলাম পার্টি) চেয়ারম্যান, মাওলানা আবদুর রহীম (জামায়াতে ইসলামী), মাওলানা আবদুস সুবহান (জামায়াতে ইসলামী), এডভোকেট সা’দ আহমদকে (জামায়াতে ইসলামী) ভাইস চেয়ারম্যান এবং এডভোকেট শফিকুর রহমানকে (ডেমোক্রেটিক লীগ) সেক্রেটারি জেনারেল করে এর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দল অংশগ্রহণ করে।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২০৭টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩৯টি এবং মুসলিম লীগ ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়। ইসলামিক ডেমোক্রেটি লীগ থেকে মনোনীত জামায়াতে ইসলামীর ৬জন সদস্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এটাই প্রথম উপস্থিতি।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিজ নামে জামায়াতে ইসলামীর এটাই ছিলো জাতীয় সংসদে প্রথম নির্বাচনে অংশ গ্রহন। জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়। এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৮টি, আওয়ামী লীগ ৯৬টি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, জাসদ ৪টি, অন্যান্য দল ১০টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২টি আসনে বিজয়ী হয়। জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা দ্বিতীয় উপস্থিতি।
৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনরত দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৬টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, অন্যান ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। ১৮জন বিজয়ী হয়। জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা তৃতীয় উপস্থিতি।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৯৬ সনের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১১৬টি আসন, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসন লাভ করে।
জামায়াতে ইসলামী থেকে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত তিনজন সদস্য ছিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (পিরোজপুর), কাজী শামসুর রহমান (সাতক্ষীরা) এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী (নীলফামারী)। জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি চতুর্থ উপস্থিতি।
চারদলীয় জোট গঠন: ১৯৯৯ সনের ৩০শে নবেম্বর ২৯ মিন্টো রোডে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশকে উদ্ধার করার সংকল্প নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন এবং একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০০১ সনের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার প্রধান ছিলেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করার পূর্বে প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদেরকেই বসিয়ে যান।
২০০১ সনের ১লা অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আকস্মিকভাবে চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন। তবে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ চারদলীয় জোটে থেকে যায়।
এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৩টি আসন, আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসন লাভ করে। সংসদের মহিলা আসনগুলো থেকে জামায়াতে ইসলামী ৪টি আসন লাভ করে। জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি পঞ্চম উপস্থিতি।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জরুরী সরকারের অধীনে ২০০৮ সনের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলী ৩০টি আসনে, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৭টি আসনে, জাসদ ৩টি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ২টি আসনে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২টি আসনে, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি আসনে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১টি আসনে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪টি আসনে বিজয়ী হয়।
জামায়াতে ইসলামী থেকে নির্বাচিত দুইজন সংসদ সদস্য ছিলেন মাওলানা শামসুল ইসলাম (চট্টগ্রাম) এবং এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আযাদ (কক্সবাজার)। জাতীয় সংসদে এটি জামায়াতে ইসলামীর ষষ্ঠ উপস্থিতি।
২০০১ এর চেয়ে ২০০৮ এ ভোট বাড়ে ৩৫%: ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের ভোট বিপ্লবের সময়ের চেয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ভোট বৃদ্ধির হার ৩৫ শতাংশ। ২০০১ সালের জামায়াত যেখানে ভোট পেয়েছিল ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৭৪ আর ২০০৮ সালে ভোট পায় ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৯। ২০০৮ এর নির্বাচনে জামায়াত গড়ে আসন প্রতি ভোট পেয়েছে ৮৬ হাজার ২৭৬, আর ২০০১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৮৬২। ২০০৮ এর নির্বাচনে মাত্র ৫ জন প্রার্থী ৫০ হাজারের নীচে ভোট পেয়েছেন। আর ১ লাখের উপর ভোট পেয়েছেন ৩৮ জনের মধ্যে ১৪ জন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জোটবদ্ধ নির্বাচন করেও যেখানে জামায়াতের কয়েকজন প্রার্থী জামানত হারিয়েছিলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে ৩৮ জন প্রার্থীর কেউই জামানত হারায় নি।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮ সালে ঠাকুরগাও-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল করিম ভোট পেয়েছিলেন ৯৮ হাজার ৪৫৬, যা প্রদত্ত ভোটের ৪৯ শতাংশ। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ৫৭ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়েছিলেন, যা ছিল প্রদত্ত ভোটের ৩৫ শতাংশ। নীলফামারী-২ আসনে জামায়াত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মন্টু ভোট পেয়েছে ৮২,৩২৪, যা প্রদত্ত ভোটের ৩৭ শতাংশ। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে জামায়াত ভোট পেয়েছিল ৬৫,৮৩৫, যা প্রদত্ত ভোটের ৩৬ শতাংশ। লালমনিরহাট-১ আসনে জামায়াত প্রার্থী হাবিবুর রহমান ভোট পেয়েছেন ৭৪,২১৯, যা প্রদত্ত ভোটের ৩৪ শতাংশ। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে জামায়াত ভোট পেয়েছিল ৪৮,৯০৭, যা প্রদত্ত ভোটের ২৮ শতাংশ। রংপুর-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ভোট পেয়েছেন ৩৬,৫৮৬, যা প্রদত্ত ভোটের ১৭ শতাংশ। ২০০১ সালে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১৭,৭৮৮, যা ছিল প্রদত্ত ভোটের ৯ শতাংশ। গাইবান্ধা-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থী আবদুর রহীম সরকার ভোট পেয়েছেন৭০,১১১, যা প্রদত্ত ভোটের ২৫ শতাংশ। চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী লতিফুর রহমান ভোট পেয়েছেন ৭১,৩৪১, যা প্রদত্ত ভোটের ৩১ শতাংশ, ২০০১ সালে তিনি পেয়েছিলেন ৬০,৪৬০, যা প্রদত্ত ভোটের ২৮ শতাংশ। শেরপুর-১ আসনে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রদত্ত ভোটের ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১,০১,০৭০। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ৬৫,৪৯০ ভোট, যা ছিল প্রদত্ত ভোটের ৩৩ শতাংশ।
২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচন করে যারা বেশী ভোট পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন যশোর-১ আসনে মাওলানা আজিজুর রহমান, তিনি প্রদত্ত ভোটের ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৮৮,৭০০। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৯৭,৪৬৩ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ৩৪ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে হাবিবুর রহমান পেয়েছেন ১,৪৩,৪১৮ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ৪৫ শতাংশ। সিলেট-৬ আসনে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান ভোট পেয়েছেন ৫১,৭৬৪, যা প্রদত্ত ভোটের ২১ শতাংশ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের বিজয়ী ২টি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে মাওলানা শামসুল ইসলাম ভোট পেয়েছেন ১,২০,১০৫, যা প্রদত্ত ভোটের ৫১ শতাংশ। ২০০১ সালে এ আসনে শাহজাহান চৌধুরী পেয়েছিলেন ১,০৫,৭৭৩ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ৪৮ শতাংশ। কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ ভোট পেয়েছেন ১,০৩,১৫১, যা প্রদত্ত ভোটের ৫৩ শতাংশ।
২০০১ সালের নির্বাচনে ৩১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামায়াত ১৭টি আসন লাভ করে। ওই নির্বাচনে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬১ ভোট, অর্থাৎ ৪ দশমিক ২৮ ভাগ ভোট পায়। গত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৩৮টি আসনে প্রতি™^›ি™^তা করে জামায়াত মাত্র ২টি আসন পায়। নির্বাচন কমিশনের চড়ান্ত ফলাফলে জামায়াতের প্রার্থীরা ৩২ লাখ ৯ হাজার ২২৬ ভোট পান। এই ভোট সারাদেশে প্রদত্ত ৮৭ দশমিক ১৬ ভোটের ৪ দশমিক ৬০ ভাগ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখের উপর ভোট পেয়েছেন ৩৮ জনের মধ্যে ১৪ জন। মাত্র ৫ জন প্রার্থী ৫০ হাজারের নীচে ভোট পেয়েছেন। ২০০১ সালে ১ লাখের উপর ভোট পেয়েছিলেন ১০ জন। ২০০৮ সালে যারা ১ লাখের উপরে ভোট পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন, দিনাজপুর-১ আসনে মোহাম্মদ হানিফ ১,০৭,১৬৮, দিনাজপুর-৬ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম ১,৩২,৭৫২, পাবনা-১ আসনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১,২২,৯৪৪, পাবনা-৫ আসনে মাওলানা আবদুস সুবহান ১,৪১,৬৬৩, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে হাবিবুর রহমান ১,৪৩,৪১৮, যশোর-২ আসনে মুহাদ্দিস আবু সাঈদ ১,৩৩,২৪৪, খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পরওয়ার ১,০৫,৩১২, খুলনা-৬ আসনে শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস ১,১৬,১৬১, সাতক্ষীরা-২ আসনে আবদুল খালেক মন্ডল ১,১৪,৫১৭, সাতক্ষীরা-৩ আসনে রিয়াসত আলী বিশ্বাস ১,৩৩,৮০২, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম ১,১৭,৬৭৫, শেরপুর-১ আসনে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১,০১,০৭০, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে মাওলানা শামসুল ইসলাম ১,২০,১০৫ এবং কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ ১,০৩,১৫১ ভোট।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন : আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত ২৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ২৬ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) এবং ১১ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) নির্বাচিত হয়। ব্যাপক কারচুপি ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে ২০১১ অনুষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ১৭২ জন, পুরুষ সদস্য ১,৬২৩ জন, মহিলা সদস্য ৩৬৭ জন। একইভাবে অন্যান্য নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। এ সব ফলাফলে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির পরই জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান।
সুতরাং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকরা দেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীকে এড়িয়ে চলতে গিয়েও পারছেন না। মহাজোট, এরশাদ জোটে যেসব রাজনৈতিক দলের ভিড় দেখা যাচ্ছে, ভোটের মাঠে তাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। গত ৯ বছরে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে সেসব নির্বাচনও এর প্রমাণ। মহাজোটের ছত্রছায়া এবং সরকারে থাকার সুবিধা পেয়েও এরশাদের দলের কোন অস্তিত্ব বিগত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে জামায়াত দলীয় শীর্ষনেতা ও দলীয় অবকাঠামোর সব হারিয়েও ভোটের মাঠে তারা তাদের সরব উপস্থিতি চিহ্নিত করেছে। এই সত্যটাই এখন এক শ্রেণীর রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের প্রচ- মাথা ব্যথার কারণ, যারা দেশের রাজনীতিতে জামায়াত জিরো দেখতে চায়।(সংগ্রাম পত্রিকা থেকে সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
৭৮৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাই বিএনপি থেকে সরে গিয়ে এককভাবে লড়ে যাওয়ার জন্য প্রিপারেশন নেওয়া উচিত।
( মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না )
মন্তব্য করতে লগইন করুন