উপমহাদেশে কারা প্রাচীন আহলুল হাদিস নাকি দেওবন্দী ব্রেরলভী -কারা ইংরেজদের শাসনামলে সৃষ্টি?!!
লিখেছেন লিখেছেন আলিম হায়দার চৌধুরী অনিক ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৩৯:৪৬ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
রাসূল সঃ সকল সাহাবীগণের উপর এবং সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী ইমামের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
দেওবন্দী ও ব্রেরলভী এবং মাযহাবী অর্থডক্স বিশ্বাসীরা আহলে হাদীসদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উপস্হাপন করে যে
উপমহাদেশে ইংরেজদের আমলে আহলে হাদীস এবং তারা যে সব বলে পরিচয় দেয় (লা মাযহাবী ওহাবী গাইরে মুকাল্লিদ) এর জন্ম।
এই অভিযোগটি কতোটুকু সত্য?
আহলে হাদীসদের শত্রু যারা তারা তাদের তাকলীদ বিরোধী এবং গায়রে মুকাল্লীদ বলে থাকে।
রফিকুল ইসলাম মাদানী তার রচিত আহলে হাদীস আসল রূপ নামক বইতে উল্লেখ করেছেন
প্রসিদ্ধ গাইরে মুকাল্লিদ আলিম “ নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান ” তাঁর রচিত “ তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহ ” নামক গ্রন্থে লিখেনঃ
“ হিন্দুস্থানের মুসলমানদের অবস্থান হল, এ দেশে ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি সবাই হানাফী মায্হাবের উপরই প্রতিষ্ঠিত এবং আলিম, ফাজিল, ক্বাজী, মুফতী, বিচারক এ সকল সুমহান দায়িত্ববান ব্যক্তিবর্গ এ মাযহাব থেকেই হয়ে আসছে।”
(তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহঃ পৃঃ নং-১০)
২।
“ মুযাহেরে হক্ব ” কিতাবের স্বনামধন্য লেখক মাওলানা “ কুতুব উদ্দীন ” তাঁর “ তুহ্ফাতুল আরব ওয়াল আযম ” গ্রন্থে গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, যার সার-সংক্ষেপ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
“ সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ, মাওলানা ইসমাইল শহীদ ও মাওলানা আব্দুল হাই (রহঃ) পাঞ্জাবে আগমন করার পরপরই কতিপয় বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীর সমন্বয়ে চার মায্হাবের ইমামগণের তাক্বলীদ অস্বীকারকারী নতুন ফিরক্বাটির সূত্রপাত লক্ষ্য করা যায়, যারা হযরত সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহঃ) এর মুজাহিদ বাহিনীর বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য ছিল, এদের মূখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী (মৃত-১২৭৫হিঃ)। তার এ ধরণের অসংখ্য ভ্রান্ত কর্মকান্ডের কারণে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহঃ) ১২৪৬ হিজরীতে তাকে মুজাহিদ বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন। তখনই গোটা ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ, বিশেষ করে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহঃ) এর খলিফা ও মুরীদগণ হারামাইন শরীফাইনের তদানীন্তন উলামায়ে কিরাম ও মুফতীগণের নিকট এ ব্যাপারে ফত্ওয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন চার মায্হাবের সম্মানীত মুফতীগণ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে মৌঃ আব্দুল হক্ব ও তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ফিরক্বা বলে অভিহিত করেন এবং মৌঃ আব্দুল হক্বকে ক্বতল (হত্যা) করার নির্দেশ প্রদান করেন।
(এ ফতওয়া ১২৫৪ হিজরীতে তান্বীহুদ্দাল্লীন নামে প্রকাশ করা হয়, এখনো দেশের বিশিষ্ট লাইব্রেরীতে এর কপি সংরক্ষিত রয়েছে।)
মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারস পলায়ন করতঃ কোনভাবে আত্নরক্ষা পায়। সেখানে গিয়ে তার নবাবিষ্কৃত দলের প্রধান হয়ে সরলমনা জনসাধারণের মধ্যে তার বিষাক্ত মতবাদ ছড়াতে থাকে।”
(তুহ্ফাতুল আরব ওয়াল আযমঃ পৃঃ ১৬ খঃ ২, আল-নাজাতুল কামেলাঃ পৃঃ ২১৪, তান্বীহুদ্দাল্লীন, পৃঃ ৩১)
উপরোক্ত বিবরণ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারসী কর্তৃক ১২৪৬ হিজরীতে ভারতবর্ষে গাইরে মুক্বাল্লিদ তথা লা-মায্হাবী নামক নতুন ফিরক্বাটির সূত্রপাত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সে “ ওহ্হাবী ” হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সে নিজেকে “ মুহাম্মদী ” বলে প্রচার করতো। পরবর্তীতে “ ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম ” এ মর্মে ফত্ওয়া দিয়ে ইংরেজের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়। এবং এ সুযোগে সে সরকারী কাগজ-পত্র থেকে “ ওহ্হাবী ” নাম রহিত করে আহ্লে হাদীস নাম বরাদ্দ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নবোদ্ভাসিত এ ফিরক্বাটিই আজ নিজেদের ব্যতীত অন্যান্য সবাইকে নবোদ্ভাসিত বা বিদ্য়া’তী বলে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক নয় কি !
৩।
গাইরে মুক্বাল্লিদ আলিম মৌলভী মুহাম্মাদ শাহজাহানপুরী (মৃঃ ১৩৩৮ হিজরী) তার নিজের ফিরক্বা সম্বন্ধে বর্ণনা দিতে যেয়ে লিখেনঃ
“ সম্প্রতি হিন্দুস্তানে এমন একটি অপরিচিত মায্হাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যার সম্বন্ধে জনসাধারণ মোটেই অবগত নয়। অতীতে এ মতাদর্শের কোন লোক কোথাও ছিল কিনা তা সন্দেহজনক। উপরন্তু তাদের নামইতো মাত্র ইদানীং শুনা যাচ্ছে। তারা নিজেদেরকে “ মুহাম্মদী ” বলে দাবী করে। কিন্তু প্রতিপক্ষ তাদেরকে “ গাইরে মুক্বাল্লিদ ” বা “ ওহ্হাবী ” অথবা “ লা-মায্হাবী ” বলে আখ্যায়িত করে থাকে। ”
(আল-ইরশাদ ইলা সাবীলির রাশাদঃ পৃঃ ১৩, উল্লেখ্য, এ বইটি তাদের নিকট অত্যন্ত মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ।)
আবুল হাসান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল হাদীস আস সিন্ধী আল কাবীর মৃত ১১৪১ হি ১৭২৯ ইং সম্পর্কে আমীন উকাড়বী লিখেছেন মূলত এই আবুল হাসান সিন্ধী গায়রে মুকাল্লিদ ছিলেন॥
তাজাল্লিয়াতে সফদর ২/২৪৩,৫/৩৫৫
শায়খ মুহাম্মাদ ফাখের বিন মুহাম্মাদ ইয়াহহিয়া বিন মুহাম্মাদ আমীন আল আব্বাসী আস সালাফী এলাহাবাদী (১১৬৪হিঃ/১৭৫১ইং)তাক্বলীদ করতেন না।বরং কুরআন ও হাদীসের দলীলসমূহের উপরে আমল করতেন এবং নিজে ইজতিহাদ করতেন।
নুযহাতুল খাওয়াতির,৬/৩৫১;'তাহকীকী মাক্বালাত ২/৫৮
এসব উদ্বৃতি হিন্দুস্তানের উপরে ইংরেজদের দখলদারিত্ব কায়েমের বহু পূর্বের। যারা বলে আহলেহাদীস ইংরেজদের আমলে সৃষ্টি তাদের সম্পর্কে বলতে হবে ইতিহাস সম্পর্কে তাদের জ্ঞান টাখনুর নিচে।
রশীদ আহমদ লুধিয়ানবী দেওবন্দী আহসানুল ফাতাওয়া ১/১৩৬ বলেছেন
কাছাকাছি ২য় ৩য় হিজরী শতকে হকপন্থীদের মাঝে শাখা প্রশাখাগত মাসআলা সমূহের সমাধানকল্পে সৃষ্ট মতভেদের প্রেক্ষিতে পাঁচটি মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় । চার মাযহাবা ও আহলে হাদীস। তত্কালীন সময় থেকে অদ্যাবদি উক্ত পাঁচটি তরীকার মধ্যেই হক সীমাবদ্ধ বলে মনে করা হয়।
তাহলে দেওবন্দী আলেমের মতেই আহলে হাদীস প্রাচীন ইংরেজদের আমলে সৃষ্টি একটি শ্রেষ্ঠ মিথ্যার মধ্যে অন্যতম।
আর দেওবন্দী ফের্কার জন্ম ৩১ মে ১৮৬৬ সালে আর ব্রেরলভী ফের্কার জন্ম ১৪ জুন ১৮৫৬ সালে সাইয়েদ আহমদ রেজা খান ব্রেলভীর জন্মের মাধ্যমে ।আল্লাহ যেন এই ধরণের মিথ্যা ইতিহাস থেকে হেফাযত করেন আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন