আপনি কেন মুলা খাবেন??
লিখেছেন লিখেছেন নাবিক ০৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৮:২৬ দুপুর
বাঁশপাতা বা ফেউয়া মাছের শুটকির সাথে মুলা দিয়া আমার আম্মু জোসসসস একটা তরকারি রান্না করে, এইটা আমার খুব ফেবারিট। যে দিন এই তরকারি বাসায় রান্না হয় সেদিন গরুর মাংসের কোরমা অথবা মুরগীর রোস্ট সামনে থাকলেও আমি ছুঁইয়া দেখিনা।
মুলা প্রাপ্তির সিজনে প্রতি ওয়াক্ত খাবারের সময় কুচিকুচি অথবা টুকরো টুকরো করে কাটা মুলা স্যালাড হিসেবেও প্রচুর পরিমানে খাইয়া থাকি। মুড়ি, চানাচুর, ছোলার সাথেও সমান তালে মুলা চলে। আর আমি এত্তোই মুলা প্রেমিক যে মাঝে মাঝে সেমাই, পায়েস, ফিরনীর লগেও মুলার স্যালাড খাইয়া ফেলবার চাই।
আর এমনিতে যখনি মুন্চায় তখনি লবণ দিয়া ভালো কইরা মাখায়া কচকচায়া কয়েকটা বিগ সাইজের মুলা পেটের মধ্য চালান করে দিতে খুব ভালাপাই।
বছরের অন্যসময়ে প্রিয় সবজিটাকে ভীষ্ষণণণ miss করি বলে সিজনের শেষের দিকে বহুসংখ্যক! মুলা ফ্রিজের অন্দরে যত্ন সহকারে ইস্ঠক(স্টক) করিয়া রাখি। (মুই'যে ক্যামুন মুলা খোর সেইটা একটু বুইঝালন)
যাউগ্গা ইহা হইলো নাবিকের মুলা গিলার কাহিনী।
এইবার আপনি কিজন্নি পেটের অন্দরে ডজন ডজন মুলা চালান করবেন সেই বয়ান পেশ করিব। আপনি মুলা খাইবেন, কেননা শুধুমাত্র প্রতি ১০০ গ্রাম মুলাতেই (পাতা বাদে) আছে- প্রোটিন ০.৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩.৪ গ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ ০.০ আইইউ, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, আঁশ ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ১৫ মিলিগ্রাম। বাজারে পাওয়া সাদা ও লাল দুই ধরনের মুলাতে আছে সমান পুষ্টিগুণ। (যেইটা ইচ্ছা খাইতে পারেন)
আর পর্যাপ্ত পরিমান মুলা খাওয়ার ফলে আপনি যেসব শারিরীক উপকারীতা লাভ করবেন সেগুলাও জানিয়া লন- মুলার ক্যারোটিনয়েডস চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত, কিডনী এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
মুলার ফাইটোস্টেরলস হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
জন্ডিস আক্রান্ত হলে মুলা রক্তের বিলিরুবিনের কমিয়ে তাকে একটি গ্রহনযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে যা কিনা জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
মূলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে এবং কম ক্যালরিযুক্ত সবজি হওয়ায় দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মুলা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে।
লিভার এবং পাকস্থলীর সমস্ত দুষণ এবং বর্জ্য পরিস্কার করে থাকে।
মুলা কিডনি রোগসহ মূত্রনালির অন্যান্য রোগে উপকারী।
কাঁচা মুলা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে হজম হয় দ্রুত এবং খাওয়ার রুচি বাড়ে।
কচি মুলার সালাদ ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
জ্বরে ভুগলে বা মুখের রুচি নষ্ট হয়ে গেলে মুলা কুচি করে কেটে চিবিয়ে খেলে উপকার হবে। জ্বর কমবে, মুখের রুচিও বাড়বে।
পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হলে মুলার রসের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন।
শ্বেত রোগের চিকিৎসায় মুলা দারুণ উপকারী।
এন্টি কারসেনোজিনিক উপাদান সমৃদ্ধ মুলার বীজ আদার রস এবং ভিনেগার একসঙ্গে ভিজিয়ে রেখে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। কাঁচা মুলা চিবিয়ে খেলেও কাজ দেবে।
ত্বক পরিচর্যায়ও মুলা ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা মুলার পাতলা টুকরা ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ব্রণ নিরাময় হয়।
এছাড়া কাঁচা মুলা ফেস প্যাক এবং ক্লিনজার হিসেবেও দারুন উপকারী।
যেসব মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায় তারা নিয়মিত মুলা খাওয়ার অভ্যাস করলে বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ পাবে।
এতোক্ষণ তো শুধু মুলার উপকারীতা বয়ান করলাম, এইবার পাতার বিষয়েও কিছু বলি- মজার ব্যাপার কি জানেন, মুলার চেয়ে এর পাতার গুণ অনেক বেশি। কচি মুলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এবং এই শাক খুউব মজাদার। মুলার পাতাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং সি পাওয়া যায়।
খাবার উপযোগী ১০০ গ্রাম মুলাপাতায় আছে আমিষ ১.৭ গ্রাম, শ্বেতসার ২.৫ গ্রাম, চর্বি ১.০০ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫৭ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৪৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ বা ক্যারোটিন ৯ হাজার ৭০০ মাইক্রোম ভিটামিন বি-১০.০০৪ মিলিগ্রাম, বি-২০.১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩.৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১২০ মিলিগ্রাম।
এইবার আপনি নিজেই ঠিক করেন, মুলা খাবেন? নাকি মুলার এত্তোসব উপকারীতা থেকে নিজের দেহটারে বঞ্চিত রাখবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৮ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন