মিথ্যাবাদী মা!!!

লিখেছেন লিখেছেন নৈশ শিকারী ০৫ আগস্ট, ২০১৫, ০২:৩২:৪৪ দুপুর

এতটা দিন পেরিয়ে আজো মায়ের জন্য কাঁদি,

কারণ আমার মা যে ছিল ভীষণ মিথ্যাবাদী।

বাবা যেদিন মারা গেল আমরা হলাম একা,

সেদিন থেকেই বাঁক নিয়েছে মায়ের কপাল রেখা।

মা বলতো বাবা নাকি তারার ভিড়ে আছে, লেখাপড়া করি যদি নেমে আসবে কাছে।

তারায় তারায় বাবা খুঁজি তারার ছড়াছড়ি,

আমার মায়ের মিথ্যে বলার প্রথম হাতে খড়ি।

পাড়া পড়শী বলল এসে এই বয়সেই রাঢ়ি?

একা একা এতটা পথ কেমনে দিবে পাড়ি?

ভাল একটা ছেলে দেখে

বিয়ে কর আবার,

মা বলল, ওসব শুনে ঘেন্না লাগে আমার।

একা কোথায় খোকন আছে, বিয়ের কী দরকার?

ওটা ছিল আমার মায়ের চরম মিথ্যাচার।

রাত্রি জেগে সেলাই মেশিন চোখের কোণে কালি,

নতুন জামায় ঘর ভরে যায় মায়ের জামায় তালি।

ঢুলু ঢুলু ঘুমের চোখে সুই ফুটে মা’র হাতে,

আমি বলি, শোওতো এবার কী কাজ অত রাতে?

মা বলত ঘুম আসে না শুয়ে কী লাভ বল?

ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা কথার ছল।

স্কুল থেকে নিতে আসা

গাড়ী ঘোড়ার চাপে,

আমার জন্য দাড়ানো মা কড়া রোদের তাপে।

ঘামে মায়ের দম ফেটে যায়, দুচোখ ভরা ঝিম;

ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে আমায় দিত আইসক্রিম।

মায়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলতাম একটু নাও,

মলিন হেসে মা বলত, খাও তো বাবা খাও।

আমার আবার গলা ব্যাথা, ঠান্ডা খাওয়া মানা ওটা ছিল আমার মায়ের নিঠুর মিথ্যাপনা।

বড় হয়ে চাকুরী নিয়ে বড় শহর আসি,

টুকটুকে বউ ঘরে আমার বউকে ভালবাসি।

আবাসিক এলাকায় বাসা নিয়ে ডেকোরেটর ধরে,

ঘরকে আমার সাজিয়ে নিলাম অত্যাধুনিক করে।

মা তখনো মফস্বলে কুশিয়ারার ঢালে,

লোডশেডিং এর অন্ধকারে সন্ধ্যা বাতি জ্বালে।

নিয়ন বাতির ঢাকা শহর আলোয় ঝলমল,

মাকে বলি গঞ্জ ছেড়ে এবার ঢাকা চল।

মা বলল এই তো ভাল খোলা মেলা হাওয়া,

কেন আবার তোদের ওই ভিড়ের মধ্যে যাওয়া?

বদ্ধ ঘরে থাকলে আমার হাঁপানি ভাব হয়,

ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা অভিনয়।

তারপর আমি আরো বড়, স্টেটস এ অভিবাসী,

বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ সুনাম রাশি রাশি।

দায়িত্বশীল পদে আমার কাজের অন্ত নাই,

মায়ের খবর নিব এমন সময় কমই পাই।

মা বিছানায় একলা পড়া খবর এল শেষে,

এমন অসুখ হয়েছে যার চিকিৎসা নেই দেশে।

উড়ে গেলাম মায়ের কাছে অনেক দূরের পথ,

পায়ে পড়ে বলি মাকে এবার ফিরাও মত;

একা একা গঞ্জে পড়ে কী সুখ তোমার বল?

আমার সংগে এবার তুমি এমেরিকা চল।

এসব অসুখ এমেরিকায় কোন ব্যাপার নয়,

সাত দিনের চিকিৎসাতেই সমুল নিরাময়।

কষ্ট হাসি মুখে এনে বলল আমার মা,

প্লেনে আমার চড়া বারণ তুই কি জানিস

না ?

আমার কিছু হয়নি তেমন ভাবছিস অযথা,

ওটাই ছিল আমার মায়ের শেষ মিথ্যা কথা।

ক’দিন পরেই মারা গেল নিঠুর মিথ্যাবদী,

মিথ্যাবাদী মায়ের জন্য

আজো আমি কাঁদি।

উৎসর্গ: কবিতাটা সেই সকল মায়েদের জন্য উৎসর্গকরা হল যারা বিনিদ্র রজনী জেগে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের সন্তানকে মানুষ করে তোলেন। আপনি হয়তো জানেন না আপনার জন্মের পর

থেকে এ পর্যন্ত তার সব কষ্টগুলোকে চাপা দিয়ে রেখেছে শুধু আপনার মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য । আপনাদের কাছে শুধু একটাই অনুররোধ মা কে কখনো কষ্ট দিবেন না, কারন আপনার

দেয়া কষ্টগুলি মায়ের মনকে নীরবে কাঁদায় যা আপনাকে বুঝতে দিবে না, আপনিও কোনদিনই বুঝতে পারবেন না ।

আল্লাহ বলেন ,

" তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করনা এবং পিতা-মাতার

সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়;

তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা এবং বল তাদেরকে

শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।" [১৭-২৩]

বিষয়: বিবিধ

১২৭৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

333865
০৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০২:৫১
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০২:৫৬
275974
নৈশ শিকারী লিখেছেন : কষ্ট করে পড়েছেন সেজন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
333876
০৫ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:২২
নাবিক লিখেছেন : ওয়াও! আপনি কবিতাও লিখেন? খুব ভালো লাগলো।
০৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৮
275986
নৈশ শিকারী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
333885
০৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:১১
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ধন্যবাদ লেখাটি হূদয় ছুয়েছে... ধন্যবাদ।
০৫ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:৪০
275988
নৈশ শিকারী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
334031
০৬ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০৯
ঝিঙেফুল লিখেছেন : এই কবিতাটি অনেক বার ব্লগ ও ফেসবুকে দেখেছি। কিন্তু কেউই প্রকৃত কবির নাম দেয়নি। আপনার জানা থাকলে দিতে পারেন।
০৬ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০১:৪৭
276197
নৈশ শিকারী লিখেছেন : এই কবিতাটার লেখকের নামটা গোপন রাখতে হবে কারন এর লেখক ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কবিতাটা লেখার কিছুদিন পর থেকেই পলাতক রয়েছে আজ পর্যন্ত, সে একজন ইসলামি ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File