তাবলীগ জামাত, উলামায়ে দেওবন্দ এবং জামায়াতে ইসলামী
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ রেজাউর রহমান ওয়াকিল ০৭ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:১১:৩৭ সকাল
আমাদের বাংলাদেশে অনেকের মধ্যেই একটা ভ্রান্ত ধারনা আছে যে তাবলীগ জামাত আর উলামায়ে দেওবন্দ জামায়াতে ইসলামীকে কোনভাবেই দেখতে পারে না। আসলে কি ব্যাপারটা সেরকম? আমার মনে হয় না। আমরা যদি একটু খেয়াল করে দেখি, তাহলে দেখতে পাই যে অনেক ব্যাপারে ইখতিলাফ আছে বিশেষভাবে রাজনৈতিক কারণটা মুখ্য। কিন্তু আরেকটু ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় যে আকিদাগত কিছু অভিযোগ আছে দলটির প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে। থাকতেই পারে। কারন সবার দৃষ্টিভংগি এক হবার বিশেষ করে এখন কোন কারন নেই।
এইখানে একটা ব্যাপার একটু শুধরানো প্রয়োজন। সেটা হচ্ছে যে জামায়াত দল হিসেবে মউদুদি (রঃ) এর আকিদা পোষন করতে বাধ্য নয়। এটা কিন্তু জামায়াতের সিদ্ধান্ত নয়, এটা মউদুদি(রঃ) করে যাওয়া অসিয়ত বলতে পারেন। এবং যারা মনে করেন যে মউদুদি(রঃ) এর বই ছাড়া আর কোন বই পড়া হয় না তারা একটু কষ্ট করে ics online library টা ভিজিট করবেন তাহলে দেখবেন যে মউদুদি(রঃ) সমালোচনাকারীদের বইও সেই লিস্ট এ আছে।
যাই হোক মূল কথায় আসি। তাবলীগ এর ব্যাপারে মউদুদি(রঃ) ছিলেন পজিটিভ। উনি উনার লিখাতে তাবলীগের প্রসংশা করেছেন। তার অনুপ্রেরণাতে অনুপ্রেরিত হয়ে দেওবন্দী আলেম মাওলানা আবুল হাসান নদভী (রঃ) মাওলানা ইলিয়াস (রঃ) এর সাথে দেখা করেছেন এবং ব্যাপক উতসাহ দিয়েছেন। আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি যে তাবলীগের ব্যাপারে আমাদের অনেক জামায়াতী ভাইদের অভিযোগ আছে কিন্তু আপনারা মনে হয় শপথের কর্মী নন। কারন যারা সিলেবাস শেষ করা মানুষ তারা কিভাবে তাবলীগ বিরোধী হতে পারে সেটা আমার বোধগম্য নয়। আপনারা কি খেয়াল করেন না যে সাঈদী সাহেব কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন তাবলীগ হচ্ছে প্রাইমারি ধাপ। আর শিবিরকে বলেছিলেন ইউনিভারসিটি। কিন্তু আপনারা কেন ভুলে যান যে প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়া কি যেতে পারবেন পরের ধাপে? আর গোলাম আযম(রঃ) কি বলেছেন ইকামতে দীন বইতে দেখেন,,,,,,,,
"
দ্বীনের বিরাট খেদমত হিসেবে দেওবন্দ মাদ্রাসাসহ আমাদের দেশের ছোট বড় সব মাদ্রাসার নিকটই মুসলিম জাতি কৃতজ্ঞ। এ খেদমতের গুরুত্ব কোন মুসলিমই অস্বীকার করতে পারে না। এসব মাদ্রাসা নিশ্চয়ই ইসলামী আন্দোলনের সহায়ক। আন্দোলনের যোগ্য বহু আলেম এসব মাদ্রামা থেকে এসছেন। কিন্তু মাদ্রাসাগুলো নিজেরা প্রত্যক্ষভাবে ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন চালাচ্ছে না।
তেমনিভাবে তাবলীগ জামায়াত দ্বীনের এক মহান খেদমতের আঞ্জাম দিচ্ছে। এ জামায়াত সারা দুনিয়ায়ই বিপুল সংখক লোককে আল্লাহ, রাসূল ও আখেরাতমুখী বানাচ্ছে। এ জামায়াতের কেন্দ্র ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত। এ বিশ্ব জামায়াতের আমীর ও ভারতের নাগরিক। কিন্তু এ জামায়াতকে কোন দেশের সরকারই তাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করে না। এমন কি চীন ও রাশিয়াতে পর্যন্ত এ জামায়াতকে যেতে বাধা দেয়নি। এ মহান জামায়াতের উসিলায় কমিউনিষ্ট দেশেও কালেমা-নামাযের পয়গাম এবং আল্লাহ, রাসূল ও আখেরাতের দাওয়াত পৌঁছতে পারছে–এটা খুবই আনন্দের কথা। এটাকে ছোট খেদমত মনে করা অন্যায়। মুসলিম সংখ্যালঘু দেশ-এমন কি কমিউনিষ্ট দেশেও এ জামায়াতকে কাজ করতে হচ্ছে। সুতরাং বাতিলের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে দ্বীনের খেদমত করার যতটুকু সুযোগ নেয়া সম্ভব ততটুকুই এ জামায়াত নিচ্ছে।
সাড়ে চার বছর মনপ্রাণ লাগিয়ে এ জামায়াতে কাজ করার আমার সৌভাগ্য হয়েেেছ। এম. এ. পরীক্ষা দিয়েই তিন চিল্লায় (চার মাস) একটানা এ জামায়াতের সাথে থাকা কালেই নিজের জীবনকে ইসলামের জন্য উৎসর্গ করার জযবা ও প্রেরণা বোধ করি। সুতরাং আমার জীবনে তাবলীগ জামায়াতের সাথে আমার মহব্বত স্বাভাবিকভাবেই গভীর ও স্থায়ী।
বাংলাদেশ তাবলীগ জামায়াতের নেতৃস্থানীয় সবাইকে আমি অন্তর থেকে মহব্বত করি। কারণ এক সাথে কয়েক বছর এক জামায়াতে কাজ করার দরুন ব্যক্তিগতভাবে তাদের ইখলাস ও একাগ্রতা সম্পর্কে আমার সঠিক ধারণা হবার সুযোগ হয়েছে। তাদের কাউকে আমি অন্তরে উস্তাদ হিসেবে শ্রদ্ধা করি- যেমন হযরত মাওলানা আব্দুল আযীয, সাবেক আমীর, তাবলীগ জামায়াত, বাংলাদেশ। কেউ আমার শ্রদ্ধাভজন দ্বীনি মুরুব্বী যার কাছ থেকে ইসলামের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করার প্রেরণা পেয়েছি- যেমন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকীত ভাই। নেতৃস্থানীয়রে মধ্যে বেশ কয়েকজন আছেন যাদেরকে ঘনিষ্ট সহকর্মী ও মহব্বতের বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম।
আমার ঐস উস্তাদ, মুরুব্বী ও বন্ধুদের খেদমতে অত্যন্ত দরদের সাথে আকুল আবেদন জানাই যাতে তাদের নেতৃতে¦ পরিচালিত এ মহান জামায়াত সম্পর্কে এ দেশের মুসলমানদের মধ্যে কেই কোন ভূল ধারণার সৃষ্টি করতে না পারে।"
এখন আসি আমাদের দেওবন্দি ও তাবলীগি ভাইদের নিকট। ভাই আপনাদেরকে আমি অনেক ভালোবাসি। আপনাদের অবদান অনেক। কিন্তু আপনারা একটু খেয়াল করুন আপনাদের আগের আলেমদের অনেকেই কিন্তু জামায়াতকে গোমরাহ বলে গালিগালাজ করেন নাই। মাওলানা আবুল হাসান আলি নদভি জামায়াত থেকে বের হয়ে গেছেন কিন্তু জামায়াতের নেতাদের সাথে ঊষ্ণ পরিবেশ বজায় রাখসেন। আপনারা মুফতি আমিনী (রঃ), মাওলানা আযিযুল হক (রঃ), মাওলানা ইসাক সাহেব এদেরকে দেখেন উনারা কিন্তু বৃহত্তর সার্থে কাজ করছেন। কি সার্থ? ক্ষমতা দখলের?
না। উনারা আমাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের সবার সপ্ন ইসলামকে বিজয়ী করা বাংলার মাটিতে।
তাবলীগি ভাইয়েরা আপনারা একটু আপনাদের বড় বুজুর্গ মাওলানা তারিক জামিলের দিকে তাকান। দেখুন কত অমায়িক একজন মানুষ মাশাআল্লাহ। উনি কিন্তু পাকিস্তান জামায়াতের কুরআনের মাহফিলে প্রায়ই বয়ান করেন। উনি কিছুদিন আগে পাকিস্তান জামায়েতের আমীরের সাথে নিজে গিয়ে দেখা করে এসেছেন শুধুমাত্র ইসলামের জন্য। উনি কিন্তু জামায়াতকে তিরষ্কার করেন নি। বসে পরেন নি ফোতোয়ার ডালি নিয়ে। আপনারা তো এইটুকু মানেন যে উনার জ্ঞান, ইখলাস, ঈমান আপনাদের চেয়ে মযবুত। তাহলে উনাকে অনুসরন করুন। দেখুন এই মানুষগুলো শুধু ইসলামের জন্যে সব ভুলে এক কাতারে দাড়াচ্ছেন। আসুন আমরাও দাড়াই। আমি দৃঢ় আশা রাখি আমাদের ইসলামের বিজয় হবেই। রাজনীতি ভালো না লাগলে করব না, কিন্তু কাউকে খাটো করার আগে একটু ভাববো কাকে খাটো করছি? আমার সে ভাইকে যে নামাযী,যে বিনয়ী,যে সচ্চরিত্রবান, যে খারাপ হইতে পারতো কিন্তু হয় নাই। যদি সত্যি আল্লাহকে ভালোবাসেন আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ভালোবাসেন তাহলে তার কমতি থাকলে সেটা বাড়ান। আপনাদের মতামত শেয়ার করেন। বন্ধু হয়ে যান একে অপরের। জয় আমাদের সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
২৬৯৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রত্যেককেই তার অবস্থান থেকে করা কর্মের স্বিকৃতি দেওয়া উচিত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন