পবিত্র কোরানের মতে মানব দেহ মাটির তৈরী; এই তত্বটা কি আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক?
লিখেছেন লিখেছেন নৈশ শিকারী ০৩ আগস্ট, ২০১৫, ০৮:৩৬:৫০ সকাল
এযুগের নব্য যুব সমাজ নাম মাত্র শিক্ষা লাভ করে বিজ্ঞান আশ্বির্বাদে পুষ্ট হয়ে ধর্মকে অস্বীকার করে মুক্তমনার মুখোশ পড়ে। আমার জানা মতে কোনও ধর্মই কিন্তু বিজ্ঞান চর্চায় বাঁধা প্রদান করেনা বিশেষ করে ইসলাম ধর্মতো বিজ্ঞান চর্চায় বরং উৎসাহিত করে। তাহলে নাস্তিকতার মুখোশ পরে বিজ্ঞানকে ঢাল বানিয়ে ইসলামকে কেন এই অবজ্ঞা? পবিত্র কোরান বলে, Human body অথবা মানব দেহ মাটির তৈরী কিন্তু আধুনিক যুগের কথিত নব্য মুক্তমনারা এই ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে চায়না যে, মানব দেহ মাটির তৈরী। আজ এই ব্যাপারটাই প্রমান করবো; মানব দেহ মাটির তৈরী? নাকি সাইটোপ্লাজম, প্রোটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া, ডি.এন.এ তথা কোষের তৈরী?
কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ সৃষ্টির বিভিন্ন উপাদানের কথা বলা হয়েছে। যেমন, আলাকাঃ
"পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।" ৯৬:১-২
পানিঃ
"We made from water every living thing" সূরা আম্বিয়া ২১:৩০
"তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।" সূরা ফোরকান ২৫:৫৪
ঠনঠনে মাটি থেকেঃ
"We created man from sounding clay, from mud moulded into shape; " সূরা হিজর ১৫:২৬
স্ফলিত বীর্যঃ
"তিনি মানবকে এক ফোটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। এতদসত্বেও সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী হয়ে গেছে।" সূরা নাহল ১৬:৪,
"সে কি স্খলিত বীর্য
ছিল না?" সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৩৭
কিছুনা (শূণ্য থেকে) সৃষ্টিঃ
"মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে ইতি পূর্বে সৃষ্টি করেছি এবং সে তখন কিছুই ছিল না।" সূরা মরিয়ম ১৯:৬৭
মানুষ কিসের তৈরি ?
জবাব:
এ জিনিসগুলোকে আমাদের নাস্তিক সম্প্রদায় অসামঞ্জস্যতা হিসেবে দেখাতে চায়। অসামঞ্জস্যতা আসলে সেই জিনিস যা একটি হলে আরেকটি হওয়া
সম্ভব নয় ধরুন কাউকে আমি বললাম ‘‘রফিক সাহেব লোকটি লম্বা’’ আরেকজনকে বললাম, ‘‘রফিক সাহেব লোকটি খাট’’ তাহলে বিষয়টি অসামঞ্জস্যতাপূর্ন (contradictory)। কারণ কেউ কখনও একই সাথে লম্বা ও খাট হতে পারে না। কিন্তু আমি যদি বলি
‘‘রফিক সাহেব লোকটি লম্বা’’ আরেকজনকে বললাম, ‘‘রফিক সাহেব লোকটি মোটা ’’ এ জিনিসটি অসাসঞ্জস্যতা (contradictory) নয়। কারণ কোন লোক একই সাথে লম্বা ও মোটা হতে পারে । একে ইংরেজীতে বলে Contradistinction. পানি, বরফ এগুলো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেউ বলল পানি দিয়ে আইসক্রীম বানানো হয়। আবার দুধের ব্যবহারের কথা বলতে গিয়ে বলা হল দুধ দিয়ে আইসক্রীম
বানানো হয়। এখন কেউ যদি এখানে বলে বসে ‘‘বিষয়টা আসামঞ্জস্য’’ তাহলে তার সম্পর্কে আপনি কোন উপসংহার পৌছাবেন একবার চিন্তা করে দেখুন।
এক সময় কিছুই ছিলনা আল্লাহর আদেশেই সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে। এখন আল্লাহ যদি বলে আমি (কিছুই না) অনেকটা শূন্য খেলেই মানুষকে সৃষ্টি করেছি তাহলে
সমস্যা কোথায়? মানুষ পানি থেকে সৃষ্ট। আজকের বিজ্ঞান আমাদের বলে আমাদের কোষের সাইটোপ্লাজমের ৮০% পানি। আধুনিক বিজ্ঞান আরো বলছে আমাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ৫০%-৯০% পানি দ্বারা গঠিত। অতএব, আল্লাহ যথার্থই বলেছেন মানুষ পানি হতে সৃষ্টি। মাটির উপাদান
পরীক্ষাকরে দেখা গেছে যেসকল উপাদান মাটিতে বিদ্যমান সে সকল উপাদান কম অথবা বেশি অনুপাতে আমাদের শরীরেও বিদ্যমান। একটি জীবন্ত টিস্যু ৯৫% কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রেজন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফারসহ ২৬ ধরনের উপাদান বহন করে। আজকের বিজ্ঞান আমাদের বলছে এই উপাদানগুলো মাটিতে বিদ্যমান।
প্রশ্ন: আমাদের শরীর দেখে কি মাটি মনে হয়?তাহলে কোরআনে মাটি থেকে মানুষের সৃষ্টি কথাটা ভুল নয়কি?
