রাজন হত্যার বিচার হউক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধিনে ১৮০ দিনের মধ্যে ট্রায়াল সমাপ্ত হোক।

লিখেছেন লিখেছেন নবাব চৌধুরী ০২ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৩৬:৫৭ রাত

সিলেটের কুমারগাঁও এলাকায় নিঃশংসভাবে খুনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সমগ্র বাংলাদেশ, উত্তাল পরিস্থিতিতে আসামীরা সবাই রয়েছে পলাতক যৌথবাহিনী অভীযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে পারেনি কাউকে।

কিশোর সামিউল আলম রাজনের(১৩)শোকে মুহ্যমান পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা আজ আর নেই আমার।

নির্বাক হয়ে পড়েছি অপরাধিদের দুঃসাহস দেখে, প্রবাসি কামরুলের এরকম মানুষিক বিকারগ্রস্থতা সমগ্র সিলেটবাসিকে করেছে বিতর্কিত,এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে সে(রাজন) এমন ছেলেটি নয়, চুরি-চামারি করা তার অভ্যাস নয়, তাকে কখনও এসবে পাওয়া যায়নি। সে যদি তা হতোও তবুও কারও কোনো অধিকার নেই তার উপরে হাত তুলার এদেশে বিধান আছে।

যারা এর সাথে জড়িত এদেরকে আর অপরাধি না বলে নিশ্চিৎভাবেই খূনি বলে আখ্যায়িত করছি, এরকম খুনিদের ধর্ম ভয়াবহ পেশাধার খুনির চাইতে ভয়ংকর, অসহায় এই কিশোরটা বার বার পানি চেয়েছে কিন্তু পাষণ্ডরা তাকে একফুটো পানিও দেয়নি বড় নির্দয়ভাবে বলেছে ঘাম খা, এদের বুকের পাটা কতো বড় হয়েছে ভাবুন তারা এর ভিডিও চিত্র ধারন করে রেখে তা প্রচারও করেছে। যা আইনের প্রতি আসামীদের

শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্কে ধারনা দেয়, এটা দিয়ে এটাই প্রতিয়মান হয় যে আইনকে এরা তোয়াক্কা করেনা বিন্দুমাত্রও।

প্রবাসীদের চুর ধরার শখ পূরণ করতে গিয়ে নিহত হওয়া অসহায় এই কিশোরের মা লুবনা আক্তার বলেছেন " আমার ছেলে এমন নয়, সারা এলাকাবাসী সেটা জানে, তবুও ওকে নির্মম ভাবে মরতে হয়েছে" এই মায়ের আহাজারী আমাদের সবার ভেতরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

আসুন আমরা দেখি এর লিগ্যাল কনসিকুয়েন্স।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ধারা ২(ট)অনুযায়ী রাজন একজন শিশু, যার বিচার এই ট্রাইব্যুনালে করা যাবে।

আইন অনুযায়ী এই ট্রাইব্যুনালের অধিনে যতোগুলো বিচার হবে সবগুলো বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল করতে বাধ্য আর যদি উক্ত দিনের ভেতরে বিচারকার্য সমাপ্ত করা না যায় তাহলে যুক্তিসংগত কারন ব্যাখ্যা করতে হবে ধারা(২০), যুক্তিসংগত কারন ব্যাখ্যা বলতে অবশ্যই এটা বুঝায়না যে ট্রাইব্যুনাল উক্ত বিচার সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত আরও ১ বছর বিলম্ব করবেন।

ঐ আইনে তদন্ত সম্পর্কে বলা হয়েছে ধারা(১৮); যদি আসামী ধৃত হয়ে যায় তাহলে যেদিন আসামী ধরা পরবেন এর পনেরো দিনের মধ্যে দায়িত্বরত অফিসার উনার তদন্ত কাজ সম্পাদন করবেন এখানে মুহিত নামের একজন ধৃত হয়েছে, এ কথা এ কারনে বলছি আইন প্রণেতারা কতোটা গুরুত্ব আরুপ করেছেন শিশু নির্যাতন ঠেকানোর জন্য সেটা বোঝাতে। যদিও অন্য আসামিরা ধৃত হয়নি তবুও তদন্তের প্রয়োজনীয়তা এখানে খুব কম কারন কিছু ছবি এবং ২৮ মিনিটের একটা ভিডিও ইতিমধ্যেই প্রচারিত হয়ে গেছে যেগুলো ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চয়তা প্রদান করে।

পুলিশের উচিৎ খুব তাড়াতাড়ি অপরাধ সম্পর্কে নিশ্চিৎ হওয়ার লিখিত রিপোর্ট পেশ করা, তা না হলে ট্রাইব্যুনাল বিচার কার্য আরম্ভ করতে পারবেনা ধারা ২৭(১) এ বলা হয়েছে অন্ততঃ একজন সাব ইন্সপেক্টর অথবা তার সমমানের একজন অফিসারের লিখিত রিপোর্ট ছাড়া ট্রাইব্যুনাল তার বিচার আরম্ভ করতে পারবেনা।

অপরাধিপক্ষ হয়তো বুঝাতে চাইবে এই ঘটনার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবেনা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা(৪)এ কিছু অস্পষ্টতা আছে।

ওখানে বলা হয়েছে যদি কোনো নারী অথবা শিশুকে কেউ দহনকারী, ক্ষয়কারী, অথবা রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে হত্যা করে অথবা হত্যার চেষ্টা করে তাহলে সে ব্যাক্তি অথবা এর সাথে সংস্লিষ্ট সবাই মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় হবে সেই সাথে এক লক্ষ টাকার অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবে। এখানে কিশোরের উপর অত্যাচার করা হয়েছে রুল দিয়ে যা এই তিনটার মধ্যে কোনোটাই নয়।

একটা ডকট্রিন যেটাকে বলা হয় মিসচিফ রুল, এই নিতী অনুযায়ি কখনও আইনের অস্পষ্টতা যদি দেখা দেয় তাহলে বিচারকদের দায়ীত্ব হলো আইন প্রণেতাদের উদ্দেশ্য অনুধাবন করা, এক্ষেত্রে আইন প্রণেতাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন ঠেকানো।

সুতরাং অপরাধি কোন তরিকায় অপরাধ করলো সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে এদিকে দৃষ্টিপাত করাটাই ভালো যে অপরাধিরা একটা শিশুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে এবং ঘৃন্য উপায়ে হোক সেটা রুল দিয়ে।

অপরাধিদের সাহস এবং এরকম জঘন্য মনোভাবকে কিছুতেই প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা।

আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই সেই সাথে আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের ভেতরে বিচার কার্য সম্পাদন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার আহবান জানাচ্ছি যাতে করে আর কোনো গর্দভ এরকম দুঃসাহস দেখানোর সাহস না পায়।

এই আইনের ৩০ ধারায় আরও বলা হয়েছে যে ব্যাক্তি এই আইনের অধিনে সংঘটিত কোন অপরাধকার্যে সহায়তা অথবা প্ররোচনা যোগাবে তারাও সেই পরিমান শাস্তি পাবে অপরাধ্কারী যে শাস্তিটুকু পাবে।

এই আইনের অধিনে বিচার কার্য তাড়াতাড়ি সম্পাদন করার ক্ষেত্রে এতোটাই গুরুত্ব আরুপ করা হয়েছে যে ধারা ২১ এ বলা হয়েছে আসামীর অনুপস্থিতিতেও বিচার কার্য সমাধান করা যাবে।

বিষয়: বিবিধ

৮৮৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

333409
০৩ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:২৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : সম্ভাবনা কম!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File