মাহী বি. চৌধুরীর ভিডিও নিয়ে ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ রেজাউর রহমান ওয়াকিল ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:৩৫:০৩ রাত
গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা PlanB নামক নতুন একটি পেজ এ বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা সাহেবের পুত্র মাহি বি. চৌধুরীর একটি অনুপ্রেরণামূলক ( Motivational) ভিডিও দেখতে পাচ্ছি। ভিডিওটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌছে গেছে। অরাজনৈতিক বিভিন্ন পেজে প্রচুর শেয়ার হচ্ছে ভিডিওটি
ভিডিওতে তিনি একটা হিসাব দেখিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের প্রায় ২৪ লাখ সেনাবাহিনীর মত কর্মী আছে যাদের ফুলটাইম পেশা রাজনীতি। উনি একটি সহজ সরল হিসাব দিয়েছেন পুরোটাই নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী। তিনি বলেছেন ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রে ১০ টি করে বুথে তিন জন করে কর্মী হলে টোটাল ১২ লাখ কর্মী। আর দুই দল মিলিয়ে মোট ২৪ লাখ। এরা সবাই ফুলটাইম রাজনীতি করে। এদের ইনকামের সোর্স হিসেবে সব জেলার পুল, ব্রিজ, বাজার ইত্যাদি ইজারার টাকা বলে তিনি দাবী করেছেন। আর এজন্যই নাকি এই দুই দলের যে কেউ সমাবেশ ডাকলে ৫ লাখ লোক চলে আসে। এরপর তিনি হত্যা, খুন, দূর্নীতি ইত্যাদির রাজনীতি ছেড়ে গঠনমূলক রাজনীতির আহবান করেছেন। সাথে সাথে নতুন প্রজন্মকে ৪৭ বছর ধরে ব্যাবহার করা স্লোগান পরিহার করে নতুন স্লোগানে সুর মেলাতে বলেছেন।
এটা সত্যি যে উনি একজন ভালো বক্তা। ভাল বিতার্কিকও বটে। টকশো মাতানো তার্কিক। উনার এই ক্লিপ সত্যি রাজনীতি খবর না রাখা এই নতুন প্রজন্মের কাছে খুব গ্রহনযোগ্য একটি বক্তব্য। কিন্তু আমরা যারা বিগত ১৫ বছরের রাজনীতি দেখছি তাদের কাছে বক্তব্যটি নতুন মূলা ঝুলানো ছাড়া কিছু না। কেন? কাড়ন হচ্ছে যে মাহি বি. চৌধুরী অনেক মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই বক্তব্যটি সাজিয়েছেন। যেমন উনি বলছেন যে ১২ লাখ কর্মীর কথা আসলে, নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী মোট বুথ হচ্ছে ২ লাখ। আর আপনারা যারা নতুন প্রজন্ম তাদের বলছি একটি বুথে সর্বোচ্চ একজনের বেশি এজেন্ট থাকা যায় না। আর ১ জন থাকেন কেন্দ্রের বাইরে। তাহলে তো হিসেবে আড়াই লাখের বেশি আর্মির মত কর্মী নাই প্রতি দলের। এভাবে ফুলায়ে ফাপায়ে তথ্য দিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করার কারনটা কি??? ভাই আপনি ১ লাখকে ২ লাখ বলতে পারেন কিন্তু আড়াই লাখকে ১২ লাখ কিভাবে বলেন??? একবার মনে করলাম যে উনি হয়তোবা জানেন না। কিন্তু পড়ে মনে পড়লো উনি নিজে সংসদ সদস্য হয়েছেন দুই বার। সিটি কর্পোরেশন ইলেকশন করেছেন। তারপরেও এই সরল অংক জানেন না। আর উনার যেসব লোক ছিলো ইলেকশনের সময় তারা যে এরকম ফুল টাইম রাজনীতিবিদ ছিলো না সেটার কি প্রমান আছে?? এভাবে খুব সূক্ষভাবে উনি চাল দিয়ে তার ক্লিপ শুরু করিয়েছেন।
আমি বলছি না যে মাহি বি. চৌধুরী সব ভুল বলেছেন। দুই একটা কথা ঠিক বলেছেন তবে তার এত বড় মিথ্যাচার মেনে নিতে পারিনি।
এখন অনেকে বলতে পারেন যে আড়াই লাখ লোকের কাছে তো আমরা জিম্মি। দেখেন ভাই, যারা রাজনীতি করে খায় তারা সব দলের সময়ই খায় কারন তারা হুলিয়া পালটাইতে সময় নেয় না। এদেরকে আমাদের কাদের সাহেব কাউয়া বলে ডাকেন। আর আড়াই লাখের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী আছে যারা এখনো নিজের খায়ে রাজনীতি করে বলে আমার বিশ্বাস(সম্পুর্ন আমার মতামত, কোন গবেষণালব্ধ তথ্য নয়)।
আর উনাকে আমরা না পেয়েছি কোটা সংস্কার আন্দোল, না পেয়েছি নিরাপদ সড়কের সময়, না উনাকে পেয়েছি ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে। আর এইসব আন্দোলনে যারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করে নাই তারা কিভাবে এই নতুন প্রজন্মকে এসি রুমে এরকম বচন দেয় আমি জানি না। উনি তো এর আগে ব্লু ব্যান্ড কল নামে একটি আন্দোল শুরু করেছিলেন যা ২ বছরও টিকে থাকে নাই।
সুতরাং নতুন প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ এই সব সস্তা মোটিভেশনাল কথায় আন্দোলিত না হয়ে নিজেরা বিচার বিবেচনা করে পরিবর্তন আনুন। আপনারা বিগত এক বছরে দুটো সাড়া জাগানো আন্দোলনের জন্ম দিয়েছেন। আপনারা নিশ্চয়ই বোঝেন ইলেকশনের আগে এইসব পেজ, ক্লিপ দিয়ে কিভাবে আপনাদের বিভ্রান্ত করার চক্রান্ত চলছে। সাবধান থাকুন।
বিষয়: রাজনীতি
৮৫১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন