পহেলা বৈশাখ

লিখেছেন লিখেছেন বিশ্বাসী ভাই ০৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫১:৪০ দুপুর

পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী নতুন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

বুধবার সকালে এক বিবৃতিতে মাওলানা নেজামী বলেন, নববর্ষ বা যেকোনো উৎসব উদযাপনে নিজস্ব শিক্ষা-সংস্কৃতির অনুবর্তী হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখকে আমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই উৎসব নিজস্ব গুরুত্বে জাতীয় জীবনে বিশেষ চেতনার দ্যোতক।

তিনি বলেন, বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ অর্থাৎ অগ্র (প্রথম) + হায়ন (বছর) (=অগ্রহায়ণ)। পহেলা বৈশাখ নয়। কিন্তু বাংলা সনের ষষ্ঠ মাস বৈশাখকে বছরের প্রথমে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে একটি সম্প্রদায়ের চরক পূজার দিনে। কথিত আছে এই দিনটিতে হযরত ইব্রাহিমকে (আ.) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষপে করা হয়। তাছাড়া বাংলা সন হিজরী সনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রবর্তিত হয়েছে বিধায় বাংলা নববর্ষ আমাদের বহুদিনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলা নতুন বছরের গণনার রীতি প্রবর্তিত হয় মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে ১৫৫৬ অব্দ মোতাবেক হিজরী ৯৬৩ চান্দ্র সনকে সৌর সনে রূপান্তরের মাধ্যমে। এ রূপান্তরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সম্রাট আকবরের শাহী দরবারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ উল্লাহ সিরাজী। কিন্তু মঙ্গলঘট, মঙ্গল প্রদীপ, মাঙ্গলিক প্রতীক অঙ্কন প্রভৃতি আমদানি করা বিশেষ ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন আচার-রীতির আগ্রাসনে পহেলা বৈশাখের চেতনাকে ভিন্নমুখী করা হচ্ছে। এই আগ্রাসন পরিচালিত হচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির স্বাভাবিক বিবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করে একটি স্বাধীন জাতির স্বাতন্ত্র্যবোধকে ধ্বংস করার জন্যে।

বিবৃতিতে উৎসব উদযাপনে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর পৃথক সংস্কৃতি তথা আচার-আচরণ, নিয়ম ,রীতি-রেওয়াজের অনুশীলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মাওলানা নেজামী আরো বলেন, যেকোনো অনুষ্ঠানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার ধর্ম,বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়াস চালানো উচিত।কোনো অবস্থায় বিধর্মীয় আদর্শ-ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার অনুকরণ অভিপ্রেত নয়।

তাই পহেলা বৈশাখ অথবা যে কোনো উৎসব উদযাপনে আমরা যেন আমাদের স্বতন্ত্র জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি বিস্মৃত না হই। কেননা, পরানুকরণ শুধু যে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করে তা নয়, বরং স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা ও আত্মপ্রত্যয়ের মূলেও চরম আঘাত হানে। তাই এক্ষেত্রে নিজস্ব প্রথা-পদ্ধতি, নিয়ম-নীতি বা রীতি-রেওয়াজের অনুশীলন কাম্য।

কেননা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের রয়েছে স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক চেতনা,রয়েছে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। অন্য যেকোনো সংস্কৃতির বিকল্প মডেল। যা অন্য কোনো সংস্কৃতিতে লীন হবার নয়। তাই পহেলা বৈশাখ উৎসব উদযাপনে আমরা যেন আমাদের স্বতন্ত্র জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি বিস্মৃত না হই।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, বাঙালী সংস্কৃতির নামে ঋতু ও নববর্ষবরণ বা অন্য যেকোনো উৎসব উদ্যাপনে বিজাতীয় সংস্কৃতি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে ধারণ, চর্চা ও অনুশীলন করাতে দেখা যায়। বিজাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে নববর্ষ উৎসবে বিধর্মীয় সংস্কৃতির প্রভাব এমনভাবে প্রবেশ করানো হচ্ছে যে, এতে আমাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক সত্ত্বাই চরম হুমকীর সম্মুখীন হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, মুসলিম জনগণকে বৈশিষ্ট্যহীন করার লক্ষ্যে এ অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। যেমন মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে, উলুধ্বনী দিয়ে, শাখা বাজিয়ে, মঙ্গল কলস সাজিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। পহেলা বৈশাখের মিছিলাদিতে ঢোলের ব্যবহার, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাতি, ঘোড়া ও কচ্ছপের প্রতীক এবং বিভিন্ন ধরনের মুখোশ সম্বলিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাতে-মুখে, গালে আল্পনা এঁকে লাল পাড়ের সাদা শাড়ী, খোপায় হলুদ গাদা ফুলের মালা, হাতে শাখা চূরি পরা তরুণীদের উচ্ছলতা এবং বিদ্যাসাগরীয় চটি জুতা, বঙ্কিম চন্দ্রের কোঁচা, শরৎচন্দ্রের চাঁদর কাঁধে ফেলে তরুণদের প্রাণময় উচ্ছ্বাস, মুসলিম মহিলাদের সিঁথিতেও সিঁদুর, গলায় পুঁতির ও গজোমালা, হাতে শাখা ধারণ প্রভৃতি।

তাছাড়া যেসব পশু-পাখী নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, তাও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। কেননা সংখ্যালঘু একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস মোতাবেক পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষীর বাহন, ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস স্বরসতীর বাহন, সিংহ দূর্গার বাহন, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ূর কার্তিকের বাহন।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364834
০৬ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৫
আনিসুর রহমান লিখেছেন : To establish a Ram state paid people are working hard in Bangladesh. These things are a part of Chanukah policy but not the whole lot.
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:১৭
302660
বিশ্বাসী ভাই লিখেছেন : You are absolutely right. New generation should be aware.
364843
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:২৩
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : ধন্যবাদ, ভাল লাগল। আশা করি নিয়মিত লিখবেন।
০৭ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৯:৫৯
302751
বিশ্বাসী ভাই লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। ইনশাআল্লাহ নিয়মিত লিখার চেষ্টা করবো।
364845
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : অন্য ধর্মের রীতি নীতি মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য জায়েজ নয়৷ আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতি অনুযায়ী আমাদের চলাই উচিৎ৷ ধন্যবাদ৷
০৭ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১০:০১
302752
বিশ্বাসী ভাই লিখেছেন : আপনার কথাই আমাদের সকলের বোঝা উচিত। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File