গরীবের সুখ
লিখেছেন লিখেছেন ফরিদুল ইসলাম তুষার ১৩ আগস্ট, ২০১৫, ০৩:৪৫:১৩ দুপুর
-মা ও মা,আর একটু ভাত দাও না।
হাড়ির দিকে তাকিয়ে মিলনের মার
চোখে পানি চলে আসে।অভাবের
সংসারে এমনিতে তিন বেলা ভাত
জোটেনা,আর যখন জোটে তখন কারোই
পেট ভরে খাওয়া হয় না।আমেনা বেগম
নিজে খায়নি মিলন কে খাইয়ে যতটুকু
আছে তাতে মিলনের বাবার ঠিক মত
হবে কিনা কে জানে।
লোকটা সারাদিন গাধার মত খাটে।
এখন সে কি করবে কিছুই
বুঝতে পারছেনা। এসব
কথা চিন্তা করতে করতে মিলনের
মায়ের চোখের পানি গাল
গড়িয়ে মাটিতে নামে।তার মলিন মুখ
আরো মলীন হয়।হঠাত মিলনের হাত তার
সম্ভতি ফিরিয়ে আনে।
-পানি খাই নাইতো তাই মনে লাগছিল
খিদা আছে।অহন
পানি খাইয়া দেহি খিদা নাই।
তুমি কান্দ ক্যান মা।
এই টুকু ছেলের প্রতারনার আশ্রয়
আমেনা বেগম বেশ ভালো করেই
বোঝে।তাই চোখের
পানি মুছতে মুছতে বলে
-নারে সোনা কান্দি না।কান্দুম ক্যান
আমার যাদু থাকতে কি আমার দুখ
আছে যে আমি কান্দুম।যাতো বাজান
গিয়া দেখ তোর আব্বা আইলো কিনা।
-আইচ্ছা মা।
ক্রিং ক্রিং শব্দে মিলনের
বাবা আসলাম
মিয়া রিক্সা নিয়া বাড়ির
উঠানে নামে।বাবাকে দেখে তার
ছেলে মিলন মিয়ার খুশির অন্ত
থাকে না।মুখে এক ছটাক
হাসি নিয়ে চিতকার দিয়ে বলে
-মা,ঐতো আব্বা আইছে।
আমেনা বেগম ঘর ছেরে উঠানে আসে।
বাজারের ব্যাগ
ধরতে ধরতে জিজ্ঞেস করে
-আইজকা এত রাইত করলেন ক্যান?
-কি করমু বউ এক প্যাসেঞ্জার
পাইছিলাম,ম্যালা দুরে ক্ষ্যাপ।হেই
ক্ষ্যাপ দিতেই তো দেরি হইল।তয়
ভালাই হইছে ব্যাডা মানুষ
ভালা ট্যাকা একটু বেশিই দিছে।
-এত্ত বাজার ক্যান।সব বাজার
কি একদিনেই করছেন নাকি।পোলাও
চাইল ওতো আনছেন দেহি।
-আরে শুধু পোলার চাইল না লগে ঘি আর
গরুর গোস্তও আনছি।কইলাম
না ব্যাডা ট্যাকা বেশি দিছে।
পোলা আমার খালি পোলাও পোলাও
করে তাই সাহস কইরা নিয়া আইলাম।
যা হওনের পরে হইব।পোলার শখ আগে।কই
আমার রাজপুত্র কই।
-এই যে আমি আব্বা।
-আয় বাজান সামনে আয়।
আইজকা সারা রাইত গল্প হুনামু।আর বউ
যাও তোরে তারাতারি পোলাও
রান্ধ।কতদিন তোমার হাতে পোলাও
খাই না।আর শোন সব
রান্না করবা বাচায়া রাখবা না।
-অহনি রান্ধুম।ভাত রানছি হেইডার
কি হইব।
-পানি দিয়া থোও সকালে খামুনে।
আকাশে আজ পূর্নিমা।চাদের
আলোতে বাড়ির উঠানে আসলাম,
মিলন আর তার
আমেনাকে নিয়ে খেতে বসেছেন।
পৃথিবীর সব সুখ যেন আজ চাদের
আলো হয়ে আসলামের বাড়ির
উঠানে গড়া গড়ি খাচ্ছে।মিলন আর
আমেনার একটু খানি সুখ যেন আজ
আসলামের জীবনের সবচাইতে বড়
প্রাপ্তি।চাদের আলোতে আজ
আমেনার সুখি মুখটা যেন
আমাবস্যা থেকে হটাত মেঘের আড়াল
থেকে বেরিয়ে আসা পূর্নিমা।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন