প্রথম কা'বা দেখার অনূভুতি!!

লিখেছেন লিখেছেন সুমন আহমেদ ০৭ মে, ২০২৩, ১০:৩২:২২ সকাল

-প্রথমবারের মতো মাতৃভূমি থেকে প্রায় ছয় হাজার কিলো মিটারের দূরের রাজ্য সৌদি আরবে পা রেখেছি। তখন সৌদি আরবের স্থানীয় সময় সন্ধা ৭ টা বাজে আমি জেদ্দা বিমান বন্দরে অবতরণ করি।

-যদিও কর্মের সুবাধে আসা কিন্তু মনেপ্রাণে বড় ইচ্ছাটাই ছিলো আল্লাহর ঘরের মেহমান হওয়া। জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে সোজা চলে গেলাম কর্মস্থলে, রাত তখন প্রায় ১০ টা, রাত পেরিয়ে সকাল এলো, আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো কাজে, কাজ শুরু করলাম, একদিন দুইদিন করে করে চলে গেলো ৭ মাস, দেখা হলোনা স্বপ্নের কা'বা!

-তখন বিশ্ব মহামারী কভিট ১৯ এ আক্রান্ত সমগ্র দুনিয়া, কা'বা শরীফে যেতে হলে লাগবে অনুমতি! "তাওক্কালনা" সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আবেদন করে অনুমতি পেলেই তবে যাওয়া হবে স্বপ্নের কা'বা শরীফে!

-অবশেষে আবেদন করা হলো, পারমিট ও পেয়ে গেলাম, "শুকর আলহামদুলিল্লাহ্" এই বুঝি অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো, দেখা হবে স্বপ্নের কা'বা, হতে চলেছি মহান রাব্বে ক্বারীমের ঘরের মেহমান, ভাবতেই ভালো লাগছে!

-কখন দেখতে পাবো স্বপনের কা'বা ভেতরে ভেতরে এই জিজ্ঞাসা বার বার উচ্চারিত হচ্ছে। দীর্ঘ একটা টাইম পরে অপেক্ষার অবসান হলো, সকল ধরনের কাজ সম্পন্ন করে আমি একদম তৈরী, বেলা ৪ টা বাজে গাড়ীতে উঠলাম- প্রায় ৪৫ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে আমরা জিদ্দা নগরী থেকে মক্কায়, পথে মধ্যে মিক্বাত থেকে হেরেম বেঁধে ফেল্লাম, আলহামদুলিল্লাহ্!

-এইতো আর হয়তোবা ১০ মিনিট পরেই আমরা হেরেমে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। অপেক্ষার সমাপ্তির মূহুর্ত ক্রমেই নিকটবর্তী হচ্ছে ভাবতেই নিজের মধ্যে ভিন্নমাত্রার শিহরণ নড়েচড়ে বসছে!

-রাস্থার দু'ধারে পাহাড় আর পাহাড়, পাহাড়ের প্রতি আমার কৌতুহল একটু ভিন্ন মাত্রায়, আরবের পাহাড়, দূরে কি কাছে দেখতে পাচ্ছি শুধুই পাহাড়, মনে ধারনা জন্মালো এমন কোন না কোন পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে দৃশ্যমান হবে প্রানের আকুতি ও আবেগে মিশে থাকা প্রিয় ও স্বপনের কা'বার ক্লক টাওয়ারের সু-উচ্চ সেই টাওয়ার!

-গাড়ীতে অনেকেই ঝিমুচ্ছে, কেওবা ঘুমে, কিন্তু আমার দু'চোখ, আরবের গাছপালা বিহীন আরবের পাহাড়, মরুভূমি, আর উট পালের দিকে, হঠাৎ এক সময় নজরে আসে "ঘরি টাওয়ার" হ্যাঁ, এ টাওয়ার তো পরিচিত, তার মানে আমরা চলে এসেছে আবেগে মিশে থাকা স্বপ্নের বায়তুল্লাহতে!

-আর একটু পরেই আমরা পৌঁছে যাবো মহান রাব্বুল আলামিনের ঘরে। হ্যাঁ অতঃপর আমরা এসে পরলাম মেছফালা নামক যায়গায় যেটি হেরেমের এরিয়াতেই, গাড়ী থেকে নামলাম, লক্ষ লক্ষ হাজ্বীরা হেরেমের সাদা কাপড় পরে দলে দলে যাচ্ছে ওমরাহ করতে, গাড়ী থেকে নেমে আমরাও তাদের সঙ্গী হলাম, হেটে হেটে আগাচ্ছি ৭৯ নম্বর গেটের দিকে "কিং ফাহাদ গেট" জানি খুব কাছে তারপরেও নিজেকে জিজ্ঞেস করছি আর কতো দূরে হেরেম শরীফ?

-এইতো কাছেই, মনের ভেতরে শান্তির পরশ পাখা মেলতে শুরু করেছে। মুসলিম হিসেবে সেই শিশুকাল থেকে কামনায় বাসনায় যেই কা'বা শরীফকে কল্পনা করেছি সেই কা'বা শরীফ আর আমার দূরত্ব এখন খুব কাছেই? পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলিম পরম শ্রদ্ধায় যে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে আমি তার সন্নিকটে? দাম্ভিক বাদশা অভিশপ্ত আবরাহা যে কা'বা ধ্বংস করতে এসে হস্থীবাহীনিসহ নিজেই ধ্বংস হয়েছিলো সম্মানিত সেই কা'বা যেকোন সময় দৃষ্টিগোচর হবে? আমার পরম সৌভাগ্যের দুয়ার তাহলে এখনিই উন্মুচিত হতে চলেছে? একি কল্পনা নাকি নিছন স্বপ্নচিত্রের কল্পিত পাটাতন? ভাবতেই শিহরিত হই!!

-আবরো জিজ্ঞেস করি হেরেম আর কতোদূরে? এই তো বিল্ডিংটার ওপারে ক্লক টাওয়ারের ঠিক নিচেই আমরা! এইতো সামনেই ভিন্ন শৈলীর বেস্টনী ভবনের ভেতরেই স্বপ্নের কা'বা। কামনা, বাসনা ও লালিত স্বপ্নের তৃপ্ত পূর্ণতা ও উত্তেজনায় আমার নিঃস্বাশ ঘন হয়ে আসছে। হার্ডবিট বেড়ে যাচ্ছে। প্রায় ৬ হাজার মাইল দূরে থেকে আসা স্বপ্নময় ক্লান্ত দুটি চোখ সহসায় ছল ছল হয়ে উঠছে, চোখে অনেক ক্লান্তি কিন্তু তন্দ্রাও নেই নিদ্রাও নেই, স্বপ্ন আছে কিন্তু বিলম্ব নেই, বাসনা আছে কিন্তু বাঁধা নেই, শুধু কয়েকটা মিনিটের ব্যাপার মাত্র!!

-মাইকে মাগরিব এর আজান, যা আগে শুনেছে ইথারের বদৌলতে বেতার তরঙ্গে। আর আজ সরাসরি! ভিন্ন আমেজে এ উত্তেজনা আরো বেড়ে গেলো! জোড়ে হেটে হেটে আমরা আরো অগ্রসর হয়ে ৭৯ নম্বর গেট দিয়ে দোয়া ও তালবিয়া পড়তে পড়তে ভেতরে প্রবেস করি।

-অত্যাধুনিক কারুকাজ সম্বলিত হারাম প্লাজার অভ্যন্তরভাগে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায়ও যেনো ভেতরের ঘন নিঃস্বাশ স্বাভাবিক হতে চাচ্ছে না! স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিক কারুকাজ দেখছি আর হাটছি। কিন্তু পিপাসার্ত দুটি চোখ খুঁজে ফিরছে পৃথিবীর প্রথম ঘর আল্লাহ্ কতৃক সম্মানিত কা'বাকে!

-প্রতিটা পা ফেলার সাথে সাথে নিঃস্বাশের ঘনত্ব আরো বাড়তে থাকে। ডানে বামে তাঁকাই, সবাই সাড়ি বেঁধে যাচ্ছি বায়তুল্লাহর দিকে। দুটি চোখের স্বীকারি দৃষ্টি সজাগ পাহাড়াদারের মতোই নিবদ্ধ হচ্ছে সম্মুখ পানে। যেকোন সময় স্বপ্নের কা'বা নজরে আসবে এই ভাবনায় চোখ দুটি ঝাফসা হয়ে আসছে।

"""আল্লাহু আকবার""" ঐ তো স্বর্ণখচিত পবিত্র কোরআনের আয়াত সম্বলিত কালো গেলাফে মোড়ানো কা'বা ঘর! যা এতো দিন দেখেছি শয়নে, স্বপনে, কিংবা ছবিতে বা টেলিভিশনে। কান্না ধরে রাখা আর সম্ভব হলো??? কাঁদলাম, মনে পরে গেলো- কা'বা ঘর প্রথম নজরে আসলেই দাঁড়িয়ে যেতে হয়, দোয়া পড়তর হয়। এই সময়টা দোয়া কবুলের সময়। আমার সৌভাগ্যবান দুটি চোখ সকল ক্লান্তি ভুলে তাঁকিয়ে আছে পবিত্র কা'বার দিকে! এই সেই ঘর যার টানে আমি বহুদূর থেকে সাগড়-পাহাড় জঙ্গল ফেলে ছুটে এসেছি! এই সেই ক্বা'বা যার কথা মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন নিজে! এই সেই ক্বা'বা যার গায়ে হযরত ইব্রাহিম আঃ ও হযরত ইসমাইল আঃ এর শ্রম হাতের পরশ লেগে আছে! আমার প্রিয় নবীর স্থাপিত পবিত্র হাতের সেট করা হাজারে আসওয়াদ দেয়ালে লেগে আছে! এই সেই কা'বা যার চার পাশে তওয়াফ করেছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানব ও মানবী হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)। ভাষা যেনো জমাট বেঁধে যাচ্ছে!

-ততক্ষণে মাগরিব এর নামাজের সময় হয়েছে। নামাজ পড়লাম। দোয়াতে বসে ভাবতে লাগলাম হে মাবুদ আমি আপনার কাছে কি চাইবো কিছুই মনে করতে পারছিনা। আমি গুনাহগার আপনার দরবারে হাজীর হয়েছে আমাকে আপনি মাফ করে দিয়ে কবুল করে নিন। আমার মা বাবা, বংশধরকেও আপনি মাফ করে দিন। সমস্থ কবর বাসীকেও আপনি মাফ করে জান্নাতে দেন। আমার প্রিয় জন্মভূমিকে ভালো রাখুন। সবাইকে সার্বিক দিক দিয়ে কল্যান দিয়ে ভরপুর করে দিন। হালাল রিজিক দিয়ে খুশি করে দিন অভাবিদেরকে। ইত্যাদি ইত্যাদি!

-যতো দোয়া জীবনে করেছি কবুল করে নিন ও যতো দোয়া জীবনে করবো তাও কবুল করে নিয়েন।

-আমিন।

-হামিদ আল হাসান মক্কা থেকে

বিষয়: বিবিধ

৫১৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386936
১১ ডিসেম্বর ২০২৩ সকাল ০৯:৩৩
টাংসু ফকীর লিখেছেন : সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File