জবাব:
বুঝাই যাচ্ছে বিজ্ঞান সম্পর্কে তার সাধারন জ্ঞানটুকুও নেই। এমনকি তার কমন সেন্সেরও যথেষ্ট অভাব আছে বলেই আমার মনে হয়।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই কয়লা আর হীরা কি এক?
জবাব: না।
আপনি কি জানেন অনেক অনেক দিন পরে বিভিন্ন ঘাতপ্রতিঘাতে
কয়লাই একসময় হীরাতে পরিনত হয়ে যায়?কয়লা আর হীরার উপাদান একই। যতই আপনার চোখে এটা ভিন্ন মনে হোকনা কেন।
প্রশ্ন: কোরআন কোথাও বলছে মাটি থেকে, কোথাও বলছে ধনধনে মাটি বিষয়টা আসলে কি ?
জবাব: এ বিষয়ে ব্যাখ্যা, যখন মাটি বা ধুলোতে পানি দেয়া হয় তখন সেটা কাদায় পরিণত হয়, আর সে কাদাকে রোদে রেখে দিলে এটা শুষ্ক মাটিতে পরিনত হয়ে যাবে। মানুষ মাটি থেকেই এসেছে।
আবার বলা যায় মাটিকে সিক্ত করার পর শুকিয়ে ঠনঠনে করে সেখান থেকে মানুষের সৃষ্টি। এতে কোন অসামঞ্জস্যতা নেই। ধরুন আমি পাউরুটি খাচ্ছি। একজন বিজ্ঞানী এসে বলল আমি যা খাচ্ছি সেটা হচ্ছে অনু, আরেকজন বলল পরমানু।আরেক এসে বলল এটা কোয়ার্ক। এতে অসামঞ্জস্যতার
কিছু নেই। মানুষ মাটির উপাদানে তৈরী। শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলনে একটা পর্যায়ে
আলাকার সৃষ্টি হয়। এ আলাকার থেকেই ক্রমান্বয়ে মানবরূপ পূর্নভাবে বিকাশ লাভ করে। তাই যারা এ ক্ষেত্রে কুরআনে অসামঞ্জস্যতা প্রমানের চেষ্টা করছে তারা মূলত বিজ্ঞান থেকে দূরে এবং এ কাজে তারা সম্পূর্ন ব্যর্থ। আল্লাহই সর্বজ্ঞানী।
বিষয়: বিবিধ
২১৫৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মন্তব্যের সাথে শতভাগ সহমত।
মুসলমানের ক্ষেত্রে তার ভিন্নতা দেখা যায়।
অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা লাভ, ভাল চাকুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, নিজের অনৈতিক কাজ লুকানোর আশ্রয় হিসেবেই নাস্তিকদের আশ্রয় গ্রহন করে। এগুলো অন্য ধর্মের মানুষও করে থাকে, তবে অন্য ধর্ম নাস্তিকতার বিরুদ্ধে তেমন কঠোর হয়না, যেমন হয় ইসলাম ধর্ম। ফলে মুসলমানের ঘরে জন্ম নেওয়া নাস্তিকেরা বেশী প্রতিকুলতাম মুখে পড়ে তাই এসব নাস্তিক আগ্রাসীও হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে তাদের আক্রোশ ইসলামী আকিদা বিশ্বাসেও আঘাত হানে।
মানুষ মাটির তৈরী এটার প্রমান করার জন্য বহু কথা বলার দরকার পড়েনা, সামান্য কথায় প্রমাণ করা যায়।
মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য, একমাত্র অক্সিজেন ও রৌদ্র তাপ ছাড়া সবকিছুই মাটি থেকে সৃষ্টি হয়। আবার অক্সিজেন সৃষ্টি হয় গাছ থেকে, মানুষ গাছ-পালার উপরও নির্ভরশীল। মানুষ যা খায়, বাচার জন্য যা ঔষধ হিসেবে গ্রহন করে সবই মাটি থেকে উৎপন্ন। আবার মানুষ গেলে মাটিতেই পরিনত হয়। সুতরাং মানুষের জন্ম মাটি থেকে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।
ফেরেশতারা আলো থেকে জ্বীন আগুন থেকে সৃষ্ট। তাই তারা মাটিতে পচেনা এবং মাটির উপর নির্ভরশীলও নয়। তাই দাবীও করা হয়নি যে, ওরা মাটির তৈরী।
নাস্তিক কে বুঝাতে মগুরের দরকার হয়, এমনি সোজা সাপটা, বুদ্ধিমত্বা দিয়ে বুঝানো যায়না। কেননা সে নিজেকেই
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
এই কথাটায় আমি একমত, তবু বোঝাই কারন ওরা ওতো মাটির মানুষ, মাটিতে যেমন পানি প্রয়োগ করলে তা কঠিন অবস্থা থেকে নরম কাঁদায় পরিনত হয় ঠিক তেমনি তারাও নরম হয় কিনা সেই আশায় বোঝাই। আর যদি না বুঝে আপনার পরামর্শ মতো মুগুরতো আছেই। সুচিন্তিত এবং পরামর্শ মূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
বিজ্ঞান পরিবর্তনশিল। কিন্ত তা দিয়ে যারা স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমান করতে চায় তারা হচ্ছে ধান্দাবাজ।
শতভাগ সহমত, আপনাকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন